আমার শহরে তুমি পর্ব ২০ ||  Alisha Rahman Fiza

আমার শহরে তুমি পর্ব ২০
 Alisha Rahman Fiza

আমি কান থেকে ফোন নামিয়ে অবাক হয়ে কিছুক্ষন ভাবলাম,
~কী এমন সারপ্রাইজ দিতে পারে? সারা।নতুন কোনো অপমান করার প্ল্যান নাতো?যা হবার হবে আমি নিজেকে কিছুতেই দূর্বল করবো না।
ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুল ঠিক করতে লাগলাম।দরজা ঠেলে রক্তিম ঘরে প্রবেশ করলো তাকে অনেক চিন্তিত লাগছে আমি আয়নার দিকে তাকিয়েই তাকে প্রশ্ন করলাম,
~কী হয়েছে?সব ঠিক আছে তো?
রক্তিম বললো,
~অধরা,সারা আমাদের এতো especially invite করেছে এতে তোমার কোনো সন্দেহ হচ্ছে না?
আমি বললাম,
~যা হবার হবে কিন্তু আজ আমরা সারার বাসায় যাচ্ছি।
রক্তিম বললো,
~হুমম তাতো যেতে হবেই।

আমরা সবাই রেডি হয়ে সোফার রুমে ওয়েট করছি রাতের জন্য সে আসলেই আমরা রওনা দিবো।কিন্তু আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে না জানি সারা কী করবে?এই মেয়েকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।কিছুক্ষনের মধ্যে রাত এসে হাজির সে আমাদের সবাইকে দেখে বললো,
~ওয়েট করানোর জন্য সরি।এখন আমরা রওনা দেই
কথা শেষ করে যেই না রাত বাড়ির বাহিরে পা রাখবে তখনই বাবা বললেন,
~রাত,আমি চাচ্ছি আজই তোমার আর সারার বিয়েটা ঠিক হয়ে যাক।আর তুমি যদি বিয়ের পর আলাদা থাকতে চাও এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।এভাবে দিন-রাত তোমরা একসাথে ঘুরো এটা ঠিক না
বাবার কথায় সাহারা রায়জাদা বললেন,

~কীসব আজেবাজে বলছেন?আমার ছেলে বাড়ি ছেড়ে কেন যাবে?
বাবা বিরক্তি নিয়ে বললো,
~সাহারা,ছেলে বাসার বাহিরে থাকবে দেশের বাহিরে না যে দেখা করতে পারবে না।তাই আমি যা বলেছি তাই হবে।
বাবার কথা শুনে সাহারা রায়জাদার মুখ চুপসে গেলো।তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ হয়তো সন্তান হারানোর ভয়।
রাত বাবার সব কথা শুনে বললো,
~ঠিক আছে বাবা,আমি আজই সারাকে বলবো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাবা কিছু না বলে বাসার বাহিরে চলে গেলেন।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রক্তিমের সাথে হাঁটা ধরলাম।
গাড়িতে বসে আমি ভাবছি সারা যাই করবে তাতো আমাকে ঘিরে হবে কিন্তু সে তো আমার বাসায় এসেও করতে পারতো আমাদের সবাইকে এভাবে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে কেন?
নাহ এসব আর ভাবা যাবে না মাথা ঠান্ডা রেখে সব কাজ করতে হবে নাহলে হিতে বিপরীত হতে সময় লাগবে না।সব যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দিতে হবে না আমার এতটুকু দোয়া রইলো সেখানে যাই হোক রক্তিমের মাথা যাতে ঠান্ডা থাকে।
রক্তিমের ডাকে আমি ভাবনার জগত থেকে বের হলাম।রক্তিম বললো,
~অধরা,কী ভাবছো?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~কিছু না।আর কতক্ষন লাগবে পৌছাতে?
রক্তিম বললো,
~এইতো পৌছে গেছি।৫মিনিট হয়তো লাগবে
আমি কিছু না বলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

সারাদের বাসায় পৌছে দেখতে পাই সারার বাবা-মা আমাদের সবাইকে Welcome করার জন্য দাড়িয়ে আছেন।তারা আমাদের সাথে কুশলাদি করে বাসায় ডুকতে বললো আমরাও তাদের কথায় বাসার ভিতরে প্রবেশ করলাম।কোথাও সারাকে দেখতে পেলাম না তাই আমি সারা মাকে বললাম,
~আন্টি সারা কোথায়?
আন্টির মুখটা কালো হয়ে গেলো কিন্তু পরক্ষনেই হাসি হাসি মুখে বললেন,
~রুমে আছে চলে আসবে।
আমি কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসি দিলাম।সাহারা রায়জাদা আন্টিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
~এই গিফট গুলো আপনাদের জন্য।
আন্টি বললেন,
~এগুলো কেন এনেছেন?আমরা কী পর নাকি?
সাহারা রায়জাদা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

~আপনারা কেন পর হবেন?আপনারাই তো এখন রাতের সবচেয়ে আপন মানুষ।
কথাটা রাতের দিকে তাকিয়ে বললেন সাহারা রায়জাদা। হঠাৎ সারা বলে উঠলো,
~রাতের আপন মানুষ তো আপনিই বানিয়েছেন আন্টি।
আমরা তার কথা অনুসরণ করে সিড়ির দিকে তাকালাম।সারা সিড়ি দিয়ে নামছে আর এ কথা বলছে সারা আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,
~কেমন আছো অধরা?
আমি বললাম,
~ভালো।তুমি কেমন আছো?
সারা বললো,
~ভালো।আপনাদের সবাইকে এখানে দেখে অনেক ভালো লাগছে বিশেষ করে রক্তিম আর অধরাকে দেখে।আমি ভাবিনি তোমরা আমার বাসায় আসার জন্য রাজি হবে।ধন্যবাদ তোমাদের
রক্তিম হেসে বললো,

~সারা তুমি আমাদের পরিবারের অংশ এখন তাই তোমার কথাও আমাদের রাখা উচিত।
সারা বললো,
~ধন্যবাদ আমাকে এতোটা আপন করে নেওয়ার জন্য।
অনেকক্ষন আমরা আড্ডা দিলাম কিন্তু সারা বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছিল এমন মনে হচ্ছে কেউ আসবে তার জন্য ওয়েট করছে।আমি সারাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই আন্টি এসে বললেন,
~প্লিজ ডিনারটা সেরে তারপর কথা বলেন।

আমরা সবাই খাওয়ার টেবিলে বসে পরলাম।সারা সবাইকে সার্ভ করছে সারার এমন ব্যবহার দেখে আমি অনেক অবাক কারণ সারা এধরনের মেয়ে নয় যে মেহমানদের সার্ভ করে খাওয়াবে।আর সবচেয়ে আজব ব্যাপার সে রাতের সাথে একবারও কথা বলেনি।আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা কী হচ্ছে সারা কী চায় কোনো কিছুই ক্লিয়ার না মাথা ভো ভে করছে।এসব চিন্তা করতে করতে খাবার শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে হাত ধুয়ে সারার পাশে এসে দাড়ালাম আজ এই মেয়েটাকে অনেক অচেনা লাগছে।

আমরা সবাই সোফার রুমে বসে আছি তখন রাত বলে উঠলো,
~সারা,আমি তোমার শর্তে রাজি।আর বাবা আমাকে পারমিশন দিয়েছে বিয়ের পর আমরা আলাদা থাকতে পারবো।এখন তুমি বলো বিয়েটা কবে করছি আমরা?
সারা কোনো জবাব না দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।তার বাবা-মাও চুপ করে আছেন আমি তাদের নীরবতা দেখে বললাম,

~সারা এভাবে চুপ করে আছো কেন?কিছু তো বলো।
সারা আমার কথায় মাথা উঠিয়ে বললো,
~অনেক কিছু বলার আছে অধরা।কিন্তু শুরু কীভাবে করবো বুঝতে পারছি না।
সাহারা রায়জাদা বললেন,
~যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
তার কথা শুনে বাবা বললেন,
~সাহারা মেয়েটা কিছু বলতে চায় ওকে বলতে দেও।
সারা বললো,
~আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।
সারার কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো।আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না সারা কী বলছে?বিয়ে করবে না কেন?

সারার এহেন কথায় রাত অবাক হয়ে বললো,
~সারা বিয়ে কেন করবেনা?কী সমস্যা বলা যাবে?
সারা ঠান্ডা কন্ঠে বলা শুরু করলো,
~রাত আমি তোমাকে কোনোদিন ভালোবাসিনি।যা করেছি তা ঝোঁকের বসে করেছি ২বছর আগে যখন তোমার সাথে আমার দেখা হলো তোমার coolness,handsome look দেখে তোমার মোহে পরে যাই।কিন্তু পরে জানতে পারি তোমার সম্পর্ক অধরার সাথে গড়ে উঠেছে।

এতটুকু বলে সারা থামলো একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করলো,
~তাই আমি তোমার আশা ছেড়ে দিলাম কিন্তু একদিন তোমার মা আমার সাথে দেখা করে আর বলে
সারার কথার মাঝেই সাহারা রায়জাদা হুংকার দিয়ে উঠে আর বলে,
~এই মেয়ে একদম কোনো কিছু বানিয়ে বানিয়ে বলবে না।আমি তোমাকে চিনতাম পর্যন্ত না
সারা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
~চোর চুরি করে কোনোদিন স্বীকার করে না।তাই প্রুভ আছে কোনো দিন ভাবিনি এটার প্রয়োজন পরবে কিন্তু আজ পরলো।

সারার কথা শুনে সাহারা রায়জাদার ভয় পেয়ে গেলো।
রক্তিম বললো,
~সারা কথা শেষ করো।
সারা আবার বলতে শুরু করলো,
~একদিন আন্টি আমার সাথে দেখা করে আর বলে রাত আমাকে ভালোবাসে কিন্তু অধরাকে কথা দিয়েছে বলে আমাকে তার মনের কথা বলতে পারছেনা।

আমি সেদিন আন্টির কথা শুনে অনেক খুশী হই।তারপর একটা প্ল্যান তৈরি করি আন্টির সাথে যেহেতু রাত আমার ফ্রেন্ড ছিল তাই আমি তাকে আমার বাসায় ইনভাইট করি রাত চলেও আসে।আমরা সেদিন অনেক enjoy করি।তারপর থেকে প্রতিদিন আমরা দেখা করতাম অধরা তার ব্যস্ততার জন্য সময় দিতে পারেনি সেই সময়টা আমি কাজে লাগিয়েছি একদিন সুযোগ বুঝে রাতকে আমি purpose করি আর রাত সেটা accept করে ফেলে।কারণ রাত অধরার কাছ থেকে কোনো importance পাচ্ছিল না তাই আমার সাথে তার সম্পর্ক গড়ে তোলে।কিন্তু আমি এখন বুঝতে পেরেছি রাতকে আমি শুধু মোহে পরে আপন করতে চেয়েছিলাম ভালোবাসা তো অন্য কেউ ছিল।
সারা এতটুকু বলে চুপ হয়ে গেলো হঠাৎ পিছন থেকে বলে উঠলো,

~সারা এখানে কী হচ্ছে?
সারা সেই ব্যক্তিকে দেখে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো সেই ব্যক্তিটিও তাকে জড়িয়ে ধরলো।রাত শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।সারা সেই লোকটির হাত ধরে ভিতরে নিয়ে এসে বললো,

~আমার ভালোবাসা হচ্ছে প্রতীক।ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল ৩বছর আগে আমরা ১বছর রিলেশনশিপেও ছিলাম কিন্তু আমি রাতের মতো কাউকে চেয়েছিলাম শুধুমাত্র টাকার জন্য। ৪মাস আগে প্রতীকের সাথে আমার আবার দেখা হয় মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে আমার মন জয়ী হয় আমি অনেক চেষ্টা করেছি তাই এমন শর্ত দিয়েছিলাম যাতে আন্টি বিয়েটা ভেঙ্গে দেয় কিন্তু তাতেও কিছু হলো না তাই আজ সবটা বলে দিলাম।অধরা তোমার অপরাধী আমি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও
বলেই হুহু করে কেঁদে উঠলো প্রতীক তাকে জড়িয়ে ধরলো সে প্রতীকে বুকে মাথা রেখে কাঁদছে।
রাত সব শুনে কিছু না বলে সারাদের বাসা থেকে বের হয়ে যায় রক্তিম তার পিছে যেতে নিলে আমি তার হাত ধরে ফেললাম আর বললাম,

আমার শহরে তুমি পর্ব ১৯

~রক্তিম ওকে একা ছেড়ে দেও ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা মানুষ একাই অনুভব করতে চায়।
রক্তিম আমার কথায় তার একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমায়
আমরা বাসায় চলে আসলাম।রক্তিম পুরো রাস্তায় কোনো কথা বলিনি বাসায় এসে আমরা রুমে চলে আসবো তখনই বাবা বললো,
~রক্তিম,তোর মাকে বলে দে এই কালো মন নিয়ে আমার রুমে যাতে এক পাও না দেয়।
বাবার কথা শুনে সাহারা রায়জাদার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।বাবা তার দিকে না তাকিয়ে রুমে চলে যায় আমি তাকে বললাম,

~আপনি দাদীর রুমে চলে যান।
তিনি আমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন আমি কাছে যেতেই সে বললেন,
~আমাকে একটু রুমে দিয়ে আসবে।
আমি সাহারা রায়জাদার হাত ধরে তাকে দাদীমার রুমে দিয়ে আসলাম।দাদীমার পাশে তাকে বসিয়ে চলে আসলাম আমার রুমে এসেই আমি রক্তিমকে খুঁজতে লাগলাম হঠাৎ বারান্দা থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতেই সেখানে গিয়ে দেখলাম,

আমার শহরে তুমি পর্ব ২১