আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব ১৬

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব ১৬
Raiha Zubair Ripte

সকাল বেলা বাড়ির উঠান থেকে কিছু মানুষের কথপোকথনের আওয়াজ ভেসে আসছে। চিত্রা গায়ে চাদর জড়িয়ে বাড়ির উঠানে আসে। উঠানে আসতেই দেখতে পায় তার রহমত চাচা পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে এসেছে। রহমত হচ্ছে চিত্রার বাবার চাচাতো ভাই। চিত্রা মাছ গুলোর দিকে এগিয়ে আসলো। বড় বড় সিলভার কার্প আর কৈ মাছ। রাসেল আহমেদ, তামিম খান আর সাহেল আহমেদ গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে বের হয়েছে। কিচেনে রান্না করছে রিক্তা বেগম,চয়নিকা বেগম। আর তাদের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছে তানিয়া বেগম।

সোফায় বসে আছে সানজিদা বেগম আর তৃষ্ণা। তৃষ্ণা ফোন স্ক্রোল করছে। সানজিদা বেগম পানের বাটা থেকে পান বের করে মুখে নেয়। রায়ান মেয়েকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সানজিদা বেগম এর পাশে বসেন।
-“ দিদা বাবা আর চাচা কোথায় গেছে জানো?
সানজিদা বেগম পান চিবাতে চিবাতে বলে-
-“ হ তর বাপ চাচায় নরেশ গো বাড়ি গেছে। হের মাইয়া আর মাইয়ার জামাই আইছে। সক্কালে বাড়ি আইছিলো নরেশ হেয় নিয়া গেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ ওহ দাদা কই?
-“ ঐ যে বাইরে রহমতে মাছ লইয়া আইছে।
-“ বাড়ির পাশের পুকুরের মাছ?
-“ হ তগোর লাইগা নিয়া আইছে।
রায়ান বসা থেকে উঠে বাহিরে চলে যায়। এরমধ্যে হুড়মুড়িয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে সিয়াম। সিয়াম সোজা এসে সানজিদা বেগম এর পাশে বসেন।

-“ কেমন আছো বুড়ি?
সানজিদা বেগম সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ভালোই আছি তুই কেমন আছোস? মেলা দিন পর আইলি আমাগো বাড়ি।
-” হ আব্বার দোকানে বসতে হয় রোজ আসার সময় পাই না। রাফি কই?
-“ তারা কি এহন উঠবো নি। হেরা বেলা দশ টা না বাজলে উঠে না।
সিয়াম তৃষ্ণার দিকে তাকালো। মেয়েটা এক ধ্যানে ফোন টিপছে।

-“ কেমন আছো তৃষ্ণা?
তৃষ্ণা ফোনের দিক থেকে দৃষ্টি সরায়। সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
তৃষ্ণা ফের মোবাইলে ডুবে যায়। সিয়াম সানজিদা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ দাদি তৃষ্ণা কে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাই? মা নিয়ে যাইতে বলছে।
-“ যা লইয়া না করছে কেরা।
সিয়াম তৃষ্ণার দিকে তাকালো।
-“ তৃষ্ণা চলো আমাদের বাড়ি যাই।
তৃষ্ণা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
-“ না না আপনাদের বাসা অনেক দূর হেঁটে যেতে যেতে পা ব্যাথা হয়ে যায়।
সিয়াম মুচকি হেসে বলে-

-“ সমস্যা নেই আজ হাঁটিয়ে নিবো না সাইকেল এনেছি সাথে। সাইকেলে চড়িয়ে নিয়ে যাবো।
-“ তাহলে যাওয়াই যায়।
-“ ওকে তাহলে চলো।
তৃষ্ণা আর সিয়াম বাড়ি থেকে বের হয়ে উঠানে আসতেই চিত্রা তাদের দেখে বলে-
-“ কোথায় যাচ্ছিস তৃষ্ণা?
তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে যায়।

-” সিয়াম ভাইদের বাসায়। চল যাই।
-“ না যাবো না,যাচ্ছিস তাড়াতাড়ি ফিরবি।
-“ আচ্ছা।

সিয়াম তৃষ্ণা কে নিয়ে সাইকেলের কাছে যায়। সিয়াম সাইকেলে উঠে তৃষ্ণা কে উঠতে বলে। তৃষ্ণা সিয়ামের কাঁধের শার্ট ধরে সাইকেলে বসে। রাফি কেবলই হাই তুলতে তুলতে জানালার ধারে এসে পর্দা টা সরাচ্ছিল। বাহিরের দিকে তাকাতেই এমন কিছু দেখে মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে যায়। সিয়াম এসেছে এ বাড়ি,আবার সাইকেলে চড়িয়েছে তৃষ্ণা কে।

আর তৃষ্ণা সিয়াম কে স্পর্শ করেছে। ধপাধপ পা ফেলে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে আসে। বাহিরে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে দেখে ততক্ষণে সিয়াম তৃষ্ণা কে নিয়ে চলে গেছে। রায়ানের একটা ফোন কল আসায় রায়ান রিমি কে চিত্রার কোলে দিয়ে সাইডে চলে যায়। চিত্রা রিমি কে কোলে নিয়ে ভেতরে যেতে নিলে পেছন থেকে রাফি ডেকে উঠে। চিত্রা চোখমুখ বুজে ফেলে। মনে মনে ধরে নিলো হয়তো খেপাবে।
আস্তে ধীরে পেছন দিকে ঘুরে তাকাতেই রাফি চিত্রার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ তৃষ্ণা কোথায় গেছে?
চিত্রা স্বস্তি পেলো।
-“ ঐ যে সিয়াম ভাইয়া আসছিলো তার সাথে তাদের বাসায় গেছে।
রাফি গম্ভীর কন্ঠে বলল-
-“ যাওয়ার পারমিশন কে দিছে?
-“ সেটা তো জানি না।

রাফি চোখমুখে কাঠিন্যে এনে বাড়ির ভেতর চলে যায়। রিক্তা বেগম দূর থেকে রাফি আর চিত্রা কে দেখছিলো। চিত্রা রাফির হঠাৎ রেগে যাওয়া দেখে কপালে দু ভাজ পড়ে। রিমিকে কোলে নিয়ে চলে যায় ভেতরে।
খাবার টেবিলে এক এক করে খাবার সাজাচ্ছে বাড়ির বউ মেয়ে। রিয়ার শরীর টা ভালো না। হঠাৎ করে রাত থেকে জ্বর এসেছে। রিমিকে চিত্রাই সামলাচ্ছে।

তুষার সোফার এক প্রান্তে বসে দাদির সাথে কথা বলছে আর আড়চোখে চিত্রা কে দেখে চলছে। চিত্রা ভুলেও তুষারের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। রাফি গম্ভীর মুখ করে বসে আছে সোফায়। আর বারবার দরজার পানে তাকাচ্ছে কখন আসবে তৃষ্ণা আর সে তাকে ইচ্ছে মতো কথা শোনাবে। চয়নিকা বেগম রিমির খাবার টা এনে চিত্রার হাতে দেয়। চিত্রা খাবার টা নিয়ে উঠানে চলে আসে। রিক্তা বেগম রাফিকে উদ্দেশ্য করে বলে-

-” রাফি চিত্রা তো একা খাওয়াতে পারবে না রিমিকে তার সামনে কেউ টিকটকারের মতো না নাচলে। তুই একটু যা বাপ,রায়ান তো নেই।
রাফি পানির মামপট টা নিয়ে চলে যায়। রিক্তা বেগম দরজার কাছে আসে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে ছেলে আর চিত্রা কিভাবে নাতনি কে খাওয়াচ্ছে। চয়নিকা বেগম শ্বশুর আর শ্বাশুড়ির খাবার টা ঘরে দিয়ে আসে।

রাসেল আহমেদ সাহেল আহমেদ তামিম খান একসঙ্গে বাসায় ঢুকেন। রাসেল সাহেল আর তামিম খান কে দেখে তানিয়া বেগম বলে উঠে খাবার টেবিলে বসতে খাবার খাওয়ার জন্য। তামিম খান বলে উঠে যে তারা খেয়ে এসেছে আপাতত খাওয়ার ইচ্ছে নেই। তানিয়া বেগম নিচ থেকে রায়ান কে হাক ছেড়ে ডাকে। তুষার রিয়া সবাইকে নিয়ে খেতে বসে। চিত্রা রাফি রিমি কে খাইয়ে রিমি কে সাহেল আহমেদের কাছে দিয়ে তারাও খেতে বসে।

চিত্রা মাথা নিচু করে খাচ্ছে কেউ যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই। তুষারের ইচ্ছে করলো চিত্রা কে সামনে বসিয়ে চোখ গুলো কে সুপার গ্লু দিয়ে চোখের পাপড়ি গুলো কে আটকে দিতে যেনো চিত্রা আর চোখ বন্ধ ই না করতে পারে। রাফির গলা দিয়ে ভাত নামছে না। সিয়াম কে দিয়ে ভরসা নেই। ছেলেটা যদি সত্যি সত্যি তৃষ্ণা কে প্রপোজ করে বসে তখন। বিষন্ন মন নিয়ে খাবার টা খেয়ে নিলো রাফি।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই সোফায় বসলো। রিক্তা বেগম শ্বশুর আর শ্বাশুড়ি কে রুম থেকে ডেকে আনলো। তিনি কিছু জানাতে চান সবাই কে। সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। রিক্তা বেগম চিত্রার পানে একবার তাকিয়ে সাহেল আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলে-
-“ সাহেল ভাই আমি তোমার কাছে আজ কিছু চাইবো আশা করি না করবে না।
সাহেল আহমেদ ভ্রু কুঁচকে ফেলল।
-“ কি চাইবেন ভাবি? দেওয়ার সাধ্যি থাকলে অবশ্যই না করবো না।
রিক্তা বেগম নৈঃশব্দ্য হাসলো।

– আসলে সাহেল আমি চিত্রা কে আমার রাফির বউ করে নিতে চাই,আজ সবাই আছে তাই ভাবলাম এখনই বলা উচিত। তুমি কি দিবে তোমার মেয়েকে আমার ঘরে?
তৃষ্ণা কেবলই সদর দরজা দিয়ে ভেতরে আসছিলো। রিক্তা বেগমের কথা শুনে পা আগানোর সাহস আর হয়ে উঠলো না। দাঁড়িয়ে গেলো পাথরের মূর্তির মতো। তুষার আগেই কিছুটা আঁচ পেয়েছিল যখন তিনি বললেন কিছু চাইবেন সাহেল আহমেদের কাছে। রাফি বিরক্তি চাহনি নিয়ে মায়ের পানে তাকায়। আর চিত্রা অবাক দৃষ্টি নিয়ে। চিত্রা এবার তুষারের পানে তাকায়। তুষারের দৃষ্টি তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রিক্তা বেগম ফের বলে উঠলেন-

-“ আপত্তি আছে কোনো?
তানিয়া বেগম ভাইয়ের পানে তাকায়। সে নিজেও চিত্রা কে তুষারের জন্য নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন যে বড় ভাবি চেয়ে বসলো। রাফি মায়ের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দরজার পানে তাকাতেই দেখে তৃষ্ণা ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। রাফি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাগান্বিত হয়ে তৃষ্ণার দিকে এগিয়ে গিয়ে তৃষ্ণার বাহু ধরে বলে-
-“ এই কোথায় গেছিলে?

তৃষ্ণার কেনো যেনো কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখে আসা পানি টুকু মুছে নেয়। গলা দিয়ে কথা বের হতে চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ গলা টা চেপে ধরেছে। সময় নিয়ে আস্তে করে বলে-
-“ সিয়াম ভাইয়ার বাসায়।
-“ সিয়ামের বাসায় কি তোমার?
-“ কিছু না।
-“ তাহলে গেছো কেনো?
-“ ইচ্ছে হয়েছে তাই গিয়েছি।

কথাটা বলার সময় তৃষ্ণার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। রাফি ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ এই কাঁদছো কেনো?
-“ কই কাঁদছি? কাঁদি নি।
-“ তাহলে চোখ থেকে পানি বের হলো কেনো?
-“ আনন্দে।
-“ কিসর আনন্দ মনে?
-“ বাড়িতে বিয়ের সুখবর শোনা যাচ্ছে তাই।
-“ মে’রে একদম তক্তা বানিয়ে ফেলবো বেয়াদব মেয়ে।

বাড়ির সকলের দৃষ্টি তাদের দিকে। রাফি তৃষ্ণার হাত ধরে সবার সামনে এনে বলে-
-“ দেখো মা তোমার এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে বের করো। চিত্রা কে কেনো চয়েস করছো আমার জন্য? এই মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে। (তৃষ্ণার দিকে ইশারা করে বলে রাফি)
সজল আহমেদ আর সানজিদা বেগম চুপচাপ নাতি নাতনি আর ছেলে ছেলের বউদের কার্যক্রম দেখছে। রিক্তা বেগম চিত্রার পানে তাকায়। সে তো চেয়েছিল চিত্রা কে যেহেতু রায়ানের বউ করে নিতে পারে নি তাহলে রাফির জন্য নিবে কিন্তু ছেলে দেখি তৃষ্ণা কে নিয়ে এসেছে।

তানিয়া বেগম অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুই রাফিকে ভালোবাসিস তৃষ্ণা?
তৃষ্ণা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এভাবে যে রাফি বলে দিবে সে কল্পনাও করতে পারে নি। রাফি তৃষ্ণা কে বলতে না দেখে বলে উঠে-
-“ কি ব্যাপার কথা বলছো না কেনো? ফুপি কি জিজ্ঞেস করছে উত্তর দাও। ভালোবাসো না না আমায়?
তৃষ্ণা জিহবা দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ বাসি।

তৃষ্ণার এই একটা কথা,রাফির মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে। রিক্তা বেগম ভাবতে পারছে না এভাবে তার ফেইস লস করবে তার ছেলে। চিত্রা তুষার কে কিছু বলতে না দেখে এবার নিজেই উঠে দাঁড়ালো। রায়ান রিয়া বুঝতে পারছে না কি থেকে কি হচ্ছে। চিত্রা রিক্তা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ চাচি তোমার কি আমাকে সুখে দেখতে ইচ্ছে করে না?
রিক্তা বেগম চিত্রার কাঁধে হাত দিয়ে বলে-

-“ আমি কেনো তোর সুখ দেখতে চাইবো না। আমি সত্যি বুঝতে পারি নি চিত্রা রাফি এভাবে তৃষ্ণা কে এনে দাঁড় করাবে। আমি মন থেকে চেয়েছি আর কথাও দিয়েছিলাম আমার ছেলের বউ করবো তাই…
চিত্রা নিজের কাঁধ থেকে রিক্তা বেগমের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে-

-“ তোমার ছেলের বউ কে হতে চেয়েছে? যখন কথা দিয়েছিলে তখন তো কথা রাখতে পারো নি। এখন কেনো এসব বলছো? দেখো চাচি তুমি ফারদার আমার ব্যাপারে আমার অনুমতি ছাড়া আর একটা কথাও বলবে না। আমার সুখ আমি পেয়ে গেছি। আমার সুখ টাকে অসুখে পরিনত করার জন্য উঠে পড়ে লেগো না। প্রথম বার নিরবে চুপচাপ থেকে সহ্য করছি কিন্তু এবার করবো না।

কথাটা বলে হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় চিত্রা। চয়নিকা বেগম ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ কিসের কথা দিয়েছিলেন ভাবি আমার মেয়েকে আপনি?
তুষার এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বলে-

-“ বড় মামি আপনার আমাকে কিছু বলার নেই। জাস্ট একটা কথা বলতে চাই অযথা চিত্রা কে নিয়ে ভাববেন না। চিত্রা কে এই তুষার ভালোবাসে। চিত্রার সুখের জন্য তুষার নিজে একাই এনাফ সেখানে রাফি কে টেনে আনতে হবে না। আপনি একবার চিত্রা কে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেন নি, সেই কথাটা না রাখার জন্য চিরকাল আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। কিন্তু দ্বিতীয় বার এমন কিছু করবেন না যাতে চিত্রা সহ কয়েকজন মানুষ হার্ট হয়। আমার বোন স্বীকার করলো সে রাফি কে ভালোবাসে। এই তুই আমার বোন কে ভালোবাসিস?
তুষারের কথা শুনে রাফি সহসা বলে উঠে-

-“ ইয়েস ব্রো আই লাভ হার।
-“ বিয়ে করতে চাস তাকে?
-“ হ্যাঁ।
-“ তোর তো ইনকাম সোর্স নেই খাওয়াবি কি আমার বোন কে? আমি তো কোনো বেকার ছেলের কাছে বোন দিবো না।

-“ আমি বাবার ব্যাবসায় হাত দিবো আর তাছাড়া তুমি যেমন চিত্রা কে লাভ করো আমিও তৃষ্ণা কে লাভ করি। তুমি আমার বোন কে বিয়ে করতে পারলে আমিও তোমার বোন কে বিয়ে করতে পারবো।
দুই ভাইয়ের কথোপকথনের বাড়ির বড়রা চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। রাসেল আহমেদ ছেলের পানে তাকিয়ে বলে-
-“ এসব হচ্ছে কি? শুরু হলো রাফি আর চিত্রার বিয়ে নিয়ে সেখানে এখন রাফি তৃষ্ণার সহ চিত্রা তুষারের হচ্ছে। আর রিক্তা তুমি চিত্রা কে কিসের কথা দিয়েছিলে?
তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

-“ বড় মামা আপনার বড় ছেলে রায়ান ভাইকে চিত্রা ভালোবাসতো। ইভেন বড় মামি সেটা আঁচ করতে পেরেছিল আর বলেছিল রায়ান ভাইয়ার সাথে চিত্রার বিয়ে দিবে।
রিয়া আর রায়ান তুষারের কথা শুনে একে ওপরের দিকে তাকায়। রায়ান অবাক হয়ে বলে-
-“ চিত্রা আমাকে ভালোবাসতো! কই আমি তো কখনও চিত্রা কে অন্য চোখে দেখি নি সবসময় বোনের নজরে দেখেছি।
তুষার স্মিত হেঁসে বলে-

-“ তুমি দেখেছো কিন্তু চিত্রা দেখে নি তোমায় ভাইয়ের নজরে। শুনতে খারাপ লাগলেও চিত্রা আজও তোমায় ভুলতে পারে নি। তোমার পাশে রিয়াকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল বলে ছোট মামার সাথে আমেরিকা চলে গেছিলো।
রিয়া তুষারের দিকে তাকায় তুষার রিয়ার তাকানো দেখে বলে-

-“ নিজেকে দোষ দিয়ো না রিয়া। তোমারও দোষ নেই। চিত্রা কেবল একতরফা ভালোবেসেছিল রায়ান ভাইয়াকে।
চয়নিকা বেগম আর সাহেল আহমেদ একে ওপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে। তাদের মেয়ে কাউকে ভালোবেসে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছে আর বাবা মা হিসেবে তারা জানতেই পারলো না। চয়নিকা বেগম সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে উঠে মেয়ের কাছে চলে গেলো। রাসেল আহমেদ স্ত্রীর পানে তাকিয়ে বলে-

-“ রিক্তা তুমি মেয়েটাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলে! তোমার জন্য মেয়েটা কষ্ট পেয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে সুদূর আমেরিকায় চলে গেলো।
রিক্তা বেগম স্বামীর পানে তাকিয়ে বলে-
-“ আমি কোথায় মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছি। রায়ান চিত্রা কে ভালোবাসলে আমি অবশ্যই চিত্রা কে আমার রায়ানের বউ করে নিতাম। কিন্তু রায়ান তো রিয়াকে ভালোবেসেছে, সেখানে আমি কি করতে পারি।
রাসেল আহমেদ বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন উপরে। চিত্রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে ঘুরে দেখে তার মা। চয়নিকা বেগম উচিত মাথায় হাত দিলেন।

-“ একজন কে একতরফা ভালোবেসে এতো কষ্ট পেলি অথচ মা হয়ে আমি জানতে পারলাম না! আমি কি আমার মেয়ের মা হয়ে উঠতে পারি নি তাহলে?
চিত্রা মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল-
-“ জেনে গেছো?
-“ হ্যাঁ। আমি আমার মেয়ের কষ্ট বুঝতে পারলাম না!
চিত্রা চয়নিকা বেগমের হাত মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বলে-

-“ নিজের দোষ দিয়ো না। আমি জানতে দেই নি দেখেই জানতে পারো নি।
-“ তুষার না বললে আজও জানতে পারতাম না।
-“ তা তিনি কি বললেন?
-“ আজও কি রায়ানের জন্য কষ্ট পাস চিত্রা?
-“ সত্যি বলবো মা?
-“ হ্যাঁ।

-“ দেশে আসার পরও কষ্ট পেতাম না বাট খারাপ লাগতো রায়ান ভাই আর রিয়াকে একসঙ্গে দেখলে তবে এখন আর লাগে না। ওরা সুখী সেখানে আমার খারাপ লাগাটা বেমানান।
-“ ভালোবাসিস কাকে এখন?
-“ ভালোবাসি কাকে? আমি এখন আমার বর্তমান কে ভালোবাসি মা। অতীত কেউ যে ভালোবাসি না এটা অস্বীকার করার ক্ষমতা আমার নেই। প্রথম অনুভূতি যতই ভুলতে চাই না কেনো ভুলা যায় না।

-“ তুষার নাকি তোকে ভালোবাসে।
চিত্রার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
-“ স্বীকার করেছে সবার সামনে?
-“ হ্যাঁ। তোর চাচি তোর সাথে এমন করবে আমি ভাবতে পারি নি।
-“ জাস্ট চাচির দোষ দিলে হবে না সে একজন মা।সে কখনও চাইবে না তার নিজের ছেলের সুখ বিসর্জন দিয়ে আমার সুখ কে প্রাধান্য দিতে।
-“ তবুও সে আশ্বাস দিয়েছিল তোকে।

-“ বাদ দাও মা সে তো আর ভবিষ্যত যেনে রেখেছিল না যে রায়ান ভাই অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলবে। হয়তো চাচির সাথে নিচে একটু বেশিই বাজে ব্যাবহার করে ফেলছি।
-“ সাহেল এখন কি হবে?
তানিয়া বেগমের কথা শুনে সাহেল আহমেদ বোনের পানে তাকায়।
-“ কি হবে?

-“ সবই তো শুনলাম আমরা। তুষার চিত্রা কে আর রাফি তৃষ্ণা কে ভালোবাসে। এখন আমাদের করণীয় কি?
তুষার এগিয়ে এসে সাহেল আহমেদের পাশে বসে। সাহেল আহমেদের দিকে চেয়ে বলে-
-“ মামা আমি চিত্রা কে ভালোবাসি আর চিত্রা কে আমি আমার ওয়াইফ হিসেবে পেতে চাই। আপনাকে বলছি না আপনার কাছে প্রস্তাব রাখছি অনেক আশা নিয়ে আই হোপ আপনি আপনার ভাগ্নে কে ফেরাবেন না।
রাফি এবার তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব ১৫

-“ ব্রো শুধু নিজের টা ভাবছো কেনো? আমার জন্য ও ভাবো। ফুপি আমিও তোমার মেয়েকে তোমার কাছে চাইছি প্লিজ তুমি তোমার ভাইপো কে ফিরিয়ে দিয়ো না।
সজল আহমেদ ছেলে মেয়ের পানে তাকিয়ে বলে-
-“ বুঝতেছি না তোমরা বিষয় টাকে এতো জটিল কেনো করছো?ওরা তো স্বীকার করলো ওরা ভালোবাসে ওদের তাহলে তোমাদের তো উচিত ছেলেমেয়েদের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দেওয়া।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ পর্ব ১৭