মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৩

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৩
অনামিকা রহমান

আম্মু আমায় ল্যাবে যেতে হবে, দেখো সেই কখন থেকে পুতুল কান্না করেই চলছে। কিছু বলছেও না, কিছু খাচ্ছেও না৷ এখন তোমার পুতুল মেয়েকে তুমি সামলাও।
রেহানা খানকে আবির কথা গুলো বলেই আবির বেড়িয়ে গেলো কক্ষ থেকে।
রেহানার কোলে মাথা গুজে কেদেই যাচ্ছে তৃনা।
কি হয়েছে পুতুল, কান্না করছিস কেনো?
আমায় বল।

~ফুপি আম্মু, আব্বু, আব্বু এখনও আমায় কল করে একটা বার কথা বলল না। আমি কত দিন বাবাকে দেখি নি। আমি তো পদত্যাগ করে নিয়েছি, সে খবর তো বাবা পেয়েছে, তাহলে আব্বু, আমার সাথে এখনও কেনো কথা বলছে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রেহানা খান তৃনার চোখের পানি মুছলো। মৃদু হেসে বলল, আমরা আজ বিকালেই সাভার যাবো। তোমার নাকি সামনে ইনকোর্স পরিক্ষা,তোমায় তো ওখানেই এখন থাকতে হবে। তোমার আব্বু আমায় কল দিয়েছিল,তোমায় যেনো নিয়ে যাই। তাছাড়া রোদেলার বিয়ে ঠিক হয়েছে রিয়াদের সাথে, তনয়দের বাসায় গিয়ে একটু দেখা করে আসবো।
রেহানার কথা শুনে তৃনার চক্ষু চকচক করে উঠল। ওঠে বসল তৃনা। রেহানা খান লোকমা বানিয়ে পুরে দিলো তার মুখে খাবার। শান্ত মেয়ের মতো খেয়ে নিলো তৃনা।

এই এই তুমি এমন সব কিছু গুছিয়ে কই যাচ্ছো।
আবিরের কথায় তৃনা লুকিয়ে হাসলো। তৃনা ভাবলো আবিরকে নিয়ে একটু মজা নেওয়া যাক।

~বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি। কত মানুষের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, বউ সাজচ্ছে। আমায় দেখুন, এখনও বেনারসি শাড়িও পড়তে পারলাম না। তাই আমার ঘোশা হয়েছে। তাই আবার চিন্তা করছি বিয়ে করবো। শশুড় বাড়ি থেকে তো আবার বিয়ে করতে পারবো না, তাই বাপের বাড়ি যাচ্ছি। আমার বিয়ের অগ্রিম দাওয়াত রইলো আপনার, আসবেন কিন্তু!
তৃনার কথা গুলো আবিরের মাথার উপর দিয়ে গেলো!

এর উত্তর আবির কি দিবে জানে না।
আবির হাতের ফাইল গুলো টেবিলে রেখে এগিয়ে আসলো তার পুতুলের নিকট।
পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তৃনার
ঘাড়ে থুতনি বসালো।

~বউ সাজতে তোমার যখন এতোই ইচ্ছে, তুমি এখানেই সাজো না, তার জন্য আবার বাবার বাড়ি যেতে কেনো হবে।
তৃনা মুচকি হাসতে হাসতে ব্যাগের চেইন লাগালো। বাহুতে হাত গুটিয়ে চোখে চোখ রাখলো আবিরের।
~নাহ, তা সম্ভব না।বাবার বাড়িতেই বেনারসি পড়বো। আজ যাবো, যতদিন না বউ সাজিয়ে না আনছেন এই বাড়িতে, আমি আর আসতাম না।

আবির করুন চোখে চাইলো তার পুতুলের পানে। তাকে না দেখে যে তার বিজ্ঞানী মশাই এক মুহূর্ত ও থাকতে পারে না। এ কেমন পরিক্ষায় ফেলল তার পুতুল তাকে। এই পরিক্ষা যেনো পদার্থ বিজ্ঞানের টিউটোরিয়াল এর চেয়েও কঠিন, যার মানে অগ্নি পরিক্ষা।
আবির এক দ্বন্দ্ব দাড়ালো না, ছুটে গেলো মায়ের কাছে ।

মায়ের কাছে তৃনার চলে যাওয়ার কথা বলতেই খিল খিল করে হেসে উঠল রেহানা খান।
রেহানা খান উত্তর দিলেন আবিরকে
এবার তৃনাকে অনুষ্ঠান করে নিয়ে আসবো। বিয়েটা যেভাবেই হোক। বিয়ে তো হয়েছে। তাছাড়া ওর পরিক্ষা সামনে। তাই ওকে যেতে হবে।
আবির হতাশ চোখে চাইলো, এই চাহুনির মানে রেহানা খানের বুঝতে বাকি রইলো না।
বিকেল নাগাত খান সদস্যরা গাড়ি নিয়ে ছুটলো সাভারে।

আব্বু ও আব্বু। তুমি এখনও আমার উপর অভিমান করে আছো।
সফিউল আহমেদ তার পুতুলের মতো মেয়ের পানে চাইলেন, কতদিন দেখেনি তার পুতুলকে।
ইশারায় ডাকলেন তৃনাকে সফিউল আহমেদ।
তৃনা পায়ের কাছ থেকে ছুটে গিয়ে বসল, সফিউল আহমেদের নিকট।
সফিউল আহমেদ তৃনার চোখের পানি মুছলো, ললাটে চুমু দিয়ে, মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বলল,অনেক শুকিয়ে গেছিস।

বাবার কথায় আহ্লাদী হলো তৃনা।
তৃনা বুঝে গেছে তার বাবার মন গলেছে।
চট করে উঠে দাড়ালো তৃনা। বাবার জন্য চা বানাতে গেলো রান্নাঘরে।
তৃনা কক্ষ ত্যাগ করতেই প্রবেশ করলো আতিক খান ও রেহানা। সাহেলা খানম পাশের টিটেবিলে নাস্তা রেখে বসলেন পাশে।

আতিক খান সফিউল আহমেদের নিকট নাস্তার বাটি এগিয়ে দিলেন। মৃদু গলায় বলে উঠলেন,
ভাইজান।
পুতুলকে আমরা চাইছি ওর পরিক্ষার পর পর অনুষ্ঠান করে নিতে আপনি কি বলেন।
সফিউল আহমেদ নরম গলায় জবাব দিলো, রোদেলা মায়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনলাম, সে তারিখ আমায় ফোন দিয়ে আলোচনা করে ফিক্স করে দিয়েছে,১ তারিখ নাগাত হবে। একটা যাক, তারপর নেহাৎ তৃনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো।

রেহানা সম্মতি দিলো। তার ভাইকে শুধালো,
তাই ভালো হবে। ততদিনে তুমি ও সুস্থ হবে।
পারিবারিক আলোচনা মাঝে তৃনা এসে চা দিয়ে গেলো, তার বড়দের আলোচনায় না৷ থাকাই ভালো, তৃনা তড়িৎ স্থান ত্যাগ করলো।

কার সাথে কথা বলছিস আন্নি।
আন্নি পিছন ফিরে চাইলো। মেহেরিমা দাঁড়িয়ে আছে। আন্নির শুকনো ঢোক গিলল, তার মাকে শুধালো, না মানে মা, আসলে আমার একটা বন্ধু।
মেহরিমা মেয়ের এমন তোতলানো দেখে হাত থেকে ফোনটা কেরে নিলো।
স্ক্রিনে দেখতে পেলো রাইদ নামে সেভ করা নাম্বার।

মেহরিমা ভ্রু কুচকালো, গম্ভির কন্ঠে বলতে লাগলো, প্রেম করছিস।
আন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না।
মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো, হ্যা মা।
মেহেরিমা মেয়ের শিকার উক্তি দেখে হতভম্ব।
তাহলে কি হতে চলেছে আন্নির সাথে।

চা খাবেন মশাই। মেয়েলি কন্ঠে চক্ষু ফিরে চাইলো আবির।কালো শাড়িতে পুতুলকে দারুণ লাগছে। বিয়ের পর আজ তৃনা প্রথম শাড়ি পড়েছে। চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। একটা লালছে কাঠগোলাপ দিলে, হয়তো প্রথম দিনের মতো ভয়ংকর সুন্দর লাগতো, আবিরের মতে। এখনো আবির ডেবডেব করে চেয়ে আছে। তৃনা গলা খাকাড়ি দিলো। চা মুখের সামনে ধরে আবারোও শুধালো, খেয়ে নিন নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।

আমার বানানো স্পেশাল চা। না খেলেই মিস।
আবির হাত থেকে চা টা নিলো, হালকা চুমুক দিয়ে, এগিয়ে দিলো ফের তৃনার পানে।
তৃনা ভ্রু কুচকালো,

আবির জবাব দিলো, মনে হয় চিনি ঠিক হয়নি।
তৃনা চুমুক দিলো, আবিরের পানে চা টা এগিয়ে দিয়ে বলল, চিনি ঠিকই আছে, ফাজলামো করবেন না বিজ্ঞানী মশাই।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২২

আবির চায়ের কাপ টা নিয়ে তৃনার ছুয়ে দেওয়া জায়গায় চুমুক দিলো, চোখ টিপ দিয়ে বলল, এবার চিনি ঠিক আছে।
তৃনা কটমট চোখে চাইলো, পাশে থাকা বালিস টা নিতেই আবির বুঝলো সাইক্লোনের আবাস। চায়ের কাপ কাবার্টে রেখেই দৌড়ে বের হলো কক্ষ থেকে,
অতঃপর….

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৪