মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২২

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২২
অনামিকা রহমান

দরজা খোলো পুতুল, যতই ওয়াশরুমে আমায় বন্দি করে রাখো, কোনো কিছু লাভ হবে না, দিন শেষে ওই আমার কাছেই আসতে হবে। পালানোর জন্য কোনো সুযোগ পাবে না।
তৃনা আবিরের কথায় হাসলো, দরজায় নক করে টাওয়ালটা এগিয়ে দিলো ওয়াশরুমের ভিতরে।
কিন্তু কি হলো, বিজ্ঞানী মশাই যে হাত পাকড়ে টেনে নিলো তার পুতুলকে।

তনুময় আটকে গেলো পুরুষালী দেহে।
আবির মুচকি হাসলো, যার মানে টা তৃনা খুব বুঝে গেছে, এ যাত্রায় তার আর রক্ষে নেই।
দেয়ালে ঠেকে গেলো তৃনার দেহ।
অধরের চুম্বনে শিরধারা জুড়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।বেসামাল তার বিজ্ঞানী মশাই। তৃনা আর আটকালো না তার বিজ্ঞানী মশাইকে। কেটে গেলো কিছু রোমাঞ্চকর সময়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আব্বু আমি বিয়ে করতে চাই।
রিয়াদের মুখে এমন কথা শুনে তার বাবা রেজাউল করিম ছেলের পানে চাইলো আর বলল,আগে সরি বল!
রিয়াদ ভ্রু কুচকালো, জবাবে বলল –
~কিন্তু কিসের জন্য, আব্বু?
~বললাম না সরি বল।
রিয়াদ সরি বলার মানেই বুঝতে পারছে না৷
~কিন্তু কেনো,কিসের জন্য সরি বলবো, আব্বু?
~বলছি না, সরি বল!

রিয়াদ মাথা চুলকালো,কিছু না বুঝতে পেরে বলল,
~কিন্তু বলবে তো,কেনো সরি বলব?
রেজাউল করিম ছেলের পানে চেয়ে আবার বলল,
~আগে সরি বল,তারপর বলতাছি!
রিয়াদ এবার অধৈর্য্য হয়ে বলল,
~ওকে,ওকে,ঠিক আছে, আমি সরি বলছি।আই এম সরি, আব্বু।এবার ঠিক আছে,এখন বলো তো একটু আগে কিসের জন্য সরি বললাম।

~রেজাউল করিম রিয়াদের পিঠে চাপড় মেরে বলল,এবার তুই বিয়ের জন্য প্রস্তুত।
বাবার এমন কথা শুনে রিয়াদ হতভম্ব।
রেজাউল করিম আবার ছেলেকে বলে উঠল, তোর ট্রেনিং কম্পিলিট হয়েছে।
রিয়াদ ভ্রু কুচকালো, তার বাবাকে শুধালো, এই ট্রেনিং এর মানে কি আব্বু?
রেজাউল করিম চায়ে চুমুক দিতে দিতে জবাব দিলেন,
~এটা শেখানোর কারন,তুই বিনা কোনো কারনে সরি বলা শিখে গেছিস বাবা।
কি বললে তুমি শুধু শুধু কারনে আমায় সরি বলো!

মেয়েইলী কন্ঠে পিছন ফিরলো রিয়াদ আর রেজাউল করিম। রিয়াদের আম্মু সায়েমা সুলতানা কটমট করে আবারোও বলে উঠল, এর মানে ছেলেকে শিখাচ্ছো, আমি তোমায় শুধু শুধু সরি বলাই।
রিয়াদ এদের খুনসুটি দেখতে অবস্থ।মায়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো রিয়াদ। তার মাকে একটা রোদেলার ছবি দেখিয়ে শুধালো, আজ আমি কোনো ঝামেলা চাইছি না, মা কেমন লাগে বল তো।
সায়েমা সুলতানা রোদেলার ছবি টা দেখলো তার বেশ লেগেছে। এমন একটা মেয়েকে সে বউ করেই আনতে চায় তার ঘরে।

সায়েমা সুলতানা হাসলেন, রেজাউল করিমের পানে চেয়ে ইশারা করলেন, রেজাউল করিম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।
রিয়াদের বাবার সম্মতি পেয়েই রিয়াদ কে সায়েমা সুলতানা বলল, তারা কালই যাচ্ছে রোদেলাদের বাসায়।

সানি তোকে একটা ভিডিও পাঠিয়েছি। তোর কাজ হচ্ছে এটা নিয়ে বাবাকে দেখিয়ে আসা । সকাল ১০টার মধ্যে যেনো পৌছে যায়।
সানি তৃনার কথায় জবাব দিলো, ঠিক আছে।

কলিং বেল বেজে ওঠার সাথে সাথে সদর গেট খুলে দিলো তুলি। সানিকে দেখা মাত্রই যেনো লজ্জার ছাপ ফুটে উঠল, তার অবয়ব।
সানি মুচকি হেসে তুলিকে শুধালো, কেমন আছে, সকিনার আম্মা।
তুলি হেসে জবাব দিলো, জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।
এর মাঝেই সাহেলা খানমের আগমন ঘটলো, সানি তাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, সফিউল আহমেদ বাসায় আছেন কিনা?
সাহেলা খানম জবাব দিলেন, সে বাসায় আছে।
সানিকে তার কক্ষ দেখিয়ে দিয়ে সাহেলা খানম চলে গেলেন রান্না ঘরে, সাথে তুলিকেও নিয়ে গেলেন।

সালাম বিনিময় করে সানি বসল, সফিউল আহমেদের নিকট। কথা গুছিয়ে বলল,
আংকেল তৃনা আপনার কাছে আমায় পাঠিয়েছে।
ভিডিও টা বের করে এগিয়ে দিলো সানি।
তৃনা পদত্যাগ করেছে, তার ভিডিও।
সফিউল আহমেদ এখন নিশ্চিন্ত। সফিউল আহমেদের সাথে আরও কিছু ক্ষন কথা বলার পড়ে সানি বিদায় জানালো।

সাহেলা খানমকে বিদায় জানাতে গিয়ে আটকে গেলো সানি। সাহেলা খানম নাস্তা না করিয়ে ছাড়বে না সানিকে। সানিও ভদ্রছেলের মতো বসল।
বাইরে কাবই বাংগারি কাকা কবিতা হাকছে। কা দিয়ে কাগজ আর বই তো বই। কবিতা বলার সুবিধার জন্য কাগজবই না বলে কাবই বলে তারা।
তার বাংগারি কেনার কবিতাই যেনো, ভিন্ন। পাড়ার বাচ্চারাও যেনো তা খুব সহজে মুখস্থ করে ফেলেছে।যেমনঃ

~টিন,ভাংগা,চোরা,হাড়ি-পাতিল থাকলে বিক্রি করতে পারেন।
~বইখাতা পেপার পত্র থাকলে বিক্রি করতে পারেন।
~নষ্ট মোবাইল,নষ্ট টিভি,নষ্ট এসি থাকলে বিক্রি করতে পারেন।
~কাবইইইইইইইইইই।

এই কাবই ওয়ালা আসা মাত্রই তুলি চেচিয়ে থামালো তাকে। তুলিও কিছু বিক্রি করবে তাকে।তাই ডাক দেওয়া।
কিছু পুরোনো পেপারের বস্তা নিয়ে বের হলো তুলি, তুলির এমন বের হওয়া দেখে সানি বাইরে চাইলো। ইতোমধ্যে সানির নাস্তা করা শেষ। তাই সাহেলা খানমকে বিদায় জানালো সানি।

গুটি গুটি পা ফেলে আগালো সানি। তুলি পেপার গুলো কাবই কাকাকে দিলো। তুলির পেছনে গিয়ে দাড়ালো সানি। তুলির বুঝতে বাকি রইলো না, কে তার পেছনে দাঁড়িয়ে। এর মধ্যেই কাবই কাকা তুলিকে শুধালো, মাগো আর কিছু নাই থাকলে নিয়া আসো।তুলি খিল খিল করে হাসলো। সানির পানে চেয়ে তুলি বলল, মানুষ কেনেন মামা।
কাবই কাকা বিষ্ময়কর ভাবে চাইলো। তুলি আবারো হেসে সানিকে দেখিয়ে বলল, একে বিক্রি করতে চাই। কত দিবেন বলেন মামা।

কাবই কাকা তুলির সাথে হাসলো আর বলল,মাগো মানুষ তো আমি কিনি না৷
সানি হতভম্ব তুলির কথা শুনে। চেচিয়ে জবাব দিলো তুলিকে, কি সাংঘাতিক মেয়েরে তুমি। আমায় বিক্রি করতে চাইছো। তুমি তো তৃনার চাইতেও এক ধাপ সামনে আগানো৷
তুলি কোনো রকম হাসি আটকে কাবই কাকাকে বলল, দেখুন প্রস্তাবটা মন্দ না, ২টো কিডনি,২টো চোখ, মাথার মগজ, শরীরের রক্ত, এই মানুষ টা বিক্রি করলে এক রকম বড় লোকই হলে যাবো আপনি আর আমি। ডিলে রাজি হয়ে যান।

কাবই কাকাও সমান তালে হাসলো, সানির পানে চেয়ে শুধালো, তা আব্বাজান, বিক্রি করবেন আপনাকে।
সানি জবাব দিলো, সে পরে দেখা যাবে। টাকা টা বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান তো কাকা। নাহলে আপনার লস হবে ব্যবসায়।
সবকিছু গুছিয়ে কাবই চলে গেলো।

সানি তুলির আরও সামনে এসে দাঁড়ালো। গম্ভির কন্ঠে বলল,বড্ড দুষ্ট হয়েছো। একটু অপেক্ষা করো দুষ্টমির পাকনা কেটে ঘরে বসিয়ে রাখবো।
তুলি সানির পানে চাইলো, দুষ্টমির দেখলেন কি মশাই সবে তো শুরু হলো। তো আজ এ পর্যন্ত, আল্লাহ হাফেয।।
তুলি বাসায় পথে হাটা শুরু করল, সানির ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটলো, কমল কন্ঠে বলে ফেলল, পাগল একটা।

হঠাৎ মেহমান আসাতে রমরমা অবস্থা বাসার। তনয় আহমেদের বাসায় এমন মেয়ের বিয়ের জন্য হুট করে প্রোপজাল আসবে, কেউ বুঝতে পারে নি। রিয়াদকে দেখে চিনতে বাকি রইলো না সবার। রেজাউল করিম ও রিয়াদের মা সায়েমা সুলতানার পাশে বসে আছে রোদেলা। তার ছেলের পছন্দ দেখে তারা খুব খুশি।
রেজাউল করিম, তনয় আহমেদের হাত খানা ধরে বলল, ভাইজান, ছেলে আমার একটাই। আমার কোনো মেয়ে নেই। আপনার মেয়েটাকে যদি আমার ঘরের মেয়ে বানিয়ে দিতেন, সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকতাম।
তনয় আহমেদের ও রিয়াদকে পছন্দ। তনয় আহমেদ কিছুক্ষনের জন্য সময় চাইলেন, মেয়ের সম্মতি আছে কিনা জানার জন্য।

রোদেলাকে নিয়ে পাশের কক্ষে ডুকলেন তনয় আহমেদ।
মা রোদেলা, মেয়ের অনুমতি ছাড়া তার বিয়ে ঠিক করা উচিত না। তোমার যদি সম্মতি থাকে, আমি বিয়েতে হ্যা বলে দিবো।
~রোদেলা মাথা দুলালো, এর মানে সে বিয়েতে রাজি।
তনয় আহমেদের মুখে হাসি ফুটলো।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২১

বাইরে এসে রেজাউল করিমের মুখে মিষ্টি দিয়ে জানিয়ে দিলো মেয়ে বিয়েতে রাজি। সায়েমা সুলতানা রিয়াদের হাতে আংটি দিয়ে পড়িয়ে দিতে বললেন রোদেলার হাতে।
বিয়ের দিনকার্য ও ঠিক হয়ে গেলো। বিয়েটা সামনের মাসের ১তারিখে। বিয়ে পাকাপাকিতে যেনো একটা উৎসব তৈরি হলো বাড়িতে।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২৩