অবিনাশী পর্ব ৩৬

অবিনাশী পর্ব ৩৬
রেজওয়ানা আসিফা

নূর ঘুমাচ্ছিলো চেয়ারে হেলান দিয়ে,সকাল সকাল তিশার কলে ঘুম ভাঙলো তার। ঘুমন্ত কন্ঠে হ্যালো বলতেই অপাশ থেকে কান্না ভাসা কন্ঠে একটা বাক্য এলো,
-তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। হারিয়ে ফেলেছী।
নূর কিছুই বুঝতে পারছে না তিশার হলো টা কী। তবে তিশার এণন কান্না ভরা কন্ঠে তার ঘুম উড়ে গেছে। চেয়ার থেকে উঠে দারিয়ে বললো,

-কী হয়েছে? কাদছো কেনো এভাবে?
তিশা কাদতে কাদতে বললো,
-মামী ফোন করে তোমার নাম্বার নিয়েছে।
নূরের মেজাজ গরম হয়ে গেলো। চেচিয়ে বললো,
-কীহ্! কীভাবে নিলো? তুমি দিয়েছো কেনো? আর সে জানলো কীভাবে আমি নতুন ফোন কিনেছি?
-আমি জানিনা। সে হঠাৎ ফোন করেছে। তার ফোন পেয়ে আমি খুব অবাক হই। ফোন ধরার পরেই বলে, নূরের নতুন নাম্বার টা দাও যদি নূরের ভালো চাও তাহলে নাম্বার টা দাও।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

আমি বলেছি আমি জানিনা। আমাকে তোমার কসম দেওয়ার পর আমি দিতে বাধ্য হয়েছি।
তিশা ঢেকুর তুলে কাদছে। তিশার কান্না শুনে নূর বুঝতে পেরেছে যে তিশা ভয় পেয়ে আছে। নূর কী করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। তিশাকে রাখি বলে ফোনটা কেটে দিলো।

তিশা কান্না করতে করতে হ্যালো হ্যালো করছে ওপাশ থেকে আওয়াজ না পেয়ে তিশা মোবাইলের স্কিনে তাকালো, দেখলো ফোন কেটে দিয়েছে। তিশা মোবাইল টা বিছানায় রেখে পেছনে তাকাতেই দেখলো তানিয়া দারিয়ে আছে। তিশা তানিয়াকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। তানিয়া সবই শুনেছে তাই নতুন করে শোনার আর কিছু নেই। তিশাকে শান্ত করার জন্য জড়িয়ে ধরলো।
তিশাকে তানিয়া ছাদে নিয়ে গেছে। তানিয়া এক পাশে দারিয়ে আছে। তিশা একটু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। তানিয়া অভিমানী কন্ঠে বললো,

-তিশা! তুমি আমাকে কী ভাবো? আর পাচটা ভাবীর মতো?
তিশা কান্না থামিয়ে বললো,
-না বিশ্বাস করো! আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।
-তোমার উচিৎ ছিলো আমাকে বলার যে, নূর ভাই তোমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আর মামা মামী কে তো অনেক টা অন্য রকম ভেবেছিলাম আমি। তারা এমন হয়ে গেলো কীভাবে? তারা যেহেতু এই বিচ্ছেদের খেলায় মেতেছে তাহলে খেলা টা না হয় পূর্ণতা দিয়ে শেষ করবো। একদম কান্না করবে না। কোনো কান্না হবে না। চলো নিচে চলো। এখন হিয়া আর আয়ান ওই বাড়ি যাবে। আমাকে তোমাকে খুজবে।চোখটা মোছো নাহলে বাবা আবার সন্দেহ করবে।

– কিন্তু নূর…..
-চলো নূরকে তোমার করেই ছারবো এতো চিন্তা কিসের। নিচে চলো।
হিয়া আয়ান কে নিয়ে যাবে আজকে হিয়ার আত্মীয়রা। তমা আর আমান চৌধুরী দুই জনকে দোয়া করে দিলো। হিয়া তানিয়ার কিছে এসে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। হিয়া আয়ান বেড়িয়ে যেতেই শুধু হলো তানিয়ার মিশন। প্রথমেই নূহাকে নিয়ে তিশার রুমে গিয়ে আয়শাকে ফোন করলো।

আয়শার ফোন বন্ধ। কয়েকবার ফোন করার পরেও কাজ হলো না। ফোন বন্ধ বলছে।তানিয়া বললো আয়শার মা কে ফোন করতে। কিন্তু আয়শার মায়ের নাম্বার নেই নূহার কাছে। তিশা বলে উঠলো তার কাছে আছে। তিশার থেকে নাম্বার নিয়ে ফোন করলো। কিন্তু ফোন রিং হচ্ছে কেউ ধরছে না। পাচ বার ফোন করার পরে ফোন তুললো আয়শার মা। অপাশ থেকে রাগি কন্ঠে ভেসে এলো,

-কে? বার বার কে ফোন করছে?
-হ্যালো আমি নূহা!
অপাশের কন্ঠটা মনে হলো একটু ভয় পেলো। কাপা কাপা কন্ঠে বললো,
-হ্যা নূহা মা! কেমন আছিস?
-ভালো আছি। আয়শা আপু কোথায়?
-আয়…শা! আয়শা তো একটু বাইরে গেছে।
-বাইরে গেলে ফোন বন্ধ থাকে নাকি।

আয়শার মা অনেক টা ঘাবরে গেলো। কী থেকে কী বলবে বুঝতে পারছে না সে। কথা খুজে না পেয়ে বললো,
-আমি একটু পরে ফোন করছি রে মা। একটু কাজ পরে গেলো।
ফোন কেটে দিবে এমন সময় তানিয়া ফোনটা টান মেরে নিয়ে বললো,
-পালিয়ে গেছেতো মেয়ে?
অনেক টা ঘাবরে গেলো আয়শার মা। তোতলাতে তোতলাতে বললো,

-তু…মি কে গো..?
-আগে বলুন মেয়ে কোথায় আপনার?
-আমার মেয়ের খবর তোমাকে কেনো বলবো। আর নূহার ফোন তুমি নিয়েছো কেনো?
-মেয়েটাকে যদি বুঝতেন!মেয়েটা চায় কী সেটার দিক যদি খেয়াল রাখতেন তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না।

-আমার মেয়ে কোথাও জায়নি। আর তোমাকে চিনি না জানি না তুমি আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো? তোমার জ্ঞান তোমার পকেটে রাখো।
কথাটা বলেই ফোন কেটে দিলো। তানিয়া মোবাইল টা বিছানায় রেখে নূহাকে বললো,
-মামিকে কল করো। বলো তার আদরের ভাইকে ফোন দিতে।
-তারপর কী বলবো!

-আমি বলে দিবো তুমি ফোন দাও।
রাবেয়া বানু রান্না বসিয়েছে। বসার ঘরে ফোন বাজছে। তরকারি পুরে যাবে তাই যেতে পারছে না। কাজের খালা ফোনটা এগিয়ে দিলো। দেখলো নূহার ফোন। ব্যাস্ত সুরে বললো,
-কাজের সময়ই কেনো ফোন করিস বলতো! জানিস তো মা এই সময় রান্না করি। তোমার বাবা খেতে আসবে নামাজ পরে। কী বলবি তারাতাড়ি বল!

-তোমার আদরের আয়শার খবর নিয়েছো মা!
রাবেয়া বানুর ভ্রু কুচকে গেলো। রান্না পাশে রেখে উঠে দারালো। নূহার কথার দিকে গুরুত্ব দিয়ে বলল,
-কী হয়েছে সোজাসুজি বল!
-একবার তোমার বাড়ি কল করো সব জানতে পারবে। রাখি!
রাবেয়া বেগম বুঝতে পারছে না হলো টা কী।

রাবেয়া বেগম একবার আয়শার ফোনে কল করার পর দেখলো ফন বন্ধ। তারপর আয়শার মায়ের ফোনে কল করলো। রাবেয়া বেগমের ফোন দেখে আয়শার মার শরীর কাপছে। কী বলবে তাকে এই ভেবে। ফোন তুলতে তার ভয় করছে। কাপা কাপা হাতে মোবাইল টা রিসিভ করলো।
-হ্যালো আপা!
-হ্যা আয়শা কোথায়? আর হয়েছে কী? তোমাদের বাড়ি কী হয় না হয় নূহা কীভাবে জানলো?
-আসলে আপা…

-আসলে নকলে শুনতে চাই না গো! কী হয়েছে সেটা বলো!
-আপা! আয়শাকে পাচ্ছি না। ওর বান্ধবীর থেকে শুনলাম কোনো এক ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো।
কথাটার ঝাচ রাবেয়া বেগমের কানে খুব বাজে ভাবে লাগলো। রাগের মাথায় চিৎকার করে বললো,
-মেয়ে কোথায় কী আকাম করে দেখে রাখতে পারো না? মেয়ে কী করে না করে সব জেনে শুনে আমার ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করবে না? তোমাদের এইসব কান্ড আগে কেন জানলাম না। হায় আল্লাহ্!

তিশার এমন ম*রা কান্না দেখে নূরের সহ্য হচ্ছে না। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে তার।রাগে নূরের মাথা প্রচণ্ড বিগরে গেছে। নিজের কোকরানো চুল গুলো দুই হাত দিয়ে চেনে ধরেছে। টেবিলে রাখা মোবাইল টা হাতে নিয়ে চিৎকার করে মাটিতে ফেলতে যাবে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। কাপা কাপা হাতে ফোনটা নিজের কাছে আনলো। যেই ভয়টা পেয়েছিলো ঠিক সেটাই হয়েছে। রাবেয়া বেগমের ফোন! তার ফোনটা তুলতে ভয় হচ্ছে। এই মা তার বড্ড আদরের। একবার যদি উল্টা পাল্টা কিছু বলে তাহলে সে কীভাবে না করবে।

নূর মন স্থির করলো সে ফোন ধরবে না। কিছুতেই ধরবে না। ফোনটা ডয়ারে রেখে দিলো। কিন্তু কাজ হলো না। বার বার বেজেই চলছে। জানালা থেকে টেবিলের কাছে গিয়ে কাপা কাপা হাতে ডয়ার টা খুলে মোবাইল টা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে নিলো। অপাশ থেকে তার প্রাণ ঠান্ডা করা কন্ঠ ভেসে আসছে। কিন্তু আজ তার মায়ের এই “বাবা” ডাকটা তার ভ য়ের কারন হয়ে দারিয়েছে। রাবেয়া বেগম দুই বার বাবা বলে ডাকার পরও যখন নূর সারা দিচ্ছে না তখন রাবেয়া বেগম বললো,

অবিনাশী পর্ব ৩৫

– আমি আছি তো! ভয় পাস না। কথা বল!
নূরের মনে হচ্ছে তার বুক থেকে বিরাট বড়ো একটা পাথর সরে গেলো। হাফ ছাড়া কন্ঠে বললো,
-মা….আর পারছি না। বাচাও আমায়। তোমার নূরকে বাচাও।

অবিনাশী শেষ পর্ব