অবিনাশী পর্ব ৩৫

অবিনাশী পর্ব ৩৫
রেজওয়ানা আসিফা

তিশার কান্না সামান্য থেমেছে। নূর চাইছে তিশাকে থামাতে। কীভাবে থামাবে? সে নিজেই তো কাদছে। নূর নিজেকে সামলে বললো,
-তুমি কেদো না। আমি অন্য কারো হবো না। একটু শান্ত হও তিশা। আমি আছি তো। আমি তোমারি থাকবো।
-তুমি এখন কোথায় আছো? তোমার মোবাইল কোথায়? এটা কার ফোন?

-এটা নতুন কিনেছি। মোবাইল আম্মা লুকিয়ে রেখেছে দেয় না। আর এখন বাইরে আছি। রাস্তায়।
-মামি তো বললো, সে নাকি আয়শার আপার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছে। খুব তারাতাড়ি নাকি বিয়ে হবে?
-বিয়ে ঠিক করলেই হলো নাকি? আমি কখনো বিয়ে করবোনা ওকে।
তিশা একবার ফুপিয়ে কেদে উঠে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।
-এসব তোমার মনের ভুল। তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো। আমি বলেছি তো আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
-আমি জানিনা। আমার ভয় হচ্ছে। কেনো জানি খুব বেশি ভয় হচ্ছে। বার বার মনে হচ্ছে তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।
-বোকা। শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো কিচ্ছু হবে না।
-এখন কী বাড়ি যাবে?

-না না। বাড়িতে আসার পরেই আব্বু আমাকে আমার ঘরে আটকে রেখেছে। আজকে দরজা ভেঙে তারপর বের হয়ে এসেছি। এখন কিছুতেই বাড়ি যাবো না। আবার আটকে রাখবে।
তিশা অবাক হয়ে বললো,
-কীহ্! মামা আর মামী এতো কঠোর হয়ে গেছে?

-হ্যা। এরা নিজেদের অতিরিক্ত সন্মানি ভাবে। এর ফলে তাদের অহংকার জমে গেছে। আমি কিছু দিন অফিসে থাকবো। হিয়া আর আয়ানের বিয়েটা মিটে গেলেই আমাদের ব্যপার নিয়ে।
-না তুমি এখানে চলে আসো।
-নাহ্। এখন ওখানে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কী করবো কীভাবে রাজি করাবো এদের নিয়ে কিছু বুঝতেছি না। চিন্তা মাথায়। রাখো এখন। এই নাম্বারেই ফোন দিয়ো।
-ঠিক আছে। তুমি সাবধানে থেকো।

নূহা হিয়া সবাই চলে এসেছে। তানিয়া ইশানকে বলেছিলো খাবারের সব আয়োজন যেনো বাইরে করে। তাই ইশান খাবারের কোনো ব্যবস্থা বাড়ির মধ্যে রাখে নি।
হিয়াকে নিয়ে সবাই ঘরে বসে আছে। তানিয়া তিশা নূহা হিয়া সবাই একসাথে গল্প করছিলো। অনেকে হিয়ার ছবি তুলছে। হঠাৎ তমাকে ঘরে আসতে দেখে একটু চুপ হয়ে বসলো সবাই। তানিয়া খেয়াল করলো তমার হাতে একটা ব্যাগ।

চার পাশে একবার তাকিয়ে তমা সরাসরি তানিয়া আর হিয়ার কাছে এসে বসলো। ব্যাগটা খুলে দুই টা জুয়েলারি বক্স বের করলো। একটার উপর তানিয়ার নাম আর আরেকটার উপর হিয়ার নাম লেখা। হিয়ার টা হিয়ার হাতে আর তানিয়ার টা তানিয়ার হাতে দিলো। দুই জনে একসাথেই বক্স টা খুলে দেখলো সোনার হাতের বালা।হিয়া একবার বালার দিকে তাকালো আরেক বার তমার দিকে। তানিয়ার অবস্থাও একি। তমা তাদের কখনো এভাবে এই গুলো দিবে তারা ভাবতে পারে নি। তমা নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,

-দুজনে ওই গুলো খুলে রেখো আর এই গুলো পড়ো। বাড়ির বউদের হাতে এসব চুড়ি ঘড়ি ভালো লাগে না। তমার কথা শুনে হিয়া তানিয়ার দিকে তাকালো। তানিয়া ঈশারা দিতেই হিয়া পড়া শুরু করলো। তমা তিশার দিকে তাকালো। তিশা ব্যপারটা খেয়াল করে মাথা নিচু করে দারিয়ে রইলো। তমার মনে হচ্ছে অনেক দিন পর মেয়েটার দিকে সে লক্ষ করেছে। তমা তিশার কাছে গিয়ে আরেকটা ব্যাগ তিশার হাতে দিয়ে বললো,

– অনেক দিন তোমাকে কিছু গিফট করা হয় না। তাই এটা তোমার জন্য আনলাম। জতোটুকু চিনি তোমাকে, আমার মনে হয় এটা তোমার পছন্দ হবে। ভাইয়ের বিয়ে তাই এটা আজকেই পড়ো। সবাই তৈরি হয়ে নিচে এসো একবার। আমার কিছু ফ্রেন্ড এসেছে পরিচয় হবে।

কথা গুলো বলেই চলে গেলো তমা। তিশা তানিয়া হিয়া সবাই সবার দিকে তাকিয়ে আছে। হিয়া বলে উঠলো,
-বুঝলাম না কী হলো এটা? এটা কী সপ্ন? মা দিলো এটা আমাকে? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। এতো পরিবর্তন কীভাবে।
তানিয়া বালা টা পরে একবার নিজের হাতটা দেখে বললো,
-সব সময় তো সবার মন এক থাকে না। সেও হয়তো তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সবাই তো তৈরিই আছি চলো নিচে জাই।

হিয়া তিশার হাতের ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-এ মা এটা তো দেখাই হলো না। এটার মধ্যে কী আছে? খোলোতো তিশা।
তিশা কী ভাবছিলো কে জানে। হিয়ার কথা শুনে হাতের ব্যাগটার দিকে তাকালো তিশা। অনেক উত্তেজিত হয়ে ব্যাগ টা নিয়ে বসলো। ব্যাগটা খোলার পর দেখলো ভেতরে হিয়া আর তানিয়ার জুয়েলারি বক্সের মধ্যে আরেকটা বক্স। বক্স টা খুলতেই দেখলো ভিতরে একটা ডায়মন্ডের নোস পিন আর সাথে সোনার একটা বালা। নোস পিন ঠিক আছে তবে বালা একটা কেনো তিশা সেটাই বুঝতে পারছে না। বালাটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে তানিয়াকে বললো,

-তোমাদের দুই টা করে দিলো। আমাকে একটা গেলো দিলো?
তানিয়া ব্যপার টা সাধারণ ভাবে নিয়ে বললো,
-আরে অনেকে তো একটাও পরে। অন্য হাতে ঘড়ি পরে। তবে যাই বলো মায়ের পছন্দ কিন্তু বেশ ভালো।
তিশা নোস পিন টা পরতে পরতে বললো,

-এই জন্যই তো তোমাদের দুই বউকে পছন্দ করে এনেছে। তার পছন্দের প্রশংসা এখন সবাই করে।
সবাই একসাথে তৈরি হয়ে নিচে গেলো। নিচে অনেক মানুষ। তিশা একটু অবাক হলো। কারণ কখনো তাদের বাড়ির কোনো অনুষ্ঠানে এতো মানুষ দেখে নি। এখন হিয়ার পরিবারের সবাইও আছে। আর বাকিরা বাইরের।তবে এদের প্রায় অনেকেই তিশা চেনে। তার মায়ের বন্ধু বান্ধবী। হিয়ার একপাশে তানিয়া আরেক পাশে তিশা। সবাই একসাথে নামছে। দেখতেও খুব সুন্দর লাগছে। ওদের নামতে দেখে তমা এগিয়ে আসলো। তারপর উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে তানিয়া তিশা হিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলতে শুরু করলো,

– এরাই হচ্ছে আমার পরিবার।
তানিয়াকে দেখিয়ে বললো,
-এটা আমার বড়ো ছেলের ইশানের ওয়াইফ তানিয়া।
হিয়ার কাধে হাত দিয়ে বললো,

-এটা হচ্ছে আজকে ব্রাইড, আমার ছোট ছেলে আয়ানের ওয়াইফ। এবং এর পাশের জন্য কে তো সবাই চিনেনি। আমার মেয়ে আমার কুইন তিশা।
কুইন শব্দ টা শুনে তিশার মুখটা বলদের মতো হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবছে হঠাৎ তার মায়ের হলো কী। এতো ভালো ব্যবহার কেনো করছে। মাথার তার যেই কয়টা ভালো ছিলো ওই গুলোও ছিড়ে গেছে কীনা সেটাই ভাবছে তিশা।

অবিনাশী পর্ব ৩৪

কেউ কিছু না বুঝতে পারলেও আয়ান সব বুঝতে পেরেছে। ওখানে ইফাদ ছিলো এইজন্য তার মা এমন করেছে।সে যে ভালো আছে সুখে আছে এটাই সে ইফাদকে দেখাতে চেয়েছে। আয়ান আমান চৌধুরীর দিকে তাকালো। তার চোখে প্রাপ্তি। এটাই সে চেয়েছিলো। এটাই তার চাওয়া ছিলো তার চোখে ফুটে উঠেছে। আয়ান আমান চৌধুরীর কাছে গিয়ে কাধে হাত দিয়ে দারালো। আমান আয়ানের তিকে তাকিয়ে হাসলো।আয়ানও মুচকি হেসে বাইরে চলে গেলো।

অবিনাশী পর্ব ৩৬