অবিনাশী পর্ব ৩৪

অবিনাশী পর্ব ৩৪
রেজওয়ানা আসিফা

আজকে হিয়া আর আয়ানের বউভাত।
আয়ান আর হিয়া কাউকে তানিয়া নূরের বিষয় টা জানায়নি। ওদের এই সময় চিন্তা দিতে চায় না সে। হিয়ার বাড়ির সবাই এসেছে। ইফাদ আসতে চায়নি। কিন্তু আমান চৌধুরী নিজে তাকে আসতে বলেছে। আমান চৌধুরী চায় না আগের বিষয় নিয়ে তার ছেলের জীবনে প্রভাব পরুক। তমা আর কিছু বলেনি। আমান চৌধুরী তমাকে হাত জোর করে বলেছে আর ঝামেলা না করতে। এই একটা দিন যেনো সে সুন্দর ভাবে থাকে।

নূর এই বন্ধ ঘরে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছে। পুরো একদিন হয়ে গেছে এভাবে বন্ধ করে রেখেছে। তার আর সহ্য হচ্ছে না। আজকে হঠাৎ রাগের মাথায় দরজায় কয়েকটা লাথি মারার পর দরজা ভেঙে যায়। এভাবে দরজা ভাঙবে নূর কখনো কল্পনাও করেনি। মনে মনে নিজেকে খুব শক্তিশালী ভেবে জামাল সিকদারের ঘরের দিকে গেলো। জামাল সিকদার বাড়ি নেই। নূরকে এভাবে দেখে রাবেয়া বেগম বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

– তুমি এখানে আসলে কীভাবে? দরজা কে খুলে দিয়েছে?
নূর রাবেয়া বেগমের কোনো কথা কানে না নিয়ে বললো,
-আমার মোবাইল টা দাও।
রাবেয়া বেগম অবাক হয়ে বললো,
-দিন দিন বেয়াদব হচ্ছো? আমার কোনো কথার জবাব না দিয়ে উল্টো কথা বলছো?
-আম্মা মোবাইল টা দেও।
-আগে বলো দরজা কে খুলেছে?

– ধাক্কা দিয়েছি খুলে গেছে। মোবাইল টা দাও।
রাবেয়া বেগম নূরের কথা শুনেও না শোনার ভান করে বললো,
-ঘরে গিয়ে বস। আমি খারাপ দিচ্ছি।
নূরের এবার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। দাতে দাত খিচে বললো,
– আম্মা তুমি মোবাইল দিবে কীনা?

– মোবাইল আমার কাছে নেই। তোমার বাবা কোথায় রেখেছে আমি কীভাবে জানবো।
নূর রাবেয়া বেগমের কথার ভাজেই বুঝতে পেরেছে সে মিথ্যা কথা বলছে।
-ঠিক আছে। আম্মা একটা কথা শুনে রাখো, আমি জীবনেও আয়শাকে বিয়ে করবো না।
-তুমি বললেই হবে না নূর। আমি কথা দিয়েছি তাদের। তোমার বাবাও কথা দিয়েছে। তাই বাচ্চামো না করো না। একবার বিয়ে হয়ে গেলে সব ভুত মাথা থেকে নেমে যাবে।
নূর রেগে বললো,

-আম্মা তিশা আমার মাথার ভুত না! তোমরা যেমন কথা দিয়েছো আমিও কথা দিয়েছি তিশাকে। আমার কথারও মূল্য আছে।
-আচ্ছা আয়শা কী কম সুন্দর? তিশার থেকে তো আয়শা বেশি সুন্দর। মাদ্রাসার ছাত্রী। কতো বড়ো বড়ো হাফেজ বিয়ের প্রসতাব দিয়েছে জানো? ওইসব রেখে ওর বাবা মা তোমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজী হয়েছে। আমার তো মনে হয় এটা তোমার সাত পুরুষের ভাগ্য। এতো সুন্দর আর গুনের মেয়ে পাচ্ছো।

-গুন রূপ দিয়ে সংসার আর বিয়ে হয় না। তাই এসব পাগলামো রাখো প্লিজ।
-বড়োদের মুখের উপর কথা বলতে নেই নূর। তোমার বাবা বেশি রেগে যাওয়ার আগে তুমি এসব বন্ধ করো। আর আমি বলছি তো তুমি বিয়েটা করে নাও, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নূর পাশে থাকা ফুলদানি টা হাতে নিয়ে ভাঙতে গিয়েও রেখে দিয়ে দেয়ালে চারপাচটা আঘাত করে বললো,
-মা আমি ভালোবাসি তিশা কে! এটা ছেলে খেলা না। তুমি আজীবন আমাকে সাপোর্ট করেছো। আমার সাথে বন্ধুর মতো ছিলে। আজকে কেন এমন করছো? তিশাকে তো ছোট থেকে তোমরাই মানুষ করেছো। ওর শিক্ষায় কী এমন সমস্যা যে ওকে মানতে চাচ্ছো না?

-দেখো নূর! পরিবারের একটা ব্যপার আছে। সব পরিবারের সাথে আমরা আত্মীয় করতে পারিনা।
-কতো না নিজেদের অনেক আমলদার দাবী করো তাহলে তোমাদের এতো ভেদাভেদ কেনো চোখে পরছে।
রাবেয়া বেগম এবার প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বললো,

-বেশি হচ্ছে নূর! একটা ভালো নারী সংসার সুন্দর করে। স্বামী স্ত্রী দুই জন আমলদার হলে সংসারে বরকত আসে। আর আয়শার মধ্যে যেসব আছে তা তিশার মধ্যে নেই। ওরা দুই জন আলাদা। তোমার এইসব ফাল*তু কথা বন্ধ করো। আর বিরক্ত করো না আমাকে।

-মনে রেখো আম্মা আমি বিয়ে করবো না আয়শাকে।
কথা শেষ করেই নূর বেড়িয়ে গেলো। রাবেয়া বেগম বাধা দিলো না। কারণ জামাল সিকদার ছাড়া এখন ওকে আটকানো যাবে না।
নূর বাসা থেকে বের হতে যাবে এমন সময় বাসার দারোয়ান বললো,

-ভাইয়া খালু আপনাকে বাড়ির বাইরে যেতে বারন করছে। বাসায় জান।
-কালাম প্লিজ বিরক্ত করিস না। বাইরে যেতে দে। পথ থেকে সর।
-মাফ করবেন ভাই। খালু বারন করছে। তাই আপনাকে যেতে দিতে পারবো না।

এমনিতেই বাড়ি থেকে বের হয়েছে রাগ হয়ে। এখন আরো বিরক্ত লাগছে নূরের। কালাম ছেলেটা বেশি বড়ো না। নূর কালামের হাত ধরে পাশে সরিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় এদিক সেদিক হাটছে নূর। পকেটে দুই হাজার টাকা আছে। এখন সরাসরি তিশার বাড়ি যাবে নাকি একটা মোবাইল কিনবে সেটা বুঝতে পারছে না। অনেক ক্ষন ভাবার পর সিধান্ত নিলো, মোবাইল কিনবে। ১৫০০ টাকা দিয়ে একটা বাটন ফোন আর একটা সিম কিনে মোবাইল টা চালু করে তিশার নাম্বারে কল করলো।

সবাই সাজতে গেছে সবাই বলতে আয়ানের কিছু কাজিন ফাতেমা হিয়া আর নূহা। তানিয়া আর তিশা জায়নি। তানিয়ার শরীর টা ভালো জাচ্ছে না তাই সে যায়নি। আর তিশার মন মেজাজ ভালো নেই নূরের জন্য এইজন্য সেও জায়নি। হিয়া অনেক জোর করেছে। কিন্তু তার এই মূহুর্তে এই সাজগোজের প্রতি মন বসছে না। না পারছে সে কাউকে বলতে আর না পারছে এই যন্ত্রণা না কাউকে বলতে।

তিশা এক কাপ কফি নিয়ে বসে আছে ছাদে। উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। বড্ড ভয় হচ্ছে তার। সত্যিই কী বিয়ে হয়ে যাবে নূরের অন্য কারো সাথে, এই ভেবে। কী হবে তার! কীভাবে বাচবে সে। এসব ভাবতে ভাবতেই তিশার বুক ধূ ধূ করে কেপে উঠে।

অন্য মনষ্ক হয়ে কফির কাপে চুমক দিতেই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। বিরক্ত হয়ে মোবাইল টা হাতে নিলো পাশে টা টেবিল থেকে। ফোনের স্কিনে তাকাতেই দেখলো অচেনা নাম্বার। এমনিতেই মনে শান্তি নেই তার উপর আবার এইসব বিরক্তিকর ফোন। ফোনটা কেটে দিয়ে মোবাইল টা আবার টেবিলে রেখে দিলো। কাটার সাথে সাথে আবার ফোন আসলো। তিশা আগের বারের মতো বিরক্তী নিয়ে মোবাইল টা ধরে ওপাশের লোকটাকে গোটাকয়েক কথা শোনাতে যাবে তার আগেই অপাশের কন্ঠ টা তার সারা শরীর শীতল করে দিলো।
অপাশ থেকে তার চিরচেনা কন্ঠ হতে ভেবে এসেছে,

-তিশা আমি নূর। আমি তোমার নূর।
তিশা কাদছে। কান্নার চাপে সে উত্তর দিতে পারছে না। হো হো করে কাদতে কাদতে উত্তর দিলো,
-হ্যা…..হ্যালো।
জামাল সিকদার বাড়ি ঢুকেই বুঝতে পেরেছে নূর বাড়ি নিয়ে। ঘরে ঢুকে পাঞ্জাবী খুলতে খুলতে বললো,

অবিনাশী পর্ব ৩৩

-দেখে রাখতে পারলে না তো? ছেলে হাতের বাইর হয়ে গেলো তো? কতো বার বললাম সব তারাতাড়ি করতে। তোমার জন্য হলো না। বেশি বুঝলে? এবার দেখো কী হয়।
রাবেয়া বেগম শান্ত কন্ঠে বললো,
-আমার ছেলে ঠিক আমার কাছে ফিরে আসবে। এসব নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।

অবিনাশী পর্ব ৩৫