প্রেয়সী পর্ব ৬৩

প্রেয়সী পর্ব ৬৩
নন্দিনী নীলা

মধু আর রাহীসহ আরেক কেবিনের নার্স দৌড়ে চলে এসেছে ওই নার্স এর চিৎকারে। কেবিনে ঢুকে, মধু আর রাহী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ নার্সের গলা চেপে ধরে আছে। নার্স নিজেকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে চোখ উল্টে যাচ্ছে। মধু আর রাহী কি করবে বুঝতে পারছে না। ফুয়াদ কেন এমন করছে সেটাও ওদের মাথায় ঢুকছেনা। তারপর দৌড়ে গিয়ে ফুয়াদকে অনেক কষ্টের দুজন টেনে নার্সটার থেকে সরিয়ে আনে আর একটু হলে মনে হয় নার্স দম বন্ধ হয়ে মরে যেতো।

নার্স ছাড়া পেতেই কেশে উঠলো। তারপর ভয় ভয় চোখে সবার দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। মধু আর রাহী প্রশ্নবিদ্ধ চোখে নার্সটার পালিয়ে যাওয়া দেখল।
তারপর ফুয়াদের দিকে এগিয়ে রাহী বলল,,”ভাইয়া আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। তুমি কেন নার্সটার গলা চেপে ধরেছিলে? আর নার্সটা কেন ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল কি হয়েছিল এখানে?”
ফুয়াদ ফ্লোরে থেকে একটা ইনজেকশন তুলে মধু আর রাহীকে দেখিয়ে বলল,,”এই ইনজেকশন দিয়ে আমাকে মারার চেষ্টা করেছিলো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মধু অবাক কন্ঠে বলল,,”আপনি কিভাবে বুঝলেন আপনাকে মারার জন্য দিচ্ছিল। ভালো জন্য তো দিতে পারে!”
ফুয়াদ বলল,,”এটার ভেতরে যে মেডিসিন
আছে সেটা পরীক্ষা করলেই জানা যাবে।”
বলেই ফুয়াদ আরেকটা যে নার্স‌ দৌড়ে এসেছিল তার হাতে সিরিজ দিয়ে মেডিসিন পরীক্ষা করতে বলল। তারপরে রিপোর্ট ওকে দিতে বলল। নার্স টা বোকার মত ইনজেকশন নিয়ে চলে গেল।

পরীক্ষা করা হলো লাইভে নিয়ে তারপর জানা গেল মেডিসিনটা আসলে মারাত্মক মানুষের প্রাণ সংশয়ও ঘটতে পারে ওটা শরীরে প্রবেশ করলে। ফুয়াদ কে যে নার্স দেখাশোনা করছিল রাতের পর থেকে সেই নার্স উধাও। ফুয়াদ সবটাই বুঝতে পেরে গেছে ওই নার্স এর পেছনে অন্য কেউ আছে যে নার্সটাকে কাজে লাগিয়েছিল। এমন একটা ঘটনা ঘটেছে এখন আর এক দণ্ড ফুয়াদকে হসপিটালে রাখবে না কেউ। বিকেলে ফুয়াদকে বাসায় শিফট করা হলো। বাসায় এসে সবার আগে সমুদ্রের কথা জিজ্ঞেস করল ফুয়াদ। হসপিটালে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল কিন্তু করা হয়ে উঠে নি। সমুদ্রের সাথে আর কোন ভাবে কন্টাক্ট করা যায় নি সেটাই বলা হলো ওকে।

নার্স কে খুজে পেতে খুব বেশি দেরি হলো না। পর দিনই নার্সটাকে পুলিশ এরেস্ট করল নার্সের সমস্ত ইনফরমেশন হসপিটাল থেকে নেওয়া হয়েছিল। বিপদজনক নার্সের জন্য তাদের হসপিটালের নাম খারাপ হোক সেটা তারা চান না। ফুয়াদের বাবার চাচা তো সাথে সাথে পুলিশের খবর দিয়েছে সকালে হসপিটালে এসে তারপর হসপিটাল থেকে নার্সের ইনফরমেশন দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

ফুয়াদ এখন আগে থেকে অনেকটাই সুস্থ। আজকে ফুয়াদ একটু থানায় যেতে চায়। ওই নার্স টার বয়ান নিবে। কিন্তু বাসা থেকে ওকে বের হবার অনুমতি দিচ্ছে না। মধু ফুয়াদের মাথার কাছে বসে আছে আর ফুয়াদ খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে। মধু গালে হাত দিয়ে ফুয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফুয়াদ হুট করে চোখ মেলে তাকালো মধুর দিকে। মধু থতমত খেয়ে গাল থেকে হাত সরিয়ে চোখ পিটপিট করতে লাগল। অদ্ভুত চোখের তাকিয়ে আছে ফুয়াদ।

মধু সোজা হয়ে বসে বলল,,” কি হলো ডাকাতের মতো তাকিয়ে আছেন কেন যেন চোর ধরেছেন? আমাকে কি আপনার কাছে চোর মনে হচ্ছে?”
ফুয়াদ আপত মস্তক মধুকে দেখে বলল,,” তুমি শাড়ি পরেছো কেন?”
মধু শাড়ির আঁচল টেনে ঘোমটা দিয়ে বলল,,” নতুন বউ তাই শাড়ি পরে ঘুরঘুর করছি। শাড়ি না পরলে বিবাহিত ফিল হচ্ছে না।”

ফুয়াদ মধুর হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে ওকে বুকের উপর এনে ফেলে মধুর পিঠে এলিয়ে জড়িয়ে ধরে। ওর গালে এক হাত ডুবিয়ে বলল,,,” শুধু শাড়ি পরলে কি আর বিবাহিত ফিল পাবে আসো একটা আদর, সোহাগ করি তাহলে না ভালো করে ফিল পাবে।”

বলেই ফুয়াদ চোখ বন্ধ করে ঠোঁট চোকা করে মধুর ঠোঁটে চুমু খেতে চাইল।
মধু ফুয়াদের ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল,,” একটা কারণে পরি।”
ফুয়াদ মধুর হাতের তালুতে শব্দ করে চুমু দিয়ে চোখ মেলে তাকালো।
মধুর চোখে চোখে রেখে বলল,,” কি কারনে?”
মধুর দুষ্টু হাসি টেনে বলল,,” হাজবেন্ডের মন জোগাতে।”

ফুয়াদ বলল,,” ওমা তাই? তুমি আমার মন জোগানোর চেষ্টা করো? সারাজীবন তো আমি করে আসলাম।”
মধু ফুয়াদের বুকে আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করে বলল,,,”আমার হাজবেন্ডের মাথায় তো অনেক টেনশন ও দুশ্চিন্তা এখন। তার দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য আমি সেজে থাকি। সে তো আমাকে শাড়ি পরা অবস্থায় খুব পছন্দ করে। সে যেন তার সমস্ত চিন্তা ভাবনা, তার কিউট সুইট সুন্দরী বউ এর উপর সীমাবদ্ধ রাখে তাই আমার এতো আয়োজন।”
ফুয়াদ মধুর নাক ধরে টেনে বলল,,” সুইটহার্ট দেখি অনেক চালাক হয়ে গেছো।”
মধু বলল,,” জার্নালিস্ট ফুয়াদের ওয়াইফ আমি আমাকে তো চালাক হতেই হবে।”

” তাই নাকি।”
” হ্যাঁ।”
” শুনলাম মিতুল আমাকে দেখতে এসেছিল। কই দেখতে আসলো না তো।”
মধু মিতুলের কথা শুনতে মুখ গম্ভীর করে বলল,,” বাসার কেউ আপনাকে দেখার অনুমতি দেয়নি তাই নিজে থেকেই চলে গেছে। আমিতো ভেবে রেখেছিলাম সবাই অনুমতি দিয়ে দিলে ও আমি আপনার কে দেখতে দেবো না ঘর অব্দি ঢুকতে দেবো না। কিন্তু আমাকে আর কিছুই করতে হয়নি নিচে থেকে নাফিসা আন্টি এমন ধমক দিয়েছে যে আর উপরে আসার সাহস করে….

ফুয়াদ মধুর কথার মাঝেই ওর অধর দুটি চেপে ধরল। মধু রেগে বোম হয়ে কথা বলেছিল হঠাৎ ফুয়াদের এহনো কাছে স্তব্ধ হয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে ফুয়াদের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। ফুয়াদ মধুর ঠোঁট ছেড়ে ওর গলায় কাঁধে চুমু খেল মধু কাঁপতে কাঁপতে ফুয়াদের মাথার চুল শক্ত করে টেনে ধরেছিল।

টানটা একটু জোরেই ছিল যার ফলে ফুয়াদের সদ্য আঘাত টা জেগে ওঠে। ও মধু কে ছেড়ে দুহাতে মাথা চেপে ধরে। মধু নিজের উপর থেকে ফুয়াদের সরে যাওয়া টের পেয়ে হাতের মুঠোয় থেকে ফুয়াদের চুল ছেড়ে সোজা হয়ে বসে দেখে ফুয়াদ দুহাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। ওর মুখে স্পষ্ট যন্ত্রণার ছাপ। মধু নিজের হাতের দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখে দুই তিনটা চুল ওঠে এসেছে ওর হাতে ও ভয় পেয়ে যায়।

ওর জন্য যে ফুয়াদ মাথায় আঘাত পেয়েছে এটা বুঝতে পেরেও অনুতপ্ত গলায় বলে,,” ইস আমি কি করে ফেললাম। আমি ইচ্ছে করে এটা করিনি বিশ্বাস করুন‌। আমি আপনাকে আঘাত দিতে চাইনি কিন্তু কিভাবে যে কি করে ফেললাম।”

মধুর চোখে পানি চলে আসলো। ফুয়াদ নিজের মাথা ব্যথায় কোনভাবেই কলাতে পারছে না তবু ও খিঁচে রাখা চোখ দুটো হালকা খুলে মধুকে বলল,,পেইন কিলার দাও।
মধু কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে মেডিসিন বক্স নিয়ে আসলো সেখান থেকে খুঁজে ঔষধ বের করে দিল।
ফুয়াদ ঔষধ খেয়ে মধু কে বলল,,” তুমি কাঁদছো কেন? কান্না থামাও প্লিজ। এই ব্যথার থেকেও তোমার চোখের অশ্রু আমার কাছে বেশি যন্ত্রণা দায়ক। ঐ অশ্রু আমার হৃদয় আঘাত করে। একসাথে এতো ব্যথা আমি সইতে পারবো না। please don’t cry.”

মধু চোখ মুছে ফুয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। শব্দ করে কান্না না করলেও ওর চোখের পানি পড়ছে ফুয়াদের কপালে।
মধুর কান্নার শব্দে বাইরে থেকে নাফিসা বেগম ছেলের রুমে চলে এসেছে ছেলের কি হয়েছে জানতে। এসে উত্তেজিত গলায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।

” মাথা ব্যথা করছে।” বলে উঠে ফুয়াদ।
নাফিসা বেগম ফুয়াদের পাশে বসে মধুকে কাঁদতে দেখে বলেন,,”ওর কি হয়েছে? ও কান্না করছে কেন?”
ফুয়াদ উত্তর দেয়,,,”আমার মাথা ব্যথা করছে দেখে ও কাঁদছে।”

” এজন্য বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করলে বিপদ। কোথায় স্বামীর ব্যথা লাগছে সেটা সারানোর চেষ্টা করবে তা না সে কেঁদে কেটে অস্থির হচ্ছে এখন তার কান্না থামানোর জন্য একজন লাগবে।”একটু অসন্তুষ্ট গলায় বললেন নাফিসা বেগম।
তিনি তাড়াতাড়ি নিচে এসে ফোন করলেন ডাক্তারকে।

মধু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,,”আন্টি এখনো আমায় পছন্দ করে না। দেখেছেন আফসোস করে গেল।”
ফুয়াদ বলল,,” আমার ব‌উ আমি পছন্দ করলেই হয়। আর কারো করার প্রয়োজন নাই।”
মধু ফুয়াদের কথায় লাজুক হাসলো।

প্রেয়সী পর্ব ৬২

ডাক্তার এসে যখন জিজ্ঞেস করল ফুয়াদকে,,,” হঠাৎ ব্যথা বাড়ল কেন! কোথাও আঘাত পেয়েছো নাকি?”
মধু তখন চোরের মতন মুখ করে রুমে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ ব্যথার তো ওর জন্যই পেয়েছে। ফুয়াদ ব্যথা ঔষধ খাওয়ার পরে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে এসেছে। ফুয়াদ এখন ডাক্তারের সামনে বসে দুষ্টু হেসে মধুর দিকে তাকিয়ে আছে।
ফুয়াদ বলল,,” এখন পেইন নাই ডক্টর আপনি শুধু শুধু কষ্ট করে এসেছেন।

প্রেয়সী পর্ব ৬৩(২)