প্রেয়সী পর্ব ৬৩(২)

প্রেয়সী পর্ব ৬৩(২)
নন্দিনী নীলা

ফুয়াদ নার্স টার সাথে থানায় গিয়ে দেখা করে আসলো। থানা থেকে আসার পর থেকে ফুয়াদের মন মেজাজ খারাপ। তারপর থেকে ও অনেক বেশি খিটখিটে হয়ে গেছে। এরপর আর একদিনও থানায় যায়নি মেয়েটার উপর থেকে সমস্ত অভিযোগ ফুয়াদ তুলে নিয়েছে। বিষয়টা পরিবারের সবাইকে ভাবাচ্ছে। এমন একটা ডিসিশন কেন নিয়েছে সবাই ওকে জিজ্ঞেস করে পাগল করে দিচ্ছে। সবার এত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েও ফুয়াদের হেলদুলে নাই। ফুয়াদ সবার সাথে চিল্লা মিল্লা করেছে।

রাগী কন্ঠে বলেছে সবাইকে,,” আমাকে মারতে চেয়েছিল। আমি অভিযোগ তুলে নিয়েছি তোমরা কেন এতো মাথা ঘামাচ্ছ? দয়া করে এই নিয়ে আমাকে আর কেউ প্রশ্ন করবে না।”
ফুয়াদের এমন কথায় রেগে ফুয়াদের বাবা এগিয়ে এসে একটা ধমক দিয়ে বললেন,,”ফাজলামো পেয়েছো? সবার সাথে রাগ দেখাচ্ছ কি হয়েছে তোমার? সবাই তোমার জন্য চিন্তা করছে টেনশন করছে আর সেখানে তুমি সবার সাথে গলা উঁচু করে ধমকিয়ে কথা বলছ।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফুয়াদ মাথা নিচু করে বলল,,”আই এম সরি বাবা, আমার মন মেজাজ ভালো নেই দয়া করে তোমরা আমাকে অভান্তর প্রশ্ন করো না। আমাকে একটু আমার মতো থাকতে দাও। নার্স আর যে আমার উপর হামলা করতে চেয়েছিল তাকে নিয়ে আর কেউ কোন মামলা করো না আমি সবকিছু থেকে দূরে সরে এসেছি আমি দূরে থাকতে চাই। ভাইয়ার সাথে কন্টাক্ট করতে পারলে তাকে বাসায় আসতে বলো তোমরা।”

বলেই ফুয়াদ উপরে চলে গেল। মধু এক কোনায় দাঁড়িয়ে ফুয়াদের কথাবার্তা শুনতে ছিল। ফুয়াদের খিটখিটে মেজাজের জন্য নিজে ও ওর সাথে কথা বলার সাহস পায় না। ওইদিন নার্সের সাথে দেখা করতে যাওয়ার পর থেকে ফুয়াদ কেমন যেন চেঞ্জ হয়ে গেছে। নার্সের সাথে দেখা হওয়ার পর কি এমন হলো যে ফুয়াদের মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেল। প্রথম হসপিটাল থেকে ফিরে ফুয়াদ বলেছিল যে ওর উপর হামলা করেছে যে তাকে দেখে নেবে। নিজের হাতে শাস্তি দেবে।

আরো কত কী! আর এখন নিজে থেকেই সে সব থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সব অভিযোগ তুলে নিচ্ছে ‌ তাকে ধরার চেষ্টা নিজেও করবেনা আর কাউকে করতেও দিচ্ছে না এসব কি হচ্ছে? কোন তো একটা রহস্য অবশ্যই আছে। কিন্তু কি রহস্য, কি এমন জানতে পারল ফুয়াদ যাতের তার রাগ, জেদ সব নিমিষেই পাল্টে দিল।‌ মধু অন্যমনষ্ক হয়ে রুমে চলে এলো। এমনিতে এতো বড় একটা ঝড় বয়েই গেল ফুয়াদ এর উপর দিয়ে আবার আজকে বাবার সাথে এমন একটা ঝামেলা। রুমে এসে দেখল রুমে ফুয়াদ নাই গেল কোথায়? ও রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক খোঁজ করা শুরু করে দিল এতো রাতে কোথায় গেল! ইদানিং রাতেও মধু সজাগ হলে দেখে ফুয়াদ ওর পাশে শুয়ে নেই কিছু তো একটা হয়েছে ফুয়াদের যেটা উনি সবার থেকে আড়াল করার চেষ্টা করতেছে।

মধুকে চিন্তিত হয়ে বাইরে ঘুরতে দেখে তিন্নি ওর হাত টেনে বলে,,”ওই তোর কি হয়েছে এতো টেন্স কেন তুই? টেনশনের সময় তো এখন আমার টেনশন করছিস তুই ব্যাপার কি? ভাই তো সুস্থ হয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ।”
“সুস্থ হয়ে এক চিন্তা দূর হলো ‌ আরেক চিন্তা এসে বাসা বেঁধেছে। উনার কিছু একটা হয়েছে জানিস! কেমন যেন মন মরা হয়ে থাকে। কথা বলতে গেলে মেজাজ দেখায়‌। আগে জানিস আমার সাথে একটু গলা উঁচু করে কথা বলতে না। যায় হয়ে যাক আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলত। আর এখন আমার সাথে মেজাজ দেখায়।”

“ভাই তো কত কাজ হয়তো কিছু নিয়ে ভাইয়ের মন মেজাজ ভালো নেই। এজন্য এমন করছে‌। এসব নিয়ে প্যারা নিস না। আর আমি তো বিপদে আছি দোস্ত।”
“কেন তোর আবার কি হয়েছে?”

” আগামীকাল সেই রং নাম্বারের ছেলেটা আসবে আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বলল। দেখলাম না, চিনলাম না, জানলাম না, নামটা পর্যন্ত জানিনা সেই ছেলে নাকি তার মা বাবাকে কালকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবে কেমন লাগে বলতো। তোদের বিয়ের দিন এসেছিল আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেছে,জানিস। সেই ছেলে আমাকে ফলো করে কিন্তু আমার সামনে আসে না কত বড় বদের হাড্ডি।”
” ভালোই তো বাড়ির ছোট মেয়ে তুই তোর বিয়েটা এখন হলে সবার মন মেজাজ আবার ভালো হয়ে যাবে।”
“ধুর তুই চেঞ্জ হয়ে গেছিস আগে হলে কত কিছু করতি। আর এখন দেখ কত স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলি‌। যা তুই ভাইয়া কে খোঁজ।”

তিন্নি চলে গেল।
মধু বাড়ির কোথায় ফুয়াদকে না পেয়ে ওর মাথায় আসলো ছাদে তো দেখা হলো না। তাড়াতাড়ি ছাদের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো। ছাদ ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে এমন ঘুটঘুটে অন্ধকারে ওর মন খারাপের সময় ও এই ছাদকে সঙ্গী বানিয়েছিল। অন্ধকারে ছাদের মাঝখানে চলে গেল। ছাদের কোথাও ও আর কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। মানুষটা উপরে আসলো, তারপর সে এমন মিসিং হয়ে গেল কোথায়? কেউ নাই দেখে মধু পেছনে ঘুরে চলে আসতে ধরবে তখন‌ই পেছনে কারো অস্তিত্ব টের পায়। অন্ধকারে মানুষটার পারফিউমের ঘ্রানে মানুষটাকে এক মুহূর্তে চিনে ফেলে‌। মধু ফুয়াদের পারফিউমের ঘ্রাণ পেয়েছে। মধু খুশি হয়ে ফুয়াদের মন মেজাজ ঠিক করার জন্য দুই হাতে ফুয়াদ কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।

তারপর একটু অভিমানী কন্ঠে বলে,,”কোথায় চলে যান একটু পর পর? আমি কখন থেকে খোঁজে যাচ্ছি আপনাকে আমার বুঝি টেনশন হয় না। এখন ছাদে এসেছেন কেন? রাতে যখন ছাদে আসবেন একা এসেছেন কেন? আমাকে নিয়ে আসতেন দুজনের না হয় ছাদের অন্ধকারে একটু প্রেম করতাম। একা এসে কি আপনি ভূত দের সাথে প্রেম করতে চাইছিলেন?”

ফুয়াদ মধুর দু কাঁধে হাত রেখে ওকে টেনে নিজের বুকে থেকে ছাড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,” তুমি ছাদে এসেছ কেন?”
মধু কে এভাবে ফুয়াদ বুক থেকে টেনে সরানোর জন্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে মধু। নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,,”আপনার জন্য এসেছি আপনাকে খুঁজতে!”
“এখনই নিচে যাও। আর আমাকে খুঁজতে যেখানে সেখানে আসবে না। আমি ছোট বাচ্চা না যে হারিয়ে যাবো।”
“ছোট বাচ্চা হতে হবে কেন আপনি আমার বর আপনাকে তো খুঁজব। আর আপনাকে ছাড়া আমি একা নিচে যাব কেন? আপনাকে নিয়ে যাব চলেন।”

“মধু মুখে মুখে তর্ক করো না। নিচে যেতে বলছি নিচে যাও। আমি পরে আসবো।”
মধু ফুয়াদের হাত জড়িয়ে ধরে বলল,,”তাহলে আমিও পরেই যাবো।”
মধুর ত্যারামি দেখে ফুয়াদের মেজাজ চুঙ্গে উঠে গেল ও হাত ঝামটা দিয়ে মধুকে ছাড়িয়ে ধমক দিয়ে চিৎকার করে উঠলো,,”নিচে যেতে বলছি নিচে যাও এতো কথা বলো কেন? তোমার যন্ত্রণা কি একটু শান্তিতে একাও সময় কাটাতে পারব না। সারাক্ষণ আঠার মতো পিছনে লেগে থাকো।”

ফুয়াদের ধমক শুনে মধুর হাতপা থরথরিয়ে কাঁপছে। ফুয়াদ কে কত ভাবে ডিস্টার্ব করেছে কত ভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে তবুও কখনো ওকে এভাবে বলেনি। আর আজকে সামান্য কারণে এমন‌ বাজে রিয়েক্ট করল যে ও ফুয়াদ কে চিনতেই পারছে না। ও বিড়বিড় করে বলল, এ আমার সেই ফুয়াদ হতেই পারে না। হতভম্ব মুখ নিয়ে মধু বিড়বিড় করতে করতে নিচে চলে আসলো।

ফুয়াদের ধমক খেয়ে মধু আর নিচে গেল না রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। শুয়ে কাঁদতে লাগলো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙলো রাত বারোটার দিকে। ফুয়াদের ডাকে ঘুম ভেঙেছে মধুর। ফুয়াদ মধুকে ঘুম থেকে টেনে তুলে খাবার নিয়ে বসলো সামনে। মধু ঘুম ঘুম চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আস্তে আস্তে ধমক দেওয়ার সবকিছু ওর মনে পরে। ও খাবার মুখে না নিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। ফুয়াদ কানে এক হাত দিয়ে ধরে সরি বলতে থাকে মধু তাও ওর দিকে তাকায় না।

“সরি জান, আমাকে মাফ করে দাও তখন আমি ইচ্ছে করে তোমাকে ধমক দেই নাই। খুব রাগ উঠে গেছিল কি থেকে কি করেছি আমি নিজেই জানি না। রাগ ভাঙ্গাবে নাকি উঠবস করতে হবে?”
মধু চোখ মুখ শক্ত করে ওর দিকে তাকালে তারপর বলল,,” আর কোনদিন আমাকে ধমক দিবেন না মনে থাকবে?”
“আচ্ছা তুমি যা বলবে তাই হবে এবার তো খাও।”

প্রেয়সী পর্ব ৬৩

“যত মন খারাপই থাকুক আমাকে একা রেখে কোথাও যাবেন না বলুন।”
“তোমাকে রেখে কোথায় গিয়ে আমি থাকতে পারলে তো যাবো!”

প্রেয়সী পর্ব ৬৪