অবিনাশী পর্ব ৩৩

অবিনাশী পর্ব ৩৩
রেজওয়ানা আসিফা

তানিয়া প্রেগনেন্ট। আমান চৌধুরীর খুশির শেষ নেই এই প্রথম তার বাড়ি আলো করে কোনো বাচ্চা আসবে। তমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না যে সে অখুশি। মুচকি মুচকি সেও হাসে। হিয়া আয়ান এদের কথা আর কী বলবো। সব খুশি যেনো আজ এদের।
যেখানে তিশার সব থেকে বেশি খুশি হওয়ার কথা ছিলো সেই তিশা ভারি মুখ করে বসে আছে জানালার দিকে তাকিয়ে।

দুই দিন হয়ে গেছে নূরের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। এদিকে কালকে বউভাত। তিশা নূহা তানিয়া ছাড়া নূরের কথা আর কেউ জানেনা।
জামাল সিকদার এই প্রথম রাবেয়া বেগম কে এতো জোরে ধমক দিয়েছে। রাবেয়া বেগম গুটিসুটি মেরে বিছানার পাশে দারিয়ে আছে। জামাল সিকদার এখনো চেচামেচি করছে। নূর ঘর থেকে চেচামেচির শব্দ শুনে দরজার কাছে এসে দারালো।
জামাল সিকদার চেচিয়ে বলছে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-তুমি এতো জ্ঞান ছাড়া কেনো? তুমি নূহাকে কেনো বললে?
-আমি বুঝতে পারি নাই। আমি তো এটা বলিনি যে আমরা তিশার ব্যপার টা জেনে গেছি। আমি এটা বলেছি যে নূরের বিয়ে ঠিক করেছি। আমি আমি তো বলেনি নূর কে আটকে রেখেছি আমরা।

-বোকা…… হঠাৎ কেনো নূরের বিয়ে ঠিক করবো? এটা কী ওরা বোঝে না? আর নূরের ফোন বন্ধ। আর তার মধ্যে তুমি এসব বলেছো এখন ওরা কী বুঝতে পারবে না নূরকে আটকে রাখা হয়েছে?এতো বোকা কেন তুমি?এখন কিছু একটি ঠিক করে ফেলবে। তার আগে আমাদের কিছু করতে হবে।

-আমি তারাহুরো করে ছেলের বিয়ে দিবো না। যে জা করুক। আমার ছেলের বিয়ে আমি ধীরে ধীরে অনেক আয়োজন করে দিবো। আমার ছেলের বিয়ে আমি অন্যের জন্য কেনো তারাহুড়ো করে দেবো।
নূর বুঝতে পেরেছে ওই বাড়িতে তানিয়া বা তিশা কিছু টা জেনে গেছে। কিন্তু সে বের হবে কীভাবে ! প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে তার। কেউ এভাবে আটকে রাখে কাউকে !

তিশা ঘরে বসে আছে মোবাইল হাতে নিয়ে। নূহা আর তানিয়া দুই জন একসাথে আসলো। তিশার পাশে এসে বসলো দুই জন। কিন্তু তিশা এতোটাই বেখেয়ালি হয়ে আছে যে সে টেরি পায় নি তার পিশে তানিয়া আর নূহা। তানিয়া পিঠে হাত দিতেই তিশা হকচকিয়ে উঠলো। তানিয়া তিশার দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো তিশা কিদছে। মুখটা অনেক সুকিয়ে গেছে। সুকাবেই তো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না একদম। ভাত মুখে তুলছে না দুদিন।

তানিয়া জোর করেও খাওয়াতে পারে না। আর তিশার তো তেমন বাবা মা না যে তাকে খেয়াল করবে। আমান চৌধুরী একটু খেয়াল করেছে তানিয়া কথা ঘুরিয়ে বলেছে ওর শরীর টা ভালো নেই। আর তমার তো এই দিকে খেয়ালি নেই।
তানিয়া তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে তিশা কান্না করে দিলো। তানিয়া তিশার হাত ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে ফ্রেশ করে এনে মুখের সামনে খাবার ধরলো। তিশা কোনো মতেই খাবে না। তানিয়া খাবার মাখতে মাখতে বললো,

-নূর ভাই তোমার ছাড়া আর কারো হবে না। তোমাকে কথা দিলাম। তবে তোমাকে আরো শক্ত হতে হবে। তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।
তিশা চোখ মুছতে মুছতে বললো,

– আমি ওকে চিনি। ও মামা মামির কথার বাইরে জীবনেও যাবে না। ওর জীবনের প্রথম ভালোবাসা হচ্ছে ওর পরিবার। একসাথে ছোট থেকে বড়ো হয়েছি, চিনি তো ওকে। মামি একবার ইমোশনাল হয়ে বললে ও সব মেনে নিবে তার মুখের দিকে তাকিয়ে।

-তা নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। এই বিয়ে ভাঙবে মেয়ের বাড়ির লোক। ছেলের বাড়ির লোক না। এখন খেয়ে নাও। অনেক প্ল্যান করতে হবে তো। শক্তি কোথায় পাবে। তোমাকে তত লড়াই করতে হবে।
তিশা এবার একটু ভরসা পেলো। তানিয়া তিশার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললো,

-আমরা এখন ওর মামাতো না খালাতো বোন আয়শা, ওই আয়শাকে ফোন করবো। তারপর ওকে জিগ্যেস করবো ও এই বিয়ে কী নিজের ইচ্ছেতে করছে নাকি জোর করে দিচ্ছে। ভাগ্য ভালো হয়ে যদি বলে জোর করে দিচ্ছে। শুনলাম সে নাকি প্রেম করে। তাহলে ওর প্রেমিকের সাথে ওকে পালাতে সাহায্য করবো আমরা। এতে করে ওর ভালোবাসাও ও পাবে আর তুমিও নূরকে পাবে।
তিশা খাবার খেতে খেতে বললো,

-কিন্তু পরে তো মামা মামি মেনে নিবে না। আর বাবা মা শুনলেও বাড়ি মাথায় করে তুলবে। মা তো জীবনেও মানবে না।
তানিয়া বিরক্ত হয়ে বললো,
-আরে বাবা কে মানলো আর না মানলো সেটা পরে হবে। আগে তো ওদের বিয়ে আটকাতে হবে। এমন এক ছেলের সাথে প্রেম করেছো সে তো আটকাতে পারবে না। যা করার তোমাকেই করতে হবে।
নূহা বিছানায় বসতে বসতে বললো,

– এতো কিছু কীভাবে করবো এই টুকু সময়? বাবা এতোক্ষনে জেনে গেছে যে মা আমাদের সব বলে দিয়েছে। এখন বাবা সব কিছু নিয়ে তারাহুড়ো করবে।
তানিয়া বিরক্ত হয়ে বললো,
-ধূররর বাবা! এসব ঝামেলা দেখেছি মেয়ের বাড়ি হয়। আর আমাদের বেলায় উল্টো। সব ঝামেলা হচ্ছে ছেলের বাড়িতে।

-আচ্ছা আগে আয়ান ভাইয়ার বিয়ের ঝামেলা টা শেষ হোক আজকে আয়শা আপুকে ফোন করবো। আর ওকে বলবো ও যেনো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিয়ের তারিখ পেছায়। এতে করে আমরা হাতে সময় পাবো।
-হ্যা নূহা ! এটা গুড আইডিয়া।
– কিন্তু নূর কে ছাড়া বিয়েতে কীভাবে মজা হবে। ওকে ছাড়া আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না।
তানিয়া বিরক্ত হয়ে বললো,

-মজা হওয়া লাগবো না বইন। কোনো রকম বিয়াটা পার হলেই হবে।
এবার আসি তানিয়ার বেবির কথায়……………………
সময় টা কিছু মাস আগের। রাতটা ছিলো স্নিগ্ধ আর বৃষ্টির ভেজা ভাব। ঈশান ঘরে বসে বই পরছে। তানিয়া রাতের খাবার খেয়ে ঈশানকে খায়িয়ে ঘরে এসে বিছানা করছে।

লেখকের চরম রোমান্টিক লেখা ঈশানকে যাদু করলো সে রাতে। খোলা জানালার সাদা পর্দ উরছে। ঈশান বই রেখে তানিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তানিয়া হকচকিয়ে উঠে পেছনে তাকালো। তানিয়া চুল বাধতে বাধতে বললো,
-কী হলো হঠাৎ?
ঘোরালো কন্ঠে ঈশান বললো,

-কোথায়? কী হবে? কিচ্ছু হয় নি। সবাই বউকে ভালোবাসে। আমিও বউকে ভালোবাসতে চাই।
তানিয়া লাজুক চোখে পেছনে তাকিয়ে বললো,
-ও মা তাই নাকি? বউ তো আপনার ভালোবাসার অপেক্ষা করছে সেই কবে থেকে।
-আচ্ছা! সত্যি? কখনো বলেনি তো বউ।
-বউ কী মুখ ফুটে চাইবে নাকি?
-ওকে! তাহলে আজ বউ কে আদর দেওয়া যাক।

ঈশান তানিয়ার খুব কাছে চলে আসলো। তানিয়ার ঘন ঘন নিঃশ্বাস ঈশানের বুকে পরছে। সে চাইছে ঈশান কাছে আসুক। কিন্তু তারপরও সে ঈশানকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ঈশান থামছে না। সে একটু একটু করে তানিয়ার সাথে মিশে জাচ্ছে।

ওইদিনের সকাল টা ছিলো একটু বেশি সুন্দর। চারদিক ছিলো পূর্নতায় ভরা। তানিয়ার হাসি ছিলো প্রাপ্তির। যেই বিয়েটা হওয়ার পর তার মরে যেতে ইচ্ছে করেছিলো। যে মানুষ টার মধ্যে ছিলো না কোনো মনভাব। ছিলো না কোনো রাগ অনুভতি দুঃখ কষ্ট ভালোবাসা। কিন্তু সেই মানুষ টাই আজকে তাকে ভালোবাসে। এটা তার জন্য প্রাপ্তি। সে এক বিশাল প্রাপ্তি।

নূহা অনেক খোজাখুজির পর আয়শার নাম্বার টা পেয়েছে। আল্লাহ্ নাম নিয়ে নাম্বারে কল দিয়ে দিলো। চাতক পাখির মতো পাশে বসে অপেক্ষা করছে তানিয়া আর তিশা। দুই বার কল করার পরেও যখন কেউ ধরলো না তখন সবাই বেশ হতাস হয়ে গেলো। নূহা বিসমিল্লাহ বলে আবার কল দিলো। ওপাশ থেকে চিকন কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,

-হ্যালো।
নূহা গলা ঝেড়ে বললো,
-হ্যা হ্যালো, আয়শা আপু বলছো?
-হ্যা। কে? নূহা?
-হ্যা হ্যা আমি নূহা। কিছু কিছু তো শুনলাম হুম………
-মজা নিতে ফোন করেছো?
নূহা তানিয়ার দিকে তাকালো আয়শার কথা শুনে। তানিয়া ইশারায় বললো কথা কন্টিনিউ করতে। নূহা অবাক হওয়ার ভান করে বললো,

-সেকি মজা নিবো কেনো? দুদিন পর ভাবী হবে আমার আমি কী তোমার সাথে কথা বলতে পারি না নাকি?
-নূহা তুমি তো যানো আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। প্লিজ এই ভাবি টাবি বলো না।
-সে কি তাহলে আমার ভাইর কী হবে এখন?

অবিনাশী পর্ব ৩২

-শোনো নূহা আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। তাই তোমাকে বলছি, এই বিয়েটা আমি করতে পারবো না।
আয়শার কথার শুনে নূহা তানিয়া একসাথে লাফিয়ে উঠলো।

অবিনাশী পর্ব ৩৪