অবিনাশী পর্ব ৩২

অবিনাশী পর্ব ৩২
রেজওয়ানা আসিফা

তিশা বার বার ফোন করছে নূরের ফোনে। কিন্তু সে তো জানে না নূরের ফোন নূরের কাছে নেই। পাচ ছয় বার ফোন করার পরেও যখন ফোন বন্ধ বলছে তখন তার সন্দেহ হলো। নিজের মধ্যে কেমন যেনো লাগছে তার। তানিয়াকে বলবে বলবে করেও বলা হচ্ছে না।

কোনো কিছু না ভেবে একবার নূহার রুমে দিকে আগালো তিশা। পেছন থেকে হিয়ার ডেক পড়ে গেলো। আর যাওয়া হলো না।
হিয়ার শাড়ি পছন্দের জন্য হিয়ার রুমে চলে গেলো।
নতুন নতুন বিয়ের পর মেয়েটাকে বড্ড বেশি সুন্দর লাগে। এমনিতেই সব থেকে বেশি সুন্দর হিয়া। রূপ যেনো গড়িয়ে পরে তার।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

পারার সবাই বলেছে হিয়ার মতো বউ আয়ান পাবে এটা নাকি কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। আর এটা কারো কল্পনা করার কথাও না। আয়ান নিজেও কখনো ভাবতে পারেনি সে এভাবে পরিবর্তন হবে।
অনেক বার নূহার সাথে কথা বলতে গিয়েও আটকে যাওয়ার পর তিশার বড্ড চিন্তা হচ্ছে এখন। তিশার মনে হচ্ছে নূর তার উপর কোনো কারণে রেগে আছে। তাই নূহাকে দিয়ে ফোন করাবে।
কিন্তু তার মাথায় এটা ছিলো না। নূরের ফোন বন্ধ।

সকাল গড়িয়ে বিকেল,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। তিশার চিন্তা বেড়েই যাচ্ছে। কালকে তানিয়া ওই কথা বলার পর তানিয়াকে তার এই চিন্তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। নিজের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তানিয়ার ঘরের দিকে গেলো। কারণ তানিয়ার সাথে কথা বললে অনেক দিক থেকে সে মানসিক শান্তি পায়।

তানিয়া বিছানা ঝাড়ছে আর ভাবছে কালকে নূর গেলো। এখনো একটা ফোন করেনি তাকে। এমনি সময় ভাবি তিশাকে এটা বলে দিয়েন। ভাবী ওই দিকটা দেখেন। সারাদিন একটার পর একটা প্রেশার তাকে দিয়েই রাখতো। বাড়ি যাওয়ার পর তিশার ফোন ব্যস্ত পাওয়ায় একবার ফোন করে বলেছিলো ঠিক ভাবে পৌঁছে গেছে এটা তিশাকে বলি দিতে। হঠাৎ কী হলো তার। কোনো বিপদে আছে কীনা। একবার মামীর ফোনে কল করবে কীনা।
হঠাৎ দরজায় কারো আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো তিশা।
তিশা ভিতরে এসে বিছানায় বসে বললো,

-ব্যস্ত তুমি?
-ধূর না ! সব কাজ শেষ করে এসেছি। বড্ড ঠান্ডা লাগছে। এই শীতের সময় কেউ বিয়ে করে! কাজ করতে করতে হাত পায়ে এখন বোধ পাচ্ছি না। সব ঠান্ডা হয়ে আছে।
-ঈশান কোথায়?

-ওকে বাবা ডাকলো একটু তাই তো বের হলো। মনে হয় বউভাতের আয়োজনের জন্য ডেকেছে।
তানিয়া হঠাৎ খেয়াল করলো তিশার চেহারাটা বড্ড ফেকাসে লাগছে। তানিয়া জিগ্যেস করলো,
-কী হয়েছে তোমার তিশা? তুমি সুস্থ আছো তো? চেহারা টা এমন ফেকাসে লাগছে কেনো?
তিশা নিচে তাকিয়ে বললো,

-নূর ফোন ধরছে না। মোবাইল বন্ধ। কোনো খোজ পাচ্ছি না। আমার খুব ভয় হচ্ছে।
তানিয়া কী বলে শান্তনা দিবে। তার নিজেরও তো একি চিন্তা। তারপরও তিশাকে শান্তনা দিয়ে বললো,
-চিন্তা করো না। হয়তো কোনো কাজে আটকে গেছে।
তিশা উত্তেজিত হয়ে বললো,

– না তানিয়া! সে সব সময় আমার ফোন ধরে। জতো ব্যস্ত থাকুক আমার ফোন ধরলে সময় নেয় না। আর ওর ফোন বন্ধ কেনো ! সারাদিন কতো বার ফোন দিয়েছি বন্ধ বলে।
-একটা কাজ করো নূহাকে দিয়ে মামার ফোন একটা কল দেও।
তিশা ব্যস্ত হয়ে ফোন বের করে বললো,

-তা নূহাকে দিয়ে দিতে হবে না। আমি দিচ্ছি।
তানিয়া তিশার হাত ধরে বললো,
-না না তুমি দিয়ো না।
-কেনো? আমি দিলে কী সমস্যা?
তানিয়া আমতা আমতা করে বললো,

– আমার কেন যেনো সন্দেহ হচ্ছে তোমাকে নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়েছে।
তিশা অবাক হয়ে তাকালো। সে তো এটা ভেবেই দেখেনি।তানিয়াকে বললো,
-কী বলছো এসব? আমার জন্য? মানে,?
-আমার মনে হয় মামা তোমার আর নূরের চলাফেরা খেয়াল করেছে।

– করলেও, আমার মনে হয় না মামা এমন কোনো সন্দেহ করবে! আর সন্দেহ করলেও মামার এমন রিয়েক্ট করার কথা না। সে আমাকে খুব ভালোবাসে নিজের মেয়ের মতো। নূহা আর আমার মধ্যে আমি মামা কে কখনো কোনো ভেদাভেদ করতে দেখিনি।
তানিয়া তিশার হাত ধরে একটা শ্বাস নিয়ে বললো,

-তিশা নিজের মেয়ের মতো করে ভালোবাসা আর ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া এক না। দেখো তিশা তুমি মন খারাপ করো না। তোমাকে কিছু কথা বোঝানোর জন্য বলছে, আমাদের পরিবার আর মামাদের পরিবারে অনেক ভিন্নতা রয়েছে। যেখানে মামার পরিবারের মানুষ নূহা ফাতেমা মামি নূর কতোটা ধার্মিক সেখানে আমাদের পরিবারের মানুষ বছরের পর বছর নামাজ পরে না। এইসব পার্থক্য গুলো কী মামার চোখে পড়ে না তুমি কী মনে করো? অনেক ভালো করেই খেয়াল করে। আর জতোটুকু দেখেছি মামা মানুষ টা ভালো তবে অনেক কঠোর।

তানিয়ার কথা শুনে তিশার চোখ থেকে পানি পরছে। তার ব্ড্ড কষ্ট হচ্ছে। সে এভাবে কখনো ভাবেনি। সব সময় কখনো ওই পরিবার টা সে পর মনে করেনি। আর সে কখনো ভাবেও নি যে তার মামা মামি তাকে কখনো তাকে মেনে নিবে না।

তানিয়া নূহাকে ডেকে আনলো। নূহার ফোন থেকে তার মাকে ফোন দিলো।
তানিয়া আর তিশা পাশে বসে আছে চুপ করে। কল রিং হওয়ার পর রাবেয়া বেগম ধরলো।
-হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম মা।

– ওয়ালাইকুমাসালাম সোনা। কেমন আছিস? শেহজাদ কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ আম্মা ভালো আছে। মা ভাইয়ের ফোন বন্ধ কেনো? আমি কতোক্ষন ধরে ফোন করছি। ওর ত আমার জন্য আজকে গহনা নিয়ে আসার কথা তোমার থেকে। আমি বলে দিবো কোনটা কোনটা আনতে হবে কিন্তু ও ফোন ধরছে না। ও কোথায়?
রাবেয়া বেগম মুখ ভার করে বললো,

-কোনো জুয়েলারি নিতে হবে না। নূর আর যাবে না ওই বাড়ি। তুমি আর শেহজাদ তারাতাড়ি বিয়ে শেষ করে চলে আসো। তোমার ভাইয়ার আছে তোমার আয়শা আপুর বিয়ে ঠিক করেছি আমরা। এখানে অনেক কাজ। তারাতাড়ি বিয়ে শেষ করে আসো।

-আ… আচ্ছা আম্মা।
নূহা কে এই কথা গুলো তানিয়া শিখিয়ে দিয়েছিলো। যাতে নূর কোথায় সেই খবর টা জানা যায়।
তিশার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো সব শুনে। তিশা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। তার কান্না দেখে তানিয়া বুঝতে পারছে না কী করবে। তানিয়া তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নূহা টমেটো খেতে খেতে বললো,
-বিয়া ঠিক করছে ভালো কথা। কিন্তু আয়শা আপু তো প্রেম করে। তাদের বাড়ির দুধ ওয়ালার ছেলের সাথে। তাহলে ওই ছেলেটার কী হবে।

একদিক তিশা কাদছে অন্য দিকে নূহার এমন বোকা বোকা কথা শুনে তানিয়ার হাসি পাচ্ছে। নূহাকে একটা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো তানিয়া। তারপর তিশাকে শান্তনা দিতে দিতে বললো,
-দেখো তিশা কান্না করো না। কান্না করলে সব ঠিক হবে না। কিন্তু একটা ভাবতে হবে।
রাবেয়া বেগম সোজাসাপ্টা অনেক তাই এভাবে সব বলে দিয়েছে। জামাল সিকদার এসে রাবেয়া বেগমের হাতে ফোন দেখে পাঞ্জাবী খুলতে খুলতে বললো,

অবিনাশী পর্ব ৩১

-কে ফোন করেছিলো?
-নূহা ফোন করেছে।
জামাল সিকদার উত্তেজিত হয়ে বললো,
-নূরকে আটকে রেখেছি এটা বলো নি তো?
-না না বলেনি। শুধু বলেছি নূরের সাথে আয়শার বিয়ে ঠিক করেছি।

অবিনাশী পর্ব ৩৩