অবিনাশী পর্ব ৩১

অবিনাশী পর্ব ৩১
রেজওয়ানা আসিফা

নূর কে খুব জরুরি ভাবে বাড়ি ফিরতে বলেছে জামাল সিকদার।
নূর সবাইকে বাড়ি ফেরার কথা বললে, সবার মন খারাপ হয়ে জায়। তিশা তো কান্না করে দেয়। এই এতো সুন্দর মুহূর্ত গুলো তাকে ছাড়া ভালো লাগবে না।
তবে নূরের মন বলছে তার বাবা এই প্রথম তার উপর রাগ করেছে। তার কন্ঠ, তার বলা কথার ধরন, নূরের বুকে অনেক বড়ো প্রভাব ফেলে দিয়েছে।

বউভাত করতে আরো দুদিন বাকি। নূর দুপুরের খাবার খেয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বের হবে।
আমান চৌধুরী নূরের কাছে এসে বসে বললো,
-বাবা! এই সময় চলে যাবে! কতো কাজ কতো দায়িত্ব তোমার উপর দিবো ভেবেছিলাম। তোমার বাবার হঠাৎ কী হলো। দেখলো এখানে তোমরা ছাড়া তেমন কেউ নেই আমার। তারপরও সে তোমাকে এই সময় টা এখানে আমাকে সাহায্য করতে দিলো না।
নূর মাথা নিচু করে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-আমাকে ক্ষমা করবেন আংকেল। আসলে আব্বু এমন কেনো করলো বুঝলাম না। আর বউভাতের সময় তো বাকি আছে। আমি যাই ওখানে। দেখি কী হয়েছে। তারপর আমি নাহয় আবার আসবো।
– না না। তুমি এখনি একবার তাকে রিকুয়েস্ট করো।প্লিজ।

-না আংকেল। আব্বুর কথা শুনে মনে হলো কিছু একটা হয়েছে। তাই আমি তাকে এমন কিছু বলতে পারবো না। আমি তার সন্তান তার ছোট বড়ো সব বিপদ দুঃখেই আমার পাশে থাকা উচিৎ।
-তাহলে তুমি আমাকে কথা দিয়ে যাও, তুমি বউভাতের আগেই চলে আসবে। তোমার ফুপুর কথা তো জানোই। আর আমার তেমন কেউ নেই সেটা তো তুমি যানো।

-আংকেল আমি কথা দিতে পারছি না। তবে আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করবো।
দুপুরের খাবার খেয়ে নূর চলে গেলো। শেহজাদ বলেছিলো সে সাথে যাবে। নূর নেয় নি। নূর চলে যাওয়াতে তিশা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তিশার এসব ব্যপার গুলো খুব বেশি বারাবারি মনে হচ্ছে তানিয়ার।

জামাল সিকদার যখন ফোন করে তখন নূর খাচ্ছিলো আর নূর কে খাবার দিচ্ছিলো তানিয়া তাই তাদের সব কথাই তানিয়া শুনেছে। নূরের বাবার কথা শুনে তানিয়ার মন টা কেমন করছিলো। এমন ভাবে কখনো জামাল সিকদার কারো সাথে কথা বলে না। তাহলে আজ কেনো বললো। তানিয়া সারাদিন ভেবেছে।
আর এখন তার একটা বিষয় নিয়ে খুব বেশি সন্দেহ হচ্ছে।

এখানে আসার কারণে নূরের অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। যেই নূর মাথা উচু করে কথা বলে না সেই নূর মেয়েদের সাথে কথা বলে। তানিয়ার সন্দেহ এটা। কিন্তু সে জানে এটা সত্যি কিনা। হয়তো কোনো পারসোনাল কাজের জন্যও এমন করতে পারে।

তানিয়া এই ভেবে এসব চিন্তা বাদ দিলো। কিন্তু তিশার অতিরিক্ত ব্যপার গুলো তার ভালো লাগে না। যেখানে ওর সাথে বিয়ে ঠিক হয় নি। আর বাড়ির কেউ জানেও না। এমনকি বিয়ে ঠিক হয়েও নেই। ঠিক আছে প্রেম কর। মানুষ তো অনেক দূর থেকেও প্রেম করে। কিন্তু নূর একটু তার বাড়ি গেছে এই নিয়ে সে যেই ভাবে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করেছে মনে হচ্ছে তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
তানিয়া তিশার কাছে গিয়ে বললো,

-তিশা এই বাড়িতে আসার পর তোমার সাথে আমার প্রথম সুন্দর সম্পর্ক হয়। তাই না?
তিশা জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ তানিয়ার এমন কথা শুনে তানিয়ার দিকে ফিরে তাকালো। ভ্রু কুচকে তানিয়ার দিকে তাকালো।
তানিয়া আবার বললো,

-কথা সত্য নাকি?
-কী হয়েছে বলোতো?
-তুমি যে কাজ গুলো করছো এখন এইটা কী ঠিক?
-তোমার সাথে সম্পর্ক আর কাজ মানে! কী বলছো বুঝতেছি না তো।

– আচ্ছা তোমাদের বিয়ে হয়েছে? নাকি নূর তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে? যেটা করছো এই যে খাচ্ছো না। এটা বেশি হচ্ছে না? বাবা বার বার আমাকে জিগ্যেস করছে তুমি এমন করছো কেনো? কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে কীনা। মা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে। এমন তো না যে তোমার বা ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বা কোনো ঝামেলা হয়েছ। সামান্য একটু তার বাড়ি গেছে। মানুষের অনেক দূরে দূরে রিলেশন হয় না?
তিশা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তানিয়া বুঝতে পারলো সে বেশি রুড হয়ে কথা বলেছে। তাই নিজেকে কোমল করে নিয়ে আস্তে আস্তে বললো,

-আমি তোমাকে এভাবে বলতে চাইনি। দেখো তুমি এমন করলে ওর উপর তো প্রেশার পরবে।
-না ঠিক আছে। আমার এটা আগে বোঝা উচিৎ ছিলো। তুমিই ঠিক বলেছো।
-এইতো বুঝেছো। এখন যাও। লক্ষি মেয়ের মতো খেয়ে নাও। অনেক কাজ পরে আছে। সব তো আমাদেরি করতে হবে।
জামাল সিকদার ফুল দানি টা মাটিতে ফেলতেই নূর ধরফরিয়ে কেপে উঠে বললো,

-বাবা তিশাকে ভালোবাসি আমি।
রাবেয়া বেগম নূরের কথা শুনে ছিটকে কিছু টা দূরে গিয়ে দারালো। জামাল সিকদার তাকালো নূরের দিকে, তার চোখ লাল হয়ে আছে। রাগ যেনো চোখ ভেটে বের হবে। নূর মাটির দিকে তাকিয়ে আবার বললো,
-ওকে বিয়ে করতে চাই। ওকেই জীবনের সঙ্গী করতে চাই। ও ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করত পারবো না। ও ছাড়া কেউ আমার জীবনে আসলে সে সুখী হবে না।

নূরের কথা গুলো শেষ হওয়ার সাথে সাথে একটা থাপ্প*ড় আগুনের বেগে তার গালে গিয়ে পড়লো।
নূর ছিটকে কিছু টা দূরে গিয়ে পড়লো। গালের পাশে কিছু টা কেটে গেছে। জামাল সিকদার চিৎকার করে বললো,
– কতো বড়ো সাহস তোমার !
রাবেয়া বেগম তারাতাড়ি গিয়ে নূর কে ধরলো। জামাল সিকদার আবার মারতে যাবে নূর কে এমন সময় নূর ঘরে চলে গেলো।
রাবেয়া বেগম ধপাস করে বসে বললো,

– এখন কী করবে?
– কী করবো মানে? বাচ্চাকাচ্চা ছেলেমেয়েদের কথা শুনতে হবে নাকি? ওরা জা বলবে তাই হবে নাকি? তোমার বোনের মেয়ের সাথেই ওর বিয়ে হবে। আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো। আমার যেই ছেলে কখনো আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলে না। সেই ছলেটা কীভাবে বিগরে জাচ্ছে। তিশা মেয়ে খারাপ না। ও আমার নিজের মেয়ের মতো। কিন্তু বিয়ে! এই সম্পর্ক মানবো কীভাবে। আমার ছেলে আমার ইচ্ছেতে বিয়ে করবো। নিজের বোনের পরিবারের যেই বাজে অবস্থা ওই পরিবারে আমার একটা মাত্র ছেলে কী আদর পাবে?

বিয়ে বাড়িতে নূরের চলাফেরা খেয়াল করেছে জামাল সিকদার। নূরের মধ্যে সে আগের নূরকে পায়নি। বাড়ি ফিরে নূরের ছোট খালার মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে তার। তারপর তাকে বাড়িতে ডাকে।
কিন্তু নূর কোনো মতেই এই বিয়ে করবে না বলে দেয়। যখন খুব জোড়াজোরি করেও নূরকে রাজি করানো যায় না তখন সন্দেহ হয় জামাল সিকদারের। একটার পর একটা জিনিস ভাংঙচুর করে। তারপর নূর তিশার কথা বলে।
নূর নিজের ঘরে বসে আছে। জামাল সিকদার বাইরে আড়ি পেতে দারিয়ে আছে। বিছানার উপর নূরের ফোন রাবেয়া বেগম হঠাৎ করে ঘরে ঢুকে বলে আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবা।

কথাটা বলেই নূরের মোবাইল টা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। নূর পেছনন দিক থেকে মোবাইল টা নিতে যাবে তখনই তাকে ধাক্কা দিয়ে জামাল সিকদার বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।

অবিনাশী পর্ব ৩০

নূর এই প্রথম নিজের বাবা মার কাজে এতো অবাক হলো। এ কাদের দেখছে সে? কখনো নিজের বাবা মার এমন ব্যবহার দেখেনি। সব সময় তাকে সাপোর্ট করেছে। নূর পাগলের মতো দরজা ধাক্কালো। কোনো কাজ হলো না। মোবাইলটাও নিয়ে গেছে। কাউকে ফোনও করা যাবে না।

অবিনাশী পর্ব ৩২