অবিনাশী পর্ব ৩০

অবিনাশী পর্ব ৩০
রেজওয়ানা আসিফা

সকালের মিষ্টি রৌদ্রে ঘুম ভাঙলো হিয়ার। ঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করতে যাবে এমন সময় হিয়া ধরফরিয়ে উঠলো। মাথার উপর সিলিং ফ্যান অচেনা তার। কতোক্ষন আশপাশে তাকিয়ে মাথায় একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো,

-হায় আল্লাহ্ কালকে তো বিয়ে হয়ে গেলো আমার। এটা তো আয়ানের রুম। পাশে ঘুরে দেখলো আয়ান ঘুমাচ্ছে এখনো।
হিয়া তারাতাড়ি উঠে গোসল করে নিচে গেলো। নিচে গেছে দেখো তানিয়া রান্না করে কাজ করছে। তানিয়ার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-আমাকে ডাকতে গেলে না কেনো? নিজের বাড়ির মতো কতোক্ষন ঘুমাচ্ছিলাম। সবাই কী ভাবছে এখন কে যানে।
তানিয়া হেসে বললো,
-কেউ এখনো উঠেনি। এই বাড়ির কেউ এতো তারাতাড়ি উঠে না।
-সেকি নামাজ পড়ে না কেউ এরা?
তানিয়া কাজ করতে করতে বললো,
– তোমার শাশুড়ি মার কথা অনুযায়ী,তাদের টাকা আছে নামাজ পরে আর কী হবে। সব সুখ তো এমনেই পাচ্ছে।
-আয়ানও কী পরে না?

তানিয়া হো হো করে হেসে উঠে বললো,
-তুমি এমন প্রশ্ন করছো মনে হচ্ছে তুমি কিছুই যানো না। আয়ান আগে কেমন ছিলো সেটা তো যানোই।
-ওহ্ হ্যা তাও তো ঠিক। কিন্তু দেখো আমি ওকে ঠিক করে ফেলবো। পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরাবো ওকে।
-হ্যা এখন থেকে টেনে তুলে মসজিদে পাঠাবে।

-আচ্ছা ঈশান ভাই নামাজ পরে না? ওনি তো সুস্থ হয়ে গেছে। তারপরও এতো চুপচাপ কেনো থাকে?
-ওর সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে। এখনো মানসিক ভাবে সুস্থ হয় নি।
-সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না।
হিয়া আর তানিয়া মিলে সব কাজ শেষ করলো। তমা আজকে আগের থেকে তারাতাড়ি উঠেছে। উঠে ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ খাবার খেয়ে চলে গেলো। তানিয়া খুব অবাক হলো। আগে খাবার খেতে বসে একটা না একটা কথা শোনাতোই তানিয়াকে।

কতোক্ষন পর দেখলো অনেক দিন পর আজকে সে মেডিকেল জাচ্ছে।
সবার চোখের সামনে দিয়ে সে চলে গেলো। বাড়ির কাজের লোকটাকে বলে গেলো ফিরতে দেরী হবে।
তানিয়া আমান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-একি বাবা আপনি কিছু বললেন না?
আমান চৌধুরী খাবার খাচ্ছে। তানিয়ার কথা শুনে একটু বিরক্ত হয়ে বললো,
-আমি কী বললবো।

-এইযে তার ছোট ছেলের বিয়ে আর সে এভাবে চলে গেলো মেডিকেলে। আমার আসার পর তো আমি ১০ দিনি্র ঠিক মতো তাকে কাজে যেতে দেখিনি। আজকে সব কাজ হুমরি খেয়ে পরলো?
আমান চৌধুরী একটু জোরে হেসে বললো,

-তোমার কী মনে হয় তোমার শাশুড়ি কোনো কাজ করে? আর সে কোনো লোককে চিকিৎসা দিলে সেই লোক বাজবে? সে এভাবেই যায়। আগে অনেক ভালো একজন ডাক্তার ছিলো সে। তাই ওই হাসপাতালে মায়া ভুলতে পারেনা। তাই এভাবেই যায়। আর ওখানের সবার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক তার।

-তাহলে আজ কেনো গেলো? বাড়িতে এতো মানুষ জন কতো কিছু ভাববে এখন।
-তুমি বাদ দাও ওর কথা। দেখবে তারাতাড়ি ফিরে আসবে। তোমরা সবাই মিলে সব টা সামলাও।
আমান চৌধুরী উঠে বেড়িয়ে পরলো। কোথায় গেলো সেটা কেউ জিগ্যেস করলো না আর। বাড়িতে তার বয়সী তেমন কেউ নেই। বাচ্চারা আনন্দ করবে এখানে সে থাকলে তারা সংকোচবোধ করবে এই ভেবেই তার বেড়িয়ে যাওয়া।
নূরের বাবা মা চলে গেছে। শেহজাদের বাবা মা কেও ইনভাইট করা হয়েছিলো তারা বিয়ের দিন এসে খাওয়া দাওয়া করে চলে গেছে।

বাড়িতে এখন তানিয়া তিশা নূর ঈশান আয়ান হিয়া শেহজাদ নূহা আর ওদের কিছু কাজিন ছাড়া কেউ নেই।
তানিয়া অনেক ভয় পাচ্ছে কারণ একটা বিয়ে সাদি ছোট খাটো ব্যপার না। এখানে একটা বয়স্ক মানুষ নেই। জামাল সিকদার কে অনেক বার বলেছিলো থাকতে। সে তার বাড়ি রেখে কোথাও থাকে না। আর নূরের মা রাবেয়া বানুকেও রেখে জাবে না।

তাই বাধ্য হয়ে তানিয়াকে সব একাই সামলাতে হচ্ছে।
হিয়ার বাড়ি থেকে হিয়াকে দেখতে এসেছে তার বাবা আর কাজিনরা। সবাইকে খাবার দিয়েছে তানিয়া। একজন মুরব্বির যা করা দরকার সব করেছে।
সবাই একসাথে বসে আছে। তানিয়া হিয়ার বাবার কাছে গিয়ে বললো,

– আমি ছোট মানুষ যথা সাধ্য চেষ্টা করেছি আপনাদের যত্ন করার। কোথাও কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টি তে দেখবেন।
হিয়ার বাবা হেসে বললো,
– না না মা কী বলছো এসব। তুমি যথেষ্ট ভালো আয়োজন করেছো আমাদের জন্য। কিন্তু তোমার শশুর শাশুড়ি কাউকে দেখছি না কেনো? বাড়িতে মুরব্বি কাউকে দেখছি না।

-আসলে মায়ের একটা জরুরী ফোন এসেছে মেডিকেল থেকে সেখানেই গেছে। বাবা একটু বাইরে গেছে এখনি চলে আসবে। আর আমাদের তেমন আত্মীয় সজন নেই তো। যারা আছেন তারা খুব ব্যস্ত তো তাই বিয়ের দিনই চলে গেছে।
-ওহ্।

-আপনারা বসুন। বাবা এক্ষুনি চলে আসবে। আমি একটু ওইদিকটা দেখছি।
তানিয়া সরে আসতেই শুনতে পেলো হিয়ার বাবা হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে জিগ্যেস করছে,
-যা কেমন রে মা? কোনো বকা ঝকা করে না তো? ভালো নাকি খারাপ? যা তো তেমন ভালো হয় না।
হিয়া জিভ কেটে বললো,

-বাবা এসব কথা মুখেও এনো না। তানিয়া শুনতে পারলে প্রচণ্ড কষ্ট পাবে।তোমাকে তো আগের কথা সব বলেছি। ওই সময় যদি বিয়েটা হতো তাহলে এই সংসারেই আসতাম কিন্তু সংসার টা হতো ভিন্ন রকম তাই এই তানিয়াই আমাকে মুক্ত করেছে। আবার কিছু এখানে ওই আমাকে এনেছে। ও আমার যা না আমার বড়ো বোনের মতো।

-তার পরও মা একটাই তো মেয়ে আমার। খুব চিন্তা হয়। কালকে একটুও ঘুম হয় নি। ভাবতে অবাক লাগছে মেয়েটা বড়ো হয়ে শশুর বাড়ি চলে গেলো। আর আমি টেরী পেলাম না আমার মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে।
তানিয়া নূরকে খুজতে খুজতে পাগল হয়ে জাচ্ছে। রান্না ঘরে এসে দেখলো তিশা খাচ্ছে। তিশার কাছে জিগ্যেস করলো,

-নূর ভাই কোথায় গো? তাকে দেখছি না। তাকে খুব দরকার। ওখানে মেহমান একা বসে আছে। তাদের কাছে গিয়ে একটু বসতে হতো।
তিশা বললো,
-দারাও দেখছি আমি।
তিশা খাবার খেতে খেতে পিছের দরজা দিয়ে বের হয়ে দেখলো হিয়ার একটা মেয়ে কাজিনের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলতে নূর।

নূরকে এভাবে দেখে তিশা খাবারের প্লেট টা একটা গাছের দিকে উড়িয়ে মারলো। নূর আওয়াজ পেয়ে সেই দিকে তাকালো।তিশাকে দেখে নূর ভূত দেখার মতো চমকে গেলো। তিশা মুরগির লেগ পিছটা এতো জোরে জোরে খাচ্ছে যা দেখে নূরের আত্মা কেপে উঠলো। দাতে দাত খিচে বললো,

অবিনাশী পর্ব ২৯

-তানিয়া মেহমানদের কাছে গিয়ে বসতে বলেছে।
কথাটা বলেই সে হন হন করে চলে গেলো সেখান থেকে।
তানিয়া নূর আর শেহজাদ কে পাঠালো হিয়ার বাবার কাছে বসতে। নূরের খুব সংকোচ হচ্ছে এখানে বসতে। কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখছো আমান চৌধুরী বাড়ি ফিরেছে। সে তাকে বসিয়ে কোনো মতে জান নিয়ে পালালো।

অবিনাশী পর্ব ৩১