অবিনাশী পর্ব ২৯

অবিনাশী পর্ব ২৯
রেজওয়ানা আসিফা

হিয়া আর আয়ান ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে যায়। এই সুন্দর দিনটায় এতো সুন্দর করে নিজেদের ঘরটা সাজানো থাকবে কখনো ভাবে নি একজনও। এটা আর পাচটা সাধারণ বাসর ঘরের মতো না।

আয়ানের বিছানা টা গোল তারপর একটা লাঠি টাইপের কিছু বাকা করে দুই পাশে লাগালো আর ওইটা পুরোটা সাদা ফুল দিয়ে মোরানো। দেখতে পুরো বিছানা টা ঝুড়ির মতো লাগছে। চার পাশে আরো সৌন্দর্য তো আছেই। বিছানার উপর ফুল দিয়ে হিয়া আর আয়ানের নামের প্রথম অক্ষর লেখা। আয়ান দরজা টা বন্ধ করে এসেই বিছানায় ধপাস করে সুতে যাবে তার আগেই
হিয়া চিৎকার করে থামালো।
আয়ান হঠাৎ করে উঠে বসে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

– হলো কী? তোমার?
-তুমি এতো সুন্দর করে সাজানো গোছানো বিছানা টা নষ্ট করছো কেনো?
আয়ান একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
-একটু পর তো এই ফুলের অস্তিত্বই থাকবে না সোনা।
হিয়া চোখ বড়ো করে আয়ান কে একটা ধমক দিয়ে ওয়াশ রুমে গেলো।
আয়ান বিছানায় বসে মুচকি হাসলো।

ঘরের আলো অফ করে জানালা দিয়ে আসা হালকা চাদের আলোতে চুল ছেড়ে বসে আছে তমা। পুরানো সব স্মৃতি গুলো খুব মনে পরছে তার। কতো বছর পর সেই মানুষ টার সাথে দেখা। যাকে সে ভালোবাসতো। যার জন্য নিজের সবটা বিলিন করে দিয়েছিলো। যার পাপের জন্য আজও স্বামীর স্পর্শ গ্রহন করেনি সে। সেই মানুষ টার সাথে দেখা।
তমা মনে মনে বললো,

-ও জানেও না ওর দুই টা ছেলে আছে। ওর একটা ছেলেকে আজ চোখের সামনে বিয়ে করতে দেখলো।
হঠাৎ ঘরে এসে কেউ আলো জালানো। পিছে ঘুরে দেখলো আমান চৌধুরী।
আমান চৌধুরী দরজা বন্ধ করে তমার পাশে এসে বসলো। তমা চোখ মুছে অন্য দিকে ফিরে তাকালো।
আমান চৌধুরী মাথা নিচু করে বললো,

-অনেক দিন পর ইফাদ কে দেখে কষ্ট হচ্ছে?
তমা কথা বলছে না কোনো। সে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
আমান চৌধুরী উঠে গিয়ে টি টেবিল থেকে দুই কাপ কফি এনে আবার আগের জায়গায় বসলো। তমা খেয়াল করে নি আমান চৌধুরী যে কফি নিয়ে ঘরে ঢুকেছে।
আমান চৌধুরী একটা কফি তমার দিকে এগিয়ে দিলো। তমা অনেক ক্ষন কাপ টা ধরলো না। কিছু একটা ভেবে তারপর ধরলো।
আমান চৌধুরী নিজের কফির কাপে মুখ দিয়ে বললো,

-তুমি এখন কী ভাবছো আমি জানি!
তমা ঘুরে তাকালো আমানের দিকে।
আমান জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললো,
-ভাবছো, ইফাদ আজকে নিজের ছেলেদের দেখলো কিন্তু বুঝতেই পারলো না ওরা ওর সন্তান। এটাই তো ভাবছো তাই না?
তমার চোখ ছলছল করছে। সে আমান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,

-কীভাবে বুঝলে তুমি?
আমান চৌধুরী মুচকি হেসে বললো,
– ভালোবাসি তো।
তমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমান চৌধুরী আবার বলতে শুরু করলো,

– শোনো তমা। ঈশান আর আয়ান আমার ছেলে। ওদের বাবা আমি। আমি ছাড়া আর কারো অস্তিত্ব নেই। আমার ছেলেদের উন্নতি আমি খেয়াল করেছি। আর আমি জানতাম একদিন সঠিক পথে যাবে আয়ান। যদিও এক সময় ভুল করেছে। এখন দেখো ঠিক হয়ে গেছে।
আমি তোমাকে একটা কথা বলে রাখি ! কখনো যেনো ইফাদ জানতে না পারে ঈশান আর আয়ানের কথা। আর ভালো হয় তুমিও ভুলে জাও ইফাদের অস্তিত্ব।
তানিয়া সব কাজ সেরে ঘরে এসে দেখলো ঈশান বসে আছে। তানিয়া হাত মুছে জানালা আটকাতে আটকাতে বললো,

-ঘুম ভেঙে গেলো নাকী? কখন উঠলে? খাবার খাবে? খায়িয়ে দিবো খাবার এনে?
তানিয়ার এতো গুলো প্রশ্নের একটাও উত্তর না দিয়ে ঈশান মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।
তানিয়া খেয়াল করলো বিষয় টা। তাই ঈশানের পাশে এসে বসে বললো,
-কী হয়েছে বলোতো! হঠাৎ এভাবে বসে আছো কেনো? কিছু হয়েছে তোমার?
ঈশান উপরে তাকিয়ে বললো,

-আচ্ছা তানিয়া, আজকে মা ওমন করলো কেনো? হিয়ার চাচাকে দেখে? আমার কেমন যেনো খটকা লাগছে। আমার জানামতে মা কখনো এভাবে ইমোশনাল হয়ে রিয়েক্ট করে না। তাহলে আজ হঠাৎ এমন করলো কেন ওই লোকটা কে দেখে।
তানিয়া একটু ভেবে বললো,

-যানোতো আমারও এমন সন্দেহ হয়েছিলো। আর আমিও ভাবছি কথাটা। কিন্তু এতো আয়োজন অনুষ্ঠানের মধ্যে এইসব নিয়ে ঘাটালে এই সুন্দর পরিবেশ টা নষ্ট হতে পারে তাই কিছু বলিনি।
-এটা নিয়ে আমাদের পরে দেখতে হবে। সত্যি টা জানতে হবে।
-তুমি না অনেক গা*ধা।
-কেনো! এটা বললে কেনো?
-তুমি এই টুকু বোঝো না যে ওই লোকটা মায়ের কী হতে পারে?
-কী?

– আমার সন্দেহ ওটা মায়ের প্রাত্তন হবে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছী না ওই লোকটার জন্য বিয়ে কেন ভাঙতে যাবে। আচ্ছা এখন এসব বাদ দাও। তুমি ওই সময় হালকি খেয়েছো। এখন আমি খায়িয়ে দিচ্ছি খাবার এনে।
-না না এখন খেতে ইচ্ছে করছে না একদম। খাবো না এখন।
-তোমার ঘার খাবে। চুপ করে বসো।

নূর আর তিশা ছাদে দারিয়ে আছে। তিশার এই বাড়ির ছাদে তেমন আশা হতো না আগে। তার দাদু মারা জাওয়ার নর ছাদ টা আর কেউ পরিষ্কার করে রাখে না। আর কেউ জেতো না। প্রচণ্ড বাজে অবস্থা হয়ে ছিলো। আসতে ভয় করতো। কিন্তু তানিয়া আসার পর সব পরিষ্কার করে গাছ লাগায়। এখন অনেক সুন্দর হয়েছে।
নূর বাদাম খেতে খেতে বললো,

– আচ্ছা আজকে ফুপু এমন করলো কেনো ওই লোকটাকে দেখে? কতোটা সিরিয়াস হয়ে ছিলো বুঝতে পারছো? বিয়েটা ভেঙে দিচ্ছিলো।
তিশা হো হো করে হেসে বললো,
-তুমি মায়ের কাহিনী বুঝবে না। মা যে কতো নাটক করতে পারে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। বিয়েটা ভাঙার জন্যই এমন নাটক করেছে।
নূর বিরক্ত হয়ে বললো?

-তুমি বাচ্চাই রয়ে গেলো। বিয়ে ভাঙার হলে আরো অনেক কারন ছিলো। কিন্তু ওই অপরিচিত লোকটাকে দেখে অমন রিয়েক্ট করলো কেনো? আর লোকটাও কিচ্ছু বললো না। তুমি খেয়াল করেছো, ফুপু কে নাম ধরে ডাকছিলো হিয়ার চাচা। আমার তো সন্দেহ ফুপুর লাভার ছিলো হয়তো।
তিশা আবার হো হো করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বললো,
-তুমি তো বিশাল বড়ো গা*ধা। তুমি এতো বোকা আগে জানা ছিলো না আমার।
আয়ান ভ্রু কুচকে বললো,

-কেনো বলোতো? হঠাৎ বোকা বললে কেনো?
-পাগ*ল মা আর বাবা ভালোবেসে বিয়ে করেছে। আর তুমি বলছো ওই লোকটা মায়ের লাভার!
-তুমি আমার থেকেও বড়ো বোকা। আরে বাবা হতে পারে ফুপার আগে এনি ছিলো। এক জন তো দুই টা প্রেম করতেই পারে।
তিশা রেগে গিয়ে বললো,

-রাখো বাবা মার কাহিনি। তুমি কয়টা প্রেম করেছো সেটা বলো! একটা মানুষ তো অনেক গুলো প্রেম করতেই পারে তাই না! দারাও আজ তোমার একদিন কী আমার একদিন।বলো তুমি কয়টা করেছো?
নূর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
-এই ধরো দশ টার কম তো করিনি। তুমি হচ্ছো দশ নাম্বার। আর বিয়ে করবো হচ্ছে দুই টা। তুমি তো আমার খুব ভালোবাসা আর আদরের। তাই তোমাকে কোনো কাজ করতে দিবো না। আরেকটা বিয়ে করে তাকে তোমার কাজের জন্য রাখবো।

– তবেরে! আজকে তোমার একদিন কী আমার একদিন!
কথাটা বলেই তিশা নূরের বুকে কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে দিলো।
তারপর বললো,
-আমারে এতো ভালোবাসলে আমার জন্য বিয়ে করে কাজের লোক রাখা লাগবে কেন? কাজের লোক কী এমনি রাখা জায় না।

-উহহ সে দেখা যাবে। এখন নিচে চলো কেউ দেখলে সমস্যা হবে। তুমি আগে যাও। আমি একটু পরে আসবো।
-আচ্ছা। জাচ্ছি। তারাতাড়ি চলে আসবে।
তিশা শিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে ধাক্কা খেলো তানিয়ার সাথে। তানিয়ার হাতে খাবার। তিশাকে এখন ছিদ থেকে নামতে দেখে সে বুঝে গেছে নূরের সাথে ছিলো।

অবিনাশী পর্ব ২৮

-এতো রাতে এভাবে ছাদে ছিলে কেনো? যানো মা এখন ছাদে জায় রাতে। দেখে নিলে শর্বনাস হয়ে যাবে।যাও আমি দেখছি কেউ আসে কিনা। তুমি নূর ভাইকে নামতে বলো।
তানিয়া দুই মিনিট দারালো। তিশা গিয়ে নূর কে নিয়ে আসলো। তারপর সবাই সবার ঘরে চলে গেলো।

অবিনাশী পর্ব ৩০