আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৯

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৯
Raiha Zubair Ripte

-“ এই ছ্যামড়ি রাফি ভাইকে সব বলে দিছিস কেনো?
চিত্রা খেতে বসেছিল তৃষ্ণার ফোন পেয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই কথাটা বলে উঠে তৃষ্ণা। চিত্রা মুখে নুডলস নিতে নিতে বলে-
-“ ছেলেটা তো ফ্রট। তোর ভালোবাসা বুঝে না আবার অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরাঘুরি করে। তোর কষ্ট হচ্ছিল দেখেই তো কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম।
তৃষ্ণা মাথায় হাত দিলো।

-“ সেজন্য তুই বলে দিবি?
-“ হ্যাঁ।
-“ গাঁধি একটা তুই জানিস।
-“ আশ্চর্য গাঁধি বলছিস কেনো?
-“ রাফি ভাই তো জেনেই গেলো আমি তাকে ভালোবাসি।
-“ তাতে কি তুই ইগনোর করবি।
-“ সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিছে।
নুডলস টুকু আর মুখে নিতে পারলো না চিত্রা। অবাক হয়ে শুধালো-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ কিহ! এই ছেলের ক্যারেক্টর এমন ঢিলা কিউ বেহনা? খাঁন বাড়ির ছেলেরা এমন ও হয়?
-“ চপ। আমারই বুঝতে ভুল হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম ঐ মেয়ের সাথে রাফি ভাইয়ের রিলেশন আছে কিন্তু না। ঐ মেয়ের অলরেডি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ঐ মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের সাথে।
-“ তুই তো নিজেই একটা গাঁধি আবার আমাকে বলিস। না জেনে না শুনে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে কেটে বুক ভাসালি। আর আমিও আহাম্মকের মতো ঐ ছেলেরে যাতা বললাম।

-“ এখন আমি কি করবো সেটা বল।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ তুই কি করবি মানে?
-“ ঐ যে বললাম প্রস্তাব দিছে বিয়ের।
-“ নাচতে নাচতে হ্যাঁ বলে দে গিয়ে।
-“ ধূরু মজা করিস না। বল না কি করবো?
-“ আমি জানি নাকি তুই কি করবি। তোর মন যেটা বলে সেটা কর।
-“ আচ্ছা এখন রাখি পরে ফোন দিব নি।

তৃষ্ণা ফোন কেটে দেয়। চিত্রা নুডুলস টা খেয়ে নিজের রুমে ঢুকতেই চয়নিকা বেগম ডেকে উঠে। চিত্রা চয়নিকা বেগমের রুমে ঢুকে। চয়নিকা বেগম মেয়ে কে বিছানায় বসতে বলে।
-“ তোর খালা,মামি, মামা সবাই সপ্তাহ খানেকের মধ্যে চলে আসবে। রিয়াদ আর ওর বউ পরশু আসবে। পরশু বরং ভার্সিটি যাস না। অনেক গুলো বছর পর আসছে ওরা।
মুহুর্তে মুখটায় ঘোর আমাবস্যা নেমে আসলো চিত্রার। হাস্যোজ্জ্বল মুখ টায় ভিড়লো কালো অতীত। অনুভূতি রা পাগলপড়া হলো। দম টা বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। মনে পড়ে গেলো কিছু অতীত নামক বিষাক্ত অধ্যায়। কোনো রকমে জবাব দিলো-

-“ আমি আসছি মা শরীর টা ভালো লাগছে না।
চিত্রা চলে গেলো। চয়নিকা বেগম মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের কাজে মনযোগ দিলো।
চিত্রা ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। বিছানায় থম মেরে বসে রইলো। স্টাডি টেবিলের সামনে গিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা পুরোনো একটা ডায়েরি বের করে। ডায়রি টার দিকে চেয়ে আনমনে বলে উঠে,
-“ অতীত টা আজও তাড়া করে বেড়ায়। কিচ্ছু ভুলি নি আমি,সব মনে আছে। এবার আসছেন আমার শহরে। যন্ত্রণা কে আমন্ত্রণ জানান। লাইফ টা আপনার হ্যাল হয়ে যাবে। একই যন্ত্রণায় আপনিও পুড়বেন যেই যন্ত্রণায় পুড়েছি আমি চারটা মাস।

ডায়েরি টার প্রথম পৃষ্ঠা বের করে সেখানে আজকের তারিখ টা লিখে রাখলো চিত্রা। তারপর ডায়েরি টা বন্ধ করে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়। ওয়াশরুমে গিয়ে পানি ট্যাপ ছেড়ে চোখে মুখে পানির ছিটা দেয়। মন মস্তিষ্ক শীতল করে বিছানায় পা তুলে বসে।
বাহির থেকে ভেসে আসে কলিং বেলের আওয়াজ। চয়নিকা বেগম চিত্রা কে ডেকে বলেন দরজা টা খুলতে। চিত্রা রুম থেকে বের হয়ে দরজার কাছে আসে। পরপর কলিং বেল বাজায় চোখ মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে গেলো।

-“ আরে বাবা আসতেছি তো। এতো বেল বাজানোর কি দরকার।
কথাটা বলে চিত্রা দরজা খুলে দেয়। মুহুর্তে ভেসে উঠে আরহামের মুখশ্রী। চিত্রা দরজায় হাত দিয়ে একটু মুখ বের করে বলে-

-“ আরে আপনি আমাদের বাসায় কেনো। আপনার বাসায় কি জায়গা নেই নাকি থাকার।
-“ আন্টি আঙ্কেল কোথায়?
-“ বাবা বাসায় নাই। আর মা ঘুমায়।
কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই আরহাম চিত্রার হাত চেপে ধরে। টান দিয়ে বলে-
-“ চলো আমার বাসায়,বিয়ে করবো আমরা।
চিত্রা আরহামের থেকে হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে-

-“ আরে পাগল নাকি আপনি। আমি অলরেডি অর্ধেক ম্যারিড। লজ্জা করে না একজন হাফ অর্ধেক মেয়েকে বিয়ে করার কথা মুখে আনতে।
-“ হাফ হয়েছো আমিই না হয় পুরোপুরি করবো।
-“ এই যে আমার পায়ের জুতা চিনেন,এই জুতা দিয়ে এমন একটা বারি দিব না একদম আমাকে বিয়ে করার ভূত মাথা থেকে পালাবে।
-“ আহ এতো কথা না বলে চলো। তোমার বাপ চলে আসলে তোমাকে নিয়ে যেতে দিবে না।
-“ কে এসেছে রে চিত্রা?
চয়নিকা বেগমের ডাক শুনে চিত্রা জোরে বলে-

-“ তোমার মেয়ের জামাই হতে এসেছে টোকাই, দেখে যাও।
চয়নিকা বেগম রুম থেকে বের হলেন। দরজার কাছে এসে আরহাম কে দেখে বলে-
-“ এই ছেলে তুমি আমাদের বাসায় কেনো? বের হও বলছি।
আরহাম চিত্রার হাত টেনে চলে যেতে নিলে চয়নিকা বেগম বলে উঠে-

-“ এই আমার মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?
-“ আপনিই তো বললেন বের হতে। তাই চলে যাচ্ছি।
-“ আরে আমার মেয়েকে ছাড়ো। ওর বাবার কানে গেলে তোমার কি হবে বুঝতে পারছো?
-“ আর মা আরেকটু বলো তুষারের কানে গেলে ওর কি অবস্থা হবে। কলি’জা কে’টে ভুনা করে খাবে।
-“ আমি কাউকে ভয় পাই না।
আরহামের ওভার স্মার্ট সেজে বলা কথাটা ঠিক হজম হলো না চিত্রার। মুখে আঙুল দিয়ে বলে-

-“ সিরিয়াসলি?
-“ হ্যাঁ।
চিত্রা রুমে ঢুকে নিজের ফোন টা নিয়ে তার বাবার নম্বরে কল দিয়ে বাহিরে এসে বলে-
-“ হ্যালো বাবা তোমার ঐ বিরোধী দলের আরহাম এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে। আমি কি চলে যাব? নাকি এবার কিছু একটা করবে।
সাহেল আহমেদ সাভার নিউ মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। এখানকার রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর মালিকের সাথে কথা বলছিলো। পকেটে থাকা ফোন টা বেজে উঠায় ফোন রিসিভ করতেই তার মেয়ে গড়গড় করে কথাটা বলে উঠে। কপালে চিন্তার দু ভাজ পড়ে। উৎকন্ঠা হয়ে বলে-

-“ উল্টা পাল্টা কিছু করছে না তো?
-“ আমাকে নিয়ে যেতে চাইছে। যাব চলে?
-“ আমি আসছি।
চিত্রা কান থেকে ফোন টা নামিয়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বাবা আসতেছে আর আমি চুলায় খুন্তি পুড়া দিয়ে এসেছি।
আরহাম অবাক হয়ে বলে-

-“ খুন্তি পুড়া দিয়ে এসেছো কেনো?
-“ খুন্তি পুড়া দিয়ে দাগ বসাবো। জীবনেও আর চেয়ারম্যান বাড়ির মুখো যেনো আসতে না দেখি সেজন্য।
আরহাম এক ঢোক গিললো। বেশি হিরো গিরি দেখাতে এসে না আবার মানসম্মান যায়।
সাহেল আহমেদ তড়িঘড়ি করে বাসায় আসেন। সদর দরজার সামনে আরহাম কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাজখাঁই গলায় বলে-

-“ এই ছেলে আমার বাসায় কি তোমার? আর দারোয়ান তোমায় ঢুকতে দিলো কি করে।
আরহাম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল-
-“ ঘুষ দিয়ে ঢুকছি।
চিত্রা তার বাবার গলার আওয়াজ শুনে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে বলে-

-“ কেমন দারোয়ান পুষো বাবা তুমি যে সে ঘুষ দিলে ঢুকতে দিয়ে দেয় বাসায়। আর এই বেলেহাজ ছেলের লাজলজ্জা তো কিছুই নেই। দু ঘা দিয়ে দিতো পারো না ছেলেপেলে লাগিয়ে।
-“ আরহাম দেখো অশান্তি করো না চলে যাও। তুমি জানো তোমার বাবার আর আমার মাঝে রেষারেষি অনেক।
-“ আপনার মেয়ে টাকে দিয়ে দিন আঙ্কেল নিয়ে চলে যাই।

চিত্রা গরম খুন্তি নিয়ে আরহামের মুখের সামনে ধরে। শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার,এই ছেলের মাত্রাতিরিক্ত পাগলামি তে।
-“ আর একবার আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দেখ এই খুন্তি তোর পিঠে পড়বে। তোর মতো পাগল দুটো দেখি নি আমি।

সাহেল আহমেদ মেয়েকে টেনে দূরে সরে নিয়ে আসে। এরমধ্যে বাহির থেকে গাড়ির আওয়াজ আসে। সাহেল আহমেদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তুষার এসেছে,আসার আগে ছেলেটা কে বলে এসেছে সব।
তুষার গাড়ি থেকে নামে। চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে রাগে। রাতুল তুষারের নামার পর গাড়ি থেকে নামে। তুষার বাড়ির ভেতর ঢুকে দেখে সদর দরজায় একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আর ভেতরে সাহেল আহমেদ মেয়েকে ধরে রেখেছে। চিত্রার হাতে খুন্তি,ছাড়া পাবার জন্য ছোটাছুটি করছে। তুষার কে দেখতে পেয়ে সাহেল আহমেদ মেয়েকে ছেড়ে দেয়। চিত্রা ছাড়া পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে তুষারকে।
চিত্রা এবার সব রাগ ক্ষোভ নিয়ে তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ এই আপনার হবু বউকে এই ছেলে ডিস্টার্ব করে রাস্তাঘাটে। আজ বাসা অব্দি চলে এসেছে। আপনি চুপচাপ মেনে নিবেন? মে’রে ওর হাত পা ভে’ঙে ফেলতে পারবেন না?
তুষার চিত্রার দিকে তাকালো। রেগে বোম হয়ে আছে। শান্ত কন্ঠে বলে-
-“ আপনি এটাই চান?
-“ হ্যাঁ, এই ছেলে হুটহাট শরীর স্পর্শ করে। হাত ধরে টানাটানি করে।
তুষার চুপচাপ শুনলো। হাত দুটো শক্ত করে মুঠো করলো। রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। আরহামের দিকে শীতল চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে-

-“ আপনি চিত্রা কে স্পর্শ করার আগে অনুমতি নিয়েছিলেন?
আরহাম ঢোক গিলে। তুষারের নাম আগেও শুনেছে। ছেলেটার রাগ ক্ষমতা তাদের থেকেও বেশি। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে-
-” না।
সহসা তুষার তার শক্তপোক্ত হাত দিয়ে আরহামের গালে চড় বসিয়ে দেয়। চড়ের ভার সইতে না পেরে দু কদম পিছিয়ে যায় আরহাম। রাতুল টেনে ধরে তুষার কে। ফিসফিসিয়ে বলে-

-“ করছিস টা কি। কন্ট্রোল ইউর সেলফ।
রাতুল এগিয়ে গেলো আরহামের দিকে। আরহামের কলার ধরে বলে-
-“ বয়স কম তোমার,বাবার কথায় না নেচে এসব থেকে দূরে থাকো। তাতেই তোমার মঙ্গল। আর যার দিকে লেলিয়ে দিয়েছে তোমার বাবা সে কিন্তু তুষারের অক্সিজেন সো অক্সিজেন নিয়ে টানাটানি করলে তোমার অক্সিজেনই কিন্তু বন্ধ হয়ে যাবে। এবার বাসায় যাও।

আরহাম কে বিন্দু মাত্র নড়তে না দেখে তুষার রাতুলের দিকে তাকায়। রাতুল ইশারায় শান্ত থাকতে বলে।
-“ কি হলো যাচ্ছো না কেনো? আরো খেতে চাও তুষারের শক্তপোক্ত হাতের চড়?
আরহাম ডানে বামে মাথা নাড়ালো।
-“ তাহলে বাসায় যাও। বাবার কথায় না নেচে ভালো হও।
আরহাম একবার সবার দিকে তাকিয়ে চলে যায়। চিত্রা শব্দ করে শ্বাস ফেলে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। সাহেল আহমেদ তুষারকে আর রাতুল কে সোফায় বসতে বলে। তুষার আর রাতুল সোফায় বসে। চয়নিকা বেগম রান্না ঘরে যান কফি বানাতে।

-“ আঙ্কেল চিন্তা করবেন না আর দ্বিতীয় বার এ বাড়ি মুখো আর চিত্রা মুখো ও হবে না।
-“ ছেলেটাকে নিজের সুবিধার জন্য জাস্ট ইউজ করছে আকবর।
-“ আমি সামলে নিব।
সাহেল আহমেদ তপ্ত শ্বাস ফেলেন। চয়নিকা বেগম কফি এনে রাতুল তুষার কে দেয়। রাতুল তুষার কফিটা খেয়ে চলে আসতে নেয়। সদর দরজায় আসতেই দেখে চিত্রা ও তার পেছন পেছন এসেছে। তুষার চিত্রার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-

-“ নিশ্চিন্তে ঘুমান,আপনার চাওয়া পূরণ হবে।
চিত্রা তুষারের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। তুষার গাড়িতে উঠে বসতেই রাতুল বলে উঠে –
-“ ছেলেটাকে আর কিছু করিস না তুষার। লাস্ট চান্স দে। এরপর কিছু করলে আটকাবো না।
-“ রক্তে টান লেগেছে?
রাতুল নিশ্চুপ হয়ে যায়। তুষার গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে-

-“ লাস্ট চান্স দিলাম। এরপর রক্ষে নেই।
রাতুল মাথা নাড়ায়। তুষার গাড়ি চালাতে শুরু করে। জাহাঙ্গীরনগর আসতেই রাতুল গাড়ি থেকে নেমে যায়। তুষার রাতুল কে বিদায় জানিয়ে চলে যায়।

রাতুল চুপচাপ হাঁটতে থাকে। বারবার কানে বাজছে তুষারের বলা কথা “ রক্তে টান লেগেছে?” সত্যি কি তাই?। কথাটা আনমনে ভাবতেই সামনে তাকিয়ে দেখে অধরা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে শরীরে চাদর জড়াতে জড়াতে হেঁটে আসছে। এই ভার্সিটি তে পড়ে অধরা রাতুল জানে। কিন্তু রাতে অধরা কে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হয়। দ্রুত হাঁটা ধরে অধরার কাছে যায়। অধরার নাম ধরে ডেকে উঠে।

অধরার আজ দেড়ি হয়ে গেছে। সামনে ভার্সিটি তে প্রোগ্রাম। সেটা নিয়ে ডিসকাশন করতে করতে রাত হয়ে গেলো। আকস্মিক নিজের নাম ধরে কারো ডাকার শব্দে পাশ ফিরে দেখে রাতুল এগিয়ে আসছে। অধরা চোখের চশমা টা ঠিক করে বলে-

-“ রাতুল ভাইয়া আপনি!
-“ হ্যাঁ আমি। আপনি আজ এখনো এখানে কেনো?
-” ভার্সিটির প্রোগ্রাম সামনে সেটা নিয়েই আলোচনা করতে করতে দেরি হয়ে গেলো।
-“ গাড়ি এনেছেন?
-“ হ্যাঁ ড্রাইভার আঙ্কেল এসেছে নিতে।
-“ আচ্ছা সাবধানে যাবেন।
-“ জ্বি। আপনি বাসায় যাচ্ছেন?
-“ হ্যাঁ।

-“ আচ্ছা আপনি ও সাবধানে যাবেন।
-“ আচ্ছা খুব কি তাড়া আছে আপনার বাসায় যাওয়ার?
অধরা হাত ঘড়িটায় টাইম দেখে বললো-
-“ কেনো?
-“ না মানে এক কাপ চা খাওয়ার জন্য সময় হবে?
অধরা আশেপাশে তাকালো। সাত টা বাজে। অধরার ও খুব চা খেতে ইচ্ছে করছিল। রাতুলের বলা অফার টায় রাজি হয়ে বলল-

-“ হ্যাঁ খাওয়া যেতেই পারে। ভিষণ চা খেতে ইচ্ছে করছিলো। ভেবেছিলাম বাসায় গিয়ে খাবো। তবে এখান কার চা টা বেশ পছন্দের আমার।
-“ তাহলে চলুন ঐ টঙের দোকান থেকে খাওয়া যাক।
অধরা স্মিত হেঁসে বলে-
-“ নিশ্চয়ই।

অধরা আর রাতুল পাশাপাশি হাঁটে। চারিপাশে বইছে শীতল ঠান্ডা বাতাস। সেই শীতল ঠান্ডা বাতাস অধরা আর রাতুলের শরীরে মিশে যাচ্ছে। কয়েক কদম এগিয়ে এসে সেই টঙের দোকানের সামনে দাঁড়ালো। রাতুল দোকান টার ভেতর ঢুকে মাটির কাপে দু কাপ মালাই চা নিয়ে আসে। এক কাপ অধরার হাতে ধরিয়ে দেয়। টঙের সামনে থাকা বেঞ্চ টায় বসে পড়ে দু’জনে। অধরা ফু দিয়ে একটু একটু চা মুখে নেয়। রাতুল চা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে অধরার কে আড়চোখে দেখে। মেয়েটার মাঝে কিছু তো একটা আছে যেটা রাতুল কে ভীষণ ভাবে টানে।

মেয়েটাকে উচ্চস্বরে কখনো হাসতে দেখে নি,সাজতে ও দেখে নি। যখনই দেখা হয়েছে তখনই এমন সাদামাটা ভাবেই দেখেছে। অধরাকে বেশির ভাগ সাদা রঙের পোষাকেই দেখেছ রাতুল। এই তো আজও সাদা রঙের গোল জামা পড়েছে। বরাবরের মতো আজও সাইডে সিঁথি করে চুল গুলো বেণি করেছে। মুখে কোনো রকম প্রসাধনীর ছিটেফোঁটা নেই। একদম শুভ্র পরি। অধরা নাম না রেখে শুভ্রতা রাখা উচিত ছিলো নাম।

-“ ভাইয়া আসি তাহলে আজ।
অধরার কথায় ঘোর ভাঙে রাতুলের। রাতুল কাপের দিকে তাকিয়ে দেখে খাওয়া শেষ। দোকানে বিল দেওয়ার জন্য যেতে চাইলে অধরা বাঁধা দিয়ে বলে-
-“ আমি বিল দিয়ে দিছি ভাইয়া,আপনাকে দিতে হবে না।
রাতুল কিছুটা রাগ নিয়ে বলে-

-“ আপনি কেনো দিছেন বিল। আমি খেতে নিয়ে এসেছি আমি বিল টা আমার দেওয়ার কথা।
-“ আরেক দিন না হয় আপনি দিবেন বিল। আজ আসি বরং,অনেকটা দেরি হয়ে গেলো।
-“ তারমানে আরেক বার আমাদের চা খাওয়া হবে একসাথে?
-“ কেনো নয়। ইনশাআল্লাহ হবে।
-“ আশ্বাস দিচ্ছেন তাহলে?
-“ জ্বি।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৮

-“ সাবধানে যাবেন, আল্লাহ হাফেজ।
-“ আপনিও, আল্লাহ হাফেজ।
অধরা চলে যায়। রাতুল অধরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। দৃষ্টির অগোচরে যেতেই রাতুল নিজের বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২০