আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২০

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২০
Raiha Zubair Ripte

-“ কি ব্যাপার আজ এতো প্রানউচ্ছাস দেখাচ্ছে কেনো? প্রেমে টেমে পড়েছিস নাকি?
রোমিলা বেগমের কথায় কোনো ভবান্তর হলো না রাতুলের। ডাইনিং টেবিলে বসে ফলের ঝুড়ি থেকে আপেল নিয়ে সেটায় কামড় বসালো। রোমিলা বেগম রাতুলের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ফের বলে-
-” কিছু জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?

রাতুল আপেল টা শেষ করলো। ফলের ঝুড়ি থেকে এবার একটা আঙুর তুলে নিয়ে বলে-
-“ প্রানউচ্ছাস থাকলেই যে সে প্রেমে পড়বে এটা কোথায় লিখা আছে?
-“ কোথাও নেই লিখা আমি নিজে থেকেই বললাম।
-“ তেমন কিছুই না মা।
-“ ওহ্ তোকে দ্বারা যে এসব হবে না আমার আগেই বুঝে নেওয়া উচিত ছিলো।
-“ হয়েছে তোমাকে আর এঁটো থালাবাসন ধুতে হবে না। আমি ধুয়ে রাখবো নি তুমি গিয়ে ঘুমাও রাত হয়েছে অনেক।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোমিলা বেগম এঁটো থালাবাসন গুলো বেসিনের সামনে নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন-
-“ এসব কাজ ছেলেদের নয়। কত করে বলছি বিয়ে কর বিয়ে কর। কথাই কানে নিচ্ছিস না। সারাদিন তো এদিকে ওদিকে একাজ ওকাজ করিস,আমি বৃদ্ধ মানুষ বাসায় একা থাকি,আমারও তো একাকিত্ব লাগে।তুই বিয়ে করলে তো আমি একটা সঙ্গী পাই। যার সাথে সারাদিন গল্পগুজব করে এক সাথে মিলেমিশে কাজ করতে করতে দিনটা পাড় করতে পারবো। একটু মায়ের কষ্ট টা বুঝবি না তুই? তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বলতো?

শেষের কথাগুলো বলার সময় রোমিলা রহমানের গলা ধরে আসছিলো। রাতুল রান্না ঘরের বেসিনের সামনে গিয়ে পেছন থেকে রোমিলা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ তোমার কি খুব আফসোস হচ্ছে একটা ছেলের বউয়ের জন্য?
রোমিলা বেগম প্লেট ধুতে ধুতে বলেন-

-“ হুমম।
-“ আচ্ছা বেশ তুষারের বিয়েটা হওয়ার পরই আমি তোমার জন্য বউমা নিয়ে আসবো।
রোমিলা বেগম প্লেট ধোয়া বন্ধ করে পেছনে ঘুরে উৎকন্ঠিত হয়ে বলে-
-“ সত্যি!
রাতুল রোমিলা বেগমের কাঁধ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রান্না ঘর থেকে বের হতে হতে বলে-

-“ হ্যাঁ সত্যি। এবার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও। বাকি কাজ গুলো আমি করছি।
রোমিলা বেগম বাঁধ সেজে বলে-
-” তুই বিশ্রাম নে ওগুলো আমি শেষ করে যাচ্ছি।
-“ আমি তো বললাম আমি করবো তুমি যাও।

রোমিলা বেগম চলে গেলেন। রাতুল থালাবাসন গুলে ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে উপর করে রাখে। পকেট থেকে ফোন বের করে সময় দেখে নেয়। দশটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। ফোনটা ফের পকেটে ঢুকিয়ে ড্রয়িং রুমের লাইট নিভিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

-“ তোর গাল এমন লাল হয়ে আছে কেনো? মনে হচ্ছে কেউ থাপ্পড় মেরেছে।
আরহাম বাসায় এসে নিরবে সোফায় বসতেই আকবর কথাটা বলে উঠে। আরহাম আকবরের দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-

-“ তোমার জন্য ই তো থাপ্পড় পড়লো আমার গালে। কেনো বলেছিলে চিত্রা কে তুলে আনতে?
-“ তোর জন্য ই তো বলেছিলাম। ওদের বাসায় তো চিত্রা আর ওর মা ছাড়া কেউ ছিলো না তাহলে।
-“ চিত্রা ফোন করেছিলো ওর বাবাকে।
-“ তুই বাঁধা দিস নি?
-“ বাঁধা কেনো দিবো?
আকবর ছেলের উপর ক্ষুব্ধ হলেন। কিছুটা চিৎকার করে বললেন-

-“ আহাম্মক তুই সোজা চিত্রা কে নিয়ে চলে আসবি। তা না করে ঐ মেয়েকে ফোন করার জন্য সময় দিয়েছিস গাধা।
-“ একদম গাধা বলবা না।
-“ মেরেছে টা কে তোরে?
-“ এমপির ছেলে তুষার।
-“ আর তুই চুপচাপ মাইর খেলি? পাল্টা দিতে পারিস নি?
-“ এমনিই চাপাটা ব্যাথা করছে তারউপর কি নিজের মুখ টাকে বিকৃতি করার জন্য যেচে নিজের উপর বিপদ ডেকে আনবো নাকি?

-“ তুই চিত্রা কে চাস না তাহলে?
-“ মাইর গুতা খেয়ে চাই না। তুমি যদি পারো তাহলে এনে দাও।
কুয়াশায় জড়ানো চারিপাশ। কুয়াশার জন্য সামনে থাকা কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। সকাল টা শুরু হয় এমন ঘন কু্য়াশায় প্রকোপ শীতে আর দুপুর গড়াতে না গড়াতেই গরমের মাত্রা বাড়ে। আবার সন্ধ্যা হলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকে চলে আসে।

চিত্রা কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ফজরের সময় উঠেছিল টাংকির পানি তখন বরফের মতো ঠান্ডা ছিলো। সেই পানি দিয়ে ওজু করতে গিয়েই শরীর জমে উঠেছিল ঠান্ডায়। ওজু শেষে ফজরের নামাজ আদায় করে সূরা ইয়াসিন পড়ে বিছানায় গিয়ে আবার শুয়ে পড়ে।
হঠাৎ বালিশের তলে থাকা ফোনটা বেজে উঠায় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে চিত্রা। ঘুমঘুম চোখে বলিশের তলা থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করে কানে নেয়।
-“ বিয়ে করছো শুনলাম?

কথাটা কর্ণকুহর হতেই সমস্ত ঘুম উবে যায় চিত্রার। কান থেকে ফোনটা সামনে এনে নম্বর টা দেখে নেয়। আজ তিনটা বছর পর সেই চিরচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছে। একটা সময় এই নম্বর থেকে একটা ফোন পাওয়ার আসায় গভীর রাত অব্দি জেগে থাকতে। আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই নম্বরের থেকে আসা ফোন কলটা হৃদয় টাকে বিষাদে রূপান্তরিত করছে। চোখ মুখ শক্ত করে চিত্রা জবাব দেয়-

-“ বিয়ের খবর যেহেতু শুনেছেন সেহেতু বিয়েটা আমি করছি এটাই কি স্বাভাবিক নয়?
-“ অস্বাভাবিক লাগলো আমার কাছে। তিন বছরের মধ্যেই মুভ অন। হাউ?
ঘৃণায় চিত্রার চোখ মুখ জ্বলতে শুরু করলো। বিশ্রী রকমের ভাষাও মুখ থেকে বের হতে চাইলো। কিন্তু পরক্ষনে নিজেকে সামাল দিয়ে শুধালে-

-“ আপনি যদি তিন বছর আগেই সব শেষ করে মুভ অন করতে পারেন তাহলে আমি কেনো পারবো না? আমার কি আপনার শোকে প্রতি নিয়ত দুমড়ে মুচড়ে উঠার কথা ছিলো নাকি?
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসলো। হাসি টা চিত্রার শরীরে কাঁটার মতো বিধলো।
-“ আমি তেমন টাই ভেবেছিলাম। যেই মেয়ে পাগলের ন্যায় আমায় ভালোবাসে সেই মেয়ে বিয়ে করবে ভাবনাতে আসেই নি।
চিত্রা কথা শুনে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-

-“ ভালো বেসেছিলাম, মানে অতীতে। আপনার মত নিকৃষ্ট মানুষ কে যে আমি ভালোবেসেছিলাম কথাটা মনে পড়লেই রাগ হয় প্রচন্ড নিজের উপর।
-“ এখন কি ভালোবাসো না?
-“ জীবনে সব চাইতে যদি বেশি ঘৃণা কাউকে করি সেটা আপনি।
-“ হাস্যকর চিত্রা বিয়ে করে নিলেই কি তার জীবন থেকে রিয়াদ নামক নাম টা মুছে যাবে? নো নেভার। আসছি আমি।

-“ সহ্য ক্ষমতা সাথে করে নিয়ে আসবেন। এবার কিন্তু চিত্রা সব কড়ায় গণ্ডায় ফেরত দিবে।
-“ রিয়াদের সহ্য ক্ষমতা প্রচুর। দেখলে না তোমার ন্যাকা মামাতো বোন কে কি করে সহ্য করছি দিনের পর দিন।
-“ আপনার সাথে কথা বলার মতো রুচি নেই আমার।
কথাটা বলে দুম করে ফোনটা কেটে দেয় চিত্রা। রাগে মাথার চুল গুলো দু হাত ধরে চেপে ধরে। এক দমকা হাওয়ার মতো এসেছিল এই রিয়াদ। আর জীবনের সব শান্তি সুখ অশান্তি অসুখে পরিনত করে দিয়েছে। এখন আবার যখন সব ভুলে নিজেকে নিয়ে ভাবছে তখন আবার নিজের অস্তিত্ব জানাতে চলে আসছে। কথায় আছে না পৃথিবীর ছিয়ানব্বই শতাংশ মানুষই প্রথমে ভুল মানুষকেই ভালোবাসে।

-“ আমার জীবনের সব চাইতে বড় ভুল আপনি। প্রথম অনুভূতি ছিলেন আপনি আমার। আর আপনার থেকেই বাজে ভাবে ঠকে গেছি আমি। আপনাকে মানুষ বলতে রুচিতে বাঁধে আমার। আপনি মানুষরূপী অমানুষ। আপনার চোখের সামনেই এই চিত্রা সুখে শান্তিতে সংসার করবে। আপনি নিজেও চিনতে পারবেন না তিন বছর আগের চিত্রা আর এখনকার চিত্রার মধ্যে কত মিল অমিল।

-“ রাফি ভাই কাল আপনি আমায় একটা কথা বলেছিলেন,উত্তর টা শুনবেন না?
রাফি বাগানের দোলনায় বসে ফোন স্ক্রোল করছিল। পাশ থেকে তৃষ্ণার কথা শুনে পাশ ফিরে। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে-
-“ কি বলেছিলাম আমি?
তৃষ্ণার হাস্যজ্বল মুখটা মুহূর্তে চুপসে গেলো।

-“ ভুলে গেছেন? কাল রাতে যে ড্রয়িং রুমে আমায় বললেন।
রাফি তৃষ্ণার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকিয়ে বলে-
-“ আমার ঠিক মনে পড়ছে না কি বলেছিলাম তোমায়। আচ্ছা কি বলেছিলাম আমি তোমায়?
তৃষ্ণা পারে না তো এবার কেঁদে দিতে। চোখে অলরেডি পানি এসে পড়েছে। এবার শুধু টুপ করে গাল বেয়ে পড়ার বাকি। গলা ধরা কন্ঠে বলে উঠলো-

-“ সত্যি মনে পড়ছে না?
-“ না।
-” আপনি ভীষণ পঁচা রাফি ভাই।
কথাটা বলে রাগে হনহন করতে করতে চলে গেলো তৃষ্ণা। রাফি তৃষ্ণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে হোহো করে হেসে উঠলো। ভারি মজাই লাগছে তৃষ্ণা কে কনফিউজড, রাগাতে।
তুষারের মুখোমুখি বসে আছে আকবর। আকবরের চোখ মুখ দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে। তুষার সেদিকে তাকিয়ে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বলে-

-“ চোখ মুখে ঠান্ডা জল টা ঢেলে দিন। বয়স হচ্ছে আপনার অযথা এই সো কোল্ড রাগ আমার সামনে বহিঃপ্রকাশ করবেন না।
আকবরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো। হাত শক্ত করে বলল-
-“ সাহস হয় কি করে তোমার আমার ছেলেকে চড় মারার?
তুষারের কপালে দু ভাজ পড়লো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
-“ আপনার ছেলের সাহস হয় কি করে চিত্রা কে স্পর্শ করার? ভদ্রতা শেখাতে পারেন নি ছেলেকে। অপ্স সরি আপনার নিজেরই তো ভদ্রতা নেই ছেলেকে কি শিক্ষা দিবেন।
আকবর এবার হুংকার দিয়ে বলে উঠে-

-“ মুখ সামলে কথা বলো তুষার।
তুষার হাতে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলে-
-“ গলার স্বর নিচু করুন। বয়সের জন্য খুব একটা ভালো না।
-“ থ্রেট দিচ্ছো?
-“ মোটেও না। আপনার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার মতো সময় ট্রাস্ট মি আমার নেই। আপনি আসতে পারেন।
-“ অপমান করছো?
-“ যার মান নেই তার আবার কিসের অপমান। যাইহোক নিজে যেমন দয়া করে ছেলেকে তেমন বানাবেন না। ছেলে হারালে কিন্তু তারজন্য দায়ী থাকবেন আপনি।

আকবর তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। তুষারের কেবিন থেকে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। আকবর এদিক দিয়েই যাচ্ছিলেন সামনে তুষারের অফিস টা দেখে ভেতরে ঢুকেন ছেলেকে চড় মারা নিয়ে কিছু কটাক্ষ শুনাতে। কিন্তু পারলেন আর কই তুষারের কটাক্ষ কথা শুনে শরীরে জ্বালা ধরে গেলো।

রাতুল কেবলই অফিসের মধ্যে ঢুকছিল, আকস্মিক সামনে আকবর কে দেখে দৃষ্টি মাটিতে নিবন্ধন করে। এদের মত কিট দের দৃষ্টি নিয়ে দেখা মানে নিজের দৃষ্টি কে কলুষিত করা। রাতুল আলগোছে আকবর কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। আকবর রাতুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আকবরের মনে হলো রাতুল তাকে যেনো ইচ্ছে করে উপেক্ষা করে চলে গেলো।
রাতুল তুষার কেবিনে এসে গম্ভীর কন্ঠে বলে-

-“ লোকটা এখানে এসেছিল কেনো?
তুষারের কাটকাট জবাব-
-“ যেচে অপমান হতে।
-“ অপমান বুঝে নাকি সে।
রাতুলের বলা তাচ্ছিল্যের কথা শুনে তুষার আর কিছু বললো না। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাতুল নিজ থেকেই তুষার কে বলে-

-“ তুষার অধরার নম্বর হবে?
তুষার ভ্রু কুঁচকায়।
-“ ওর নম্বর দিয়ে কি করবি?
-“ দরকার ছিলো।
-“ ০১৭৯৯******।
-“ ধন্যবাদ।

ভার্সিটি শেষে জাহাঙ্গীরনগরের পদ্মবিল পুকুর টার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অধরা। তার এখন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য পড়াশোনা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কথাগুলো ভাবতেই হঠাৎ বেগে থাকা ফোন টা বেজে উঠে। অধরা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখে আননোন নম্বর। রিসিভ করবে কি করবে না এ নিয়ে দ্বিধায় রইলো। ফোনটা কেটে যেতেই স্বস্তি পেলো অধরা। স্বস্তি টা স্থায়ী হলো না। ফোনটা দ্বিতীয় বার বেজে উঠলো।
অধরা মনে দ্বিধা সংশয় নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলো। ফোনের ওপায় থেকে ভেসে আসলো সুমধুর কন্ঠে সালাম। অধরা সালামের জবাব দিলো। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো –

-“ আমি রাতুল বলছি। কেমন আছেন?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
-“ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজ ফ্রী আছেন? বাসায় ফিরবেন কখন?
-“ কালকের মতো হয়তো দেরি হতে পারে। কিন্তু কেনো?
-“ আমি আসতাম তাহলে। আমি আসলে মাইন্ড করবেন? আপনার সাথে আরেক কাপ চা খাওয়ার ইচ্ছে জাগছে।
অধরা স্মিত হাসলো। চশমা টা চোখ থেকে খুলে বলল-

-“ না মাইন্ড করবো না।
-“ তাহলে আসবো অপেক্ষা করবেন?
-“ জ্বি।
-“ আচ্ছা রাখি তাহলে।
রাতুল ফোন কে’টে দিতেই অধরা ফোন ব্যাগে ভরে ফেলে। পদ্মবিলের দিকে তাকিয়ে নিজের ডিপার্টমেন্টে চলে যায়।
-“ আজ এমন মন মরা কেনো আপনি? কিছু হয়েছে?

ভার্সিটি শেষে আজ তুষার এসেছে চিত্রা কে নিতে। তুষার এসে থেকেই খেয়াল করছে চিত্রার নিরবতা। সচারাচর তুষার চিত্রা কে নিরব খুব কম দেখেছে বললে ভুল হবে নিরব থাকতেই দেখে নি। চিত্রা দৃষ্টি সামনে চলতে থাকা চলন্ত গাড়ি গুলোর দিকে রেখে আনমনে বলে-
-“ আপনি আমার জীবনে আসতে দেরি করলেন কেনো এমপি মশাই? তিনটা বছর আগে দেখা দিলে কি খুব ক্ষতি হতো?

তুষার আড় চোখে তাকালো। চিত্রার আনমনে বলা কথাটায় কিছু একটা ছিলো। গাড়িটা সাইডে পার্ক করে পুর্ণ দৃষ্টি চিত্রার পানে দেয়। চিত্রা হঠাৎ গাড়ি থামায় হকচকিয়ে উঠে। তুষারের দিকে তাকাতেই দেখে তুষার তার দিকে তাকিয়ে আছে। তুষারের চোখের চাহনি শীতল।
-“ কি হয়েছে আপনার আজ? এমন নিরব নিস্তব্ধতা কেনো? আপনার ঐ চঞ্চল স্বভাব টা আমার যে বড্ড পছন্দের। কালকের ঘটনা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন?

তুষারের কথা গুলো চিত্রার হৃদয়ে বইতে থাকা অশান্ত ঝড় টাকে কিছুটা শান্ত করলো। আশ্বস্ত ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। যার মানে সে ঐ বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে না।
চিত্রা এদিক ওদিক তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে-
-“ একটু পানি হবে? খুব তেষ্টা পেয়েছে।

তুষার গাড়িতে থাকা পানির বোতল টা বের করে। চিত্রার সামনে ধরতেই চিত্রা পানির বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খায়। চিত্রার শরীর বেয়ে তরতর করে ঘাম ঝড়ছে,অথচ গাড়িতে এসি চলছে। তুষারের মোটেও ভালে লাগছে না। হৃদয় জুড়ে বইছে অশান্ত হাওয়া। চিত্রার বাহু চেপে চিত্রা কে নিজের কাছে এনে বলে-
-“ সমস্যা টা খুলে বলুন না।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ১৯

তুষারের অসহায়ত্ব ভরা কন্ঠে বলা কথাটা শুনে চিত্রা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
-“ আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন এমপি মশাই? হৃদয় টায় খুব রক্তক্ষরণ হচ্ছে অদ্ভুত এক যন্ত্রণায়। নিঃশ্বাস মনে হয় থেমে যাবে…
চিত্রা আর কিছু বলতে পারলো না। তুষার শক্ত করে চিত্রা কে জড়িয়ে ধরলো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২১