আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২১

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২১
Raiha Zubair Ripte

পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢোলে পড়েছে। থেকে থেকে প্রকৃতি তার ঠান্ডা বাতাস মেলে ধরছে। চারিদিক অন্ধকার হতে লাগলো। রাস্তা ঘাটে কৃত্রিম লাইট গুলো এক এক করে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। গাড়ির মধ্যে চিত্রা কে জাপ্টে ধরে আছে তুষার। কতক্ষণ ব্যাপি ধরে আছে জানা নেই।

সময় টা যেনো থমকে গেছে। আশেপাশে যে অন্ধকার হয়ে আসছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। হঠাৎ আকস্মিক গাড়ির হর্ণে তুষারের ভ্রম ভাঙে। আশেপাশে একবার চোখ বুলায়। চিত্রা গুটিশুটি হয়ে তুষারের শার্টের কলার এক হাত দিয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। তুষার চিত্রার চুলের ভাজে হাত ডুবিয়ে শীতল কন্ঠে বলে উঠে-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ যন্ত্রণা কমেছে?
চিত্রা চোখ মেলে তাকায়। বুকে মাথা রেখেই উপর নিচ মাথা ঝাকায়। যার মানে কিছুটা কমেছে।
-“ এভাবেই থাকবেন নাকি বাসায় ফিরবেন? রাত হচ্ছে।
চিত্রা চট করে মাথা তুলে সোজা হয়। আশেপাশে চোখ বুলোয়। অলরেডি অন্ধকার হয়ে এসেছে। ব্যাগ থেকে ফোন টা বের করে সময় দেখে নিলো। শুষ্ক ঠোঁট দুটো জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে কাচুমাচু হয়ে বলল-

-“ বাসায় ফিরবো আমি,একটু পৌঁছে দিন না।
তুষার সময় ব্যায় করলো না আর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
-“ এসির পাওয়ার টা একটু কমিয়ে দিন না ঠান্ডা লাগছে ভীষণ।
তুষার এসির পাওয়ার একদম লো করে দিলো। চিত্রা সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে ফের চোখ বন্ধ করে ফেললো। তুষার আড়চোখে একবার দেখে নিলো।

-“ আপনার যন্ত্রণার কথাটা আমায় জানালেন না তো চিত্রা।
-“ বুকটা ফেড়ে দেখানো গেলে দেখিয়ে দিতাম। মুখ থেকে কথা গুলো বের হতে চাইছে না। শ্বাসরুদ্ধ করে তুলছে।
চিত্রা চোখ বন্ধ রেখেই কথাটা বলে। তুষার চিত্রার ডান হাতের উপর নিজের বা হাত রাখে।
-“ আপনার জীবনে আসাটা কি বড্ড দেরি হয়ে গেছে আমার?
চিত্রা চোখ মেললো। সিটে মাথা রেখে ঘাড় ঘুরিয়ে স্মিত হেসে বলল-

-“ আপনি জীবনে আরো কয়েকটা বছর আগে আসলে জীবনটা এখনকার থেকে আরো সুন্দর হতো। আমার অনুভূতি গুলো পূর্ণতা পেত। আমার ভালোবাসা ভালো লাগার প্রথম পুরুষ হতেন আপনি।
তুষার গম্ভীর হলো। চিত্রার বা হাত উচু করতেই চোখ গেলো অনামিকা আঙুলে। কয়েকদিন আগে এই আংটি টা নিজ হাতে পড়িয়ে দিয়েছি। হাত টায় চুমু খেয়ে বলল-

-“ কাউকে ভালোবেসে ঠকে গেছেন মিস চিত্রা? যদি ঠকে থাকেন তাহলে শুকরিয়া আদায় করবেন দু রাকাআত নফল নামাজ পড়ে।
চিত্রা নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলো। পলকহীনভাবে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ খারাপ লাগছে না?
তুষারের অকপট জবাব-

-“ একটু ও না।
-“ আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।
-“ কেনো? আপনার ভালোবাসার প্রথম পুরুষ হতে পারি নি সেজন্য?
চিত্রা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। তুষার ইশারায় চিত্রা কে কাছে আসতে বললো। চিত্রা কিছুটা তুষারের দিকে চেপে বসলো। তুষার নিজের কাঁধ দেখিয়ে সেখানে মাথা রাখতে বললো। চিত্রা বাধ্য মেয়ের মতন তুষারের কাঁধে মাথা রাখলো। তুষার গাড়ি চালাতে চালাতে বলল-

-“ কাকে ভালোবেসে ঠকে গেছেন সেটা আজ শুনতে চাই না। কোনো একদিন নিরালায় বসে আপনার দুঃখবিলাসের গল্প শুনবো কেমন?আর আমি আপনার ভালোবাসার প্রথম পুরুষ হতে পারি নি তো কি হয়েছে,শেষাংশে তো শুধু আমিই থাকবো৷ প্রথম পুরুষ, নারী যে কেউই হতে পারে কিন্তু শেষাংশে সবাই যেতে পারে না। আমি আপনার শেষাংশের উপসংহার। এই আমিতেই আপনার মুক্তি।

চিত্রা প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। চুপ রইলো। ঠিকই তো বলেছে,সবাই তো সূচনায় আসে কিন্তু উপসংহারে তো আর সবাই থাকতে পারে না।
তুষার চিত্রা দের বাসার সামনে গাড়ি থামায়। চিত্রা বাড়ির দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। পেছনে ঘুরে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ সাবধানে যাবেন।
তুষার মাথা নাড়ালো। কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে বলে-
-“ নফল নামাজ টা মনে করে পড়ে নিবেন।
চিত্রা প্রশ্নাতীত হয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-“ নফল নামাজ কেনো?
-“ ঐ যে তখন বললাম নফল নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করবেন।
-“ আচ্ছা পড়বো। আসি।
চিত্রা চলে গেলো। তুষার চিত্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আজও সেই চায়ের টঙয়ের দোকানের সামনে বেঞ্চ টাতে বসে অপেক্ষা করছে রাতুল অধরার জন্য। অধরা তাড়াহুড়ো করে টঙের দোকানে এসে দাঁড়িয়ে অপরাধীর ন্যায় বলে-

-“ খুব কি অপেক্ষা করালাম আপনায়?
রাতুল স্মিত হেঁসে বলে-
-“ খুব একটা করতে হয় নি।
রাতুল গলা ছেড়ে দোকান দার কে বলল-
-“ মামা দুকাপ মালাই চা দিন।
ইশারায় রাতুল অধরাকে বেঞ্চে বসতে বললো। অধরা গায়ের চাদর ভালো করে জড়িয়ে ধরে বসে বেঞ্চ টাতে। দোকানদার দুকাপ চা রাতুল আর অধরার কাছে এনে বলে-

-“ এই যে মামা আপনাগো চা নেন।
রাতুল সৌজন্যমূলক হাসি উপহার দিয়ে একটা কাপ উঠিয়ে অধরার দিকে বাড়িয়ে দেয়। অধরা চায়ের কাপ হাতে নেয়। রাতুল নিজের কাপ টা উঠিয়ে সেটায় চুমুক বসায়। চা খেতে খেতে রাতুল অধরাকে জিজ্ঞেস করে, –
-“ আপনার ফিউচার প্ল্যান কি অধরা?

অধরা চা খাওয়া থামিয়ে দিলো। দৃষ্টি আকাশ পানে রেখে বলল-
-“ অনেক পড়াশোনা করা।নিজের আলাদা পরিচয় গড়ে তোলা।
রাতুল ফট করে বলে উঠে –
-“ বিয়ে করার প্ল্যান নেই?
অধরা তপ্ত শ্বাস ফেললো। কাপে থাকা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল-

-“ জীবন কি একা চলে? চলে না তো। জীবনে চলার পথে একটা সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। আর যেদিন মনে হবে মনের মত কাউকে পেয়ে গেছি সেদিন অবশ্যই বিয়ে করবো।
-” কেমন সঙ্গী চান?
-“ খুব সাধারন সঙ্গী চাই, নির্ভেজাল সহজসরল প্রকৃতির। যে রোজ নিয়ম করে একটু ভালোবাসবে আমায়।
-“ একটু না রোজ নিয়ম করে আপনায় অনেকটাই ভালোবাসবো মিস অধরা।
রাতুলের বিরবির করে বলা কথাটা অধরার কান অব্দি পৌঁছালো না।

-“ কিছু বললেন?
-“ হ্যাঁ, একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-“ হুম করুন।
-“ কখনও কাউকে ভালোবেসেছেন?
অধরা চুপ হয়ে গেলো। মুখে নেমে এলো ঘোর অন্ধকার। চশমা টা ঠেলে বলল-
-“ জ্বি।
মুহূর্তে মুখ খানা চুপসে যায় রাতুলের।

-“ খুব ভালোবাসেন?
-“ হুমম।
-“ বিয়ে করবেন নিশ্চয়ই তাকে?
-“ না।
রাতুলের মুখের এক্সপ্রেশন পাল্টে যায়।
-“ না কেনো?
-“ কখনও কি দেখেছেন বামুন কে চাঁদের নাগাল পেতে? সে হচ্ছে আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা হাজার লক্ষ তারার মাঝে এক চাঁদ। তাকে ছোঁয়া যায় না সেখানে ধরা তো দূর।

-“ নিজেকে এতো মূল্যহীন ভাবছেন কেনো? আপনি কারো কাছে এক মূল্যবান কোহিনূর।
-“ হয়তো।
-“ আচ্ছা চা তো শেষ। তবে বাসায় ফেরা হোক। আপনার ড্রাইভার এসেছে?
-“ না।
-“ আমি পৌঁছে দিয়ে আসলে কোনো সমস্যা হবে?
-“ না সমস্যা হবে না বরং উপকার ই হবে।
-“ আচ্ছা চলুন তাহলে।
-“ এই ছোট প্যাকেট এক কাপ কফি দাও তো।
তৃষ্ণা কফি খাচ্ছিলো। রাফিকে তার থেকে কিছুটা দূরে বসে কথাটা বলতেই আড়চোখে তাকায়। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বলে-

-“ রান্না ঘরে গিয়ে দেখেন বেচে আছে হয়তো কফি। নিয়ে খান।
রাফি ভ্রু কুঁচকায়।
-“ আশ্চর্য তুমি গিয়ে আনতে পারছো না?
-“ আমি খাচ্ছি।
-“ আমিও তো খাবো।
-“ আমি কি আটকিয়েছি?
-“ আটকাও নি তবে এনেও তো দিচ্ছো না। বিয়ের পর স্বামী কফি খেতে চাইলে এভাবেই না করে দিবে মুখের উপর?

-” না গরম কফি এনে মুখের ভেতর ঢেলে দিব। সে শুধু গিলবে।
-“ আচ্ছা যাও যাও এখন কফি নিয়ে আসো৷ বিয়ের পরে কি করবে না করবে পরের টা পরে দেখা যাবে।
তৃষ্ণা তার আধখাওয়া কফির মগটা রাফির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ কফিটা খেতে পারবেন?
-“ তোমার আধখাওয়া কফি টা আমি খাবো কেনো?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২০

-“ ওয়াজ মাহফিলে যে হুজুর রা বলে শুনেন নি? আধখাওয়া কোনো কিছু খেলে মহব্বত বাড়ে।
-“ সেটা তো স্বামী স্ত্রী এর ক্ষেত্রে। কাজিনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
মুহুর্তে তৃষ্ণার মুখের আকৃতি পরিবর্তন হলো। কফির মগটা শব্দ করে সেন্টার টেবিলে রেখে বলল-
-“ তো আমাকে হুকুম না করে আপনার ফরমায়েশ খাটার জন্য বিয়ে করে বউ নিয়ে আসেন চাচার ছেলে ভাই।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পর্ব ২২