আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৯

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৯
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

আবির ভাইয়ের কন্ঠ শুনে মেঘ ভূ*ত দেখার মতো চমকে উঠলো, মেঘের কা*ন্নার তীব্রতা এতোটায় বেড়ে গেছিলো যে ছাদের কর্ণার থেকে আবির ভাই শুনতে পেয়ে ছুটে এসেছে।
অতিরিক্ত কা*ন্নায় মেঘের শরীর কাঁ*পছে। জোর করে কা*ন্না থামিয়েছে। এখনও নাক টানছে আর জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছে।

আবির ভাই গম্ভীর স্বরে পুনরায় বললো,
“কথা বলছিস না কেন, এত রাতে এখানে কি করিস?”
মেঘ এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে, ছাদের ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ধীরস্থির কন্ঠে উত্তর দিলো,
“এমনেই এসেছিলাম”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবির ভাইয়ের শরীর ঝুঁকে এলো, মেঘ তখনও ছাদের ফ্লোরেই বসা। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো মেঘের অভিব্যক্তি৷ চিবুক নেমেছে গলায়, হাত পা কাঁপছে, ভ*য় আর কা*ন্নার প্রতিক্রি*য়া দুটায় অনুভব করতেছে অষ্টাদশী।
আবির ভাই আচমকা মেঘের বাহুতে ধরলো, এক টানে দাঁড় করালো মেঘ কে।
মেঘের শরীরের কম্পন তীব্র হলো, হৃদপিণ্ডের ধুপধাপ বেড়ে যাচ্ছে সহসা৷ চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।
আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মেঘের দিকে, রা*গে ক*টমট করতে করতে বললো,
“তুই কাঁদছিলি কেনো?”

মেঘ উত্তর খোঁজে পাচ্ছে না। কিভাবে বলবে, আবির ভাইয়ের সি*গারেট খাওয়া আর অন্য মেয়েকে উদ্দেশ্য করে গান গাওয়াতে তার ভেতর থেকে এমনিতেই কা*ন্না আসছে।
মেঘ মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।
আবির ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,
কিছুটা স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
“তুই কি সবসময় রাতবিরাতে ছাদে আসিস?”

মেঘ তৎক্ষনাৎ বিদ্যুৎ বেগে কতক্ষণ মাথা নাড়লো, নাবোধক সম্মতি জানালো, তারপর
আস্তে আস্তে বললো,
” এই জীবনে কোনোদিন সন্ধ্যার পর ছাদে উঠি নি আমি”
আবির ভাই উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“তাহলে আজ আসলি কেন?”
মেঘ নিস্তব্ধ, নিরব। কিছু বলার সাধ্য নেই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেয়েটা৷ এত রাতে ছাদের আসার কোনো অজু*হাতও খোঁ*জে পেলো না অষ্টাদশী ।

আবির ভাই কয়েক পা এগিয়ে মেঘের অনেকটা ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ালো। আবির ভাইকে এত কাছাকাছি দেখে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার হাল হলো মেঘের৷ আবির ভাইয়ের গায়ের গ*ন্ধে মা*তাল হওয়ার অবস্থা। ভ*য়ংকর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে দু কদম পিছিয়ে গেলো মেঘ। কিন্তু পিছনে আর জায়গা নেই দরজার পাশের পিলারে পিঠ ঠেকলো মেঘের। থরথ*র করে কাঁপছে অষ্টাদশীর ছোট দেহটা। পায়ের পাতা শিরশির করছে । সরে যেতে চাইলো সামনে থেকে,

আচমকা আবির ভাই দুহাতে পিলারের দু পাশ চেপে ধরলো, কিছুটা ঝুঁকে মুখোমুখি হলো মেঘের,
আবির ভাইয়ের উষ্ণ শ্বাস, তীব্র দৃষ্টি মেঘকে নাজেহাল করে দিচ্ছে। মা*নসিক টানাপো*ড়নে পরে গেলো অষ্টাদশী ৷ মেঘের মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে আজ কয়েকজন একসাথে নৃত্য করছে। যার শব্দ বাহির থেকে শুনা যাচ্ছে। শরীর ঘামতে শুরু করেছে।
আবির ভাই হঠাৎ ই শীতল কণ্ঠে বললেন,

“এতবছর তো খুব পা*লায় বেড়াইছিস! এখন দেখবো কতটা পা*লাতে পারিস তুই।”
আবির ভাইয়ের ঠান্ডা হুম*কিতে কেঁপে উঠলো অষ্টাদশী। এই কথা শুনামাত্র মেঘের শরীরে হাই ভোল্টেজের ঝাঁকুনি দিলো। মেঘের বক্ষস্পন্দন জোড়ালো হলো।
আবির ভাই সরু নেত্রে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পানে,
হয়তো মেঘের টাল*মাটাল অবস্থা বুঝতে পেরে সরে গেলো সামনে থেকে৷
পুনরায় শক্ত কন্ঠে বললো,

“রুমে যা”
আবির সরে যাওয়াতে স্বস্তি পেলো মেঘ। দীর্ঘশ্বাস ফেলছে বারবার।
কয়েক মুহুর্ত পর সিঁড়ির দিকে নামতে গেলো, অন্ধকার সিঁড়ি,
পিছন ফিরে তাকিয়ে বুকে সা*হস নিয়ে ডাকলো,
“আবির ভাই”
আবির ভাই উল্টো দিকে ফিরে ছিল, ডাক শুনে ঘুরে তাকালো,
“হুম”
মেঘ ভয়ে ভয়ে বললো ,

“আমাকে একটু রুম পর্যন্ত দিয়ে আসবেন! প্লিজ”
আবির বিস্ময় কন্ঠে বললো,
“কেনো? হাঁটতে পারছিস না?
মেঘ মাথা নিচু করে আস্তেধীরে বললো,
“ভয় লাগছে!”
“কেন?”
“তাঁনারা যদি আমায় ধরে ফেলে!!”

আবির ভাই কয়েক সেকেন্ড থেমে, স্ব শব্দে হেসে উঠলো,
আবির ভাই মেঘের কথায় হাসছে ভাবতেই খুশি লাগছে মেঘের৷ আবির ভাইয়ের হাসির শব্দে মেঘ অবাক হয়ে তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে, ততক্ষণে আবির ভাইয়ের হাসি গায়েব৷
এবার আবির ভাই ঠাট্টার স্বরে শুধালো,
“তা তুই ছাদে আসার সময় কি তাঁনারা বেড়াতে গেছিলো?”

আবির ভাইয়ের এমন কথায় আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে মেঘ।
আবির ভাই সহসা বলে উঠলো,, ” তুই যা আমি পিছনে আছি!”
মেঘ আর কিছু বলার সাহস পেলো না অবশ্য বলবেই বা কি!
দুটা সিঁড়ি নামতেই হঠাৎ কি ভেবে থমকে দাঁড়ালো মেঘ,
আবির ভাই নিরুদ্বেগ কন্ঠে শুধালো,

“আবার কি হলো?”
মেঘ দুবার জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো,মনে তীব্র সাহস নিয়ে, পিছন ফিরে তাকালো।
আবির ভাই ছাদের দরজার পাশে দাঁড়ানো, এমনিতেই ৬ ফুট লম্বা তারউপর মেঘ বেশ কয়েকটা সিঁড়ি নেমে গেছে। এখন আবির ভাইয়ের লম্বা শরীরটা চাঁদের আলোয় সুপারি গাছের মতো মনে হচ্ছে ।
মেঘ উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করলো,

“আবির ভাই আপনি সিগা*রেট খান কেনো?”
মেঘের কথায় আবির ভাই যেনো ছোটোখাটো টাশকি খেলেন,
মুহুর্তেই গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তার জবাবদিহি কি তোকে দিতে হবে?”
মেঘ এবার কোমল কন্ঠে বললো,
“সিগারে*ট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষ*তিকর, আর আমি..”
এটুকু বলেই থেমে গেলো,

আবির ভাই এবার কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো,
“আর তুই কি?”
মেঘ ভ*য়ে ভ*য়ে বললো,
“কিছু না”
মেঘ আর থামলো না, সিঁড়ি দিয়ে নামতে ব্যস্ত হলো।

মেঘ করিডোরে হাঁটছে, আবির ভাই পেছনে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বা*লিয়ে সিঁড়ি নিচ পর্যন্ত নামলো।
মেঘ আর পিছন ফিরে আবির ভাই কে দেখার সাহস পাচ্ছে না। নিজের রুমের দরজা পর্যন্ত এসে রুমে ঢুকার সময় এক পলক তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে,
আবির নিচে তাকিয়ে মোবা*ইল চাপছে। মেঘ রুমে চলে গেলো।

আবির ভাইয়ের আরও একটি রাত কাটলো নির্ঘুম, নিস্তব্ধ। প্রত্যেক সপ্তাহে ছুটির দিনের আগের রাতে আবির ভাই সারারাত জেগে থাকে। এটা তার বহু বছরের অভ্যাস। বিদেশে থাকাকালীন ও তাই করতো। দেশে এসে প্রতি বৃহস্পতিবার রাত নিজের মতো একাকী কা*টায়৷ হয়তো নিজেকে নিয়ে ভাবে, নিজের স্বপ্ন, ইচ্ছে, ভালোবাসা, প্রিয়জন সবকিছু নিয়েই ভাবে।
মেঘ নিজের রুমে শুয়ে ছাদের বিষয়গুলো ভাবছে, আবির ভাইয়ের এত কাছে আসা, আবির ভাইয়ের বলা সেই কথাগুলো বার বার মাথায় ঘুরছে। কখন ঘুমিয়েছে নিজেও জানে না।

সকাল সকাল খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে সবাই। শুক্রবার দিন ভালোমন্দ রান্না হয়।
মেঘের মনটা আজ খুব ভালো। কেনো ভালো নিজেও জানে না তবে আবির ভাইয়ের প্রতি ভ*য় টা কিছুটা শিথিল হয়েছে। খাবার টেবিলে আবির ভাই নেই৷

মন টা কিছুটা খারাপ হলো কিন্তু তেমন পাত্তা দেয় নি। নিজের মতো খেয়ে পড়তে বসেছে। প্রতি শুক্রবারে প্রাইভেটে ১ ঘন্টার পরীক্ষা থাকে। ১ সপ্তাহে যা পড়ায় তার উপর পরীক্ষা থাকে৷ ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত পরীক্ষা।
অন্যদিকে তানভির ব্যস্ত হয়ে পরেছে রাজনীতি নিয়ে৷ সামনে এমপি নির্বাচন, তাদের প্রিয় নেতা মনোনয়ন কিনেছেন৷ সবাই মিটিং মিছিলে ব্যস্ত। জনসমর্থন যাচাই করে মনোনয়ন দেয়া হবে। তানভিরদের এখন সব এলাকায় যেতে হচ্ছে। জনগণের সুবিধা অসুবিধা শুনছে, লিস্ট করছে।
এমপি নির্বাচনের কয়েকমাস পরেই হবে সভাপতি নির্বাচন। তানভিরের টার্গেট সভাপতি হওয়া। তাই তাকে আরও বেশি এক্টিভ থাকতে হচ্ছে।

২.৩০ টা নাগাদ মেঘ বেরিয়েছে পরীক্ষা দিতে। আজ একটু আগেই চলে এসেছে। পরীক্ষা শুরু হতে এখনও ১০ মিনিট বাকি। তাই বন্যা আর মেঘ গল্প করছে৷
বন্যা: কিরে তোর হি*টলার ভাইয়ের কি খবর রে? কিছু তো আর বললি না, ছবি দেখাবি বলছিলি তাও দেখালি না। সত্যি সত্যি মন থেকে বের করে দিয়েছিস?
মেঘ: মুখে যা বলি তার সবটায় কি পারি?

এত চেষ্টা করেও তো পারলাম না মন থেকে তাড়াতে৷ গতরাতে থাকতে না পেরে গেছিলাম ওনাকে দেখতে৷
একটা বাঁশ যে খাইছি!!
বন্যা: কেন কি হয়ছে?
মেঘ: কি আর হবে লুকিয়ে দেখতে গেছিলাম, আবির ভাইয়ের কাছে ধরা পরে গেছি!
বন্যা: ব্যাটার চোখ আছে তাহলে! ভালো হয়ছে গেলি কেন তুই!
মেঘ মনে মনে ভাবছে এখন যদি বন্যাকে বলি আবির ভাইয়ের জন্য কা*ন্না করছি তাহলে বন্যা তো আমায় এখানেই বালি চা*পা দিয়ে দিবে।

বন্যা আর মেঘের একটায় সিদ্ধান্ত ভার্সিটি ভর্তির আগে কোনো প্রকার প্রেম, বন্ধুত্ব, ক্রাশ কিছুই খাওয়া যাবে না। কোচিং এ নতুন কারো সাথে কথায় বলে না৷ মেঘ আগে আসলে বন্যার জন্য সিট রাখে, বন্য আগে আসলে মেঘের জন্য সিট রাখে। বিষয়টা অনেকটা হাইস্কুল জীবনের মতো। এত কিছুর পরও মেঘ আবির ভাইয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে ফেলেছে । এরজন্য বন্যা অবশ্য প্রতিনিয়ত ই মেঘকে বুঝাচ্ছে৷
স্যার চলে আসছেন এতক্ষণে। পরীক্ষা শুরু হলো যথারীতি।

৪ টায় পরীক্ষা শেষ করে দুই বান্ধবী হাতে হাত ধরে বের হয়েছে। আশেপাশে মেঘদের গাড়ি নেই৷ তাই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ড্রাইভার আংকেল কে ফোন দিবে ভাবলো।
হঠাৎ বাইক নিয়ে আবির ভাই হাজির হলো,
হেলমেট পরা, সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট,কালো শো, হাতে কালো ফিতার ঘড়ি, শার্টের বোতামের ফাঁকে সানগ্লাস ঝুলানো।
মেঘের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে ডাকলো,

“মেঘ”
মেঘ আর বন্যা দুজনেই ডাক শুনে তাকিয়েছে৷ মেঘ এক পলক তাকাতেই চিনতে পারলো এটা আবির ভাই, আবারও নতুন করে ক্রাশ খেলো সে, মনে মনে ভাবছে,
“কিন্তু ওনি এখানে কেনো? ওনি কি আমায় নিতে এসেছেন? কই সেদিন তো মীম আর আদিকে ধমকে বললো কাউকে বাইকে উঠাবে না, তারমানে আমাকেও নিশ্চয় উঠাবে না! না উঠাক, ওনার বাইকে উঠতে আমার বয়েই গেছে! কিন্তু ওনি আসলো কেনো, আল্লাহ জানেন কোন পাপের শাস্তি দিতে এখানে এসেছেন। আল্লাহ বাঁচাও!”

এসব হাবিজাবি ভাবনায় ব্যস্ত মেঘ৷ এদিকে বন্যা মেঘের হাতে ঝাপটে ধরে আছে।
আবির ভাই মেঘের দিকে খানিকক্ষণ সুস্থির বনে তাকিয়ে আছে, হয়তো মেঘের অভিব্যক্তি বুঝার চেষ্টা করছিলো,
এবার হেলমেট খুলে মেঘের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,
‘উঠ’

মেঘ তো ঘোরে আছে, আনমনে হাবিজাবি ভাবনায় ব্যস্ত৷ আবির ভাইয়ের কথা কানেই গেলো না৷
বন্যাও মনেযোগ দিয়ে দেখছে ছেলেটাকে৷ আগে কখনোই এই ছেলেকে দেখে নি, আবির ভাইকেও বন্যা চিনে না৷ তানভির ভাইকে বন্যা দেখেছে। কিন্তু এই ছেলে কে? মেঘকে বাইকে উঠতে বলছে। বন্যা মেঘকে আরও শক্ত করে ধরে আছে।।
আবির ভাই এবার ধ*মকে উঠলো,

“এই মেঘ, উঠতে বললাম তো!”
মেঘ এবার চমকে উঠে! গোল গোল চোখে তাকায়, পরপর দুবার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে৷
তারপর বন্যার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো, “ওনি আবির ভাই”

তৎক্ষনাৎ বন্যা মেঘের হাত ছেড়ে দিলো৷ হয়তো আবির ভাইয়ের চোখ মুখ দেখে ভয় পেয়েছে।
মেঘ কয়েকপা এগিয়ে আবির ভাইয়ের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।
ততক্ষণে আবির ভাই বাইক থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পরেছেন।
আবির ভাই উদ্বিগ্ন কন্ঠে মেঘকে বললেন,

“এই তুই কি কিছু খাস?”
মেঘ কপাল কুঁচকে বললো,
“মানে? কি খাবো?”
“কোন দুনিয়ায় থাকিস তুই ডাকলে শুনিস না”
মেঘ চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলো।
আবির ভাই আবার বললেন,
” বাইকে উঠ”

মেঘ যেনো নিজের কানতে বিশ্বাস করতে পারছে না, আবির ভাই তাকে বাইকে উঠতে বলছে, এটাও সম্ভব৷
মেঘের হেলদোল নাই দেখে বাইক থেকে হেলমেট নিয়ে নিজেই পরিয়ে দিলো মেঘকে। তারপর পুনরায় বাইকে বসলেন,
আবার বললেন,
“তুই কি উঠবি?”

এতকিছু না ভেবে হাসিমুখে ঐ পাশে গিয়ে বাইকে উঠে বসলো মেঘ। আবির ভাইয়ের গায়ের সাথে গা লাগছেই কেঁপে উঠলো কিছুটা। মেঘ কাঁধে হাত রাখবে নাকি রাখবে না তা নিয়ে দুটানায় আছে। এমনিতেই জীবনে প্রথম বাইকে উঠছে। তারপর আবার আবির ভাইয়ের বাইকে ।
আবির ভাই যেনো বুঝে নিলো মেঘের অস্থিরতা।
শীতল কন্ঠে বললেন,

“ধরে বস না হয় পরে যাবি”
কাঁপাকাঁপা হাতে কাঁধে হাত রাখলো মেঘ, সঙ্গে সঙ্গে হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বাড়ছে অষ্টাদশীর।
এদিকে বন্যা তাকিয়ে দেখছে তাদের আর ভাবছে,
“”মেঘের বর্ণনায় কোনো ভুল ছিল না, আবির ভাই সত্যি ই অসাধারণ। যেকোনো মেয়ে এক দেখাতেই ক্রাশ খাবে। মেঘের ক্রাশ খাওয়ায় ভুল কিছু না। “”

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাইক স্টার্ট দিলো আবির ভাই, কিছুটা ভ*য়ে আবির ভাইয়ের কাঁধে জোড়ে চেপে ধরলো মেঘ, কান দিয়ে শা শা করে বাতাস ঢুকছে, প্রথমবার বাইকে উঠার অনুভূতি অসাধারণ। মেঘ নিভু নিভু চোখে চারপাশ দেখার চেষ্টা করছে।
বেশকিছুক্ষণ পর তারা পৌঁছে গেলো, “বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে”
মেঘ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে। আবির ভাই ওকে শপিং এ নিয়ো আসছে৷ ভাবতেই পারছে না সে, এত খুশি রাখবে কোথায়।

আবির ভাই মেঘকে নিয়ে একটা হিজাবের দোকানে গেলো, রেগুলার পড়ার জন্য হিজাব চাইতেই দোকানদার জর্জেট হিজাবের বক্স বের করে দিলো।
“মেঘের বুঝতে বাকি নেই, রবিবারে বলেছিল হিজাব পড়ে যেতে কিন্তু মেঘ ওড়না মাথায় দিয়ে যাচ্ছিলো, কি করবে সে। মা আর বড় মা ছাড়া মেঘ তো একা শপিং এ যায় নি কখনো। বড় আম্মুরাও এখন শপিং করবেন না। তাই মেঘ ভেবেছিলো কিছুদিন ওড়না মাথায় দিয়ে যাবে তারপর ওনারা শপিং এ গেলে নিয়ে আসবে।। ”
মেঘ বক্স থেকে বেছে বেছে ৩ টা আলাদা করেছে৷
তারপর আবির ভাইকে জিজ্ঞেস করলো,

“এই তিনটা নিব?”
আবির ভাই মেঘের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দোকানদার কে জিজ্ঞেস করলেন,
“এগুলোর মধ্যে কয়টা কালার আছে আপনার কাছে?”
দোকানদার বললেন, “ভাইয়া আপাতত ২৪ টা আছে, আপনি চাইলে আরও দিতে পারবো তবে কিছুদিন পরে নিতে হবে!”

আবির ভাই স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
“সবচেয়ে বড় সাইজের হিজাব ২৪ টা কালার ই দেন”
আবির ভাইয়ের কথা শুনে মেঘ তড়িৎ বেগে তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে, তৎক্ষনাৎ চোখ নামিয়ে শক্ত গলায় বললো,

“এতগুলো লাগবে না, ৩ টা হলেই হবে!”
আবির ভাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছে মেঘের দিকে,কটমট করে বললো,
“তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি?”
ভ*য়ে সিটিয়ে পরলো মেঘ। আর কিছু বলার সাহস পেলো না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে । যেখানে তার কোচিং সপ্তাহে ৩-৪ দিন। ২-৩ টা হিজাব হলেই হয়ে যায়। ২৪ টা নেয়ার কোনো মানেই হয় না।। কিন্তু কিভাবে বুঝাবে হিট*লারকে।

আবির ভাই নিজে পছন্দ করে আরও কয়েকটা পার্টি হিজাবও নিলো। মেঘ মাথানিচু করে মনে মনে শুধু আবির ভাইকে ব*কেই গেলো।
আবির শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে মেঘকে বললো,
“চল”
মেঘ মুখের উপর জিজ্ঞেস করে ফেলেছে,

” কোথায়?”
আবির ভাই আবারও রাগান্বিত কন্ঠে কটমট করে বললো,
“কোথায় যাবো না যাবো কি তোরে বলে যাইতে হবে?”
মেঘের নিজের মাথায় নিজে গাট্টা দিতে মন চাচ্ছে। সবসময় আম্মু, বড় আম্মুকে আর বন্যাকে কথার পাল্টা ঝটপট প্রশ্ন করে অভ্যস্ত মেঘ। তাই আবির ভাইকেও তেমনি জিজ্ঞেস করে ফেলছে৷
আবির ভাইয়ের পিছন পিছন একটা জুয়েলার্সের দোকানে ঢুকলো মেঘ। আবির ভাই একজনকে জিজ্ঞেস করলেন,

“আজকে কি নেয়া যাবে?”
লোকটা হাসিমুখে উত্তর দিলো
” জ্বি ভাইয়া, দু মিনিট বসুন আমি বের করে দিচ্ছি। ”
২ মিনিটের মধ্যেই লোকটা পূনরায় প্রশ্ন করলেন, “ভাইয়া প্যাকিং করে দিবো?”
আবির ভাই তৎক্ষনাৎ বললেন,
“প্যাকিং লাগবে না, রেডি হলে আমায় দেন”

লোকটা ১ জোড়া নুপুর এগিয়ে দিলো আবির ভাইয়ের দিকে।
মেঘও উৎসুক জনতার ন্যায় নুপুর ২টা দেখছে, অনেক মোটা আর খুব সুন্দর ডিজাইনের ।
হঠাৎ আবির ভাইয়ের কান্ডে মেঘ কারেন্টের খাম্বার ন্যায় স্তব্ধ হয়ে গেছে।
আবির ভাইয়ের এক হাঁটু ফ্লোরে আরেকটা পা স্বাভাবিক রেখে নিচে বসেছে। যেভাবে প্রপোজ করে অনেকটা সেভাবে। সহসা মেঘের এক পা নিজের হাঁটুর উপর রেখে একটা নুপুর পরিয়ে দিলেন,

এদিকে মেঘের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার অবস্থা, হৃদপিণ্ড কম্পনের তীব্রতা বুঝতে পেরে মনে হচ্ছে এই যাত্রাই আর বাঁচবে না। আবির ভাইকে না করার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। খাম্বার মতোই স্থির, যা হওয়ার তা তো শরীরের ভিতরে হচ্ছে, র*ক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়ছে, মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রেশার উঠে যাচ্ছে মেঘের।
দু পায়ে নুপুর পরিয়ে আবির ভাই পুনরায় চেয়ারে বসে, মেঘের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“দেখ, কেমন লাগছে ”

মেঘ তখনও নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে,
আবির ভাই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“তোকে নুপুর দেখতে বলছি, আমায় না! ”
আবির ভাইয়ের কথায় দোকানদার জোরে হাসি শুরু করেছে৷
ততক্ষণে মেঘ স্বাভাবিক হলো, পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি পায়ের দিকে তাকালো,
সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে, ফর্সা পা গুলো দেখতে অন্যরকম লাগছে।
খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,

“অনেক ধন্যবাদ আবির ভাই”
আবির ভাই দোকানের বিল পরিশোধ করে কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে গেলেন,
মেঘের মাথায় শুধু ঘুরছে এইসব কিছু স্বপ্ন, একটু পর ঘুম ভাঙবে আর সব শেষ হয়ে যাবে।
রেস্টুরেন্টে বসে আবির ভাই মেঘের দিকে ম্যানু কার্ড এগিয়ে দিলেন, আর বললেন,
তোর যা খেতে ইচ্ছে করে অর্ডার দে।

মেঘ নিজের পছন্দ মতো কাচ্চি সাথে বোরহানি বললো৷
ওয়েটারকে ২ টা কাচ্চি দিতে বললো আবির। সাথে ২ টা বোরহানি।
মেঘ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আবির ভাই আপনার কি কাচ্চি পছন্দ? ”
আবির ভাই এবার বিরক্ত হয়ে বললো,
“আমার পছন্দ অপছন্দ তোর জেনে কাজ নেই৷ ”

মেঘের মুখটা চুপসে গেছে। খাবার আসায় দুজন চুপচাপ খাবার খেলো। মেঘ অবশ্য কয়েকবার চোখ তুলে তুলে আবির ভাই কে দেখছিলো কিন্তু আবির ভাইয়ের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই৷
সব কাজ শেষে আবির বাইকে উঠতে যাবে তখন মেঘ আবির ভাইকে ডাকলো,
“আবির ভাই”
“হুম”
“না, কিছু না!”

আবির ভাই এবার সত্যি সত্যি রাগ করলেন। কন্ঠ তিনগুন ভারি হলো, রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলেন,
“তোকে হিজাব আর নুপুর দিয়েছি বলে খুশিতে বেশি লাফাইস না! মাথায় ওড়না দিয়ে বউয়ের মতো চলাফেরা যাতে না করতে পারিস সেজন্য হিজাব দিয়েছি। আর তুই সারাক্ষণ টুইটুই করে কোথায় ঘুরিস তা তোর নুপুরের শব্দেই বুঝতে পারবো, এতে তোকে শা*স্তি দিতে সুবিধা হবে।”

মেঘ আহাম্মক বনে গেলো, কি না কি ভাবছিলো সে, আবির ভাই ভালোবেসে গিফট দিচ্ছে, আহা সে কি অনুভূতি। ”
সেই অনুভূতিতে এক বালতি পানি ঢেলে দিলো আবির ভাই।
আবির ভাই কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন,

“উঠ”
মেঘ ভ*য়ে ভ*য়ে চুপচাপ পিছনে উঠলো, এবার আর আবির ভাইকে ধরে বসবে না ঠিক করলো।
আবির ভাই ধম*কে উঠলেন,
“এক কথা তোকে কতবার বলতে হয় মেঘ, ধরে বস, না হয় রাস্তায় ফেলে চলে যাব”
মেঘের ছোট দেহ কম্পিত হয়।৷ সহসা চেপে ধরে আবির ভাইয়ের কাঁধ।
আবির ভাইয়ের অভিব্যক্তি বুঝা গেলো না।বাসার সামনে পর্যন্ত আসলো কিন্তু কেউ কোনো কথা বললো না।
বাসার সামনে বাইক থামিয়ে বললো,

“বাসায় যা”
মেঘ বাইক থেকে নেমে, আবির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি যাবেন না?”
“না”
“কোথায় যাবেন?”
আবির বিরক্তি নিয়ে বললেন,

“তুই কে যে তোকে আমার বলে যাইতে হবে কোথায় যাব না যাবো! আর একবার আমার মুখের উপর প্রশ্ন করবি সঙ্গে সঙ্গে থা*প্পড় দিব!”
মেঘের মুখটা চুপসে গেছে, চিবুক নামিয়েছে গলায়, পাতলা ওষ্ঠে বিড়বিড় করে বললো,
“হিট*লার একটা। ”
আবির ভাই তৎক্ষনাৎ জবাব,
“আমি হি*টলার হলে তুই কি?”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৮

আবির ভাই শুনে ফেলছে? আঁতকে উঠলো মেঘ, আবির ভাইয়ের দিকে তাকানোর সাহস হলো না, থা*প্পড়ের ভয়ে ছুটে পালালো বাড়ির ভিতর।
আবির ভাই নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পায়ের দিকে, নুপুরের ঝনঝন শব্দ কানে লাগছে৷ অকস্মাৎ আবির ভাইয়ের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির ঝলক দেখা গেলো…..

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ১০