তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৮

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৮
নাদিয়া আক্তার সিয়া

কিছুক্ষণ পর মেহতাব গাড়ির চাবি নিয়ে আর চোখে সানগ্লাস পরে বেরিয়ে আসলো ।
মেহতাব কে দেখে মেঘ মনে মনে বললো ,
মেঘ : ওনাকে দেখলে বুকের ভিতরে দুপ দুপ আওয়াজটা বেড়ে যায় কেনো ? আমি কি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ?

মেহতাব : এই যে মিস কোথায় থমকে গেলে । যাবে না নাকি ? কিভাবে যেতে চাও গাড়িতে নাকি নৌকা লাগবে ?
মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মুচকি হেসে বললো ” চলুন ”
এই বলে দুজনেই গাড়িতে উঠে পরে । গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে মেহতাব আর তার দিকে এক নজরে মেঘ তাকিয়ে আছে ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঘ : আমি কি সত্তি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি ? কিন্তু সে কি আমাকে কোনো সময় ভালবাসার দৃষ্টিতে দেখেছে বা কখনো দেখবে । আমাকে তো সে শুধু দায়িত্বের চোখে দেখে। হয়ত বিয়ের সময় সে না আসলে আজ তার ভাগ্যে আরও ভালো কিছু থাকতো । আমি তার জীবনে বোঝা হয়ে থাকতাম না । ( মনে মনে বললো )
মেহতাব গাড়ির লুকিং মিরোর দিয়ে দেখলো মেঘ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । সেটা খেয়াল করে বললো ,

মেহতাব : আমাকে কি ভালোবেসে ফেলেছো নাকি?
মেহতাবের কথায় মেঘের হুশ ফিরলো । তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো ,
মেঘ : সে কি মনের কথা পরতে পারে নাকি?
মেহতাব : কি হলো বলছো না কেনো?
মেঘ নিজেকে স্বাভাবিক করে মেহতাবের দিকে তাকিয়ে বললো,
মেঘ : ইয়ে মানে আপনার হঠাৎ এই কথা মনে হলো কেনো ?

মেহতাব : তুমি যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে তাই ভাবলাম যে হতে পারে । ( মুচকি হেসে )
মেঘ : যদি বলি ভালবাসি তাহলে ভালবেসে কছে টেনে নেবেন নাকি আমার থেকে আরও অনেক দুরে চলে যাবেন যেখানে আপনাকে ধরা ছোয়া তো দুরের কথা দেখতেও পারব না । ( মনে মনে বললো )
মেহতাব : কি হলো ? Are you okay ?

মেঘ এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। শুধু মাথা নাড়িয়ে বললো সে ঠিক আছে ।
গাড়িটি অনেক বড় একটি শপিং মলের সামনে এসে দড়ালো । মেঘ গাড়ি থেকে নেমে পরলো সে বাড়ি থেকে খুশি মনে বের হলেও এখন তার আর ভালো লাগছে না । মেহতাব গাড়ি থেকে নেমে মেঘ কে নিয়ে সিমরান , মেহসান আর বাকি সবার দিকে এগিয়ে গেলো। পাশেই ৫ টা ছেলে সিগারেট টান ছিলো । একটি ছেলে মেঘ কে দেখে বলে উঠলো , ” মামু ওই নীল পরীডারে দেখ সেই ফিগার কিন্তু ” এই কথা শুনে আরেকটা ছেলে বলে উঠলো , ” একদম খাটি কথা আর বাকি ৪ ডা মালও ফ্রি ”

এই কথা গুলো মেঘ , মেহতাব সহ বাকি সবাইদের কানে পৌছালো । মেহতাব কে শান্ত থাকতে দেখে মেঘ মনে মনে বললো ” এখন উনি কি ওদের মারবেন নাকি হিরোদের মতো ”
মেঘের চিন্তা ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে মেহতাব বললো ” মা আমার একটা গুরুত্ত পুর্ণ কাজ আছে আমায় জরুরি যেতে হবে । Take care ”

এই বলে মেহতাব সেখান থেকে চলে গেলো । মেঘ, অহনা আর অরিন বেগম বুঝতে না পারলেও হুল্লোড় গ্যাং এর সদস্যরা আচ করতে পারলো মেহতাব কিছুতো একটা করবেই । তারা যানে মেহতাব নিজের ইমোশন সো করতে পছন্দ করে না । তার চুপ থাকাই ঝড়ের পূর্বাভাস ।
অরিন বেগম : চলো আমরা ভিতরে যাই।
এই বলে মেঘ , অহনা আর অরিন বেগম চলে গেলো কিন্তু মিথিলা, সিমরান, শাম্মি আর মেহসান সেখানে এক কোনায় লুকিয়ে পরলো।

মিথিলা : তোরা কি সিওর যে মেহতাব ভাইয়া আসবে ?
শাম্মি : আমি তো ৩০০০ টাকা বাজিও ধরতে পারব ।
মেহসান : সিওর মানে ভাইয়া আসবেই দেইখো মিথু আপু ।
সিমরান : ওই তো ভাইয়া টি শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতাছে । আর ব্লাক ঘড়ি টা গাড়িতে রেখে দিয়া আসছে ।
মেহসান : এম্বুলেন্স কল করো।
শাম্মি : কেনো?

মেহসান : ওই পচা লোক গুলারে বাচাই তে হইব নাইলে ভাইয়া ওগো ওই জায়গায় পুইতা থুইবো। আহারে….
মেহসান এর কথা শুনে সবাই হেসে দিলো ।
মেহতাব লোকগুলোর দিকে এগিয়ে বলতে লাগল,
মেহতাব : আপনাদের মধ্যে কে যেন নীলপরীর প্রশংসা করছিলো।
একটা লোক বলে উঠলো ” আমি করছি কি করবি রে তুই ”

লোকটার কথা শেষ হওয়ার আগেই মেহতাব তার থুতনিতে জোরে একটা ঘুসি মারলো । আর লোকটা একটু দুরে নিচে পরে গিয়ে বেহুশ হয়ে পরলো ।
মেহসান : বাহ বাহ ! এক ঘুষিতে ১ উইকেট।
বাকি ৪ টা ছেলে এটা দেখে হাতে ছুরি নিয়ে মেহতাবের দিকে আসতে লাগলো । মেহতাব সব কয়টাকে গালে আর ঠিক জায়গা মতো হাত দিয়ে আবার পা দিয়ে মারতে লাগলো ।
মেহতাব : আমার পরিবারের মেয়েদের আর আমার বৌ কে তোরা কুনজর দিবি আর আমি কিছু বলবো না। It’s your big mistake . ( রাগী স্বরে বললো )

এই বলে ওদের মারতে মারতে আধমরা করে ফেললো। এরপর আবার বললো ,
মেহতাব : এখানে আমার বোন বা স্ত্রীর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে আমি একি কাজ করতাম । সো নেক্সট টাইম এগুলো দেখেলে জানে মেরে ফেলবো । তোরা এই মেহতাব চৌধুরি কে চিনিস না মাইন্ড ইট ।
সব ছেলেগুলো মেহতাবের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো ।
মেহতাব : Now go from here . আমি কাউন্ট ডাউন শুরু করছি 1 , 2 ..3 শোনার আগেই সবাই সেখান থেকে এক দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেলো ।

মেহতাব কে দেখে সব মেয়েরা মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। তার হ্যান্ডসামনেস তার কিলার এটিটিউড দেখে ।
এইসব দেখে হুল্লোড় গ্যাং বলে উঠলো ,
সিমরান : OMG!
শাম্মি : ভাই আমার ৩০০০ টাকা কে দিবা দেও?
মেহসান : আপু টাকার কথা বাদ দেও তো । এতো সুন্দর সিন কোনো ফিল্মেও দেখছো । জাস্ট অসাধারণ !
মিথিলা : ভাবী দেখলে ভাইয়ার উপর ক্রাশ খাইতো ।
শাম্মি : হুম ঠিক ।

এই বলে ওরা সবাই শপিং মলের ভিতর ডুকে পরলো ।
অরিন বেগম , অহনা আর মেঘ শাড়ি চুজ করছিলো । মেহসানদের দেখে অরিন বেগম বললো ” কি রে কোথায় ছিলি?”

সবাই সবার দিকে চাওয়া চাওয়ি করে সিমরান বলে উঠলো , ” মেহসানের ওয়াশরুম এ যাওয়ার দরকার ছিলো ওর সকাল থেকে পাতলা পায়খানা হচ্ছে তাই বার বার টয়লেটে আসছিলো আর যাচ্ছিলো ”
মেহসান : বাহ ! সিমু আপু এই ছোটো ভাইয়ের সম্মান টা শেষমেষ এই শপিং মলের লোকদের কাছে বিক্রি করে দিলে । ( অভিমান করে )

সিমরান মেহসানের ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেল এর কাছে হার মেনে বললো ” চুপ থাক দুইটা আইসক্রিম কিনে দিবো আর আজকের দিনের জন্য আনলিমিটেড ফোন “।
এই কথা শুনে মেহসানের মুখে গোল্ড মেডেল পাওয়ার মতো একটা উজ্জল হাসি ফুটে উঠলো।

সবার কেনা কাটা করা শেষ এখন শুধু মেঘ আর অহনার বাসায় পড়ার জন্য শাড়ি চুজ করছিলো। মেঘ একটা গোলাপি কালারের শাড়ি নিজের শরীরের উপর দিয়ে দেখছিল কেমন লাগে । তখনি মেহতাব শপ এ ডুকছিলো আর মেঘ কে দেখে তার দৃষ্টি সেখানে যায় এবং সে এক দৃষ্টিতে সেখানে তাকিয়ে ছিলো। মেঘ শাড়ির দাম দেখে শাড়ি টা রেখে দিলো মেহতাব সব সেখানে দাড়িয়ে দেখছিলো ।
মেহতাব কে লক্ষ্য করে অরিন বেগম বলে উঠলো,

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৭

অরিন বেগম : মেহতাব তুই এখানে ?
মেহতাব : হ্যাঁ আমার কাজ শেষ । তোমাদের শপিং শেষ করা শেষ হয়েছে ?
অরিন বেগম : হ্যাঁ এখন শুধু মেঘ এর জন্য শাড়ি চুজ করছি সবার শেষ কিন্তু মেঘ কিছুতেই কোনো শাড়ি নিতে চাচ্ছে না। কি করি বলতো ?

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৯