তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৯

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৯
নাদিয়া আক্তার সিয়া

মেহতাব কে লক্ষ্য করে অরিন বেগম বলে উঠলো,
অরিন বেগম : মেহতাব তুই এখানে ?
মেহতাব : হ্যাঁ আমার কাজ শেষ । তোমাদের শপিং শেষ করা শেষ হয়েছে ?
অরিন বেগম : হ্যাঁ এখন শুধু মেঘ এর জন্য শাড়ি চুজ করছি সবার শেষ কিন্তু মেঘ কিছুতেই কোনো শাড়ি নিতে চাচ্ছে না। কি করি বলতো ?

মেঘ : মা আমার এখন কিছু লাগবে না । যদি প্রয়োজন হয় আমি নিজে চেয়ে নিবো ।
অরিন বেগম : কিন্তু মা ?
মেঘ : কোনো কিন্তু নয় । চলো মেহসান।
এই কথা বলে মেহসান আর বাকি সবাই মেঘের সাথে চলে গেলো । অরিন বেগম আর মেহতাব সেখানেই রয়ে গেলো ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহতাব : মা আমি ওর জন্য শাড়ি কিনে নিবো। তুমি গিয়ে গাড়িতে বসো ।
অরিন বেগম : তুই পারবি ?
মেহতাব : মেঘ যেহেতু আমার রেসপনসিবিলিটি তাহলে ওর ভালো খারাপ দুটিই দেখার দায়িত্ব আমার । Don’t worry I’ll manage .
অরিন বেগম : ঠিকাছে আমি যাচ্ছি। তারাতাড়ি আসবি ।
মেহতাব : Ok . যাও তুমি ।

এই বলে অরিন বেগম সেখান থেকে চলে গেলো । আর মেহতাব শাড়ি চুজ করতে লাগলো । মেহতাব দশটি রঙের শাড়ি চুজ করলো সেগুলো ভিন্ন ধরনের বেগুনি , নীল , আকাশি , সবুজ , হলুদ , কমলা, লাল , গোলাপি , কালো , সাদা এই দশটি কালার বেছে নিলো ।
শপ কিপার বলে উঠলো ” বাহ ! স্যার আপনার ড্রেসিং সেন্স তো খুব ভালো । যে আপনার ওয়াইফ হবে সে খুব লাকি ” ।

এই কথার প্রতিউত্তরে মেহতাব একটি মুচকি হাসি দিলো । আর পেমেন্ট করে চলে এলো।
মেহতাব কাউকে না জানিয়ে একটি হীরের নেকলেসও চুজ করে মেঘের জন্য কিনে নিলো । কারন সে এখন পর্যন্ত মেঘ কে কিছু উপহার দেয় নি । তাদের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয় নি তাই দেওয়ার সুযোগও পায়নি ।
এই দিকে বাইরে সবাই মেহতাবের জন্য অপেক্ষা করছিলো ।

সিমরান : খালামনি ভাইয়া এতো লেট কেনো করছে ?
অরিন বেগম : এক্ষুণি এসে পরবে তোরা গাড়িতে উঠে পর ।
শাম্মি : কিন্তু ভাইয়া করছে টা কি ?
মিথিলা : ওই তো ভাইয়া ।
মিথিলার কথা শুনে সবাই সামনে তাকালো ।

মেহতাব শপিং মল থেকে বের হচ্ছিলো আর কিছু মেয়ে তাকে দেখে কানে কানে কিছু বলছিলো । আর কিছু মেয়েতো মেহতাব এর সামনে এসে মেহতাব কিছু একটা বললো । কিন্তু মেহতাব কিছু একটা বলতেই তারা মন খারাপ করে চলে গেলো ।

এটা দেখে মেঘ প্রকাশ না করলেও মনে মনে খুশি হলো ।
মেহতাব : তোমরা গাড়িতে উঠে পরো।
মেহতাবের কথা মতো সবাই গাড়িতে উঠে পরলো।
মেঘ মেহতাবের পিছু পিছু মেহতাবের গাড়িতে উঠে পরলো। কারন তাকে জানতে হবে মেহতাব কি এমন বললো ? যে মেয়েগুলোর মুখ কালো হয়ে গিয়েছিলো ।

মেহতাব : বাহ ! আমার কথা মতো উঠে পরলে কোনো তর্ক না করে।
মেঘ : আপনি কি আমাকে ঝগড়ুটে বলার ট্রাই করছেন ? ( রেগে গিয়ে )
মেহতাব : I’m sorry . Actully I didn’t mean it you understand it wrongly .
এই বলে মেহতাব গাড়ি চালানো শুরু করলো । মেঘ : একটা কথা বলবো ?
মেহতাব : হুম , বলতে পরো । এতো ফর্মালিটির কি আছে ।
মেঘ : ওই মেয়েগুলো আপনাকে কি বলছিলো ?
মেহতাব : কোন মেয়ের কথা বলছো?
মেঘ : ওই যে শপিং মলের বাইরে।

মেহতাব : ওহ । Actully They ask me for my number .
মেঘ : তারপর আপনি কি বলেছিলেন ?
মেহতাব : আমি বেশি কিছু বলিনি জাস্ট বলেছি , ” If my wife give me the permission then I can give it to you ” ( যদি আমার স্ত্রী আমাকে অনুমতি দেয় তাহলে আমি তোমাকে আমার নাম্বার( it ) দিতে পারব )

মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মেহতাবের থেকে মুখ ঘুরিয়ে মুচকি একটি হাসি দিলো। কিন্তু মেহতাবের থেকে তা আড়াল হলো না সে ঠিকিই লক্ষ্য করেছে। তাই মেহতাব বলে উঠলো ,
মেহতাব : তোমার হাসিটা খুব সুন্দর , এন্ড ইউ লুক সো বিউটিফুল হোয়েন ইউ স্মাইল ।
মেহতাবের কথায় মেঘ থতমত খেলো আর একপ্রকার লজ্জাও পেলো । কিন্তু প্রকাশ করলো না । আর গাড়ির কাচ দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো ।

বাড়িতে পৌছে সবাই দেখলো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । চারিদিক ফুলের গন্ধে মো মো করছে । এতো বড় রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ি এতো তাড়াতাড়ি সাজানো হবে কেউ তা ভাবতে পারেনি। আর এইদিকে মেহতাবের দাদী সৌরভ , রৌফ , সিয়াম , সামির আর সৌমকে দিয়ে স্টাফদের কাজ করাচ্ছে আর স্টাফরা তাদের হেল্প করছে । সৌরভ বিশাল বড় প্রবেশ দারে ফুল লাগাচ্ছে আর কপাল চাপরাচ্ছে । রৌফ ঝারবাতি গুলো দেয়ালের সাথে লাগাচ্ছে । সিয়াম ফুলের মালা গুলো সিঁড়িতে না লাগিয়ে গলায় পেচিয়ে নিজে সুইসাইড করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে । সামির আর সৌম দাদীর পা আরেকজন ঘাড় টিপে দিচ্ছে । সবার বেহাল দশা ।

এই সব দেখে সবাই হাসবে না কানবে তাই ভাবতে পারছেনা । মেহতাব কিছু না বলে সোফায় বসে পরলো । অরিন বেগম মেঘ আর অহনা মুখ টিপে হেসে নিজেদের রুম এ চলে গেলো । পার্লার থেকে মেঘ আর অহনাকে সাজাতে এসেছে তাই তারা আর সেখানে থাকলো না । আর অরিন বেগম টুক টাক কিছু কাজ সেরে নিতে সেও চলে গেলো আর যাওয়ার সময় মেহতাবের দাদিকে সঙ্গে করে রুম এ দিয়ে আসার জন্য নিয়ে গেলো । দাদী যাওয়ার সাথে সাথে সিমরান একটি ছবি তুলে নিলো আর সৌরভদের উদ্দেশ্য করে পিঞ্চ মেরে বললো ,

সিমরান : এতো হাল নয় যেন বেহাল ।
এতে সিয়াম রাগ করে বললো,
সিয়াম : চুপ থাক সিমের বিচি ।
এই কথা শুনে সিমরান রেগে বললো ,
সিমরান : আমি যদি সিমের বিচি হই তাইলে তুমি পটাশিয়াম ।
রৌফ : বেড়ে বলেছিস তো । তোদের কথা শুনে আমার কবিতা পাচ্ছে ।

শাম্মি : ওয়াশ রুম এ যাও । এইখানে তোমার পচা কবিতার গন্ধ শুনতে কেউ ইন্টারএস্টেট নই।
রৌফ : শাম্মি ভালো হয়ে যা ভালো হইতে জামাই লাগে না ।
মেহতাব : তোরা থামবি । সবাই যার যার রুম এ যা। ( রেগে গিয়ে )
মেহতাবের কথায় সৌরভ আর সৌমিক ছাড়া সবাই চলে গেলো ।
সৌম : ভাইয়া । Can I ask something ?
মেহতাব : হুম বল । কি জানতে চাস ?

সৌম : এতো শপিং কি ভাবির জন্য তুমি করেছো?
সৌরভ : হ্যাঁ বলো বন্ধু আমি তোমার নেংটা কালের বন্ধু হয়ে জানতে উচ্ছুক হচ্ছি ।
মেহতাব এর প্রতিউত্তরে কিছু না বলে সব শপিং ব্যাগ নিয়ে উপরে চলে গেলো ।
সৌরভ : বেডায় আমার নেংটা কালরে অপমান করলো ।
সৌম : থাক আমার বাল্য কালের ভাই। আসো কোলাকোলি করি ।
( মেহতাব এর রুম এ )

মেঘের সাজা প্রায় শেষ। মেঘ আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখছিলো। সে গোল্ডেন কালারের একটি কাতানের শাড়ি পড়েছে নিল কারুকার্য করা পাড়ের দিকে , নিল কালারের গর্জীয়াস ব্লাউজ। চোখে ঘন কাজল , ঠোটে রেড কালারের লিপস্টিক , চুলগুলো খোপা করা। মেঘ বেশি গর্জিয়াস মেকআপ পছন্দ করে না। তাই সে পার্লারের লোকদের কাছে সাজেনি ।

কিছুক্ষণ পর মেহতাব ফোন স্ক্রল করতে করতে রুম এ ঢুকলো আর মেঘ কে একনজর দেখে আবার নিচে চলে গেলো । এতে মেঘের খুব অভিমান হলো । তারই কিছুক্ষন এর মধ্যে মেহতাব আবার রুম এ প্রবেশ করলো হাতে কিছু একটা নিয়ে । আর সেটা গহনার বক্স থেকে খুলে নিজ হাতে মেঘের গলায় পরিয়ে দিলো । একটি হীরের হার দেখতে বেশ সুন্দর । দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক দাম হবে ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৮

আর একটা বেলী ফুলের মালা চুলের খোপাই পরম যত্নে পরিয়ে দিলো । তারপর মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
মেহতাব : এখন গেট আপ কমপ্লিট হয়েছে । (মেঘের ঘাড়ে মাথা রেখে)
মেঘ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্বি ওই গলার নেকলেস আর বেলী ফুলের মালা খোপায় দেওয়ার পর তাকে আগের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ১০