তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৭

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৭
নাদিয়া আক্তার সিয়া

সৌরভ : বাহ ! তোর বৌ তো দেখছি খাটি সোনা । অন্য কেউ হইলে বলতো আপনার ইচ্ছা মা আপনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন ।
মেহতাব এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না শুধু মুচকি একটা হাসি দিলো ।
মেঘ ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসে রেডি হচ্ছিলো শপিং এর জন্য যাবে বলে । সে একটা নীল কালারের ৩ পিছ পরে নিয়ে চুল ঠিক করছিলো । মেহতাব রুমে ঢোকার সময় মেঘ কে রেডি হতে দেখে বললো।
মেহতাব : কোথায় যাচ্ছো নাকি?

মেঘ : হুম । আমাদের আর অহনা আপুদের রিসিপশন এর জন্য টুকটাক কিছু কেনা কাটা রয়েছে আর ড্রেস কিনতে হবে । তাই আমি মেহসান , অহনা আপু , সিমরান , মিথিলা , শাম্মি আর মা যাচ্ছি শপিং করতে।
মেহতাব : ঠিকাছে । আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি তোমারা রেডি হয়ে নেও। ওখানে আমার একটু কাজ আছে যাওয়ার সময় তোমাদের নামিয়ে দিয়ে আসবো ।
মেঘ : আপনি রেডি হবেন না?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহতাব : আমার রেডি হতে জাস্ট ১ মিনিট লাগবে আর মেয়েরা ছেলেদের থেকে আগে কোনো সময়ই রেডি হতে পারে না বরং তিন গুন বেশি সময়ের দরকার পরে তাদের ।
মেঘ : এমন ভাবে লেকচার দিচ্ছে যেন আমি সারাদিন লাগিয়ে দিবো । (মনে মনে বললো)
মেহতাব : মনে মনে এতো কথা বললে সারাদিন না সারারাতও লেগে যেতে পারে । Be quick .
এই বলে মেহতাব একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুম এ ডুকে যায়।

মেঘ : এমন ভাবে কথা গুলো বললেন যেন আমি ওনার পা ধরেছি ওনাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
নিচে সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়েছে কিন্তু মেঘ আর মেহতাব এর কোনো পাত্তাই পাওয়া যাচ্ছে না।
(মেহতাব এর রুম এ)

মেহতাব : কি বলে ছিলাম মেয়েদের একটু সময় বেশি লাগে । It doesn’t matter .
এই কথা শুনে মেঘ পিছনে তাকালো মেহতাব কে সে যতবার দেখে যেনো চোখই সরাতে ইচ্ছে করে না আজও তার বিপরীত নয় । সে মেঘ এর সাথে মেচিং করে নীল শার্ট আর কালো জিন্স পড়েছে । যাকে বলে এক কথায় ফাটাফাটি লাগছে । বিবাহিত ১০ বাচ্চার বাবা হলেও তাকে বিয়ে করার জন্য মেয়েদের কমতি হবে না যেনো আরো লাইন লেগে যাবে ।

এই কথা ভাবতে ভাবতে মেঘ নিজের মাথায় একটা থাপ্পড় মারলো ।
মেঘ : ( নিজেকে শান্ত করে বললো ) মেঘ মেহতাবের সামনে নিজেকে দুর্বল প্রকাশ করা যাবে না ।
মেহতাব : এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না তোমায় অ্যাডভান্স এ এলার্ট করে দিলাম । ( টি শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো )
মেঘ : আপনি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।

মেহতাব : এখনো তো ট্রেলারই দেখলে না । না দেখেই আমাকে অসভ্য বলছো । আমি আবার আমার সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ টোলেরেট করতে পারি না । ( সয়তানি হাসি দিয়ে )
এই বলে মেহতাব মেঘের কাছে এসে একটানে মেঘ কে কাছে এনে মেঘের কোমড় জড়িয়ে ধরলো আরেক হাত দিয়ে মুখে পরে থাকা চুল গুলো পরম যত্নে আলতো হাতে সরিয়ে দিলো । মেহতাবের প্রতিটি স্পর্শে মেঘ কেপে কেপে উঠ ছিলো । এই দেখে মেহতাব মুচকি হেসে বললো , ” এতো কাপকাপির কি আছে আমি তো আর অন্য কেউ নই । নিজের বিয়ে করা বৌ কে ছুলে অসভ্যতা হয় বলে আমি মনে করি না । আর এটা কোনো ক্রাইমও নয় । সো ক্যান আই কিস ইউ ?

মেঘ অবাকের উচ্চসীমা থেকে পরলো মেহতাবের শেষের কথাটা শুনে । কিন্তু সে প্রতিউত্তরে কিছু বললো না ।
মেহতাব : আমি আমার অ্যানসার পেয়ে গেছি।
এই বলে মেহতাব মেঘের আরো কাছাকাছি চলে আসে ।
মেহসান : ভাইয়া তোমাদের নিচে ডাকছে এতো লেট কেনো করছো । ( মেহসান ফোনে গেম খেলছিলও তখন তাই সে ফোন এর স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে ছিলো )

মেহসান এর আওয়াজ শুনে মেহতাব মেঘের থেকে বেশ খানিক টা দুরে গিয়ে দাড়ালো ।
মেহসান এবার ফোন এর স্ক্রিনের থেকে মাথা তুলে তাদের দুজনের দিকে তাকালো । মেহতাবকে দেখেই সে বুঝতে পরলো সে ভুল টাইমে এসে পড়েছে । মেহতাব মেহসানের দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।।
মেহসান : ভাইয়া তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমি তো শুধু তোমাদের ডাকার জন্য এসেছি সবাই নিচে ওয়েট করছে চলো। আর মেহু ভাবী তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো ?

মেহসানের প্রশ্ন শুনে মেঘ ইতস্ত বোধ করে বললো ” না তেমন কিছু না চলো আমরা নিচে যাই “।
এই বলে মেঘ এক কথায় বলতে গেলে মেহসানের হাত ধরে তারাতারি রুম থেকে বের হয়ে গেলো ।
মেহতাব তা দেখে হেসে ফেললো।
নিচে সিমরান , মিথিলা , শাম্মি সেজেগুজে দাড়িয়ে আছে আর বাকিরা গাড়িতে গিয়ে বসেছে।
সিমরান : ভাইয়া আর ভাবী কেনো আসছে না ?

মিথিলা : আমারও সেম প্রশ্ন এতো দেরি হচ্ছে কেন?
শাম্মি : হয়তো আমি জানি ।(লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে)
মিথিলা : হুম জানি কি বলবি । তোর সব উল্টোপাল্টা কথা মাথায় ঘুরপাক খায় ।
মেহসান আর মেঘ সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো । আর মেহতাব তাদের পিছনে আস্তে আস্তে আসছিল আর ফোন এ কোনো কাজ করছিলো ।

তাদের দেখতে পেয়ে মেঘ আর মেহতাব কে উদ্দেশ্য করে মিথিলা , শাম্মি , সিমরান একসাথে বলে উঠলো, বাহ ! ভাবী তোমার থেকে তো চোখ সরানোই মুস্কিল। আর ভাইয়া কে তো পুড়াই আগুন লাগছে ।
মেহতাব : হয়েছে গাড়িতে গিয়ে বস। I’m coming .
মেহতাবের কথা শুনে সবাই চুপ চাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পরলো । সবাই গাড়িতে বসেছে শুধু মেঘ আর মেহসান ছাড়া । গাড়িতে জায়গা থাক সত্তেও সিমরান বললো।

সিমরান : ভাবী তুমি ভাইয়ার গাড়িতে এসো এখানে আর জায়গা খালি নেই।
শাম্মি : সিমরান আপু এখানে তো অনেক জায়গা খালি ।
এই কথা শুনে সিমরান শাম্মির দিকে রাগী চোখে তাকায় । শাম্মি বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে ফেলে ।
শাম্মি : ওহ না আসলেই জায়গা নেই ।

মেহসান : তাহলে আমিও ভাইয়া ভাবীর সাথে যাই ।
মিথিলা : তোর মতো শিশুদের জায়গা এখানে আছে । ভাবী মেহতাব ভাইয়ার সাথে আসুক ।
এই কথা বলতে দেরি কিন্তু কাজ করতে দেরি নেই । তারা মেহসানের মাথায় চাটি মেরে গাড়িতে উঠিয়ে নেয় ।
মেহসান : আমাকে কি খেলনা পেয়েছো একবার এভাবে নয়তো ওভাবে কন্ট্রোল করছো ।
সিমরান : তুই নিজেকে তো সমস্যার অবসান মনে করিস তাহলে এই ব্যাপারটা বুঝতে এতো দেরি হলো কেনো ।
মেহসান : কোন ব্যাপার ? ওহ বুঝতে পেরেছি ।( মুচকি হেসে )

সিমরান : যাক এই গাধাটাকে বুঝানোর দরকার পরে নি ।( রাগ দেখিয়ে )
কিছুক্ষণ পর মেহতাব গাড়ির চাবি নিয়ে আর চোখে সানগ্লাস পরে বেরিয়ে আসলো।
মেহতাব কে দেখে মেঘ মনে মনে বললো ,
মেঘ : ওনাকে দেখলে বুকের ভিতরে দুপ দুপ আওয়াজটা বেড়ে যায় কেনো ? আমি কি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ?

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৬

মেহতাব : এই যে মিস কোথায় থমকে গেলে যাবে না নাকি ? কিভাবে যেতে চাও গাড়িতে নাকি নৌকা লাগবে ?
মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মুচকি হেসে বললো ” চলুন ”

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৮