তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৬

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৬
নাদিয়া আক্তার সিয়া

সিমরান, শাম্মি আর মিথিলা ছাদে গিয়ে দেখলো মেহতাব ব্যয়াম করছে ।
শাম্মি : ওহ এই তাহলে আর্টিস্ট ভাবির গাল লাল করার ।
মিথিলা : কিসব বলছিস ওসব কিছু না হয়ত ভাবিকে ভাইয়া কোনো লজ্জার কথা বলেছে।
সিমরান : তাই হবে । How romantic!
মেহসান : কি করছো তোমরা ?

মেহসান এর গলা শুনে চমকে গেলো সবাই ।
মিথিলা : আরে তুই যতবার আসিস ভয় পায়িয়ে দিস।
মেহসান : আমি কোন ভয় দেখাই নি হুল্লোড় পার্টি তোমদের ৩ জনকে বৈঠক খানায় ডাকছে। ( আগেই বলে নি হুল্লোড় পার্টিদের একটা আলাদা জায়গা আছে যেখানে তারা সব আলোচনা করে।)
সিমরান : ঠিকাছে চল ।
( মেহতাব এর রুম এ )

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঘ : উফফ মেঘ এতো লজ্জার কি আছে । ( জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে )
মেহতাব রুম এ ডুকতে ডুকতে বললো ” এটুকু প্রশংসায় এই অবস্থা তাহলে রোম্যান্স করবে কিভাবে ? ( সয়তানি হাসি দিয়ে )
মেঘ : ওনার কি রোদের তাপে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। কাল অব্দি যে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারত না। আজ সে রোম্যান্স এর কথা বলছে।( মনে মনে বিড় বিড় করে বলল)।

মেহতাব : ভেবো না যে আমি দুই বছরের শিশু যে রোম্যান্স কী বুঝি না। হয়ত আমাদের সেই পরিবেশে বিয়ে হয় নি কিন্তু তার প্রভাব আমি নিজের বিয়ে করা স্ত্রীর উপর পরতে দিবো না। আমি ২ দিন পর ফিরে যাচ্ছি নিজেকে সামলানোর জন্য একটা সুযোগ চাই আশা করি তুমি সেই সময়টুকু আমায় দিবে। আমি কবে আস্তে পারব তার কোনো ঠিক নেই । আশা করি এখানে তুমি সব কিছু ম্যানেজ করে থাকতে পারবে ।
এই কথা শুনে মেঘ এর বুক এর ভিতর ধক করে উঠলো যেন তার মনের ভিতরটাকে উথালপাথাল করে দিচ্ছে ।
মেঘ : তার যাওয়ার কথা শুনে আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো। মেঘ নিজেকে সামলা তার সামনে দুর্বল হওয়া যাবে না । ( মনে মনে বললো )

মেঘ : হুম , আমি পারবো আপনাকে অতো চিন্তা করতে হবে না । ( স্বাভাবিক কন্ঠে বললো )
মেহতাব : ok then . (মুখে স্বাভাবিক ভাবে বলল) কিন্তু মনে মনে তাচ্ছিলের সুরে বললো , “আমি ভেবেছিলাম হয়তো তুমি বলবে যেতে না থেকে যেতে । শুধু একটিবারের জন্য না করলে আমি থেকে যেতাম । But I’m wrong I don’t have any kind of importance to you . তুমি আমার জন্য কিছু ফিল করো না। আমি চলে গেলেই তুমি বেটার থাকবে । সো গুডবাই মেহনূর মেঘ ”

মেঘ আর মেহতাবের কথাগুলো দরজার আড়াল থেকে মেহসান,সিমরান,মিথিলা আর শাম্মি শুনছিলো ।
সিমরান : ভাবি যদি একবার বলতো যে , আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আপনাকে আমার প্রয়োজন তাহলেই হতো।

মিথিলা : তুই কিভাবে বুঝলি যে ভাবি এগুলো বললে ভাইয়া রাজি হয়ে যেত ?
মেহসান : আরে মিথু আপু ভাইয়ার চোখে ভাবির জন্য ভালবাসা , মায়া স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ।
শাম্মি : হুম ঠিক। কিন্তু অনুভব করলেও বুঝতে পারছে না একে ভালবাসা বলে এটাই তাদের প্রবলেম ।
সিমরান : তাহলে আর দেড়ি কিসের । একটা প্লান করে ফেলি চলো সবাই বৈঠক রুম এ সিক্রেট মিশন ফুলফিল করতে ।

বৈঠক রুম এ মেহসান,সিমরান,মিথিলা আর শাম্মি সব কিছু খুলে বললো হুল্লোড় পার্টি কে ,
সৌরভ : বাহ ভালো খবর!
শাম্মি : ভাইয়া চলে যাচ্ছে আর তুমি বলছো ভালো খবর । ( রাগ দেখিয়ে )
রৌফ : আরে গাধা এটা দ্বারা কি বুঝাইছে বোঝো নাই ।
শাম্মি : গাধী হতে পারি গাধা নই । ( রাগ দেখিয়ে )
সিয়াম : আমিও বুঝি নাই আমারেও কেউ বুঝাও।
রৌফ : এই গাধা-গাধীরে কেউ বুঝা।
সামির : আমি আছি নো টেনশন।

সৌম : এক্সপ্লেইন করো আমিও গাধার দলে অন্তর্ভুক্ত হলাম।
রৌফ : তুই গাধার দলেই ছিলি গাধা কোথাকার।
সামির : রিল্যাক্স আমি আছি সো ব্যাপার টা হলো , দূরত্ব = ভালবাসা কারন দুরত্ব হইলে ওরা দুইজন দুইজনরে মিস করবো এডা বুঝবো যে , “সখী ভালবাসা কারে কয়” । ( সুর দিয়ে )
সিমরান : এই ফাস্ট টাইম কোনো ভালো কথা বলছো ।
সামির : ভালোমানুষের কদর নাই। ( তাচ্ছিলের শব্দ করে )

সৌম : ঠিকাছে কিন্তু তবুও যদি মুখফুইটা না বলে ।
রৌফ : তাইলে আবার কি আমরা মোক্ষম ঔষধ সরবরাহ করিবো তাহাদের মধ্যখানে ।
সৌরভ : তা বেশ তাহলে বৈঠক এখানেই সমাপ্তি ।
সকালের নাশতা শেষ করে সোফায় বসে অরিন বেগম , মেঘ, অহনা আর মেহতাব এর ৩ খালাতো বোন (সিমরান,শাম্মি,মিথিলা) রিসিপশন নিয়ে আলোচনা করছিলো।
অরিন বেগম : তো তোমরা কি পরতে চাও লেহেঙ্গা না শাড়ি?

সিমরান, মিথিলা আর শাম্মি বললো ” ভাবী তোমরা কি পরতে কমফরটেবল মনে করবে সেটাই ফাইনাল ” ।
অহনা : আমার ছোটো জা ( মেঘ ) কি চায় তাই আমি চাই অর চয়েস আমার চয়েস ।
এবার সবার দৃষ্টি মেঘ এর উপর পরে। মেঘ ইতস্তত করে বলে ,
মেঘ : মা আপনি যা বলবেন তাই ফাইনাল। এই সম্পর্কে আমার অতো ভালো ধারনা নেই। আপনি গুরুজন আপনি ঠিক করুন আপনার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত হবে।

অরিন বেগম : ( কিছু একটা ভেবে ) ঠিকাছে । বিয়ের দিন মেঘকে লেহেঙ্গা সামলাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাই আমি চাই আজ ছোটো থেকে বড় সবাই শাড়ি পড়ুক।
সিমরান : ঠিকাছে । কিন্তু কোন কালার এর শাড়ি?

অরিন বেগম : মেয়েরা গোল্ডেন কাতান এর শাড়ি পরবে আর ছেলেরা নীল পঞ্জাবি তার উপর ডিজাইন করে গোল্ডেন কালারের কারুকাজ করা আর গোল্ডেন পায়জামা যার বাম পাশে সূক্ষ নীল কারুকাজ থাকবে ।
মিথিলা : পারফেক্ট খালামনি ।

অরিন বেগম : হয়েছে অনেক খালামনির প্রশংসা । গিয়ে রেডি হয়ে নেও সবাই । ( সৌজন্যের হাসি দিয়ে )
সবাই উঠে নিজেদের রুম এ চলে গেলো মেঘ বাদে।
মেঘ : কোথায় যাচ্ছি আমরা মা?

অরিন বেগম : তোমাদের নিয়ে শপিং এ তোমাদের গলায় পড়ার জন্যে স্বর্নের সেট কিনবো নীল পাথর যুক্ত আর শাড়ি, পঞ্জাবি আর ঐ টুকটাক।
মেঘ : কিন্তু মা আপনি তো আমাকে আর অহনা আপুকে স্বর্নের জুয়েলারির অনেক সেট দিয়েছেন। আমি আর কিছু চাই না।

অরিন বেগম : কোনো কিন্তু নয় । ওগুলো তোমাদের দাদী শাশুড়ির আমলের তোমাদের দাদী শাশুড়ি আমাকে দিয়ে ছিলেন আর আমি তোমাদের দিলাম তাই আমি আলাদা করে তোমাদের কিছু উপহার দিতে চাই ।
মেঘ : মা আমার লাগবে না সত্যি বলছি আপনি আর জোর করবেন না। তাহলে আমি যাবো না শপিং এ।
অরিন বেগম : আমার পাগলি মেয়ে । ঠিকাছে তাহলে যেকোনো ফুলের সেট কিনবো শাশুড়ি আর বৌমা মেচিং করে । এবার না করা যাবে না। ( মেঘকে জড়িয়ে ধরে )

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৫

মেঘ : হুম তাহলে ঠিকাছে । ( মুচকি হাসি দিয়ে )
এগুলো ২ তোলায় দাড়িয়ে মেহতাব আর সৌরভ শুনছিলো আর দেখছিলো ।
সৌরভ : বাহ ! তোর বৌ তো দেখছি খাটি সোনা । অন্য কেউ হইলে বলতো আপনার ইচ্ছা মা আপনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন ।
মেহতাব এর প্রতিউত্তরে কিছু বললো না শুধু মুচকি একটা হাসি দিলো ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৭