তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৫

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৫
নাদিয়া আক্তার সিয়া

মেহসান : ভুল উত্তর তাই আমার আইডিয়া দিব না।
সিয়াম : না দিলে না দে লাগত না ।
মেহসান : আরে রাগ হোও কেন বলতাছি ।দেয়ালেরও কান আছে কাছে আসো সবাই। (ফিসফিস করে মেহসান সব প্লান বলে দিলো সবাইকে)
সবাই বলে উঠল , দারুন! প্লান, মিশন লন্ডন হবে ভন্ডুল।
( আহতাব এর রুম এ )

আহতাব : I’m sorry অহনা । আমি জানতাম না যে তোমার নাম অহনা আমি মেহনূর কে কষ্ট দিতে চাই নি ।
অহনা : দেখুন আপনার ভাই যদি সময়মত না আসতো তাহলে আমার মেঘ এর উপর কলঙ্কের দাগ পরত । আপনাদের একটা ভুলের জন্য আরেকটু হলে আমার বোনের জীবন নষ্ট হয়ে যেত।
অহতাব : আমি মেহনূর এর কাছে ক্ষমা চাইব। এবার তো রাগ করো না আমাকে মাফ করে দেও প্লিজ এই দিন কিন্তু বার বার আসে না বলে দিলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অহনা : আপনি তো অনেক খারাপ ।
আহতাব : খারাপের কি দেখলা এখনও তো দেখা বাকি ।
( এই বলে আহতাব অহনার কপলে কিস করলো । তারা একসাথে অনেক সুন্দর মুহুর্ত কাটলো অহনা বাধা দিলো না। অহনা বুঝেছিল অহতাবের এখানে কোনো দোষ ছিলো না সে তো বুঝতে পারে নিই ভালো তো সে অহনাকে বেশেছিলো শুধু মেঘ নাম ভেবে ভুল করেছে । আজকে সময়মত মেহতাব উপস্থিত না থাকলে ৩ টি জীবনে ঝর বয়ে যেত । তার অতি আদরের মেঘ কে কটু কথা শুনতে হতো সমাজের কাছ থেকে অহনার মা এর থেকে। মেঘ ও সুখ ডিসার্ব করে আর মেহতাব মেঘ কে অনেক ভালো রাখবে তা মেহতাব কে দেখলেই বুঝা যায়।)

সকালে উঠে মেঘ দেখলো মেহতাব ঘরের কোথাও নেই । তাই সে ঘড়ির দিকে তাকালো ঘড়িতে ৭ টা বাজে । তাও কেউ তাকে ডাকতে এলো না। সে উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় দেখলো কেউ উঠে নি শুধু তার শাশুড়ি মা কাজ করার স্টাফ দের সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। মেঘ কে লক্ষ্য করলো মেঘ কে উদ্দেশ্য করে বললো ।

অরিন বেগম : মেহনূর তুমি উঠে পড়েছো আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে অহনা কে একটু আগে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি । তুমি ওর সাথে বরং গল্প করো। তোমার ননোদিনি রা তো এতো সকালে উঠবার নয় ।
মেঘ : না মা সমস্যা নেই আমি আপনাকে বরং হেল্প করি কোনো কাজ থাকলে আমাকে দিন ।
অরিন বেগম : কি বলছো এগুলো মা । তোমাকে কে কি আমি কাজ করাতে এনেছি । আমার তো কোনো মেয়ে নেই তুমি আর অহনা আজ থেকে আমার মেয়ে । তোমার কিছু লাগলে আমাকে বলতে পারো । এই ঘরকে নিজের ঘর মনে করবে আর আমাকে নিজের মা মনে করবে পারবে না আমার জন্য এইটুকু কাজ করতে ।

( অরিন বেগম এর কথা শুনে মেঘ অনেক অবাক হলো আর তার আগের দিন গুলোর কথা মনে পরে গেলো । মামির বাসায় মামি তাকে অনেক কথা শুনিয়েছে অনেক কাজ করিয়েছে কিন্তু মামি কোনো সময় তাকে মা বলে সম্মওধন করে নি বা কাছে ডেকে দুই একটা মিষ্টি কথা বলে নি। শুধু অপয়া বলে খোটা দিয়েছে । কিন্তু সে প্রতিবাদ করেনি নিজের আপনজন মনে করেছে এতে তাদের দোষ নেই দোষ তার ভাগ্যের এই কথা সে ছোটো বেলা থেকে বুঝে নিয়েছিলো । বিয়ের আগে শুনেছিলো এই বাড়ির সবাই অনেক ভালো তবে আজ তা প্রমান হয়ে গেল । আল্লাহ যেমন তার থেকে তার মাকে কেড়ে নিয়েছে তেমনি মায়ের মতো স্নেহময়ী শাশুড়িকে পাবার জন্য এই পরিবারে তাকে পাঠিয়েছেন খোদার কাছে সে চির ঋণী হয়ে থাকবে ) ।

অরিন বেগম : কি ভাবছিস এতো মেঘ মা?( অরিন বেগমের কথায় হুশ ফিরলো মেঘ এর ) ।
মেঘ : না মা কিছু না।
অরিন বেগম : আচ্ছা ঠিকাছে । তুই বরং এই কফি টা গিয়ে মেহতাব কে দিয়ে আয় তারপর নিচে আসবি নাস্তা সেরে নেবো আর তোর সাথে অনেক আলোচনা আছে তোদের রিসিপশন নিয়ে তোদের কি পছন্দ অপছন্দ জানতে হবে তো । এই অনুষ্ঠানটি অনেক বড় করে করবো । তোদের শাড়ি , গহনা সিলেক্ট করতে হবে কতো কাজ কিন্তু বাড়ির সবার কোনো খবরিই নেই । মাথাটাও ব্যথা করছে ।

মেঘ : মা আপনি শান্ত হোন । আপনি চিন্তা করবেন না আমাকে বুঝিয়ে দিয়েন আমি সব পারব আপনার বৌ হিসেবে না থাক মেয়ে হিসেবে তো একটু কাজ করতেই পারি আমি সব সামলে নিবো। আরেকটা কথা আমি কিন্তু অনেক ভালো আদা চা করতে পারি আপনার মাথা ব্যথা এক ঝটকায় সেরে যাবে ।
অরিন বেগম : তা বেশ খাওয়া আমাকে এক কাপ তোর হাতের স্পেশাল চা তার আগে মেহতাব কে কফি দিয়ে আয় তারপর তুই আর আমি দুজনে একসাথে খাবো আর গল্প করব।

মেঘ : ঠিকাছে মা। কিন্তু উনি কোথায়?
অরিন বেগম : আর কোথায় ছাদে হয়তো এক্সসারসাইজ করছে । আরেকটা কথা এই পেকেট টা নে এতে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের শাড়ি আছে । মেহতাব হাল্কা গোলাপি রং খুব পছন্দ করে । এটা পরে ছাদে যাবি ।
মেঘ : ঠিকাছে । কিন্তু মা ?
অরিন বেগম : কোনো কিন্তু নয় যা একটু পর নিচে আসিস ।

অরিন বেগমের সাথে কথা শেষ করে মেঘ নিজের রুম এ গিয়ে শাড়িটা পরে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
ছাদে মেহতাব পুশ আপ করছিল । মেঘ কে সে দেখতে পায় নি। মেহতাব এর ঘাম কপাল থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ছিল। সূর্যের আলোতে তার ঘামে ভেজা শরীর চক চক করছিল।
মেঘ মেহতাব কে দেখে যেন মুখ থেকে কথাই বের হচ্ছেনা।
মেঘ : উনি আমাকে মেরেই ফেলবেন কে বলেছিল এতো সুদর্শন হতে। ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই হলেই এক জালা কুল মেঘ কুল ।

মেঘ কে দেখে তাকে উদ্দেশ্য করে মেহতাব বলল ” ওখানেই দাড়িয়ে থাকবে নাকি এখানে আসবে “।
মেহতাব এর ডাকে মেঘ এর হুশ ফিরল । একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মেঘ বলল ” জ্বি আসলে আপনার কফি ” ।
তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে মেঘ এর হাত কফির মগ টা হাতে নিয়ে বললো ” এতো সুন্দর করে সেজেছো কথাও যাচ্ছো নাকি “।

( এই কথা শুনে মেঘ রেগে যায় ) ।
মেঘ : একটু রোমান্টিক কিছু বলবে তা না কিসের জন্য সেজেছি তা জিগ্যেস করছে শালা আনরোমান্টিকের ডিব্বা । ( মনে মনে বিড়বিড় করে বলল )।
মেহতাব : কিছু বললে ?
মেঘ : না কি আর বলবো । মন টা চাচ্ছে কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে উপরে চলে যাই । ( আস্তে করে বলল ) ।

মেহতাব : What?
মেঘ : কিছু না কাপ টা দিন।
এই বলে মেঘ কাপটা নিয়ে গেলো বলতে গেলে ছিনিয়ে নিয়ে গেলো ।
মেহতাব : আমার তো খাওয়া শেষ হয় নি ।
মেঘ : বাকিটা না হয় লন্ডনে যাওয়ার সময় পেক করে দিবো।
মেহতাব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে কি কোনো ভুল করছে নাকি ভুল কোনো কথা বলেছে।
তবুও সে একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে । তাই সে আরেকটু জ্বালানোর জন্য পিছন থেকে মেঘ কে ডাক দিয়ে বলল , ” এই শাড়িটা কিন্তু খুব সুন্দর ” ।

মেঘ : হুম জানি । ( রেগে গিয়ে বললো )
মেহতাব : কিন্তু শাড়িটা যে পড়েছে তার চেয়ে বেশি সুন্দর না । ( মুচকি হাসি দিয়ে )
এই কথা শুনে মেঘ নিজের আজন্তে হেসে দিলো ।
মেঘ : যতটা আনরোমান্টিক ভেবে ছিলাম ততোটাও না । ( মনে মনে )
এই ভেবে লজ্জা পেয়ে নিচে নামার সময় সিমরান, মিথিলা আর শাম্মির সাথে দেখা হয়ে যায় ।
সিমরান : ভাবি তোমার গাল দুটো লাল হয়ে আছে কেন ?

মিথিলা : তাই তো । কেউ কি কিছু বলেছে ?
শাম্মি : কিছু তো হয়েছে ।
এতো প্রশ্ন শুনে মেঘ ইতস্ত বোধ করলো তাই কথা এড়িয়ে বলল ,
মেঘ : ছাদে অনেক রোদ ছিলো হয়ত তাই এমন দেখাচ্ছে ।
সিমরান : ওহ , তাই হবে হয়ত ।
এই বলে মেঘ নিজের রুম এ চলে গেল।

মিথিলা : স্ট্রেঞ্জ। ছাদ কেনো গিয়েছিলো ভাবি?
শাম্মি : চলো ছাদে গিয়ে দেখে আসি।
সিমরান : হুম চল।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৪

ছাদে গিয়ে দেখলো মেহতাব ব্যয়াম করছে ।
শাম্মি : ওহ এই তাহলে আর্টিস্ট ভাবির গাল লাল করার ।
মিথিলা : কিসব বলছিস ওসব কিছু না হয়ত ভাবিকে ভাইয়া কোনো লজ্জার কথা বলেছে।
সিমরান : তাই হবে । How romantic!

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৬