তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৪

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৪
নাদিয়া আক্তার সিয়া

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মেঘ মেহতাব এর দিকে তাকালো সে কালো টি-শার্ট এর সাথে ব্ল্যাক ট্রাউজার পরেছে। তার থেকে চাইলেও চোখ সরাতে পারছে না মেঘ।
মেহতাব : ওজু করেছো আসো একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেই।
মেঘ : আচ্ছা।

এরপর দুজনে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেয়।
মেঘ : ধন্যবাদ আমাদের পরিবারের সম্মান বাচানোর জন্য আমি আপনার কাছে আজীবন ঋণী হয়ে থাকব।
মেহতাব : If I want something from you will you accpet it .(যদি আমি তোমার থেকে কিছু চাই তুমি কি তা রাখবে)
মেঘ : আমার দ্বারা যদি সম্ভব হয় তাহলে আমি অবশ্যই রাখব।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেহতাব : Actully Megh , আমি আর কয়েক দিন পর লন্ডন শিফট হচ্ছি ওখানে 2 বছর থাকব তারপর আবার বিডিতে ফিরে আসব। তুমি হয়ত জানো না আমি ওখানে সব কিছু সেটেল করে এসেছি। আমি অনেক বড় জব পেয়েছি ওখানকার সব চেয়ে জনপ্রিয় এন্ড পপুলার কোম্পানির CEO এটা একটা বিগ চান্স ফর মি ইউ নো টু প্রুভ মাইসেল্ফ। তুমি বাবাকে একটু ম্যানেজ করতে পারবে। তুমি হয়ত ভাবছো যে আমার বাবার এতো বড় কোম্পানি থাকতে আমি লন্ডন কেন যেতে চাচ্ছি। আমি আসলে চাই না আমার বাবার কোম্পানিতে থাকতে আমি নিজে কিছু করতে চাই। আমি অন্যের উপর ডিপেন্ডেন্ট থাকতে চাই না। আমি আমার পরিবারকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি। তাই তুমি বললে বাবা রাজি হবে।

মেঘ : কিন্তু বাবা কি আমার কথা শুনবেন। আমাদের বিয়ে টা আর পাঁচটা স্বাভাবিক বিয়ের মতো হয় নি। আপনি এখন চলে গেলে অনেকে অনেক কিছু ভাববে।
মনে মনে মেঘের বেশ খারাপ লাগছে তার দিকটা মেহতাব একটুও ভেবে দেখলো না। পরিবারকে এত ভালোবাসে অথচ আফসোস এখানে তার কোনো অস্তিত্ব নেই।
মেঘ ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

মেঘ : আমি কি কোনো ভুল করেছি তাই চলে যাচ্ছেন? আমাকে একটু সময় দিন প্লিজ যাবেন না।
মেহতাব : It’s not for your mistake.Pls don’t be sorry . I need time too . আমিও চাই সবকিছু স্বাভাবিক করতে কিন্তু আমদের বিয়েটা সময় এর উপর নির্ভর করাটা বেটার হবে। আমি জানি না কোনোদিনও তোমাকে ভালবাসতে পারব কিনা তাই আমার উপর কোনো প্রত্যাশা রেখো না। আমি তারাতারি আসতে পারব কিনা তাও জানি না। আর তাই বলে তোমার প্রতি আমার দ্বায়িত্ব অবহেলা করব না। I’m not that kind of person .

মেঘ মনে মনে আফসোস এর সুরে বলল, “আমি সবার দ্বায়িত্বই রয়ে গেলাম করো মনে কোনো জায়গা তৈরি করতে পারিনি আর পারব কিনা তাও জানি না?”
মেহতাব নিরবতা কাটিয়ে মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
মেহতাব : আচ্ছা। তুমি বিছানায় ঘুমিয়ে পরো। আমার পেন্ডিং কিছু কাজ আছে আমি পরে ঘুমাব।
মেঘ : আপনি কোথায় ঘুমাবেন?

মেহতাব : আমি মাঝে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পরব । তোমার কি প্রবলেম হবে?
মেঘ : না প্রবলেম হবে না।
এই বলে মেঘ বিছানায় শুয়ে পরলো কিন্তু তার চোখ মেহতাব কে দেখছে। মেহতাব একধ্যাঁনে তার কাজ গুলো সোফায় বসে করে নিচ্ছে।

মেঘ : সে কি তাকে কোনোদিন ভালবাসবে না কাছে টেনে মিষ্টি মিষ্টি কথা দুষ্টুমি করবে না সে তো বেশি কিছু চায় না মেহতাব এর মনে একটু জায়গা করে নিতে পারলেই হবে হয়ত এটাই তার জন্য যথেষ্ট। আরে মেঘ তুই কি তার প্রেমে পরলি নাকি নো নো ওয়েক আপ মেঘ এতো দুর্বল হলে চলবে না । যে আমাকে ভালোবাসে না তার কোনো ভালবাসার কোনো মূল্য নেই সে শুধু তোর দায়িত্ব পালন করছে ।
নিজের মনকে বুঝিয়ে কোনমতে মেঘ শুয়ে পড়লো।

হল্লা পার্টি মেহতাব আর মেঘ এর কথা সব কিছু দরজার আড়াল থেকে শুনছিলো।
সৌরভ : এগুলি তো মানা যায় না।
সিয়াম : দোস্ত মেহতাব কে আটকাতে হইব যেভাবে হোক। আমি তোগো আগেই কইছিলাম মেহতাব লন্ডনে যাইব গা যেই পোলা মাইয়া গো দিকে তাকাই না হেয় একদিনেই বৌ এর সাথে লুতুরপুতুড় করব ।
সিমরান : ব্রো মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ লুতুরপুতুড় কি ধরনের ওয়ার্ড।

সৌরভ : তোরা ঝগড়া থামা এগুলা ঠান্ডা মাথায় ভাবোন লাগতো।
সামির : অর্থাৎ ,ঠান্ডা মাথা = পেটের শান্তি = খাবার
সৌরভ : বাহ! আমার শিষ্য।
সৌম : সৌরভ ভাইয়া তুমি না অঙ্ক তে ডাব্বা মারছিলা।
রৌফ : ভাই ডাব্বা না আন্ডা পারছিল।
রৌফের কথা শুনে এবার সবাই মুখ টিপে হাসা শুরু করে দিয়েছে ।
শাম্মি : ওই আন্ডা নিশ্চয়ই সামির ভাইয়া খাই ছিল তাই তো বলি কইদিন ধরে পচা ডিমের গন্ধ পাচ্ছি সামির ভাইয়ার মুখ থেকে।

সৌরভ : এতো সামি নয় যেন আসামি ।
শাম্মি : নাম কেন বিকৃতি করছো? ভালো লাগে না ।
সিমরান : ভাইয়া মিথিলা আপু কই আর মেহসান ওদের ছাড়া প্লান ফুলফিল কিভাবে হবে?
সৌরভ : মেহসান ঘুমায় মনে হয়। আর মিথিলা কই আসলেই চলতো ওরে দেইখাই আর মেহতাব এর লন্ডন যাওয়া আটকানোর প্লান করি।

মিথিলা ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছিল।
রৌফ : মিথিলা কেন খাচ্ছ তুমি গ্রগ্রাসে গিলিয়া।
এবার সবাই সজোরে হেসে দিল।
মিথিলা : মাথা করিতেছি ঠান্ডা ডিসটার্ব করিয়েন না পারেন গিয়া আন্ডা ।
সৌরভ : এই কাজ তো অর না এই কাজ তো আমার ওহে বালিকা ।
সিমরান : এখানে পাড়িয়েন না আন্ডা তাহলে দেবে দাদী আপনাকে ডান্ডা ।
সৌম : থামেন ভাইয়েরা বোনের আপনার চলিতেছেন কবিতার খাতা বুনিয়া ।

সামির : ছোটো বেলায় খেয়ে মায়ের হাতে গান্ডা, খেয়েছিলাম আমি সৌরভের পারা আন্ডা ।
সিয়াম : কেন খাইতে গেলি আন্ডা তাই লজ্জার ভয়ে বলতে পারি না আমি পছন্দ করি পান্ডা।
শাম্মী : চলো সবাই মিলিয়া যাই উগান্ডা।
মেহসান : এই দোষে তোমরা দিলা আমার কাচা ঘুম টা ভাঙ্গিয়া তাই তো বলি আমি কেনো সপ্ন দেখছি জাগিয়া।
সবাই মেহসান এর কণ্ঠ শুনে চমকে গেল।
সিমরান : তুই কখন এলি ?

মেহসান : তোমাদের কবিতার ঠেলায় উঠতে হয়েছে । তোমরা সবাই কি করছো এখানে?
মিথিলা : বুদ্ধির জন্য খাচ্ছি সামির ভাইয়া বলেছিল। বুদ্ধি = খাবার ।
রৌফ : আরে বোইন তুই নাকি আবার সৌরভ এর আন্ডা খাইছোছ সামির এর মতো ।
এই কথা শুনে মিথিলা মুখের ভিতরে নলাটা ফেলে দিল ।

মিথিলা : ছিঃ এইসব কি কথা বলছো ব্রো খাওয়াটা নষ্ট করে দিলে ভালো লাগে না। ( নেকা কান্না করে )।
রৌফ : মাইন্ড করোছ কেন? মজা করছি। ( হেসে দিয়ে )
সামির : মেহসান = অবসান, তুই সবসময় বলোছ তায় আজকে একটা প্রুভ দে।
মেহসান : কি সমস্যা বলো ?

সৌরভ : একটা জব্বর আইডিয়া দে যাতে মেহতাবকে লন্ডনে যাওয়া থেকে আটকাইতে পারি।
মেহসান : মেহতাব ভাইয়া আমার ফিউচার ওয়াইফ(মেঘ)কে ছেড়ে লন্ডন এ যাইতাছে নাকি? (রাগ দেখিয়ে)
রৌফ : মেঘ ভাবি আবার তোর ফিউচার ওয়াইফ কেমনে হয় ?
মেহসান : বড় হইলে তক্ষণ ভাইয়া বুড়া হইয়া যাইব ভাবি রে দেখব কে?
সিয়াম : কেডা আবার মেহতাব ।

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৩

মেহসান : ভুল উত্তর তাই আমার আইডিয়া দিব না।
সিয়াম : না দিলে না দে লাগত না।
মেহসান : আরে রাগ হোও কেন? বলতাছি। দেয়ালেরও কান আছে কাছে আসো সবাই।
ফিসফিস করে মেহসান সব প্লান বুঝিয়ে দিলো সবাইকে।
সবাই একসাথে সমস্বরে বলে উঠল, “দারুন! প্লান, মিশন লন্ডন ভন্ডুল।”

তুমি এসেছিলে বলে পর্ব ৫