আসক্তি পর্ব ২৬

আসক্তি পর্ব ২৬
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

পাখির সারাটা সকাল পার হয়েছে রান্নাঘরের চার দেয়ালের মাঝে।কারণ,আজ শানের কয়েকজন বন্ধু আসবে।বিয়েতে আসার সুযোগ হয়নি আর না হয়েছে শানের বউকে দেখার। তাই সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের সময়টাকেই কাজে লাগিয়েছে তারা।

দুপুর ১২ টার পর তাদের আগমন ঘটে।মোটের উপর আট জন এসেছেন তারা।এতোদিন পর বন্ধুরা এক হয়েছে হাসি মস্করায় কেটে যায় ক্ষানিকটা সময়।এরপর মধ্যাহ্ন ভোজনে সকলেই ডায়নিং টেবিলে চলে আসে।এতো সময়ের মাঝে একবারও শানের বউকে তাদের দেখার সুযোগ হয় নি।সবাই রান্নার বেশ প্রশংসা করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ফিরনী টা তো লা জাওয়াব রে ভাই”-শানের খুব কাছের বন্ধু পরশ কথাটা বলে উঠে।পরশ এস আই পদে চাকুরীরত বান্দরবানে পোষ্টিং।বেশ মিশুকে আর হাসিখুশি ছেলে।স্কুল লাইফ থেকেই তাদের সম্পর্ক;প্রফেশন আলাদা হলেও সম্পর্ক টা আগের মতোই রয়েছে।

বিকেল বেলা তারা ছাদে বসে। অনেকদিনের জমানো অনেক কথা উঠে আসে। শানের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার নতুন জীবনের অবিজ্ঞতার কথা সাথে তার মিসেসের ব্যপারে কিছু কথা।
“জীবনে কিছু কিছু মানুষের আগমন না ঘটলে বুঝতাম না জীবনটা ঠিক কতোটা সুন্দর।পাখিও তেমন।আমাদের পরিবারের একটা উপহার স্বরূপ আল্লাহ্ আমাদের দিয়েছেন।আজ আমার পরিবারের সকলেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি।মেয়েরা যথেষ্ঠ পর্দানশীন। এসব কিছুর অগ্রধারায় পাখির অবদান অনেক বেশি।জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই তার বিচরন।গুনের কথা আর কি বলব”-ভাবুক চোখে শান সকলের মাঝে রাখা টুলটার দিকে চেয়ে কথাগুলো বলছিলো।

“দেখাবি না আমাদের? খুব ইচ্ছে হচ্ছে ভাবিকে দেখার!”-সাইফের সাথে বাকি সবাইও সম্মতি জানালো।
শান ঠান্ডা কন্ঠে জবাব দেয়,”না রে, ও অনেক বেশি ধার্মিক প্রকৃতির মেয়ে। পরপুরুষের সামনে যায় না।ও হয়ত সুন্দর কোন মেয়ে নয়। তবে একটা কথা জেনে রাখবি ও খুব মায়াবি।আমি ওর মায়ায় আটকে গেছি গভীর ভাবে।যা থেকে বের হতে পারব না, কোনদিনও না”
সবাই পাখির ব্যপারে কথা না বাড়ানোই ভালো মনে করে।

“আড্ডা টা বড্ডো পানসে লাগছে রে শান।তোর একটা গান হয়ে যাক”
“আরে গান ছেড়ে দিয়েছি”
“ভাবিকে ডেডিকেট করে, প্লিজ প্রিজ ধর না একটা গান”
সবাই একে একে অনুরোধের সুর তুলতে থাকে।তার মধ্যে পাখি নিজের হাতে তৈরী কিছু হালাকা স্ন্যাকস টিনার দ্বারা উপরে পাঠিয়ে দেয়।টিনা এসেই দেখে শানকে সবাই গানের অনুরোধ করছে ;ভাবিকে ডেডিকেট করে।চট জলদি নিচে এসে পাখিকে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যায়।ছাদের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে পরে তারা।পাখি বুঝতে পারে না কি হতে চলেছে।

“তো হয়ে যাক পাখি ভাবিকে ডেডিকেট করে একটা গান”
ছাদের মাঝের কারো কথায় পাখির চক্ষুচড়ক গাছ।
“গান,তাও আমার জন্যে…..”

“Dua bhi lage na mujhe
Dawaa bhi lage na mujhe
Jabse dil ko mere tu laga hai….
Neend raaton ki meri
Chaahat baaton ki meri
Chain ko bhi mere tune yun thaga hai…
Jab saansein bharu main
Band aankhein karoon main
Nazar tu yaar aaya…
Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyaar aaya
Pehli pehli baar aaya
O yaara..
Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyaar aaya
Pehli pehli baar aaya
O yaara.. Aa.. Oo.. Hmm…”

হঠাৎ করতালির শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে পাখির।
“এতো সুন্দর গান করেন তিনি”
“অনেক দিন পর রে ভাই আমাদের শানের কন্ঠের গান আজ শুনলাম”
শান সবার দিকে নজর বুলিয়ে হঠাৎ চোখ আটকে ছাদের দরজার কাছে।পাখির শাড়ির আঁচলের কোনা বাতাসে উড়ছে।

“তোরা একটু থাক আমি আসছি”-বলেই মুচকি হেসে শান দরজার দিকে এগিয়ে যায়।খপ করে পাখির হাত ধরে ফেলে।হকচকিয়ে ওঠে পাখি।টিনা ভয়ে ঢোক গিলতে থাকে।সুযোগ বুঝে দৌড়ে নিচে চলে আসে।
“লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ফ্রেন্ডদের দেখছিলে বুঝি!”-শান মজার ছলে কথাটা বলে।
অবাক হয়ে যায় পাখি, “আমি তো আসি নি টিনা এনেছে ”
শান মোহাচ্ছন্ন চোখে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।পাখি লজ্জামাখা অবনত মুখটা উপরে তুলে আবার বলে,”আপনি অনেক সুন্দর গান করেন”
“আই লাভ ইউ পাখি “-শানের বলা হঠাৎ কথায় স্তম্ভিত হয় পাখি।হাত ছাড়িয়ে নিচে নেমে আসে।পিছনে ফিরে দেখে শান ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।
পাখি চাপা স্বরে, “আই লাভ ইউ টু “বলেই ফ্লায়িং কিস ছুড়ে মারে শানের দিকে।শান সরু চোখে সেদিকে চায়।

রাতের বেলা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে পাখি।এমন সময় পিছন থেকে দুটো হাত এসে পেটের মাঝ বরাবর থেমে যায়।চুলের গোড়ায় কারো গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে।শ্বাস ক্রমেই ভারী হয়ে আসে পাখির।শান এক মূহূর্তের মাঝেই কোলে তুলে নেয় পাখিকে।বিছানায় বসিয়ে বলে,”আমার বউ টা তাহলে অনেক এডভান্স হয়ে গেলো হুমমম!ফ্লায়িং কিসও করতে জানে!”
“আরো কতো কিছুই তো জানে আপনার বউ”-
“তাই বুঝি!”-শানের ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।
“তাই তো।”-নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দেয় পাখি।
শান পাখির মুখের দিকে আরো এগিয়ে এসে বলে,”তা দেখতে হচ্ছে আমার বউ আর কতো কি জানে”
“আরে আরে, কি করছেন। ঘুমাব না!”
“নাহহহ”

সকাল শুরু হয় পাখির চুলের পানি ছিটায়।পিটপিট করে চোখ খোলে শান।সামনে দাঁড়ানো সদ্য গোসল করা রমনীকে পৃথিবীর সেরা সুন্দরী মনে হচ্ছে তার।তৃপ্তির হাসি ঠোঁটে রেখে জবাব দেয়,”আই লাভ ইউ বউ”
পাখি ভ্রুকুটি করে বলে,”ইদানিং খুব বলা হচ্ছে এই কথাটা কারন কি হুমম?কাল রাতে তো মনে হয় হাজার বার বলেছেন!”
শান উঠতে উঠতে বলে, “আমার বউকে আমি সারাদিন বলব এটা।এর পিছনে কারণ থাকা লাগবে না”
পাখিকে পাশ কাটিয়ে শান ওয়াশরুমে চলে যায়।
“আজ তাড়াতাড়ি মেডিকেলে যেতে হবে পাখি।আমার নাস্তাটা রেডি করো কুইক “-শান বলতে বলতেই চুল টা সেট করে নেয়।

পাখি দ্রুত নাস্তা রেডি করে শানকে ডাকে।শান নিচে নেমে এসে বুঝতে পারে, মা চাচিরা এতোক্ষনে রান্নাঘরে চলে এসেছে।শানের লুকটা আজ বেশ অন্যরকম লাগছে পাখির কাছে।কেমন যেন ড্যাশিং লুক টাইপ।
গোলমেলে লাগছে পাখি মগজে।

ফোনে কারো সাথে কথা বলছে আর নাস্তা করছে শান।পাখি যে মুখ টা গম্ভীর করে চেয়ে আছে, সেদিকে খেয়াল নেই তার।আধখাওয়া প্লেটটা পাখিকে ইশারায় দেখিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায় শান।পাখির কি যেন হলো।মন টা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।মুখ বাকিয়ে মেঝের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে।শান হঠাৎ এসেই ড্রয়িং রুমের মাঝে ফট করে পাখির ডান গালে চুমু এঁকে আসছি বলে চলে যায়।
ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে পাখির।চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় কেউ দেখেছে কিনা।কেউ নেই!
“মানুষটা কিভাবে যেন সবটা বুঝে যায়।”

সারাদিনের সমস্ত কাজ শেষ করে বিকেল বেলা বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে পাখি।ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলাচ্ছে আকাশের। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসে। যেই ভাবা সেই কাজ।বোরখা নিকাবে নিজেকে ঢেকে বেড়িয়ে যায় পাখি। শ্বাশুরি মাকে সবটা বলে যায়।
“আমি মিসেস ফয়সাল আহমেদ শান,উনার কেবিন টা কোথায়?”-পাখি জানতে চায় রিসেপশনিষ্ট মেয়েগুলোর কাছে।
অবাক হয়ে যায় মেয়েদুটো।

“ম্যাম, স্যার তো এসেছিলেন।কিন্তু বিকেল শিফটে উনি ক্লিনিকে বসেছেন
“আচ্ছা “-বলেই পাখি মুচকি হেসে ক্লিনিকের জন্যে বের হয়
শানের কেবিনের সামনে অনেক লোকের ভীর।এ্যাসিসট্যান্ট ছেলেটা বেশ হাপিয়ে গেছে দেখলেই বুঝা যায়।পাখি সবার শেষের একটা সিরিয়াল নিয়ে নেয়।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় তবু রোগীর সংখ্যা যেন শেষই হচ্ছে না।এবার বিরক্ত হয় পাখি।
আনমনে ভাবতে থাকে,”আমার আসারই তো চার ঘন্টা হলো।কি বিরক্তই না লাগছে তাহলে সার্জন সাহেব কেমনে পারেন এতো রোগী হ্যান্ডেল করতে।”-ভাবতে ভাবতে হাফ ছাড়ে পাখি।
“আজ থেকে আপনার বাড়ি যাবার পর এক্সট্রা কিছু ট্রিটমেন্ট পাবেন সার্জন সাহেব।ক্লান্তি একদম দূর করে দিবো”…..

পাখির ভাবনায় ছেঁদ পরে এ্যাসিসট্যান্ট ছেলেটার কথায়।
“ম্যাডাম আপনার সিরিয়াল কতো?”

ছেলেটা হেসে বলে, “আপনিই সবার লাস্টে।ভিতরে যান ”
পাখি ভিতরে ঢুকে দরজা টা হালাকা ভিড়িয়ে দেয়।শান মাথার পিছনে দুহাত এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।পাখি ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সেদিকে
চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই জানতে চায়,”আপনার সমস্যা গুলো বলুন”
পাখির কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। যদি সার্জন সাহেব রেগে যায়!
শান কলম হাতে নিয়ে প্যাথের দিকে চেয়ে আছে।
রোগীর কোন সাড়া না পেয়ে মাথা তুলে তাকায়।আগা-গোড়া মোড়ানো একজন মহিলা।এবার ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,”একেতো মেয়ে মানুষ!সিরিয়াল পরেছে একবারে শেষে এখন আবার কথা না বলে চুপচাপ সময় নষ্ট করছেন তাই না!”

পাখি ভয়ে চমকে ওঠে।আমতা আমতা করে গলার স্বর টা খানিকটা পরিবর্তন করে বলে,”ডাক্তার সাহেব আমার খুব সমস্যা”
শান একনজর ভালো করে দেখে বলে,”হ্যা সেটাই তো জানতে চাইছি”
“বুকে।”
মানে বুকের বাম পাশে”
শান শুকনো ঢোক গিলে বলে,”কি সমস্যা হয় খুলে বলুন”

“খুব ব্যথা করে ডাক্তার।খুউব,চিনচিন করে ব্যথা করে।যখন আমার হাজব্যন্ড কাজে চলে যায় তখন ব্যথাটা বেড়ে যায়”-চেয়ার ছেড়ে উঠে শানের একদম কাছে চলে আসে পাখি।
“আরে করছেন টা কি? বসুন, নিজের চেয়ারে বসুন বলছি।ওখানে বসেই সমস্যার কথা বলুন”
পাখির কোন হেলদোল হলো না।শানের ডান হাত টা কলম সমেত চট করে ধরে নিজের বুকের বাঁ পাশে চেপে ধরে,”ঠিক এখানটায়”

পেশেন্টের আচরনে শানের অবস্থা নাজেহাল।কিন্তু মূহূর্তের মাঝেই শানের কি হলো, নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,”আচ্ছা বেডে গিয়ে শোন আমি চেক করছি”
পাখি ধীরপায়ে বেডের উপর শুয়ে পরে।এদিকে শান ইনজেকশনের সিরিঞ্জ টা ঝাকিয়ে বলে,”এইটা ইনজেক্ট করার সাথে সাথেই আপনার সব সমস্যা গায়েব হয়ে যাবে”

পাখি ভয়ে ঢোক গিলে উঠে বসে।হকচকিয়ে বলে,”আপনি তো চেক না করেই ট্রিটমেন্ট করছেন”
“হাত টা যখন টেনে বুকের বাঁ পাশে রাখলেন তখনই বুঝেছি এই রোগের ট্রিটমেন্ট কি হতে পারে হুমমম!”
পাখি মুখে মেকি হাসি রেখে বলে, “আসলে কি হয়েছে।ব্যথাটা সবসময় হয় না;মাঝেমাঝে আরকি হেহেহ”
শান ওর কোন কথা না শুনেই সিরিঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যায়।পাখির চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বুকের কাছে নেয় সিরিঞ্জটা।পাখি চিৎকার করে বলে,”সার্জন সাহেব, আমি আমি। আপনার বউ”-
বলেই নাকে কান্না করে

শান হাস থামিয়ে বলে, “নিকাব খুলো”
পাখি নিকাবটা খুলে রাখে।মুখটা বাংলার পাঁচের মতো রাখে।ঠোঁট দুটো থমকে রেখে পাখি বলে,”একটু মজা করতে চাইলাম আর আপনি….'”
পাখির কথা শেষ না হতেই শান পাখির অধর ছুঁয়ে বলে,”বেশি চালাকি আমার সাথে!”
কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,”কতোক্ষন থেকে বাহিরে তুমি”
“৪ ঘন্টা”
“রেডিকুলাস গাধি কোথাকার, ইডিওট একটা।এতোক্ষন ধরে সামান্য মজা করার জন্যে কেউ আসে চেম্বারে”
পাখি কিছু বলে না।
“নামাজ গুলো ক্বাযা হলো না”-শান্তস্বরে জানতে চায় শান।
শানের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলে, “নাহ”
“কেন?”
“আমার ছুট্টি”
শান জোড়ে নিঃশ্বাস টা ছেড়ে বলে,”বুঝেছি”
মূহুর্তেই মলিন হয়ে যায় শানের মুখ।

রাস্তায় পাখিকে চুপচাপ থাকতে দেখে বলে,”পেইন হচ্ছে খুব?”
“হুমমমম”-থমথমে মুখে জবাব দেয় পাখি।
পাখির এই পেইন টা নতুন কিছু না।অনেক আগে থেকেই এটা। থেকে থেকে অসহনীয় ব্যথা করে।স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি।
রাস্তার মাঝে কোন সিন ক্রিয়েট করতে চায় না পাখি তাই দাঁতে দাঁত চিপে ব্যথা সয়ে যায়।কিছুক্ষন পর শান একটা ফার্মাসিতে গাড়ি দাঁড় করায়।পাখি অবাক হয়ে যায়।জানালার কাছে এসে বলে,”এখানে থাকো নড়ো না।আমি আসছি”

এরপর শান একটা বড় ব্যাগে কিছু এনে পাখিকে দেয়।
“এত্তোগুলো কেন?”-অবাক চোখে পাখি চেয়ে থাকে
পাখির দিকে না তাকিয়েই শান জবাব দেয়”এক বছরের”
পাখির চোখ যায় কয়টা পেইন কিলারের দিকে।অন্যরকম আবেশে ভরে ওঠে পাখির চোখ মুখ।পেটের ব্যথাটা এখন তেমন অনুভব হচ্ছে না।উঠে গিয়ে শানের গলায় একটা চুমু এঁকে দিয়ে বলে,”আই লাভ ইউ হার্ট সার্জন”

শান বিনিময়ে মুচকি হেসে নিজের জবাব জানায়।
বাড়িতে ফিরে পাখি ভীষণ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।একেতো প্রথম দিন তারউপর আজ টানা ৪ ঘন্টা বসে থাকা। কোমড় পেট যেন ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছে তার।ব্যথায় বার বার কুকড়ে যাচ্ছে মেয়েটা।খেতেও যায় নি নিচে।শান খাবার সমেত ঘরে ঢুকে পাখিকে ঐ অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে যায়।
প্লেটটা টেবিলে রেখে দ্রুত এসে পাখিকে ধরে বসায়।চোখের দুকোন বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে পাখি।শানের ভিতর ভাংচুর করছে সে অশ্রুর প্রতিটা কনা।

আসক্তি পর্ব ২৫

“কে বলেছিলো আমার সাথে মজা করতে?যখন দুপুরে দেখেছো তোমার প্রবলেম হয়েছে তখন কেন গেলা আমার চেম্বারে?এখন? এখন কার কষ্ট হচ্ছে?”-কপোট রাগ দেখিয়ে বলে শান।
“এই মূহূর্তে খাবার খাবে আর তারপর ঔষধ”-
শানের কথায় পাখি ভয়ে আর কিছু বলতে পারে না।
শান নিজে হাতে তাকে খাইয়ে দেয়।পাখি দুহাতে পেট চেপে খাচ্ছে আর মাঝেমাঝে শানকে দেখে চলেছে।বহু কষ্টে অর্ধেকটা খাবার শেষ করতে পারে পাখি।শানও আর বেশি জেদ করে না।
“একটা মানুষ এতো ভালো হতে পারে!আমার জীবনের সবটুকু আমি তোমার আপনার নামে লিখে দিলাম হার্ট সার্জন”-

“হু, ঔষধ টা নাও”-পাখির ভাবনার মাঝে শান ঔষধ এগিয়ে দেয়।
কোনমতে ঔষধ টা খেয়ে পেটে চেপে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরে পাখি।
শান পাখির আধখাওয়া খাবার টা খেয়ে প্লেট নিচে দিয়ে আসে।এরপর করূন চোখে পাখির দিকে চেয়ে ভাবে,”না জানি কতো কষ্ট হচ্ছে তোমার।যদি ভাগ নিতে পারতাম”
পাখিকে টেনে চিত করে শোয়ায় শান।এরপর পাখির পেটের উপর নিজের মাথাটা রেখে বলে,”নড়বা না, চুপচাপ থাকতে দাও আমায়।একটু পরে ঠিক হয়ে যাবা।”

পাখি শানের মাথায় আলগা হাতে বুলিয়ে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করে।কিছুক্ষন পর সত্যিই ব্যথাটা একটু কমে আসে।আর ঘুম চলে আসে পাখির দুচোখে….
শানও যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে তা আর বোঝার উপায় থাকে না….

[পাখি-শানের ব্যক্তিগত কিছু মূহুর্তে বেশি বেশি হাইলাইট করছি এতে অনেকেই বিব্রত হচ্ছেন।বিব্রত হবেন না। তাদের এই খুঁনসুটি গুলোই পরবর্তী পর্বের ভিত্তি হিসেবে প্রাধান্য পাবে।সাথে থাকুন ? ]

আসক্তি পর্ব ২৭