আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১০

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১০
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

পাখির কান্নাটার সাথে ভয়ার্ত মুখটা শান কিছুতেই ভুলতে পারছে না।কোনমতেই মিটিং এ মনোনিবেশ করতে পারছে না সে।বার বার ব্যর্থ হয়ে যায় নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে।বাধ্য হয়ে মিটিং টা স্থগিত করে বাড়ি ফেরে শান।ফিরে বুঝতে পারে রাহেলা বেগম এসেছেন।রান্না ঘরে রান্না করছেন তিনি।শান চোখ বুলিয়ে পাখি আর ইনায়াহ্’র অস্তিত্ব খোঁজে ড্রয়িং রুমের আনাচে কানাচে।কোথাও না পেয়ে ব্লেজার টা হাতে নিয়ে টাই টা ঢিলে করতে করতে উপরে উঠে যায়।ইনায়াহ্’র ঘরটা পার হয়ে শানের ঘরে যেতে হয়।তখন আধখোলা দরজা দিয়ে শানের নজর কাড়ে পাখির লম্বা খোলা কালো চুল।

জানলার গ্রিলে কপাল ঠেকিয়ে খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আছে পাখি। দৃষ্টি তার বাহিরের সড়কপথে।শান মাথাটা আরেকটু হেলিয়ে ইনায়াহ্’কে বিছানার উপর খোলা বই সমেত খুঁজে পায়;কিছু একটা লিখছে সে।বুঝতে পারে পাখি ইনায়াহ্’কে পড়তে দিয়ে জানালায় গিয়ে দাঁড়ায়েছে।
কেমন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে মেয়েটাকে।পাখির এ দৃশ্য শানের কাছে কেমন যেন করূন লাগল।বড্ডো মায়া হচ্ছে এই মূহূর্তে।
ঘোর কাটিয়ে নিজের ঘরে চলে যায় শান।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ডিনার টেবিলে আজ ইনায়াহ্ একা এসেছে।খেতে চাচ্ছে না কিছুই।রাহেলা বার বার জোড় করে খাওয়াতে গিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে।শান সিঁড়ি বেয়ে ধীরেধীরে নামতে গিয়ে ইনায়াহ্’র অবস্থা বুঝতে পারে।চেয়ার টেনে বসে পরে।প্লেটে খাবার নিতে নিতে বলে,”কি মা খাচ্ছো না কেন?কি হয়েছে?”
ইনায়াহ্ নাকে কান্নার মতো করে বলে,”আমার ক্ষিদে নেই।খাইতে ইচ্ছে করছে না”
শানের বুঝতে অসুবিধা হয় না পাখি ছাড়া ইনায়াহ্ অন্য কারোর হাতে খাবার খাবে না।আবার নিজের হাতেও খাবে না। ওর দিকে মাথা তুলে শান্ত চাহনীতে বলে,”মুন সাইন কোথায়?”

“মুন সাইনের শরীর নাকি খারাপ করেছে। নিচে আসবে না। একা একা খেতে বলেছে?”,পাংশুটে মুখে ঠোঁট উল্টিয়ে জবাব দেয় ইনায়াহ্।
শান কিছু না বলে নিজেই খাইয়ে দেয় ইনায়াহ্’কে। রুচিমন্দা ভাব নিয়ে কয়েক গাল খেয়ে উঠে দৌড়ে চলে যায় নিজের ঘরে।
শান বুঝতে পারে সন্ধ্যার ব্যপার নিয়ে পাখি অনেক বেশি বিষন্ন রয়েছে।শানও কোনমতে কিছুটা খেয়ে উঠে যায়।ঘরে যেতে পাখি আর ইনায়াহ্’র কথার শব্দে থেমে যায় শান।

“খেয়েছো?”
“হুম।সান সাইন খাইয়ে দিয়েছে।কিন্তু আমি তোমার সাথে খাবো”
“কাল সকাল থেকে আবার আমি খাওয়াব, কেমন!”,বলেই ইনায়াহ্’র কপালে চুমু এঁকে দেয় পাখি।শান সেদিকে একবার চেয়ে মুচকি হেসে নিজের ঘরে চলে যায়।

শান হসপিটালের কিছু কাজ করছে বসে বসে।ল্যাপটপটা বন্ধ করে পানি খেতে যাবে; দেখে ওয়াটার পটে পানির ছিটেফোঁটাও নেই।ঘড়ির দিকে চোখ রেখে বুঝতে পারে ১.৩০ এর কোঠায় ঘড়ি থেমে আছে।
“কখন এতো রাত হলো বুঝতেই পারলাম না”,একা একা বিড়বিড় করতে করতে শান নিচে নেমে আসে।বোতলে পানি ভরিয়ে নিয়ে যাবার সময় ইনায়াহ্’র ঘরে ড্রিম লাইটের আলো বুঝতে পারে শান।ভ্রকুচকে ভাবে,”এতো রাতে জেগে আছে কে?ইনায়াহ্?নাকি পাখি?”.

ভাবতে ভাবতে দরজায় উকি দিতেই কুঞ্চিত ভ্রুজোড়া সোজা হয়ে যায় শানের।সন্ধ্যেবেলার মতো আবার জানালায় কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাখি।আগের বারের মতো এবারও দৃষ্টি তার নিচের সড়কের দিকে।
ধীরপায়ে এগিয়ে গলায় দুইবার খাঁকারি দেয় শান।পাখি চমকে পিছু ফিরে থমকে যায়।শান এলোমেলো দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,”ইনায়াহ্ ঘুমিয়েছে?”
পাখি অবাক হয়ে যায়।
“এতোরাতে ইনায়াহ্ জেগে থাকে না “,খনখনে স্বরে জবাব দেয় পাখি।শান আরেকটু এগিয়ে এসে নিচে তাকিয়ে বলে,”নিচে কি দেখছিলে?”

পাখির কাছে শানের ব্যবহারগুলো ঠিক হজম হচ্ছে না।কেমন যেন গোলমেলে লাগছে।যে মানুষ আজ অবধি কোন দিন ভালো করে কথা বলল না; অপমান ছাড়া,সে কিনা আজ এতো শান্তস্বরে কথা বলছে!
“তা নিচে কি দেখছিলে শুনি?”,?শানের কথার কোন জবাব না দিয়ে পাখি ফিরতি প্রশ্ন করে,”এতো রাতে এসব জানতে এ ঘরে এসেছেন বুঝি”
“এই যে পানি। পানি নিতে গেছিলাম।”,বোতলের দিকে ইশারা করে বলে শান।
পূনরায় শান বলে,”ঘরে যেতে দেখলাম এ ঘরে লাইট জ্বলছে তাই….”

“ঘুম আসছে না”,শানকে থামিয়ে বলে পাখি।
শান বোতলটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলে,”তোমার আয়ান ভাইকে নিয়ে এতো ভয় পেতে হবে না।তার সাহস হবে না এ বাড়ির ত্রিসীমানায় পা রাখার।নিশ্চিন্তে থাকো।”
শানের কথায় পাখি যেন আকাশ থেকে পরে যায়।
“এই লোক, এতো ভালো করে কথা বলছে কেন!”,ভাবতে ভাবতে শানের দিকে তাকায়।শান পাখির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

ঘরের লাইট জ্বালিয়ে বলে,”আগামিকাল থেকে ইনায়াহ্’র স্কুলে জয়েন করো।আমি প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলেছি।মন ভালো থাকবে তোমার”
বলতে বলতে আলোটা পূনরায় নিভিয়ে চলে যায় শান।পাখি ধপ করে বিছানায় বসে পরে।এতো সবকিছুকে স্বপ্ন মনে হচ্ছে তার।এদিকে শান নিজের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ভাবে, “আর কোন খারাপ ব্যবহার নয় তোমার সাথে”

পরদিন সকালে ইনায়াহ্’কে নিয়ে স্কুলে ঢুকতেই সবাই পাখিকে শিক্ষিকারূপে সম্ভাষন জানিয়ে ভিতরে নিয়ে যায়।নিজেকে অনেকটাই বিশেষ কেউ মনে হয় তার।
রাখি দৌড়ে এসে ফুলের মালায় পাখিকে বরন করে নেয়।
“আমি ভাবতেও পারছি না, তুমি আমাদের স্কুলে জয়েন করবা”,খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে রাখি।
এরপর পাখি গতদিনের সমস্ত কথা রাখিকে খুলে বলে।
রাখি কিছুক্ষণ ভাবুকের মতো চেয়ে বলে,”আমি কেন জানি অন্য কিছুর গন্ধ পাচ্ছি মিস পাখি”

“অন্যকিছু বলতে?”
মুখটা বাঁকিয়ে রাখি বলে,”এটা হলে কেমন যেন হবে,তাই না?তুমি আনম্যারিড অথচ ডক্টর শান অলরেডি বাচ্চার বাবা”
পাখি চিন্তিত মুখে বলে,”কি বলছ কিছুই তো বুঝতেছি না”
“আরে গাধা, ডক্টর শান মনে হয় তোমায় ভালোবেসে ফেলেছে”,পাখির কানে কানে কথাটা বলতেই পাখি চোখ বড় বড় করে বলে,”কি বলো এইসব?উনি আগা-গোড়া নারী বিদ্বেষী ”
রাখি সন্দিহান চোখে বলে,”তাহলে নারীবাদী হলে বুঝে এক্সেপ্ট করতে?”

থতমত খেয়ে পাখি বলে,”না না, সেরকম টা নয়।আর সবথেকে বড় কথা উনার আচরন অনেক বেশিই রুড।উনি মেয়েদেরকে সম্মান করতে জানেন না”
রাখি মুচকি মুচকি হেসে বলে,”ম্যাডাম, মেয়েরা কিন্তু তারই প্রেমে পরে যাকে সে সবথেকে ঘৃনা করে”
রাখির শেষ কথাটা পাখির মস্তিষ্কে গেঁথে যায় বেশ ভালোভাবে।
“সত্যিই কি তাই?না না এসব কি ভাবছি আমি আবোলতাবোল! “,বলেই রাখিকে সরিয়ে ক্লাসে ঢুকে পরে পাখি।

দুপুর বেলা স্কুল শেষে ইনায়াহ্’কে নিয়ে বাড়ি ফেরে পাখি।পুরো রাস্তা আয়ানের ভয়ে থাকে সে।কিন্তু সেদিনের পর থেকে আয়ানকে আর চোখে পড়ে নি পাখির।
রাহেলা আজ দুপুর বেলায় চলে এসেছে।আজ বিকেলে সে কোথাও যাবে।আগামি তিনদিন আসতে পারবে না।পাখি এই ভরদুপুরে রাহেলাকে দেখে অবাক হয়ে বলে,”চাচি এতো তাড়াতাড়ি আজ!”
রাহেলা সবজি কাটতে কাটতে বলে,”একখানে যাবো।সামনের তিনদিন আসা হবে না মা।আমি রান্নাটা করে দিয়ে যাই।রাতে শুধু গরম করে খাবে।আর আগামি দুইদিন একটু কষ্ট করে রেঁধে নিও। পারবে না?”
পাখি ঠোঁটে ক্ষীণ হাসি রেখে বলে,”আচ্ছা”

ইনায়াহ্ স্কুল থেকে ফিরেই টিভির সামনে বসেছে;কার্টুন দেখবে বলে।পাখি ইনায়াহ্’কে টানতে টানতে বলে,”এই বুড়ি ওঠো।চলো ফ্রেশ হয়ে নিবে।তারপর টিভি দেখব”
ইনায়াহ্ না করে দিয়ে বলে,”তুমি আগে ফ্রেশ হও তারপর আমি হবো”
“দাদুভাই টিভি দেখুক, ততোক্ষনে তুমি ফ্রেশ হও যাও”,রাহেলার কথায় পাখি আর না করে না।সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।

ইনায়াহ্’কে কাছে আসতে ইশারা করে রাহেলা বেগম বলে,”দাদু ভাই এদিকে আসো কথা আছে”
“বলো দিদা”,রাহেলা বেগমের তালে তাল মিলিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ইনায়াহ্।
“তুমি কি চাও না, তোমার সান সাইন আর মুন সাইনের ভাব হোক?”
ইনায়াহ্ জোড়ে জোড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,”হুম হুম চাই তো!”
রাহেলা মূখ্যম সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে বলে,”তাহলে আমি যা যা বলব তাই তাই করবে কেমন”
“ওকে দিদা”
“আরেকটা কথা,তোমার সান সাইন আর মুন সাইন কেউ যেন এ কথা না জানে।তাহলে কিন্তু আবারও ঝগড়া লেগে যাবে ওদের।”
“তুমি একদম ভেবো না।আমি কিচ্ছু বলব না ওদেরকে”,রাহেলাকে আশ্বস্ত করে বলে ইনায়াহ্।

পাখি ইনায়াহ্ ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখায় ব্যস্ত।এমন সময় একজন ভদ্র মহিলা দরজায় পা রেখেই ইনায়াহ্’কে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে ডেকে বলে,”দাদু ভাই”
ইনায়াহ্ সহ পাখি চট করে সেদিকে ঘুরে তাকায়।ভাবগাম্ভীর্যে ভরা একজন নারী অবয়ব।বেশভূষাই জানান দিচ্ছে তিনি অনেকটাই হাই প্রোফাইলের ব্যাক্তি।

অসময়ে চেনা কন্ঠস্বর কানে আসতেই রাহেলা বেগম রান্নাঘর থেকে দৌড়ে বের হয় আসে।ইনায়াহ্ পাখিকে সরিয়ে একপ্রকার দৌড়ে গিয়ে ভদ্রমহিলার কোলে বসে গলা জড়িয়ে অজস্র চুমু এঁকে দেয়।
ভদ্র মহিলাও ইনায়াহ্’কে আদরে ভরিয়ে তোলে।যে কেউ দেখেই বলতে পারবে বেশ গাঢ় সম্পর্ক তাদের।
রাহেলা ভাবতেও পারছেন না এই সময়ে তিনি আসবেন।দ্রুত এগিয়ে হাত টেনে এনে সোফায় বসায়।ভদ্র মহিলা পাখির আগা-গোড়া পরোখ করে বলে,”ও কে রাহেলা?”

“ম্যাডাম ও হচ্ছে আমাদের ইনায়াহ্ বেবির নতুন গভারনেস।খুবই ভালো মেয়ে”
পাখির দিকে পূনরায় পরোখ করে বলে, “মেয়ে, নাম কি তোমার?”
“জ্বি আমার নাম পাখি।”,ঠোঁটে সৌজন্যতার হাসি রেখে জবাব দেয় পাখি।
ভদ্র মহিলা মুচকি হেসে বার বার জহুরের মতো পাখির দিকে তাকাচ্ছে।কেমন বিব্রত লাগছে পাখির।বার বার অসহায়ের মতোন রাহেলার দিকে তাকাচ্ছে সে।

রাহেলা বেগম বুঝতে পেরে বলেন,”তোমাকে তো আসলে বলা হয় নি। এখন তো পরিবারেরই একজন হয়ে গেছো।তাই এখন আর লুকানোর কিছু নেই।উনি আমাদের শান বাবার…..”
“রাহেলা”,ভদ্র মহিলার শান্তস্বরে থেমে যায় রাহেলা বেগম।অপরাধীর মতো মুখটা করে চেয়ে থাকে তার দিকে।

“ম্যাডাম, কি খাবেন?আমি এনে দিচ্ছি”,ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে রাহেলা বেগম।
ভদ্রমহিলা রাহেলাকে গম্ভীরস্বরে বলে,”আমি কিছু খাবো না রাহেলা।তুমি দাদুভাইকে চট করে রেডি করে দাও।ক’টা দিন আমার সাথে থাকবে ও”
ইনায়াহ্ ফট করে বলে,”আমি যাব না দিদা।মুন সাইনের কাছে থাকব”
“মুন সাইন!”,ভ্রু কুচকে বলে সামনে দাঁড়ানো ভদ্র মহিলা।রাহেলা হেসে জবাব দেয়,”ম্যাডাম ইনায়াহ্ বেবি নতুন গভারনেসকে মুন সাইন বলে ডাকে”

ঠোঁটে স্মিত হেসে ভদ্র মহিলা বুঝতে পারে পাখির সাথে ইনায়াহ্’র অনেক ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়েছে।
“সত্যি যাবে না তো!”
“নাহ”,মুখটা ভার করে জবাব দেয় ইনায়াহ্।
রাহেলা বেগম পাখিকে বলে,”মা দাদুভাইয়ের কয়েকটা ড্রেস সমেত স্কুল ব্যাগ টা প্যাক করে নিয়ে আসো”
পাখি বুঝতে পারে না কি করবে।কারণ ভদ্রমহিলাকে ইতোপূর্বে কখনো দেখে নি সে।আমতা আমতা করে বলে,”স্যার কিছু বলবেন না?”

রাহেলা মুখটা থমথমে করে বলে,”নাহ শান বাবা কিছু বলবে নাহ।তুমি যাও রেডি করে আনো সবটা”
পাখি আর না করতে পারে না।কারণ হয়ত কোন ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে তাদের মাঝে যা পাখির অজানা।
পাখি উপরে যেতেই রাহেলা বেগম ইনায়াহ্’কে ফিসফিস করে বলে,”কি বলেছি, ভাব জমাতে হবে না?”
ইনায়াহ্ মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,”হ্যা তো”
“তাহলে দিদার সাথে যাও আর কয়দিন ওখানে থাকো”

“কিন্তু….”
“কোন কিন্তু না।দিদার বাড়ি থেকে স্কুলে যাবা আর ওখানে তো মুন সাইনকে পাবাই তাই না”
ইনায়াহ্ ঘাড় টা বাকিয়ে আচ্ছা বলে দেয়।
“তোমরা কি নিয়ে এতো ফিসফিস করছো রাহেলা?”,ভদ্র মহিলা বলে ওঠেন।
রাহেলা থমতম খেয়ে বলে,”ম্যাডাম এখনি কিছু বলব না।সময় আসলে সব বলব।তবে এটুকু জেনে নেন এইবার শান বাবার জীবনটা ঠিক হয়ে যাবে”

শানের কথা শুনে জগৎের একরাশ হতাশা যেন ভদ্র মহিলার চোখ মুখে প্রকাশ পায়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”আর ঠিক!১৬ বছরে যা ঠিক হয় নি তা কি করে ঠিক হবে রাহেলা?”
সামান্য ভাবুকের মতো চেয়ে মোটা চশমার ফ্রেমটা হালকা উচিয়ে ভরাট হওয়া চোখের কোণ দুটো সন্তর্পনে মুছে নেয় তিনি।
ততোক্ষনে পাখি চলে আসে ইনায়াহ্’র ব্যাগপত্র সমেত।এগিয়ে দেয় রাহেলার দিকে।রাহেলা হাত বাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,”আমিও তো চলে যাব একটু পর।ম্যাডাম একটু অপেক্ষা করেন হাতের কাজটা সেড়ে আসি”

ভদ্রমহিলা মাথা এলিয়ে জবাব দেয়।পাখি উপরে ঘরে গিয়ে ভাবে,”চাচিও আসবে না।ইনায়াহ্ও চলে গেলো আমি থাকব কী করে এ বাড়িতে?
অন্য কোথাও যাওয়ারও তো জায়গা নেই!”
ভাবনার মাঝে ছেঁদ পরে নিচ থেকে রাহেলার ডাকে।পাখি নিচে নেমে আসে। ততোক্ষনে ভদ্র মহিলা ইনায়াহ্’কে নিয়ে সদর দরজা পার করেছে।
“শান বাবা আসলে শুধু বলবা ইনায়াহ্ ওর দিদার কাছে গেছে।তাতেই ও বুঝবে।আর ওর একটু খেয়াল রেখো।কেমন!আসছি মা।সাবধানে থেকো”,বলেই রাহেলাও তাদের পিছন পিছন বেড়িয়ে যায়।

সারাটা দিন একা একা ভালো লাগলো না পাখির।কখনো ছাদ কখনো বেলকোনি কখনো ড্রয়িং রুমে পায়চারি করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে এলো।পাখি টিভি ছেড়ে বিষন্নমনে অন্যদিকে চেয়ে আছে।সন্ধ্যার কিছুক্ষন পর শান চলে আসে।টিভি চলছে অথচ পাখির নজর অন্যদিকে দেখেই চারপাশে ইনায়াহ্’কে খোঁজে।সোফায় ব্লেজার টা রাখতেই পাখি চমকে সেদিকে ফিরে চট করে উঠে দাঁড়ায়।
টাই টা ঢিলে করতে করতে শান বলে,”ইনায়াহ্ কই?রাহেলা চাচি আসে নি আজ?
একা একটা বাড়িতে শানের সাথে থাকতে হবে ভাবতেই পাখির কেমন অস্বস্তি লাগা শুরু করে।কাপা কাপা গলায় বলে,”চাচি দুপুরে চলে গেছে।আগামি তিনদিন নাকি আসতে পারবেন না।আর ইনায়াহ্ বেবি ওর দিদার কাছে গেছে”

“হোয়াটট??তুমি যেতে দিলে কেন?আমায় একবার জানাতে তো পারতে!এতোটা কেয়ারলেস তুমি?”,জোড়ে চিল্লিয়ে বলে শান।
পাখি ভয়ে কেপে উঠে বলে,”আমি আপনাকে জানাতে বলেছিলাম কিন্তু উনি…”
শান নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করে।চোয়াল শক্ত করে ঠোঁটের ডগায় বিড়বিড় করে,”শর্মিলা বেগম”
শানের রাগে কোনকিছুই পাখির বোধগম্য হয় না।”ইনায়াহ্’র সাথে ভদ্র মহিলার সম্পর্ক দেখে মনে হলো কতো আপন তারা।তাহলে ডাক্তার সাহেব রেগে গেলেন কেন?এনাদের মাঝে অবশ্যই কোন লুকায়িত রহস্য আছে যা আমি জানি না।জানতে পারব কিনা তাও জানি না”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৯

পাখি শানের দিকে সরুচোখে তাকিয়ে থাকে।
শান ভ্রু নাচিয়ে বলে,”কী?”
“কিছু না”,মাথা দুদিকে নাড়িয়ে না সূচক জবাব দেয় পাখি।

রাতে ডিনারের সময় পাখি খাবারগুলো গরম করে এনে শানের সামনে রাখে।কারো মুখে কোন কথা নাই।শান আড়চোখে বার কয়েক পাখির দিকে তাকায়।আবার মূহূর্তেই নজর সরিয়ে নেয়।
খাবার সামনে দিয়ে পাখি চলে যেতেই শানের কথায় থেমে যায়
“তুমি খাবে না?”
থমকে গিয়ে বলে,”আপনি খান”
“খেয়ে নাও”,শুকনো গলায় আরেকবার খেতে ডাকে পাখিকে।পাখি শানের কথাকে অগ্রাহ্য করে সিঁড়িতে পা রাখতে রাখতে ভাবে,”এনার এতো পরিবর্তন কিসের জন্য?কিছুদিন আগেও তো কেমন আচরন করত আর ইদানিং পুরাই চেইঞ্জড!”

একা একটা বাড়িতে বিবাহ ব্যাতিরেকে দুটো ছেলেমেয়ে থাকা ভীষণ দৃষ্টিকটু ব্যপার।রাত হওয়ার পর থেকে পাখির চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই এসব ভাবনা ভাবতে।অন্যদিকে শানের ব্যবহারগুলোও দিনদিন অনেক পরিবর্তন এসেছে।বিছানায় শুয়ে কপালে ডান হাতের উল্টোপিঠ ঠেকিয়ে পাখি ভাবে,”ডাক্তার সাহেবের এতো পরিবর্তনের কারণ কি?কেন উনি এতো ভালো হয়ে গেলেন?আমি সম্মান চেয়েছিলাম উনি তো দিচ্ছেন তাহলে এতো ভাবছি কেন?নাকি রাখির কথাই ঠিক!বাই এনি চাঞ্ছ উনি কি সত্যিই আমায়….. ”
নিজের লাগামহীন ভাবনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে পাখি বলে,”আমার মতো মেয়েকে কেউ ভালোবাসতে পারে না”ভাবতে ভাবতে দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে পাখি।

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১১