আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৩

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৩
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

মঞ্জুরকৃত ছুটি মাত্র একদিনেরই ছিলো।ডাক্তার বলে কথা।যাদের এই যৎসামান্য সর্দি জ্বরে এতো ভেঙ্গে পরা শোভা দেয় না।এদিকে শরীরটাও অনেকটাই সুস্থ হওয়ায় শান হসপিটালের জন্যে প্রস্তুতি নেয়।পাখিও তৈরী হয় স্কুলে যাবার উদ্দেশ্যে।দুজনেই রেডি হয়ে নিচে নামে।দুইটা প্লেটে খাবার বেড়ে পাখি শানের অপেক্ষায় বসে থাকে।শান হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামতেই পাখি শান্তস্বরে প্রশ্ন করে,”খাবেন না?”

“হুমম”,তেই কথা শেষ করে শান।এরপর চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে, “থ্যাংকস”
মাথা তুলে পাখি প্রশ্নাতুর চোখে তাকিয়ে জানতে চায়, “থ্যাংকস! কিসের জন্যে?”
“কাল সারারাত আমার সেবা করার জন্যে”,স্বাভাবিকভাবে জবাব দেয় শান।
পাখি আর কিছু না বলেই নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।শান খেতে খেতে আড়চোখে পাখির দিকে তাকায়।কেমন যেন দিন দিন শানের চোখে পাখিকে অনেক বেশি মিষ্টি লাগছে;মায়াবী লাগছে।পাখির চোখে চোখ পড়তেই পরপর কয়েকবার চোখের পলক ফেলে শান।অস্বস্তি হয় পাখির।আরেকবার তাকাতেই শানের নজরে আটকে যায় পাখি।একধ্যানে শান তাকিয়ে বলে,”আজ ইনায়াহ্’র সাথে একবার কথা বলাতে পারবা?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমতা আমতা করে জড়তা নিয়ে পাখি জবাব দেয়,”আমার ফোন….. আচ্ছা ঠিকাছে”
অর্ধেক কথা বলে রাখে পাখি।শানের হঠাৎ খেয়াল হয়,”পাখির হাতে তো কোন ফোন নেই।বলাবে কী করে?আর কিভাবে ভুললাম সেটা!”
আনমনে ভেবে শান বলে,”আচ্ছা আমি দেখছি ”
এরপর নাস্তা সেড়ে বাড়ির চাবি আব্দুল্লাহ্’কে ধরিয়ে দিয়ে দুজন বেড়িয়ে যায় নিজেদের কাজে।গেইটের কাছে পাখি সিএনজি’র জন্যে দাঁড়ায়। শান গাড়ি বের করতে করতে ভাবে পাখিকে স্কুলে ড্রপ করে সে হসপিটালে যাবে।হাজার হোক কাল অনেক খেটেছে সে।
রাফিকে তাগাদা দিয়ে শান বলে”রাফি গাড়ি গেইটে দাঁড় করিয়ে ওকে উঠতে বল”
“আচ্ছা ভাইয়া”

শানের কথামত গাড়ি গিয়ে থামে পাখির সামনে।রাফি নেমে গিয়ে গাড়িতে উঠতে বলে পাখিকে।
“ম্যাডাম গাড়িতে উঠুন”,রিনরিনে কন্ঠে বলে রাফি।সেদিনের পর থেকে আর একটা দিনও পাখির চোখে চোখ রেখে কথা বলে নি রাফি।কেমন যেন গুন্ডি টাইপ লাগে পাখিকে।
পাখি শটান হয়ে বলে,”আমার রাস্তা পুরোই অপজিট “.
মাথা নিচে করে রাফি বলে,”স্যার বলল”

রাফির কথা শেষ হতেই পাখি ব্যাকসিটে বসা শানের দিকে তাকায়।অর্ধ্বখোলা জানালাটা পুরোটাই খুলে শান ইশারা করে গাড়িতে বসতে বলে।পাখি আর না করার সুযোগ পায় না।এদিকে ঘড়িতে সময় দেখেও ঠাঁয় দাঁড়ানো আর সম্ভব হয় না।উঠে পরে গাড়িতে।
পাখিকে স্কুলের গেইটে নামিয়ে শানও নেমে পরে সাথে সাথে। স্কুলে ঢুকে ইনায়াহ্’কে খোঁজে শান।কিন্তু পায় না।খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ইনায়াহ্ এখনো স্কুলে আসে নি।কপাল চাপড়ে মুখটা মলিন করে শান চলে যায়।পাখির বড্ডো মায়া হয় তা দেখে।শানের যাবার পথে চেয়ে ভাবে,”আমি জানি আপনি ইনায়াহ্’কে কতোটা মিস করছেন।কিন্তু মুখে বলছেন না”
শান বাহিরে যেতেই পাখিও ক্লাসে ঢুকে পরে।দূর থেকে রাখি সবটা পরোখ করে মুচকি মুচকি হেসে ওঠে।

“ম্যাম আপনার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে”
“জ্বি আমার সাথে?”
“জ্বি ম্যাম”
“আমার সাথে কে দেখা করতে আসবে”,বিড়বিড় করে বলে পাখি। দারোয়ানকে বলে, “আচ্ছা আপনি যান আমি আসছি”

“ম্যাম তার নাকি কি তাড়া আছে।আপনাকে একটু জলদি যেতে বলল।ওয়েটিং রুমে আছে তিনি”
দারোয়ানের কথায় অবাক হয় পাখি।এ শহরে তার এমন কেউই পরিচিত নই যে, দেখা করতে স্কুল অবধি আসবে।তৎক্ষণাৎই আয়ানের কথা মনে ওঠে।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে পাখির।শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আমি আসছি”

রাখিকে সবটা বলাতে রাখি রাজি হয় ওর সাথে যাবে।এরপর দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে ওয়েটিং রুমে চলে আসে।পাখি দরজার আড়াল থেকে মাথা উচিয়ে ভিতরে দেখার চেষ্টা করে।
“রাফি!”,অবাক চোখে অস্ফুটস্বরে বলে পাখি।এবার গটগট করে ভিতরে ঢুকে বলে,”তুমি এখানে!”
পাখির রাগীনি চেহারা দেখে রাফি কাপাকাপা হাতে একটা বক্স এগিয়ে দেয়।জড়সড় হয়ে বলে,”স্যার এইটা পাঠিয়েছে।আপনারে নিতে কইছে”
ভ্রুকুচকে পাখি প্রশ্ন করে,”কি এটা?”

“জানি না, স্যার বলেছে আপনাকে দিয়ে তাড়াতাড়ি যেন ফিরে যাই”,সংকোচিত কন্ঠে বলে রাফি।
এমনভাবে দারোয়ানকে পাঠিয়েছো যেন তুমি কে না কে?কি ভয়টাই পাইয়েছিলে বলো?” বলে পাখি রাফির দিকে চেয়ে মুচকি হাসে।
রাফি সেদিকে চেয়ে একটু স্বাভাবিকভাবে বলে,”সরি ম্যাডাম”
পাখি হেসে দেয় শব্দ করে।এরপর বলে,”আচ্ছা যাও”
রাখি এগিয়ে এসে বক্সটা কেড়ে নিয়ে বলে,”হাউ রোম্যান্টিক?তা কি রে এইটা?যেটা তোর ডাক্তার সাহেব পাঠালো?তাও এতো প্যাকিং ট্যাকিং করে!”

পাখি ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, “বুঝতেছি না আসলে”
“বলেছি না ডাক্তার বাবু তোমার প্রেমে পরেছে””,পাখির কাঁধে হাত রেখে বলে রাখি।হাতটা সরিয়ে দিয়ে পাখি খনখনে স্বরে বলে,”ওসব কিছুই না। আগে দেখি তো কি আছে ওতে”
এরপর ধীরেধীরে পুরো প্যাকেট খুলে দুজনেই হা হয়ে যায়।একে অন্যের মুখের দিকে দেখে সমস্বরে বলে ওঠে,”ফোন!”

রাখি ভ্রু নাচিয়ে বলে,”দেখলি তো আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে”
পাখি কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পায় না।আনমনে ভাবে,”তাহলে সত্যিই কি ঐ রাগী ডাক্তার…..”
পরোক্ষনে লজ্জারাঙ্গা মুখে বলে,”না না, এসব কি ভাবছি আমি ধুর”
রাখি আরেকটু এগিয়ে এসে বলে,”কি না না করছিস বলতো।শোন আমি যা বলছি তাই’ই ঠিক।ছেলেমানুষ একটু চাপা স্বভাবের হয়।ভালোবাসবে কিন্তু বলবে না”

রাখির এই মূহূর্তের কথাগুলো পাখিকে ভীষণ বিব্রত করছে সাথে অন্যরকম এক অনুভূতির সাথে পরিচয় করাচ্ছে।অগত্যা রাখির কথা শোনা ছাড়া কোন উপায় পাচ্ছে না পাখি।
পাখির মুখে লজ্জার রেশ দেখে রাখি বলে,”এতো লজ্জা পেতে হবে না।তোর ডাক্তার যা মানুষ দেখছি তাতে তোকেই একধাপ আগাতে হবে;লজ্জা ভেঙ্গে।কিন্তু….
কথা হচ্ছে তিনি ম্যারিড, আর বাচ্চাও আছে”
শেষের কথাটা বেশ চিন্তিত কন্ঠে বলে রাখি।পাখি চট করে বলে,”ইনায়াহ্ উনার মেয়ে না, ভাগ্নি।উনি অবিবাহিত”

রাখি যেন আকাশ থেকে পড়ে যায়।এক হাত মাথার উপরে আরেকটা হাত কোমড়ে রেখে বলে,”বলিস কি?তাহলে কাগজে যে পিতার জায়গায় ডাক্তারের নাম!”
“হুমম।উনি ইনায়াহ্’কে নিজের মেয়ের পরিচয়ে বড় করতে চান”
“এইবার বুঝতে পেরেছি।তা হলে তো আর কোনই সমস্যা থাকার কথা না পাখি বেগম।হয়ে যান মিসেস শান”,বেশ রসিকতার ছলে রাখি বলে ওঠে।
রাখির কথায় কান গরম হয়ে যায় পাখির।ফোনটা রেখে বলে,”চুপ করবি।এসব কিছুই হবে না।উনি কোন দূঃখে আমায় ভালো….”

বাকিটা লজ্জায় আর শেষ করতে পারে না পাখি।
রাখি জড়িয়ে ধরে বলে,”বাসে রে বাসে।তোকেই ভালোবাসে তবে তোকে একটু এগিয়ে যেতে হবে।এই আরকি।মানে তার মুখ থেকে কথাটা জেনে নিতে হবে”
পাখি হেসে ফোনটার দিকে তাকাতেই হাসিটা গায়েব হয়ে যায়।অন্যমনস্ক হয়ে বলে,”ফোনের কারণ ভালোবাসা না রে, ফোনের কারণ ইনায়াহ্।উনি ইনায়াহ্’র সাথে কথা বলবেন”
রাখি ওকে ছেড়ে বলে,”তাই নাকি!আমার তো মনে হচ্ছে না”
“আচ্ছা পরে এ ব্যপারে কথা হবে।আগে ইনায়াহ্’র সাথে কথা বলাতে হবে ওকে”,বলেই রাখির দিকে ফোন এগিয়ে দেয় ফোনটা সেট করবার জন্যে।এরপর ফোন পুরো সেট করে শানের কাছে কল করে ইনায়াহ্’র সাথে কথা বলিয়ে দেয় শানকে।

পুরোপুরি সুস্থ নয় শান।তারউপর আজ পেশেন্টের অনেক ভীড়।অল্পেতেই ক্লান্ত হয়ে যায় শানের মন মস্তিষ্ক। চেয়ারে গা এলিয়ে দিতেই দরজায় কড়া নাড়ে কেউ।চোখ না খুলেই বলে,”কাম ইন”
রিনি ভিতরে ঢুকে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে,”খুব ক্লান্ত লাগছে?হেড ম্যাসাজ করে দিবো?”
চেনা নারী কন্ঠে চোখ মেলে শান চোখের সামনে রিনিকে দেখতে পায়।ধপ করে চোখ আবার বন্ধ করে হাতদুটো মাথার পিছনে দিতে দিতে বলে,”নো নিড”
“আমি কিন্তু ট্রেইনড।ম্যাসাজ সেন্টারে তিনমাস ট্রেইনিং নিয়েছি।স্টার্ট করি দেখবে ভালো লাগছে”,অযাচিতভাবে বলে রিনি।

শান এবার চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে।টেবিলের উপরে হাতদুটো রেখে বলে,”আমি কি একবারো বলেছি আমার লাগবে?এই এতো ছ্যাচড়া কেন তোমরা মেয়েরা?শুধু শুধু কাছে ঘেঁষার বাহানা করো কিসের জন্যে?লজ্জা করে না তোমাদের?”
“আরে আমি তো তোমার ভালোর জন্যেই……”
“আমার ভালো আমি বুঝে নিবো। তোমায় বুঝতে হবে না।বেরিয়ে যাও কেবিন থেকে।”,রিনিকে থামিয়ে বলে শান।

রিনি দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,”সেটাই আরকি।বাড়িতে গভারনেস কম রক্ষিতা বেশি কাউকে পাইলে তো আর বাহিরের কাউকে লাগে না, তাই না?”
শান চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”হোয়াট দ্য …..কি বলতে চাইছো তুমি?”
“মুখে মুখে বলো মেয়ে সঙ্গ চাই না।নারীর স্থান নাকি নেই তোমার লাইফে আবার তলে তলে তো ঠিকই কাজ চালিয়ে যাচ্ছো”,তেড়ছা ভাবে বলে রিনি।
শান ধৈর্য ধরে রাখতে নে পেরে মারমুখো হয়ে এগিয়ে বলে,” মায়ের দুধ পান করা কোন ছেলে বা মেয়ে বলতে পারবে না এই শানের লাইফে কোন মেয়ে আছে”

রিনি কটাক্ষ করে বলে,”হ্যাহহহ,তাহলে এমডি স্যার কি সেদিন রাতে ভুল দেখেছিলো শান?তুমি নাকি বলেছো তোমার জিএফ।আর তোমার জিএফ বলেছে সে নাকি ইনায়াহ্’র গভারনেস। হাউ ফানি!”
হেসে দিয়ে রিনি পূনরায় বলে,”তা কতোদিনের সম্পর্ক চলছে?খোঁজ নিয়ে তো জানলাম সে তোমার বাড়িতেও নাকি থাকে।বেশ ভালোই তো চলছে।তাহলে আমাদেরকে মিথ্যে বলে কি লাভ বলো তো?এখন থেকে ডিরেক্ট বলবা তুমি লিভ ইন রিলেশনে আছো।আর যাই হোক মিথ্যে বলো না প্লিজ”

চোখ বন্ধ করে রিনির কথাগুলো পূনরায় মগজে রিপিট করছে শান।কিছুক্ষন পর চোখ খুলে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় রিনির দিকে।রিনি সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করে ভ্রু নাচিয়ে বলে,”কী?মিথ্যে কিছু বললাম?”
কথা শেষ হবার সাথে সাথেই শানের ডানহাতের সাথে রিনির বাম গালের চুম্বকীয় আকর্ষন হতে সময় লাগল না।গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে যায় রিনি।ভাবতেও পারে নি শান এমন কিছু করবে।রাগি রাগি চোখে গাল চেপে বলে,”কাপুরুষ কোথাকার!লজ্জা করে না নিজের দোষ ঢাকতে অন্য মেয়ের গায়ে হাত তোলো?যে যে বলবে সবাইকে মেরেই বুঝি চুপ রাখবে?নির্লজ্জ,বেহায়া লোক।”

শান রাগে কম্পনরত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,”রিনি যা জানো না তা নিয়ে কোন কথা বলবে না।আর আমি এর থেকেও বেশি রেগে যাই তার আগেই কেবিন ত্যাগ করো”,
রিনি শানকে অগ্রাহ্য করে শানের সামনে দাঁড়িয়ে দুহাতে কলার চিপে বলে,”আমি কাছে আসলে তোমার খারাপ লাগে।আর ঐ মেয়েটা কাছে আসলে ভালো লাগে তাই না শান!আমায় দেখাবে একটু মেয়েটাকে?দেখতাম কতো সুন্দরী সে!”

শান দুহাতে রিনির হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে কলার ঝেড়ে বলে,”ডোন্ট ক্রস ইওর লিমিট। আগে সবটা জানবে তারপর একজন সম্পর্কে মন্তব্য রাখবে।অবশ্য তোমার থেকে এর বেশি কি’ই বা এক্সপেক্ট করা যায়! যার মন নোংড়া সে সব জায়গায় নোংড়ামি খুঁজে পায়”
বলেই শান রিনিকে বলে,”সামনে থেকে সরো।তুমি তো কেবিন ছাড়বে না।তাই আমি’ই চলে যাচ্ছি”
পথ আগলে রিনি চট করে শানকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আই লাভ ইউ শান।আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি”

শান রিনিকে দ্রুত সরিয়ে বলে,”আই হেইট ইউ।আই হেইট দিজ টাইপ উইমেন যারা অযাচিত।গট ইট?”
এরপর তাড়াতাড়ি দরজার কাছে চলে আসে।
রিনি গলা উচিয়ে বলে,”তোমার কথা আজ মেডিকেলের সবার হট টপিক হয়েছে শান।কতোজনকে এভাবে বলবে?”
একটু সময়ের জন্যে শানের পা থমকে যায়।তারপর আবার গটগট করে বাহিরে চলে আসে।
“রাফি, গাড়ি স্টার্ট কর”
“ভাইয়া এতো তাড়াতাড়ি, শরীর কি খুব খারাপ করেছে?”
শান বিরক্ত হয়ে শান্তকন্ঠে বলে, “তোকে যা বলেছি তাইই কর না রে ভাই।এতো জেরা করতে হবে না”
রাফি আর কিছু বলার সাহস করে না।চুপচাপ ড্রাইভিং সিটে বসে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই বাড়ির গেইটে গাড়ি দাঁড়ায়।পাশের দোকানে বসা কয়েকজন মুরুব্বী গোছের লোক শানের গাড়ির দেখে গাড়ির চারদিকে এসে দাঁড়ায়।শান ভ্রুকুচকে চারদিকে দেখে গ্লাস নামিয়ে দেয়।সবে মাত্র সন্ধ্যা নেমেছে।তবুও দিনের আবছা আলো এখনো রয়েছে।সেই আলোতে সবাইকে চিনতে অসুবিধা হয় না শানের।হাস্যোজ্বল মুখে সালাম জানাতেই লোকরাও সালামের প্রতিউত্তর করে শানকে বাহরে বের হতে বলে।তাঁদের কথামতো শান বের হয়।

“কিছু কি বলবেন চাচা?”,জড়তা নিয়ে বলেই শান সবার দিকে তাকায়।আশানুরূপ কোন প্রতিক্রিয়া কারো মুখে না দেখে পূনরায় শান বলে,”আমার কাছে ধার্যকৃত সকল চাঁদা বা বিল তো আমি দিয়ে….. ”
“আরে এতো আগডুম বাগডুমের কি আছে,কেউ একজন শানকে বলো সবটা”,শানের কথার মাঝেই একজন মুরুব্বী বলে ওঠেন।কপালে ভাঁজ ফেলে শান বলে,”কি ব্যপার চাচা?কি হয়েছে?সরাসরি বলুন কোন সমস্যা নেই।”
“উউহুম উউহুম, আসলে হয়েছে কি বাবা তুমি তো এই এলাকারই ছেলে।ছোটকাল থেকে বড় হয়েছো এখানেই”
“জ্বি চাচা”

“তোমার বাবাও বেশ স্বনামধন্য আর চরিত্রবান মানুষ ছিলেন।যদিও তোমরা অন্য এলাকার তবুও আমাদের সাথেই মিশে গেছো।আমাদের এলাকাটা ঢাকার মধ্যে হলেও শহুরে সভ্যতার রেশটা কম রাখার চেষ্টা করি।এখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত আদবের সাথে বড় হয়। তাই নয় কি?”
“একদম চাচা”
“হুমম,তো কথা হচ্ছে গিয়ে এলাকার নাম বজায় রাখতে তোমার বাড়িতে তুমি কারে রাখবা কারে না রাখবা এটা জানার অধিকার আমাদের আছে।আমরা চাই না আমাদের ছেলেমেয়রা এসব নোংড়ামি দেখে বড় হোউক ”

মুরুব্বীর কথায় শানের বুঝতে অসুবিধা হয় না কি ব্যপারে কথা বলতে এসেছে তারা।লম্বা লম্বা কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে শান বলে,”তা আমি এমন কি করেছি চাচা যেটাতে এলাকার বদনাম হচ্ছে?বা আপনাদের ছেলেমেয়েরা নোংড়ামি শিখছে”
শানের কথায় কয়েকজন মুরুব্বী সমস্বরে বলে ওঠে,”বুঝতেছো না যেন? ”
“নাতো চাচা”

“সবাই থামো থামো।আমারে কথা কইতে দেও।”,সবার মাঝে একজন লোক বলে উঠলেন।
“তুমি একা একটা মানুষ, তোমার মেয়েরে নিয়া থাকো।বেশ ভালো কথা তবে আরেকটা মেয়েও আছে তোমার মেয়ের গভারনেস।সেটাও বেশ ভালো কথা।তা বাবা গভারনেস তোমার বাড়িতে থাকে কেন? আবার শুনলাম তোমার মেয়ে নাকি কোথাও গেছে।তারমানে হিসেব হইলো যে তোমরা দুইটা ছেলেমেয়ে আজ দুইদিন ধরে একবাড়িতে দিন কাটাচ্ছো।এটা কি নোংড়ামি নয় বাবা?”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১২

“চাচা, আপনারা যা ভাবছেন তা মোটেই সেরকম নয়।সবটা শুনলে……”
“ব্যাস!আর কিছু শোনানো লাগবে না।এরকম নোংড়ামো এই তল্লাটে চলবে না”,এতোক্ষন চুপ থাকার পর হাত উচিয়ে কথাটা বললেন চেয়ারম্যান সাহেব।রাগকে অনেক কষ্টে বশে এনে শান পূনরায় গাড়িতে উঠে বসে।
এরপর চেয়ারম্যান সাহেব সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,”চলো ”

গাড়ি থেকে নেমে ব্লেজার টা খুলে হাতে নেয় শান।টাই টা হেচকা টানে খুলতে খুলতে বাড়িতে ঢোকে।পাখি তখন সোফায় বসে টিভি দেখছিলো।শানকে দেখে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে লজ্জামাখা মুখটা অবনত রাখে।যাতে গালের লজ্জার রংটা শানের নজরে না পড়ে।শান সেদিকে একবার শান্ত চাহনীতে চেয়ে হাতের ব্যাগ, ব্লেজার টা টাই সমেত সোফায় ছুড়ে দেয়।বুকের কাছের দুটো বোতাম খুলে ধপ করে সোফায় বসে পরে।মাথাটা পিছনে এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।
রাখির বলা কথাগুলো পাখির মনে উঠতেই লজ্জায় কুকড়ে যায় পাখি।ভাবতেও পারছি না শান তাকে ভালোবেসে ফেলেছে।

ধীরপায়ে এগিয়ে শানের দিকে চেয়ে পাখি বলে,”শরীর কি খুব খারাপ করছে?”
শান কিছু না বলে ঠাঁয় বসে থাকে।পাখি শানের কোন উত্তর না পেয়ে আমতা আমতা করে আবার বলে,”মামাথা টটিপে দেব!”
তখনো শান কিছু বলে না।শানের নিশ্চুপ ভঙ্গিকে সম্মতিভেবে পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় পাখি।দুহাত শানের মাথার উপর রেখে ধীরেধীরে ম্যাসাজ করে দেয়।চট করে শান চোখ খুলে পাখির দুহাত ধরে ফেলে।

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৪