আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৪

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৪
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গতেই চোখ পিটপিট করে তাকায় পাখি।চোখের নজর পড়ে সোজা ঘরের ছাদের দিকে।আধখোলা চোখে ভ্রুকুচকে সেদিকে চেয়ে থাকে।
“আমার ঘরের ডিজাইন তো এটা না!”,ভাবতে গায়ের উপর লাল রঙ্গের ব্ল্যাঙ্কেটটা নজরে আসে।দ্বিতীয় দফা অবাক হয় সে।ঝিমঝিম করা মাথাটা দু হাতে চেপে ধরে, উঠে বসার চেষ্টা করে পাখি।মাথায় যেন জগতের ভর সব এক করে দেয়া হয়েছে।খুব আস্তে ধীরে উঠে বসতেই নজর পড়ে তার ঠিক সোজা সামনে বসা মানুষটার উপর।চট করে চোখ বড় বড় করে ফেলে পাখি।সন্দিহান চোখে চেয়ে বিড়বিড় করে,”ইনি আমার ঘরে এতো সকালে মানে!”

শান নির্বকার চিত্তে চেয়ে আছে পাখির দিকে। পাখি সেদিকে দুএকবার চেয়ে নজর সরিয়ে চারপাশে তাকায়। আর তখনি চক্ষুছানাবড়া পাখির।
“এটা তো ওনার ঘর!আমি!আমি এখানে মানে!কি হচ্ছে এসব?”
ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে হরবরিয়ে উঠতে যাবে তার আগেই নিজের দিকে নজর পড়ে।
“এটা কি?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভাবতেই কয়েক দফা চোখের পলক ফেলে পাখি।নিজের গায়ে লম্বা টি-শার্ট দেখে বেশ চমকে যায় সে।ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে নগ্ন পায়ের সাথে পা ঘষা লাগতেই বুঝতে পারে পরনে কিছু নেই।নিশ্চিত হতে সন্তর্পনে হাত দিয়ে পা স্পর্শ করে চমকে ওঠে।বুঝতে পারে সত্যিই তার পরনে কিছু নেই।কাচুমাচু মুখে আবারও সামনে তাকায় পাখি।

শান কোন কথা না বলে চেয়েই আছে সামনে।শানের দিকে তাকাতেই যেন লজ্জায় মরি মরি অবস্থা হয়।নজর নামিয়ে ভাবতে থাকে, “আচ্ছা কাল কি হয়েছিলো?আমি এ ঘরে?ড্রেস চেঞ্জ্ড! ”
পাংশুর মতো মুখটা করে পূনরায় ভাবে,”কাল তো পার্টি করলাম।তারপর তো হিটলার আমায় শাসাল।তারপর? তারপর কি হলো? ”

দাঁতে নখ খুটতে খুটতে ভেবে চলেছে পাখি। হঠাৎ ভাবনার উদয় হয়,”আমি তো বাজে জিনিসের বোতল টা শেষ করলাম!তারমানে কী? আমি মাতলামো করেছিলাম খুব!তাই বলে এ ঘরে কেন আমি?আর আমার ড্রেস কোথায়?আর কে করলো এসব?”
ভাবতেই মুখটা থমথমে হয়ে ওঠে পাখির।সিরিয়াস ভাবটা মুখে ফুটে ওঠে।

কিছু একটা বলার জন্যে উদ্যত হতেই শান সোজা উঠে দাঁড়ায়।পাখিকে কিছু বলার সুযোগ দেয় না।
“যা বাবাহ,কিছু বলতেও দিলো না!”,বিড়বিড় করে উঠতে গিয়ে পরে যায় আরেক বিপত্তিতে।পা তো পুরো ফাঁকা।তবুও শানের অনুপস্থিতে সাবধানে উঠে দাঁড়ায় পাখি।কোনকিছুই তার মাথায় খেলছে না কাল কি থেকে কি হয়েছে!মনের মাঝে অজানা আশঙ্কা বিরাজমান।

দাঁড়িয়ে শার্টের নিচ টা টানতে টানতেই শান তোয়ালে হাতে মুখ মুছে বের হয়।শানের হঠাৎ আগমনে ধপ করে বিছানায় বসে পরে পাখি।ব্ল্যাঙ্কেট টা পায়ে জড়িয়ে বলে, “আমার কিছু কথা আছে”
শান কোন প্রতিউত্তর না করে ভেজা তোয়ালে টা পাখির মুখের উপর ছুড়ে মারে আলগোছে।বেশ অবাক হয় পাখি।মুখ থেকে তোয়ালে সরাতে সরাতে বলে,”এটা কি হলো?”

তবুও শান কোন উত্তর করে না।কাবার্ড খুলতেই পাখি আবার বলে,”কি হলো কথা কেন বলছেন না?আমি কিছু জানতে চাইছি তো!”
শান একটা ঢিলেঢালা টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে পাখির সামনে দাঁড়িয়ে বলে, “বলো কি বলবা?”
“আমি এখানে কেন?আমার ড্রেস কোথায়?কে চেঞ্জ করেছে?কি হয়েছিলো কাল রাতে”,বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে পাখি।শান আরেকটু এগিয়ে বলে,”প্রথমত তুমি কাল ড্রিংকস করেছো।দ্বিতীয়ত তোমার ড্রেস চেঞ্জ করা হয়েছে।কে করেছে সেটা না হয়, না জানলে!আর কাল রাতে কি হয়েছে বা কি করেছো তা না হয় রিমাইন্ড করে দেখো।হুমমম?”

শানের এমন হেয়ালিময় কথায় রাগ উঠে যায় পাখির।সে এই মূহূর্তে বাজে কোন কিছুই ভাবতে রাজি না।
ঝনঝনে গলায় অগ্নিশর্মা হয়ে বলে,”সোজাসুজি বলুন।এতো প্যাচানোর কি দরকার?”
শান একদম কাছাকাছি এসে নিজের গলার নিচে আঙ্গুল তাক করে বলে,”সি!কি করেছ।এরপরেও সবটা বলব আমি? ওকে ফাইন। বুঝতে পেরেছি তুমি আমার মুখে শুনতে চাও।তাহলে শোন ‘কাল রাতে তুমি ড্রিংক করেছো।আচ্ছা যাই হোক, তারপর তুমি আমার ঘরে ঢুকেছো।দরজা লক করেছো।দেখো এখনো লক করা”
দরজার দিকে ইশরা করে বলে শান।এরপর আবার বলতে শুরু করে,”এরপর তুমি ঝাপিয়ে পরলে আমার উপর।বাব্বাহ, তুমি যে এতো এডভান্স আমি ভাবতেও পারি নি।”

শানের কথায় চোখ মুখ কুচকে ওঠে পাখির।আপনাআপনি মুখে হাত চলে যায়।নজর এদিক সেদিক করে লজ্জা লুকাবার বৃথা চেষ্টা করে।শান সেদিকে চেয়ে আবার বলে,”এই দেখো ঠোঁটের কি অবস্থা করেছো,আবার গলায় কামড়ও দিয়েছো।তারপর তো…….”
“স্টপ দিজ”,দুহাতে কান চেপে ধরে বলে পাখি।চোখ বন্ধ করে রেখে বলে,”এসব কিচ্ছু হয় নি কাল।”
“আরে এসব হবে কেন!এসবের থেকে বড় কিছু হয়েছে কাল।তুমিই নিজে থেকে করেছো।আর আমি কি!আমি তো ছেলে মানুষ, না! কী করে নিজেকে…?.”

“একদম মিথ্যে বলবেন না। এসব কিছু না”,চোখে টলমলে জল নিয়ে নাকোচ করে পাখি।জলের গভীরতা এতো বেশি যেন পলক ফেললেই টুপ করে গাল বেয়ে পড়ে যাবে।কিছুক্ষন ভেবে পাখি আবার বল,”আপনি আমায় ঘরে কেন নিয়ে গেলেন না?”
শান ডেভিল হেসে বলে,”এতো সুন্দর একটা মূহূর্ত যে পুরুষ নষ্ট করতে পারে সে তো পুরুষ না মহাপুরুষ।আমি আবার সাধারন মানুষ”

শানের কথা শেষ হতেই দুহাতে কলার চেপে ধরে পাখি।ছলছলে চোখে বলে,”ঐ অবস্থার সুযোগ নিতে বাঁধলো না কাওয়ার্ড কোথাকার।”
বলেই কলার ছেড়ে দুহাতে মুখ চেপে কান্না করে পাখি।শান ওর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে বলে,”আমরা আমরাই তো।এতো ঢং করার কি আছে!আর তুমি তো চাওই আমি তোমার কাছে আসি, আদোর করি।তাহলে এতো ভাব নিচ্ছো যে আজ!আমি না তোমার বর!”

চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে শান।পাখি তখনো দুহাতে মুখ চেপে অনবরত কেঁদেই চলেছে।
মাথা তুলে ঘৃনাভরা চোখে বলে,”এমন টা না করলেও পারতেন!আপনি এতো নিচ, ছিহহ!”
“যা বাবাহ্,কি করলাম! যা করার তুমিই তো করেছো”,অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে শান।এরপর গলা ঝেড়ে বলে,”যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।এখন থেকে আমার ঘরে থাকবা তো নাকি!ড্রেস সব নিয়ে এসে কাবার্ডের ঐ বাম পাশে রাখবে।আমি একটু বাগানে হাঁটতে যাব।উফ!একটু ফ্রেশ এয়ারের প্রয়োজন”

এরপর পাখির কোন কথার সুযোগ না দিয়ে আবারও ওয়াশরুমে চলে যায় শান।
এদিকে অনবরত কেঁদেই চলছে পাখি।উপচে পরা কান্না এসে ভর করছে যেন।যতো চোখ মুছে নিচ্ছে ততোই কান্না আসছে তার।কিছুক্ষন পর শান ওয়াশরুম থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে পাখির দিকে তাকিয়ে আগা-গোড়া দেখে নেয়।এরপর কিছু না বলেই ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
শানের যাওয়ার দিকে চেয়ে পাখি ভাবে,”আমি তো এরকম টা চাই নি।হ্যা আমি তাকে ভালোবাসি। তাই বলে এভাবে….উনিও কী করে এমনটা করলেন!উনি তো স্বাভাবিক ছিলেন!চাইলেই তো পারতেন সবটা আটকাতে!”

থমথমে মুখে পা টিপে টিপে পাখি ঘর ছেড়ে বের হয়।এরপর নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।ইনায়াহ্ তখনো ঘুমাচ্ছে।মাথার পাশে বসে পাখি আবারও গতরাতের কথা ভাবতে থাকে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।সবটাই আবছা মনে পড়ছে তার।দুহাতে হাঁটু জড়িয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে পাখি।

সকাল থেকে রাহেলার মুখটা থমথমে দেখায়।কারোর সাথে কোন কথা বলছে না।শান বেশ কয়েকবার ডেকেও সাড়া পায় নি।নিজের মতো কাজ করে চলেছে।শান রাহেলার অবস্থা বুঝে বার কয়েক প্রশ্নও করেছে।কিন্তু শানের দিকে না তাকিয়েই রাহেলা জবাব দিয়েছিলো,”কিছু হয় নি”
ভোরবেলা থেকে একটি বারের জন্যেও পাখি ঘর থেকে বের হয় নি।লজ্জায়, ঘৃনায় শানের সামনে পরা তো দূরের কথা।শানের নাস্তা করার একদম শেষে গিয়ে ইনায়াহ’কে নাস্তা করিয়েছে।রাহেলার এমন খাপছাড়া ভাব পাখির নজরও এড়ায় নি।কাটাকাটা স্বরে কয়েকবার প্রশ্ন করেছে কিন্তু কোন জবাব মেলে নি।অবাক হয় পাখি।

“আজ একবার খেতেও বলল না চাচি!”,আনমনে ভেবে মনটা খারাপ হয়ে আসে পাখির।
কোন কথা না বলে অতিরিক্ত খাবার সমেত এঁটো প্লেট গুলো তুলে নিয়ে রান্নাঘরে যায় রাহেলা।
ইনায়াহ’কে খাইয়ে আবার দ্রুত উপরে চলে যায় পাখি।কারণ সে চায় না কোনভাবে শানের সাথে দেখা হয়ে যাক।
শুক্রবার হওয়ায় হসপিটালের নামগন্ধ নেই শানের।ড্রয়িংরুমে বসে কোলের উপর ল্যাপটপটা রেখে কিছু একটা করছে সে।

ইনায়াহ্ জিদ করছে এই ভর দুপুরে পাস্তা খাবে সে।অগত্যা পাখিকে নিচে নামতে হয়।ইনায়াহ্ পাখির হাত ছেড়ে শানের কোল থেকে ল্যাপটপ নামিয়ে কোলে গিয়ে বসে।এই সুযোগে পাখি দ্রুত পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।রাহেলা তখনো রান্না ঘরে দুপুরের খাবারের আয়োজন করছে।
“তোমার গলায় ওটা কিসের বাইট সান সাইন? “,অবাক হয়ে প্রশ্ন ছোড়ে ইনায়াহ্।পা থেমে যায় পাখির।বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে দ্বিগুন।রান্নাঘরের দিকে চোখ ফেলে বুঝতে পারে রাহেলা ড্রয়িংরুমে তাকিয়ে আছে শানের উত্তরের অপেক্ষায়।

“ককই মাম”,দাগটা টি-শার্টে লুকাতে লুকাতে বলে শান।ইনায়াহ্ আঙ্গুলটা সেদিকে নিয়ে গিয়ে বলে,”এই যে, এই তো। দেখ,কতোগুলো দাঁতের দাগ। কালো হয়ে গেছে তো!”
“ককিছু না মা”,এরপর পাখির দিকে তাকিয়ে বলে, “আমাদের বাড়িতে একটা গড়িলা আছে। সে হয়ত কামড়েছে”

শানের কথায় চোখ মুখ কুচকে আসে পাখির।কোন প্রকার টু শব্দটি না করে রান্না ঘরে চলে যায় পাখি।
ঢুকতে না ঢুকতেই হাতে প্রচন্ড টান পরে ।আহ্ শব্দ করে তাকায় সামনে।
“এদিকে আসো”,রাহেলা হাত টেনে রান্নাঘরের একদম কোনায় নিয়ে যায় পাখিকে।লজ্জিত আর চিন্তিত চিত্তে বলে,”এসব কি পাখি?আমি কিন্তু অবুঝ না।তোমরা কী করে পারলে বিয়ে ছাড়াই এমন একটা জঘন্য কাজ করতে!”

কটমটে দৃষ্টিতে চেয়ে রাহেলা আবার বলে,”তাহলে আশপাশের লোক যা বলতো সবই ঠিক!তোমাদের বলা হয়েছিলো তোমরা বিয়ে করে নাও।তা করলে না অথচ…. ছিহ ছিহ ছিহ। এতো নোংড়ামি!”,
পাখি অসহায় চোখে রাহেলার দিকে তাকিয়ে থাকে।তার কাছে কোন জবাব থাকে না এই মূহূর্তে রাহেলাকে দেয়ার মতো।

“শান না হয় ছেলে মানুষ। তারা তো ছোঁকছোঁক করবেই। যদিও শান এরকম ছেলে নয়।কিন্তু তুমি!তুমি তো নিজেকে সংযত রাখতে পারতে!”,ঝনঝনে গলায় বলে রাহেলা।পাখি লজ্জায় কেঁদে ফেলে কিন্তু কিছুই বলার থাকে না।সত্যিই তো ব্যপার টা কতোটা লজ্জার ব্যপার!না পারছে বিয়ের কথাটা খুলে বলতে না পারছে কাল রাতের কথাটা বলতে।পাখির নিরুত্তর চাহনী দেখে রাহেলা বলে,”কাল রাতে আমি সব দেখেছি। তুমি নিজেই শানের ঘরে ঢুকেছো।তারপর দরজা লক করেছো।আর ভোরবেলা শানের শার্ট গায়ে ঐ ঘর থেকে বের হয়েছো।এরপরেও আর কি বাকি থাকে বোঝার?”

পাখি নিজের স্বপক্ষে বলে,”চাচি আমায় ভুল ভাবছো।দেখার মাঝেও কিছু ভুল……. ”
“পাখি”,কটকটে দৃষ্টিতে রেগে তাকায় রাহেলা।
মাথা নিচু করে নেয় পাখি।

সারাদিন আর একটি বারের জন্যেও পাখি ঘরের চৌকাঠ মারায় নি।কার সামনে যাবে সে!রাহেলা বেগমের সাথে কথা তো দূরের কথা চোখ তুলে তাকানোর মতো নির্লজ্জতা পাখির হচ্ছে না।আর শানের সামনে তো যাওয়ার কথা ভাবতেই পারছে না পাখি।
“বিকেল হয়ে গেলো ইনায়াহ্’র জন্যে হালকা নাস্তা তৈরী করতে হবে। এবার তো নিচে যেতেই হবে।কিন্তু…কিন্তু যাব কোন লজ্জায় যদি উনি বসে থাকে ড্রয়িংরুমে?বা চাচি যদি রান্না ঘরে থাকে!ছিহহ কি বিদঘুটে একটা কান্ড হলো কাল।কি করে করলাম

এসব? আমার তো মাথাতেই আসছে না।”,পাখি ঘরে একা একা বিড়বিড় করছে আর মেঝেতে পায়চারী করছে।মনটা বিষিয়ে উঠছে কাল রাতের কথা ভাবলেই।
“উহুহম উহুহম”,দরজায় কারো গলার শব্দে সেদিকে তাকায় পাখি।
“কি ব্যপার, আজ একবারো সামনে এলে না?কথা বলছো না?বউ বউ করে অধিকার ফলাচ্ছো না…কাহিনী কি বলতো?আজ তো আরো বেশি আমার কাছে কাছে থাকার কথা। কিন্তু তুমি তো……”বলেই পাখির দিকে তাকায় শান।অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাখি।

নিজের হাসিটাকে কৌশলে দাবিয়ে রেখে শান বলে,”এতো রেগে যাওয়ার কি আছে বউ?খুব চাপে ছিলাম সারাদিন।তাই তোমার কাছে আসতে পারি নি।চলো চলো আমার ঘরে চলো।মিস করছি তোমায়”
বলতে বলতে পাখির একদম কাছে চলে আসে শান।হাত টা ধরে টেনে নিয়ে যেতেই ঝটকা মেরে হাতটা ছাড়িয়ে নেয় পাখি।ঘর কাপানো চিল্লানিতে বলে ওঠে,”লজ্জা করলো না আপনার?কোন সাহসে আমার অবচেতনের সুযোগ নিলেন?নিজেকে কি একটুও সংযত রাখতে পারলেন না?”

বলতে বলতে রাগে চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পরে পাখির।শান সেদিকে শান্তস্বরে চেয়ে বলে,”শান্ত হও।বসো”
“আমায় হুটহাট জড়িয়ে ধরা,আর পাঁচটা দম্পতির মতো স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা এসবই তো তুমি চেয়েছিলে।তাহলে আজ…… “,স্বগতোক্তি করে বলে শান।
“চুপ করুন আপনি।আমি সবটা চেয়েছিলাম ভালোবেসে ; এভাবে নয়।আপনি জানেন রাহেলা চাচি সবটা দেখে ফেলেছে?আর আজ আমায়…..,”বাকি কথা শেষ করতে পারে না পাখি।লজ্জায় কেঁদে ফেলে।
শান চোখ ছোট ছোট করে পাখির দিকে চেয়ে ভাবতে থাকে,”তাহলে এই কারণে চাচির ব্যবহার আজ ব্যাতিক্রম! ”

পাখির ফোন স্ক্রীনের ক্ষীন আলোটা বার বার জ্বলছে আর নিভছে ; যেটা শানের চোখ এড়ায় না।
স্বাভাবিক স্বরে বলে,”তোমার ফোনে কল এসছে ”
পাখি শানের দিকে তাকিয়ে ফোনের দিকে এগিয়ে যায।সত্যিই ফোন এসেছে।রাখি ফোন করেছে।
চোখ মুখ মুছে ফোন রিসিভ করে পাখি।
“হ্যালো”

“কিরে থাকিস কই, ফোন টা থাকে কই তোর?”,কপোট রেগে বলে রাখি।
পাখি প্রশ্ন গুলো এড়িয়ে শানের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার নাক মুছে বলে,”কি বলবি, বল!”
শান মুচকি হেসে ঘরের বাহিরে চলে যায়।
“আরেহহ, কাল রাতে কতোবার ফোন করলাম ধরলি না। আজ সকালে তোর খোঁজ নিতে ফোন করলাম যে সুস্থ আছিস কিনা তাও ধরলি না;কাল ওতো অসুস্থ্য দেখলাম।পরে ডাক্তারকে ফোন করে তোর খোঁজ নিতে হলো।আচ্ছা ফোন কেন ব্যবহার করে মা…..”

“আমি পুরোপুরি সুস্থ এখন। আর কিছু বলবি?”,রাখিকে কথার মাঝে থামিয়ে বলে পাখি।চিন্তিত কন্ঠে রাখি প্রশ্ন করে,”গলাটা এমন ভাঙ্গা ভাঙ্গা লাগছে তোর! কি হয়েছে রে?
“কিছু না। ওয়েট!এক মিনিট…..আমার কি হয়েছিলো?কিসের অসুস্থতা? আর তুই যখন গেলি তখন তো আমি সবটাই জানি। তাহলে?”
“কেন, তোর কিছু মনে নাই?”, উৎকণ্ঠিতা রাখি প্রশ্ন করে।
“নাতো! আমার জানা টা খুব জরুরী রাখি।আর তুই….. ”

“ও মুন সাইন ক্ষিদে লেগেছে তো।কিছু করো নি?”,ইনায়াহ্ ক্লান্ত শরীরে দৌড়ে এসে বলে পাখিকে।
খেলতে খেলতে মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে ইনায়াহ্’র।বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে পাখির।ইনায়াহর মুখটায় হাত বুলিয়ে বলে,”এই তো মা করব এখন।কথাটা শেষ করে নিই?দাঁড়াও একটু”
বলেই পূনরায় রাখিকে বলে,”হ্যা বল ”

“ডাক্তারও তোকে কিছু বলে নি?আমি ফিরে আসার পর তোকে মনে হয় একশ বারের মতো ফোন দেই যাতে ওই বোতল না খাইস।তুই ফোনই ধরলি না।তারপর আমি আবারও তোর ওখানে যাই।গিয়ে দেখি তুই কাম সাবার করে ফেলছিস।যা হবার তাই হয়েছে। আর রাতে কোন ঘরে ছিলি এটা দেখেও কি কিছু মনে পড়ছে না তোর?”,প্রশ্ন করে রাখি।

রাখির কথার কোন জবাব না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে পাখি।এখন আর বোঝার অপেক্ষা রাখে না কাল রাতে সত্যিই সে মাতলামো করেছে শানের সাথে।নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃনা লাগছে পাখির।
“ও মুন সাইন… “,ইনায়াহ্’র করূনস্বরে ডাকটা কানে আসতেই পাখি হুশ ফিরে রাখিকে বলে, “পরে কথা হবে ”
ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখে পাখি।এরপর নিচু হয়ে ইনায়াহ্’কে বলে,”মা, তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি নুডলস করে দিচ্ছি”

“না।নুডলস খাবো না।অন্য কিছু করে দাও”,একরোখা জবাব দেয় ইনায়াহ্।
পাখি অসহায় হয়ে বলে,”আজকে খাও না মা। অন্যকিছু করতে মন চাচ্ছে না”
মলিন মুখে ঠোঁট উল্টিয়ে চেয়ে থাকে ইনায়াহ্।সঙ্গে সঙ্গে পাখি হেসে বলে, “এক্ষুনি করে আনছি তোমার ফেভারিট পাকোড়া। চলবে?”
“দৌঁড়াবে”,পাখির গলা জড়িয়ে গালে চুমু দিয়ে বলে ইনায়াহ্।

সকাল হতে হতেই ইনায়াহ্কে তৈরী করে দেয় পাখি।এরপর নিজে তৈরী হয়ে নেয়।নিচে এসে ডায়নিং এ শানকে পায় না পাখি।হাফ ছেড়ে বাঁচে এবার।হাতে হাতে খাবার ডায়নিং সাজাতে সাহায্য করে রাহেলাকে।রাহেলা থমথমে গলায় বলে,”খেতে বসো।আমি দিচ্ছি”
পাখি রিনরিনে স্বরে বলে,”কথা বলবে না চাচি আমার সাথে?”
রাহেলা পাখির কথাকে এড়িয়ে বলে, “একটা কথা বলি মা?এরকম নোংড়া সম্পর্ক গুলোতে সবসময় মেয়েদেরই দোষ হয়।তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো।তাই অনুরোধ করব যেভাবেই হোক শানকে বিয়ের জন্যে বলো।আমিও বোঝাব।”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৩

এরপর স্বগতোক্তি করে রাহেলা বলে,”নয়ত এ বাড়ি ছাড়তে আমরা বাধ্য হবো”
পাখি আর কোন কথা বলতে পারে না।ক্ষিদের চোটে শরীরে কথা বলার মতো শক্তি নেই।তাই দ্বিতীয়বার কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও কিছু বলে না পাখি।গিয়ে ডায়নিং এ।এদিক ওদিক শানকে দেখে নিয়ে দ্রুত নাস্তাটা সেড়ে নেয়।এরপর ইনায়াহ্’কে নিয়ে চলে যায় স্কুলে।
আর উপর থেকে সবটা দেখে মুচকি হাসে শান।
স্কুলে ঢুকেই রাখির সাথে দেখা হয়ে যায় পাখির।

“না জানি কাল কতো কি করেছি? এবার সবটা নিয়ে খিল্লি করবে নিশ্চই”,ভাবতে ভাবতে আড়চোখে রাখির দিকে চেয়ে অন্যদিকে চলে যায় পাখি।
রাখি ডাকতে ডাকতে একদম পাখির কাছাকাছি চলে আসে।জোড় করে থামায় পাখিকে।
“কি রে কতোক্ষন ধরে ডাকছি। শুনছিস না যে?”

“এমনি।কিছু বলবি?”
“এমন করছিস কেন?কালকের ঘটনা নিয়ে মন খারাপ?আমি চেয়েছিলাম তোকে সামান্য একটু খাওয়াবো। পরে মনে নেই আর। আর তুই পরে সবটা খেয়ে নিবি কে জানতো……”,মিনমিনে স্বরে বলে রাখি।
পাখি ওকে এড়িয়ে বলে,”আচ্ছা বাদ দে ও টপিক।ভালো লাগছে না আমার।”
পাখির খাপছাড়া ভাব দেখে রাখি আর কিছু বলার সুযোগ পায় না।
মাথা এলিয়ে আস্তে করে বলে,”আচ্ছা।চল ভিতরে চল”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২৫