আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৪০

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৪০
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

বিকেল বেলা রাহেলা সহ চায়ের আড্ডায় মগ্ন পাখি।ইনায়াহ্ পাশে বসে কিছু একটা আঁকছে।গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিতেই শান হুরমুর করে বাড়িতে ঢোকে।চমকে যায় সবাই।পাখি দ্রুত কাপটা টেবিলের উপর রেখে এগিয়ে দাঁড়ায় শানের সামনে।
“কি হয়েছে আপনার?এমন দেখাচ্ছে কেন?”
শান কোন কথার জবাব না দিয়ে ঠোঁটে স্মিত হাসি বজায় রেখে পাখির দিকে চেয় থাকে।পাখি দুই বাহু ঝাঁকিয়ে বলে,”আরে বলুন না!এমন করে আছেন কেন?”

চট করে শান পাখির কোমড় জড়িয়ে কোলে তুলে নেয়।হাসতে হাসতে বলে, “পাখি আমার জন্যে আজ অনেক খুশির দিন।আমি আজ অনেক অনেক খুশি”
পাখি হকচকিয়ে ওঠে।আড়চোখে পাশে থাকা রাহেলা আর ইনায়াহ্’কে দেখে নিয়ে চাপাস্বরে শানকে কপোট রাগ দেখায়।
“কি করছেন টা কি? ছাড়ুন…. ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পাখির কথা শেষ হতে না হতেই শান রাহেলার দিকে তাকিয়ে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।রাহেলা মিটমিটিয়ে হেসে নজর সরিয়ে নেয়।উৎকণ্ঠিত হয়ে বলে,”তা কি এমন খুশি শানবাবা।আমাদের বুঝি বলা যায় না!”
শান বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে চোখ মুখ কুচকে ফেলে।পাখিকে নামিয়ে দিয়ে থতমত খেয়ে বলে,”এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো ”

বলেই ইনায়াহ্’র পাশে গিয়ে বসে।
রাহেলা একটু ঝুঁকে স্বাভাবিকভাবেই বলে,”কি হয়েছে বাবা?এতো খুশি কেন আজ?”
পাখিকে পানির গ্লাস আনতে দেখে শান হাতার বোতাম গুলো খুলতে খুলতে বলে,”আমাদের হসপিটালের যিনি ওনার তিনি আগামি মাসে শিকাগো চলে যাচ্ছেন।মূলত তার ফুল ফ্যামিলি ওখানে চলে যাচ্ছে।আর এখানে যেহেতু কয়েকটা ব্যবসা তার। তার মাঝে হসপিটালটা অন্যতম, সেটার এম ডি হিসেবে আমায় সিলেক্ট করেছেন।”

“সত্যি বলছো!”,
শানের কথায় খুশিতে চকচক করে ওঠে রাহেলার চোখ মুখ।
পাখি ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি এলিয়ে শানের দিকে তাকায়।
“একদম সত্যি চাচি।তবে দায়িত্ব পাইলেই তো আর হয় না।সেটা সুষ্ঠুভাবে পালনও করতে হয়।পদের পাশাপাশি দায়িত্বটাও অনেক বেড়ে গেলো এবার”,বলতে বলতে পিছনে সোফায় গা এলিয়ে দেয় শান।
পাখি উঠে গিয়ে পিছনে দাঁড়ায়। দুই হাতে খুব আলতো করে মাথাটা টিপে দেয়।এতে শানের কোন প্রতিক্রিয়া না থাকায় পাখি নিজের কাজ ভালো ভাবে চালিয়ে যায়।

“চা করে দিবো;আদা দিয়ে?”,প্রশ্ন করে পাখি।
শান দুই চোখের কোণা দুটো দু আঙ্গুলে চেপে বলে, “না থাক, এখন না।পরে..”
রাহেলা ওদের দুজনকে একবার দেখে নিয়ে বলে, “দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার মতো মানুষ আছে তো বাবা”
শান কিছু না বলে মুচকি হেসে রাহেলার দিকে তাকায়।
“চলো আজ ঘুড়তে যাবো।আজ আর হসপিটালে যাচ্ছি না”,বলেই পাখির দিকে তাকায়।
ইনায়াহ্ খুশি হয়ে বলে ওঠে,”জানো মুন সাইন আগে আমরা কতো ঘুড়তে যেতাম।এখন আর সান সাইন নিয়ে যায় না আমাদের”

বলেই মুখে স্পষ্ট অভিমানের ছাপ ফুটিয়ে তোলে।শান একগাল হেসে ইনায়াহ্’কে জড়িয়ে নিয়ে দুই গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে বলে,”আজ যাবো মাম্মাম।”
পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার মুন সাইনকে ঘুড়ানো হয় নি ”
পাখি ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি রেখে বলে,”চাচি তুমিও চলো না!সবাই যাই মজা হবে অনেক”
“না মা, তোমরা যাও। আমি বরং বাড়ির কাজগুলো এগিয়ে নেই”,ঠোঁট প্রসস্ত করে হেসে জবাব দেয় রাহেলা।

শান সাথে সাথে বাঁধা দিয়ে বলে,”আজ কিছু রেঁধো না চাচি।আমরা বাহিরে থেকে খাবার নিয়ে আসবো ”
আবার শান প্রশ্ন করে, “চাচি রনি কোথায়?”
“ভাইয়া তো রাখির সাথে ঘুরতে গেছে”,বলেই হেসে দেয় পাখি
“এতো ঘোরাঘুরির কি আছে বুঝি না, কদিন বাদেই তো বিয়ে”
“ওরা রোম্যান্টিক। আপনার মতো না”,কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে পাখি।
শান সরুচোখে সেদিকে তাকাতেই পাখি ফট করে উঠে দাঁড়ায়।ইনায়াহ্’কে তাগাদা দিয়ে বলে,”মা চলো আমরা রেডি হই”

পার্কে এসে দেখা মেলে ইনায়াহ্’র কয়েকজন বন্ধুর।সাথে তাদের ফ্যামিলি।আর সে এসেই তাদের সাথে মিশে গেছে একদম।শান পাখির হাত টেনে পাশের নির্জন একটা বেঞ্চে বসে। পাখির হাতদুটো হাতের মুঠোয় ভরে গভীর চুমু দেয়।পাখি পরম ভরসায় মাথা এলিয়ে দেয় শানের কাঁধে।
শান সামনের পুকুরের পরিষ্কার পানিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে শান্ত স্বরে বলে,”তুমি আমার জন্যে অনেক লাকি”
“কী রকম!”

শান একহাতে পাখিকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,”এই যে আম্মাকে পেলাম।আমার বাবার পাপের শহর গুড়িয়ে দিতে পারলাম।হসপিটালের এমডি’র পদ পেলাম।এসব কি চাখটিখানি কথা!”
পাখি সামান্য হেসে বলে,”এসবই আপনার প্রাপ্য”
“উুহু,তোমার মাঝে কিছু তো একটা আছে।যা সকল মন্দকে পরাস্ত করতে পারে”
“তাহলে আমার সাথে হওয়া মন্দ গুলো কেন পরাস্ত করতে পারি নি ডাক্তার সাহেব”,কাঁধ থেকে মাথাটা উঠিয়ে হতাশ কন্ঠে বলে পাখি।

শান ভ্রু কুচকে পাখির দিকে ফেরে।ভীত সন্ত্রস্ত কন্ঠে বলে,”তোমার কি মন খারাপ? ”
“নাহ,সেরকম নয়।তবে এটা প্রশ্ন আমার।আমার সাথে হওয়া মন্দগুলো কেন ঠেকাতে পারলাম না।সামনে যদি আরো কোন মন্দ থাকে সেগুলোই বা ঠেকাব কিভাব! “,শানের চোখে চোখ রেখে গড়গড় করে কথাগুলো বলে পাখি।
শান পাখির দুই গালে হাত রেখে মুখটা আঁজলা ভরে ধরে বলে,”তুমি সব মন্দকে হারিয়ে এতোদূর এসেছো।যদি তাই না হতো তাহলে তোমার বড় বাবার পরিবারের মতো ডেঞ্জারাস পরিবারে এতোগুলো বছর টিকতে পারতে না পাখি।”

“আব্বু, আম্মুর সাথে হওয়া মন্দ টা তো আটকাতে পারি নি “,
পাখি জানে এই কথাটা পুরোটাই তার নিছক আবেগ মাত্র।কারণ কেউ কখনোই কারো মৃত্যুকে আটকাতে পারে না।
শান চশমার গ্লাস ভেদ করে পাখিকে দেখে নিয়ে বলে,”তাহলে তোমায় পাইতাম কি করে!”
পাখি আর কিছু বলতে পারে না।প্রশান্তির হাসি ঠোঁটে এলিয়ে শানের বাম হাতটা জড়িয়ে কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয়।

আদুরে স্বরে বলে,”যতোক্ষণ আপনি থাকেন আমার কোন ভয় থাকে না।আপনি না থাকলে কেমন যেন খালি খালি লাগে।এখন তো আরো ব্যস্ত হয়ে পরবেন”
শান অভয় দিয়ে বলে,”আমি যদি কখনো পাশে নাও থাকি আমার ভালোবাসা সবসময় তোমার সাথে থাকবে পাখি।পরিস্থিতি যাইই আসুক আমি তো তোমায় ছাড়ছি না”
শেষ কথাটা বেশ জোড় দিয়ে বলে শান।
“আচ্ছা যদি কোনদিন আমার সাথে খুব খুব খুব মন্দ কিছু হয় তখনো কি আমায় এভাবেই ভালোবাসবেন?”,জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে শানের দিকে চেয়ে বলে পাখি।
শান ধমকে বলে,”এসব কি ধরনের কথা বার্তা পাখি? কি মন্দ কিছু হবে।আজগুবি এসব চিন্তা করে করেই শরীরের বারোটা বাজাইছো, না?”

“বলুন না প্লিইইজ”,নাকে কান্নার স্বরে পাখি জানতে চায়।
শান বুঝতে পারে এ প্রশ্নের পাখি নিয়ে তবেই খান্ত হবে।
“তোমার শেষ শ্বাসের শেষ বিন্দু পর্যন্ত তোমার সাথে থাকব আমি।কারণ তুমি আমার প্রেম না ভালোবাসাও না তুমি আমার আসক্তি।যাকে এক মূহূর্তও ছেড়ে থাকা যায় না, উহু কিছুতেই না”

পাখি চুপচাপ বসে থাকে।দুজনের দৃষ্টি এখন পুকুরের লাল শাপলা গুলোর দিকে।
হঠাৎ বাম দিক থেকে আসা বাচ্চার কান্নার আওয়াজে দুজনেই সেদিকে তাকায়।ফুটফুটে একটা সদ্য হাঁটতে পারা বাচ্চা নজরে আসে।কান্না করে চোখ ফুলিয়েছে যে।পাখি একবার শানকে দেখে বাচ্চাটার দিকে তাকায়।আশপাশ চোখ বুলিয়ে দেখে কেউ নেই।পাখি দ্রুত উঠে বাচ্চাটাকে কোলে নেয়।কোলে নিয়ে কিছুক্ষন দোলাতেই একদম চুপ হয়ে যায় বাচ্চাটা।ঠোঁট উল্টিয়ে পাখির দিকে তাকায়।
“তোমার মা কই”,বেশ আদুরে কন্ঠে বলে পাখি।

বাচ্চাটার বয়স খুব বেশি হলে তিন বছর হবে।বয়স বুঝতে পেরেই পাখি এটা সেটা জানতে চাইছে।এদিক সেদিক ঘুরে বাচ্চাটা তার মাকে খোঁজার চেষ্টা করছে।ইতোমধ্যে শান চলে আসে।বাচ্চার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গালে আলতো ছুঁতেই রাগের বলিরেখা স্পষ্ট ফুটে ওঠে বাচ্চাটার চোখে মুখে।শান পাখি দুজনেই অবাক হয়ে যায় তার প্রতিক্রিয়া দেখে।পাখির কোল থেকে হাত বাড়িয়ে শানকে মার দিতে চায় বাচ্চাটা।পাখি এগিয়ে যেতেই শান দূরে সরে যায়।এভাবে দুই একবার করতেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে বাচ্চাটা।ওদের দুজনের খুঁনসুটি বেশ উপভোগ করছে সে।

“ওর মা কই?”,আশপাশ তাকিয়ে বিড়বিড় করে শান।
পাখি বাচ্চাটার গালে আদোর করে বলে,”বুঝতে পারছি না।কিন্তু খুব কিউট না?”
“হুমমম”,মুচকি হেসে বলে শান।
একজন ভদ্র মহিলা সাথে একটি বাচ্চা সমেত এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।তার পিছনে একজন ভদ্র লোককে দেখতে পায় শান।
ওদিকে ইশারা করে বলে,”এরাই নাকি?”
পাখি শানের নিশানা অনুসরন করে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,”ঠিক বলতে পারছি না।আসুক দেখি কি বলে!”,

এর মাঝেই ঐ ভদ্র মহিলা এদিকে দৌঁড়ে ছুটে আসে।পাখির কোল থেকে বাচ্চাটাকে দ্রুত নিয়ে আদোর করে দেয়।বাচ্চাও যেন মায়ের বুকে ফিরে শান্তি খুঁজতেই ঘাড়ে মাথা এলিয়ে দেয়।দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় ইনিই মা।মায়েরা তো এমনিই হয়।
সারা মুখে চুমু খেয়ে ভদ্র মহিলা শান পাখির দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকায়।মুখটা মলিন করে পাখি শানের দিকে তাকাতেই শান ভদ্র মহিলাকে আশ্বস্ত করে বলে,”ভয় পাবেন না।বাচ্চাটা আমাদের পাশে এসে কান্না করছিলো……”

“ঠিকাছে “,শানের কথায় তড়িঘড়ি করে জবাব দেয় ভদ্র মহিলা।তার ভাব দেখে বুঝাই যাচ্ছে তিনি এখনো শান পাখিকে বিশ্বাস করতে পারেন নাই।
পিছনে আরেকটি বাচ্চা সমেত ভদ্রলোক এগিয়ে এসে শানের সাথে হাস্যোজ্বল মুখে মুসাফায়ের উদ্দেশ্যে হাত এগিয়ে দেয়।
“হ্যালো ডক্টর শান”
“হ্যালো,মিস্টার রাজীব “,ঠোঁটে সৌজন্যতার হাসি ফুটিয়ে বলে শান।
“আমার মিসেস।আর বাচ্চাও আমার”,বাচ্চা সহ মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে রাজীব।
শান একগাল হেসে রাজীবের মিসেসের দিকে তাকায়।

“আসলে সদ্য হাঁটা শিখেছে তো বুঝতেই পারি নি কখন এদিকটায় এসেছে।বড্ডো ভয় পেয়ে গেছিলাম”,ভীত কন্ঠে বলে রাজীব।
“মিসেস রাজীব,নেক্সট টাইম একটু দেখে রাখবেন যাতে নিজের দায়িত্বহীনতার দায়ভার অন্যের উপর বর্তাতে না হয়, কেমন!,”
ভদ্র মহিলা চুপসে গিয়ে বাচ্চাকে আরও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।পাখির দিকে একবার তাকিয়ে অন্যত্র চলে যায়।

রাজীব কিছু বলতে উদ্যত হতেই শান পাখির হাত টেনে নিয়ে চলে যায়।
এরপর আরো কিছুক্ষন ইনায়াহ্’কে নিয়ে খেলাধুলা করে শান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে।পথে সকলের জন্যে রাতের খাবার কিনতে ভুল হয় না।
কিছুক্ষন পর বাড়িতে পৌঁছে যায় তারা।বেশ ফুরফুরে লাগছে আজ পাখির।কেমন যেন ডানা ঝাপটানো পাখির মতো লাগছে।

রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখে শান ফোনে কিছু একটা করছে।পাখি তোয়ালেতে মুখটা মুছে ভেজা তোয়ালে শানের ফোনের উপর ছুড়ে মারে।
“কি হলো এইটা?”,অবাক হয়ে প্রশ্ন করে শান।
পাখি ড্রেসিং টেবিলের টুলটা টেনে বসতে বসতে বলে,”কি আর হবে!দৈনিক যা হয় তার একটু উল্টো আর কি!”

শান দ্রুত পায়ে বিছানা ছাড়তেই পাখি ফট করে উঠে দাঁড়ায়।চিরুনীটা সামনে তরবারির ন্যায় ধরে বলে,”একদম না বলছি। একদম না।কেমন লাগে হুমমম?যখন প্রতিদিন আমার দিকে ছোড়া হয়!”
শান মিছে রাগ দেখিয়ে বলে,”দাঁড়াও তোমার কেমন লাগাচ্ছি”
“একটা মার আজ গায়ে পড়লে কিন্তু আমিও আজ মারব”,
“কি বললে, স্বামীর গায়ে হাত তুলবা “,বলতে বলতে এগিয়ে আসে শান।
দুইহাত মুঠোয় ভরে পিছনে মুছড়ে ধরে। সামান্য ব্যথায় চোখ মুখ কুচকে ফেলে পাখি।
“আর বলব না, প্রমিজ প্রমিজ”

শান মিটমিট করে হাসে আর পাখির দিকে চেয়ে থাকে।পাখি আবারও বলে,”আর দুষ্টুমি করব না সত্যি”
শান একগাল হেসে হাত ছেড়ে বুকে জড়িয়ে নেয়।
“খুব ব্যথা পাইছো?”
“হুমমম, একটু ”
“আচ্ছা সরি”
শানের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে পাখি বলে, “তখনকার বাচ্চাটার কথা মনে আছে আপনার?”
“হুমমম আছে তো”
“কি কিউট না, গোলুমোলু টাইপ”

শান শব্দহীন হেসে দেয় কিছু বলে না।
পাখি মাথাটা তুলে শানের থুতনিতে কপাল ঠেকিয়ে বলে,”ইশ!আমাদের যে কবে হবে, ওমন গোলুমোলু টাইপ একটা।ওহ না না, দুইটা;টুইন হবে।ডাক্তার সাহেব আমার না টুইন বেবি খুব পছন্দ।আপনার মতো দুইটা চাই আমার।”
গড়গড় করে বলে চলেছে পাখি।বলার পরেও শানের কোন প্রতিউত্তর না পেয়ে পায়ের পাতায় ভর করে একটু উচু হয়ে বলে,”কি হয়েছে কথা বলছেন না যে!”

শান থমথমে মুখে পাখির দিকে চেয়ে থাকে।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাখিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে চলে যেতেই সবটা খেয়াল হয় পাখির। কোন কথা ছাড়াই শক্ত করে জড়িয়ে রাখে শানকে।কারো মুখে কোন কথা নেই কিছুক্ষণ।নীরবতা ভেঙ্গে পাখি ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, “আমি ভুলে গেয়েছিলাম ”
“প্রত্যেকটা মেয়েই মা নামোক ছোট্ট শব্দের গভীর অনুভূতি নিয়ে জন্ম নেয়।তোমারও তার ব্যতিক্রম নয়।আমি জানি তুমিও মা হতে চাও। কিন্তু আমি অপারগ।এইসব কারণেই কিন্তু তোমার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি।তোমার এই একটা জিনিসের অভাব আমি কোনদিনও পূরণ করতে পারব না পাখি।সরি “,এক দমে কথা গুলো বলে শান পাখিকে সরিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে।

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩৯

পাখির ভিতর ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করে। কিন্তু সে ইচ্ছে করে চায় নি ওভাবে বলতে।শানের যে এমন একটা দূর্বলতা আছে তা পাখির মাথাতেই ছিলো না।মনের ভুলে কথা গুলো বলেছে।
“আমি সত্যিই ইচ্ছে করে বলিনি ডাক্তার সাহেব।আমার মনেই ছিলো না সবকিছু”,বলতে বলতে শানের পাশে গিয়ে বসে।বিছানায় রাখা শানের হাতটা নিজের গালে ঠিকিয়ে নেয়।শান শান্ত চাহনীতে পাখির দিকে তাকায়।খুব অসহায় চোখে পাখি ক্ষমা চেয়ে বলে,”বিশ্বাস করুন”

ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি রেখে শান বলে,”আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে বলো নি।তোমার মনেও মা হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা আছে।আর সেই আকাঙ্খা থেকেই কথাটা বলেছো…..”
“আমি….”
“আমায় বলতে দাও।আমি কিছু মনে করি নি পাখি।বার বার সরি বলতে হবে না। হুমমম!”
পাখি আরেকটু এগিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে শানের।মাথায় হাত বুলিয়ে শান বলে,”আমরা কোনদিনও বাবা মা হতে পারব না জান।এই সত্যিটা মেনে নাও”
“এই জিনিসটা আর কখনো পূনরাবৃত্তি হবে না। কথা দিলাম”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৪১