আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৪

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৪
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

খুব ভোর বেলা শান উঠে যায়।নিত্যদিনের অভ্যেস যাকে বলে।বাড়ির চারিদিকে তিন রাউন্ড ঘুরে পূনরায় আঙ্গিনার মাঝে দাঁড়ায়।হাফিয়ে উঠে হাটুঁতে দুই হাত ঠেকিয়ে ঝুকে যায় সামান্য।
পাখি আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানায় বসে বসে ভাবে
কতো রাত থেকে এতো শান্তির ঘুম ঘুমায় না সে!
বিছানা থেকে নেমে জানলা খুলতেই শানকে চোখে পড়ে ।গৌড়বর্ণ দেহে সাদা স্যান্ডো গ্যাঞ্জি ঘামে ভিজে একাকার।পরনে কালো ট্রাউজার।

আপন মনে পাখি ভাবতে থাকে,”একটা এতো সুন্দর মানুষের মন কি করে এতো অসুন্দর হতে পারে?কিভাবে বলতে পারলেন আমি ক্যারেক্টারলেস? ”
না জানি আর কতো কিছু সইতে হবে এ জীবনে”
ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ খেয়াল হয় শান উপরে সরুচোখে তাকিয়ে আছে।
“ছিহ, কি ভাবলেন উনি?এমনিই তো কতো কিছু শুনতে হয়েছে একদিনেই।”,ভাবতে ভাবতে পাখি দ্রুত জানলার পর্দাটা সরিয়ে দেয়।
এলোমেলো চুল গুলো বেঁধে হাতে ঢিলে খোপা করে ঘর গুছানো শুরু করে।হঠাৎই পিছনে ছোট্ট দুটি হাতের স্পর্শে থেমে যায় পাখি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ইনায়াহ্”
“গুড মর্নিং মুন সাইন।তুমি আমায় রেখে এসেছো কেন?”
পাখি চায় না ছোট্ট বাচ্চাদের সাথে মিছে আচরন করতে। কিন্তু কি করে বোঝাবে ইনায়াহ্কে তারা একঘরে থাকতে পারে না!
“বলো ”
“বেবি,তোমার সান সাইনের ঘরে সারারাত লাইট জ্বালানো থাকে।আর আমি লাইটের আলোয় ঘুমাতে পারি না।তাই… ”

“ওকে ডোন্ট ওরি,তুমি আর আমি এখন থেকে এ ঘরে থাকব”,বলেই ইনায়াহ্ জড়িয়ে ধরে পাখিকে।
পাখিও আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ভাবে,”একদিনে কতো মায়া পরে গেছে মেয়েটার উপর।এমন একটা বাচ্চাকে রেখে কোথায় গেছে ওর মা?মা বাবা ছাড়া জীবন যে কতো কষ্টের তা তো আমি জানি”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পাখি

পাখি ইনায়াহ্কে সাথে করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।ড্রয়িং রুম পুরো ফাঁকা।কারণ বাড়িতে বাড়তি মানুষ একদমই নেই।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কোথাও শানকে না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে পাখি।
আব্দুল্লাহ্ ড্রয়িং রুমে ঢুকে পাখিকে দেখে অবাক হয়ে যায়।ইনায়াহ্ দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,”দাদু, এতোক্ষনে সময় হলো তোমার?”
আব্দুল্লাহ্ ইনায়াহ্কে আদোর করে বলে,”আজ একটু দেরি হলো দাদু ভাই।”
পাখিকে ইশারা করে বলে, “কে ও?”

“ও?ও হচ্ছে মুন সাইন।মানে আমার নতুন গভারনেস”
আব্দুল্লাহ্ এক গাল হেসে পাখির সামনে এসে দাঁড়ায়।
“আমার দাদুভাইকে দেখে রাখবে মা”
ঠোঁট এলিয়ে সৌজন্যের হাসি রেখে পাখি সম্মতি জানায়।
“ও আমায় খুব ভালোবাসে দাদু”
রান্নাঘর থেকে একজন মহিলা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বাহিরে চলে আসে।আব্দুল্লাহ্ তাকে চাবি ধরিয়ে দিয়ে বলে,”চাবিডা তোমার ধারে রাইখো।আর তাড়াতাড়ি কাম শ্যাষ কইরা বাড়িত যাইও রানুর মা।আমার আইতে দেরি অইব”

রাহেলা বেগম আব্দুল্লাহর স্ত্রী।প্রতিদিন সকালে আর সন্ধ্যার দিকে এসে শানের বাড়ির মোটামুটি কাজ সেরে দিয়ে যায়।
ওদের কথাবার্তায় পাখির বুঝতে অসুবিধা হয় না এনারা স্বামী-স্ত্রী।
“দাদিমা কাল আসো নি কেন?”,ইনায়াহ্’র কথায় পাখি ওর দিকে ফেরে।
“কাজ ছিলো রে একটু “,রাহেলা বেগম বলতে বলতে পাখির দিকে আগা-গোড়া দেখে আবার রান্নাঘরে চলে যায়।পাখি সবটাই দেখছে তাকিয়ে তাকিয়ে।নিজেকে কেমন যেন অযাচিত মনে হচ্ছে তার।
সিঁড়ি বেয়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলতে বলতে নামে শান।

“ওহহ, ইট’স ওকে।কিন্তু একজন বিশ্বস্ত গভারনেসের জরুরী দরকার ছিলো”,বিরসবদনে ফোনে কথা চালিয়ে যায় শান।মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে শান নিরাশ।
“কোথায় পাবো বিশ্বস্ত একজন মানুষ।ইনায়াহকে যে আগলিয়ে রাখবে!”,ভাবতেই ইনায়াহ্’র মায়াবি মুখটা দেখে মনটা বিষিয়ে ওঠে শানের।পাখি শানকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়।কেমন যেন সংকোচ লাগে শানের সামনে থাকতে।তাই আগ পিছ না ভেবে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।
“কি নাম তোমার মা?”,রাহেলা বেগম মুচকি হেসে প্রশ্ন করেন।
পাখি কিচেন ডেস্কের পাশে হেলান দিয়ে বলে, “জ্বি আমার নাম পাখি।পুরো নাম তাসনুভা তানহা পাখি”

“বাহ,বেশ মিষ্টি নাম তো”
পাখি ঠোঁট এলিয়ে নিশব্দ হাসে।
“তুমি ইনায়াহ্’র নতুন গভারনেস?”
রাহেলা বেগমের প্রশ্নের জবাবে পাখি কি বলবে বুঝতে পারে না আবার নিজের করা ভুল, ডিকিতে চলে আসার কথাও বলতে পারে না।এদিক সেদিক নজর ফেলিয়ে ছোট্ট করে বলে,”হু”
“আচ্ছা আচ্ছা, বেশ ভালো”,জবাব দেন রাহেলা।
“আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?”

পাখির কথায় রাহেলা কাজ থামিয়ে বলে, “হ্যা করো”
বলে আবারও কাজে মন দেন।
“ইনায়াহ্’র মা কোথায়?উনি কি এখানে স্যারের সাথে থাকেন না? ”
পাখির কথায় রাহেলার কাজ থেমে যায়।মাথা তুলে কেমন যেন শুকনো মুখে পাখির দিকে তাকান।কিন্তু কিছু বলেন না।কিছুক্ষন তাকিয়ে আবারও নিজের কাজে মন দেন।
এদিকে পাখি ভাবে থাকতে,”ভুল কিছু জানতে চাইলাম নাকি?ভদ্র মহিলা চুপসে গেলেন কেন?আমি তো জাস্ট….”

ভাবতেই চোখ পড়ে রাহেলার দিকে।রাহেলা সরুচোখে তাকিয়ে আছে পাখির দিকে।পাখি অপ্রস্তুত হয়ে এক গাল হেসে বলে,”আচ্ছা থাক, বলতে হবে না।হেহেহে”
মেকি হেসে পাখি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।তবুও রাহেলার কোন হেলদোল নেই।সন্দিহান চোখে তিনি পাখিকে দেখেই চলেছেন।কিছুক্ষন পর চোখ নামিয়ে পূনরায় নিজের কাজে মন দেয়।পাখি বুকে হাত দিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ে।যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল।

সোফায় বসে শান ফোনে কিছু একটা করছে।ইনায়াহ্ একহাত সরিয়ে শানের কোলে গিয়ে বসে গলা জড়িয়ে বলে, “ও সান সাইন, মুন সাইন অনেক ভালো।ও আমাদের সাথে থাকুক না প্লিজ;আমার নতুন গভারনেস হয়ে।”
ইনায়াহ্’র কথাকে বেশ গভীরভাবে মগজে গেঁথে নেয় শান।বলে,”ঠিকাছে মাম।তুমি যা বলবে তাই।”
ইনায়াহ্ খুশি হয়ে শানের গালে একটা চুমু দেয়।শান এবার সুযোগ বুঝে বলে,”তোমার কথা তো রাখলাম।এবার তাহলে সান সাইনের কথাও তো রাখতে হবে তাই না?”
“বলো, কি কথা?”

“মুন সাইনকে নতুন গভারনেস হিসেবে রাখব।তবে,তবে ও অন্য বাড়িতে থাকবে।ঠিক যেমন নাভানা আন্টি এসেছিলো, রাত হলে চলে যেত; তেমন।”
“কিন্তু আমি যে মুন সাইনকে কথা দিলাম আমরা একসাথে থাকব!”
“কোন কিন্তু না মাম।আমি কথা রেখেছি, তুমিও রাখবে।”
ইনায়াহ্’র চোখে মুখে দূঃচিন্তার ছাপ দেখা যায়।বেশ দোটানা বুঝা যাচ্ছে মুখের উপর।মুখটা কেমন অন্ধকারে ঢেকে যায় মূহূর্তেই।

শান শুকনো ঢোক গিলে বলে,”ওকে ওকে মাম, কোন কথা দিতে হবে না।রিল্যাক্স, তুমি কোন টেনশন করবা না।”
ততোক্ষনে ইনায়াহ্ স্থীর হয়ে যায়।এক ধ্যানে পলকহীন চেয়ে থাকে ঝাড়বাতিটার দিকে।শান অবস্থা বুঝতে পেরে দূঃচিন্তায় কয়েকবার ইনায়াহ্’কে ডাকে;কিন্তু কোন সাড়া পায় না। সে নির্বিকার চেয়ে আছে উপরের দিকে।কয়েক সেকেন্ড পর ইনায়াহ্’র চোখ মুখে উল্টে আসে।চোখের পাতা অস্বাভাবিক কাপতে থাকে।চোখ মুখের রং পাল্টে যায়।

শান শুকনো ঢোক গিলে জোড়ে আব্দুল্লাহ্’কে ডেকে বলে,”চাচা ঘড়ি ধরো,সময় দেখো”
শানের চিৎকারে রান্নাঘর থেকে পাখি দৌড়ে ছুটে আসে। সাথে পিছন পিছন ছুটে আসে রাহেলা বেগম।
ইনায়াহ্’র অবস্থা দেখে পাখি ওকে ধরতে গেলে শান হাত উচিয়ে ওকে থামিয়ে দেয়।
একটু পর ইনায়াহ্’র বাম হাত অস্বাভাবিক কাপা শুরু করে। এবার পুরো শরীরে খিঁচুনি উঠে যায়।ইনায়াহ্’র পুরো শরীর থেকে থেকে খিঁচুনি দিচ্ছে।
শান মনে প্রানে আল্লাহ্কে ডেকে চলছে।আর বার বার অসহায়ের মতো আব্দুল্লাহর দিকে তাকাচ্ছে।

“চাচা কতোক্ষন হলো”
“১ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড”,হন্তদন্ত হয়ে জবাব দিয়ে আবার বলে, “শান বাবা ২ মিনিট তো পেরিয়ে যাচ্ছে!”
শানের সাড়া শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে।পাল্সের গতি অস্বাভাবিক চলছে।শান আর সময় নষ্ট করতে চায় না।ইনায়াহ্কে বুকে জড়িয়ে হাঁটা ধরে সদর দরজার দিকে।দরজার চৌকাঠে পা রাখতে শান্ত হয় ইনায়াহ্।শানের পা থেমে যায়।শান দ্রুত এনে সোফার উপর শুইয়ে দেয়।
“চাচি পানি আনো ফাস্ট”,বলে শান ইনায়াহ্’র ঘর্মাক্ত শরীর মুছে দেয়।পাখি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে। কিছু বুঝে উঠতে পারছে না, আর না পারছে ইনায়াহ্কে ধরতে।

রাহেলা পানি এনে এগিয়ে দেয় শানের দিকে।শান ফট করে গ্লাস টা এনে ইনায়াহ্’র মুখের কাছে ধরে।খুব দ্রুত পানিটা শেষ করে ইনায়াহ্ শানের দিকে ঘুম জড়ানো দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।গলা জড়িয়ে বলে,”সান সাইন”
“হ্যা মাম্মাম,এইত আমি বলো না মা!”,কাতর কন্ঠের জবাব শানের।
“মুন শাইন এখানেই থাকুক না সান সাইন”

“ঠিকাছে মাম।ও এখানেই থাকবে। তোমার সাথে।তুমি যা চাইবে তাই হবে।”,বলতে বলতে পাখির দিকে তাকায় শান।
পাখির এবার বুঝতে অসুবিধা হয় না ইনায়াহ্ ওকে নিয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে।শানের চোখে চোখ পড়তেই পাখি চোখ নামিয়ে নেয়।কিন্তু ও চোখে এই প্রথম তার প্রতি কোন রাগ দেখতে পায় নি পাখি।আবার নজর তুলে তাকাতে বুঝতে পারে চোখে কতোটা অসহায়ত্ব আজ।

“মা!”,বলেই শান ইনায়াহ্’র গালে দেয়।আর বুঝতে পারে ঘুমিয়ে গেছে সে।এবার যেন ভিতর থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস আসে শানের।পাখির দিকে তাকায়। পাখি সংকোচে এগিয়ে এসে শানের থেকে ইনায়াহ্কে কোলে নেয়। শানের হাতের উপর হাত পরতেই চমকে যায় পাখি।দ্রুত সরিয়ে নেয় হাতটা।পাখির ওমন আচরনে বেশ অবাক হয় শান।

“ওকে ওর ঘরে শুইয়ে দাও”,পাখির তাকিয়ে বলে শান।
মাথা এলিয়ে সম্মতি জানায়।
“আর কোন সমস্যা হলে আমায় কল করবে”,অন্যদিকে তাকিয়ে বলে শান।এবার অবাক বিষ্ময়ে শানকে দেখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।
“চাচি আমি গেলাম”,বলেই শান হসপিটালের উদ্দেশে বের হয়।গলা উচিয়ে রাহেলা বলে, “শান বাবা তোমার নাস্তা?”
“ক্ষিদে নেই। “,বলে শান উপরের দিকে একবার তাকায়।
এরপর দ্রুত পদে এগিয়ে যায় দরজার দিকে

দুপুর বেলা পাখি ইনায়াহ্’র পাশে শুয়ে শুয়ে ভাবছে সকালের কথা।
“কি এমন কারণ থাকতে পারে যার জন্যে ইনায়াহ্ এতো হাইপার হলো।তারপর নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে পরল!এতোটা হাইপার তো এর আগে কোন বাচ্চাকেই দেখিনি আমি”
“মুন সাইন”,ইনায়াহ্’র কথায় পাখির ভাবনায় বিরতি ঘটে।পাশ ফিরে মুচকি হেসে পাখি জবাব দেয়,”এই যে বেবি,এই তো আমি! কিছু লাগবে তোমার?”

ইনায়াহ্ পাখিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার তোমাকে লাগবে”
পাখি একগাল হেসে বলে, “আছি তো”
এরপর ইনায়াহ্’কে গোসল করিয়ে দেয় পাখি।নিজে গোসল সেড়ে নিচে নেমে আসে।ইনায়াহ্কে দুপুরে খাওয়াতে হবে।সকাল থেকে কিচ্ছু খায় নি এখনো।
শানের কড়া নির্দেশ ছিলো ইনায়াহ্কে ডাকা যাবে না।যতোক্ষন ও নিজে থেকে না উঠে।তাই পাখিও ডাকে নি আর।

নিচে নেমে দেখে রাহেলা বেগম টেবিলে খাবার সার্ভ করছে। একটা চেয়ার টেনে পাখি ইনায়াহকে বসিয়ে রাহেলা বেগমকে বলেন,”আপনি সারাদিন এখানে থাকেন?”
রাহেলা শুকনো জবাব দেন, “না”
পাখি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।রাহেলা বুঝতে পেরে বলে,”শান বাবা ফোন করেছিলো। বার বার ইনায়াহ্’র খবর নিচ্ছিলো।আর আমায় বললো এখানে থেকে যেতে।তাই আছি এখনো”
“ওহহহ আচ্ছা,”সৌজন্যমূলক হাসি এলিয়ে জবাব দেয় পাখি।
ইনায়াহ্কে নিজের হাতে খাইয়ে দেয় পাখি।রাহেলা বলে ওঠে,”তুমিও খেয়ে নাও।তারপর এঁটো বাসনগুলো ধুয়ে দেব আমি”

পাখি তার দিকে বলে,”আমি ধুয়ে নেব সমস্যা নেই”
“তুমি এ বাড়ির গভারনেস, কাজের লোক নও মা”,নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দেন রাহেলা।
পাখি চুপসানো মুখে বলে,”এসব কাজ করতে আমি অভ্যস্থ ”
ইনায়াহ্’র খাওয়া দেখে রাহেলা অবাক না হয়ে পারে না।কারন ইতোপূর্বে কোন গভারনেসের কাছেই সে এতো তৃপ্তি করে খায় নি আর এতোটা খায় নি।রাহেলা ইনায়াহ্কে বলে,”দাদুভাই একটু ভাত দিই!”
“দাও দিদা”

রাহেলা খুশি মনে কিছু ভাত তুলে দিয়ে পাখির দিকে তাকিয়ে ভাবে,”এই মেয়ের মাঝে কিছু তো একটা আছে, যার জন্যে দাদুভাই ওকে এতো ভালোবাসছে”
পাখি আপনমনে মাছের কাঁটা বেছে বেছে ইনায়াহ্কে খাওয়াচ্ছে।
খাওয়া শেষে ইনায়াহ্ দৌড়ে ছুটে যায় বাহিরে।পাখি বেসিনে প্লেটটা রাখতে যায়।রাহেলাও কিচেনে গিয়ে ঘরটা গুছিয়ে নেয়।
“আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?”,বলেই রাহেলার দিকে তাকায় পাখি।
রাহেলা সহাস্যমুখে বলে,”বলো”

“ইনায়াহ্’ সকালে ওমন করল কেন?ওর কি কোন রো…”
“এতো কৌতূহল ভালো না মা।ক’দিনের জন্যে এসেছো নিজের চাকরিতে মন দাও।এখনি এতোকিছু জানতে হবে না।ধীরেধীরে সব বুঝতে পারবে”,রাহেলা জবাব দেন।
পাখি এবারও অপমানিত বোধ করে কিন্তু বাহিরে মিথ্যে হাসি ঠোঁটে রেখে বলে,”জ্বি”
রাহেলা আরেকটু কাছে এসে পাখির মুখটা ভালো করে দেখে।বেশ মায়াবি একটা মুখ।চুপসানো মুখটা দেখে বড্ডো মায়া হয় তার। পাখির মাথায় হাত রেখে বলে,”আমায় চাচি বলে ডাকিও”
পাখি ছলছলে চোখে তাকিয়ে মাথার উপর রাহেলার হাতটা দেখে।

“এভাবে শেষ বার রানি মাসি আদোর করেছিলো”,ভাবতেই চোখের কোণ ভরাট হয় পাখির।
রাহেলা একটু দূরে এসে বলে,”যদিও বলা ঠিক না তবুও তোমায় দেখে আগের গগভারনেসদের থেকে অন্যরকম লাগছে।আমার চোখ মানুষ চিনতে ভুল করে না।মনে হচ্ছে তুমি খুবই ভালো একটা মেয়ে।”
পাখি প্রশ্নাতুর চোখে রাহেলার দিকে তাকায়।
বলছি শোন,”ইনায়াহ্ হলো শান বাবার….”

“চাচি “,শানের ডাকে রাহেলা চুপ হয়ে যায়।এদিক ওদিক নজর ঘুরিয়ে শানের দিকে তাকায়।শান অনুভুতি হীন চোখে চেয়ে বলে,”চাচি আমায় এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাও ”
বলেই সোফায় গিয়ে বসে।
রাহেলা ফ্রিজ থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে শানকে এগিয়ে দিতে দিতে বলে,”শান বাবা এই মেয়েটা খুব ভালো মনে হচ্ছে অন্যান্যদের থেকে।জানো আজ ইনায়াহ্ কতোটা মাছ ভাত খেয়েছে!আমি অবাক হয়ে গেছি।আর সারাক্ষন শুধু মেয়েটার সাথে থাকে।মাত্রই খেলতে গেলো”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৩

শান পানিটা খেয়ে ফাঁকা গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে বলে,”চাচি ওর মতো মেয়েরা ভালো হয় না।তুমি খেয়াল করেছো ওর তিলটা?”
রাহেলা নিঃশব্দ হেসে বলে,”দেখেছি। দু একজনের জন্যে বাকিরা যে খারাপ তা তো নয় শান বাবা।আর তোমারও কিছু বোঝার ভুল আছে।যেগুলো তুমি গত ১৬ বছর ধরে মানতে নারাজ।আল্লাহ্’র কাছে চাই তোমার জীবনে এমন কেউ আসুক যে তোমার……”

“তৃতীয় কোন নারীর স্থান আমার জীবনে নেই চাচি।ছোটবেলা থেকে ইনায়াহ্’কে নিয়ে আছি আর ওকে নিয়ে সারাজীবন থাকব”,রাহেলার কথাকে থামিয়ে দারাজ কন্ঠে বলে শান।
এরপর প্যান্টের দুই পকেটে হাত গুঁজে বলে,”ও অপরিচিত কোন মেয়ে।যতোদূর বলেছে নিজের ব্যপারে, তাতে বুঝেছি সে মিথ্যে বলে নি।তাই যতোদিন না ইনায়াহ্’র নতুন গভারনেস পাচ্ছি ও ততোদিন থাকুক।ইনায়াহ্’র ট্রিটমেন্টও চলুক।এর বাহিরে নতুন করে কোন আত্মীয়তা করো না ওর সাথে।”
বলে শান হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।

রাহেলা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারও নিজেকে ব্যর্থ মনে করে গ্লাসটা হাতে নিয়ে কিচেনের দিকে চলে যান।
কিচেনে থেকে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনে ফেলে পাখি।বুঝতে অসুবিধা হয় না শানের জীবনে ভীষণ কালো অতীত রয়েছে।যার জন্যে তিনি কোন নারীকে সহ্য করতে পারে না।পাখি চিন্তায় পরে গিয়ে ভাবে,”কিন্তু তৃতীয় বার কেন বললেন?আর ইনায়াহ্’র কি অসুখ রয়েছে?যতোদূর মনে হলো ইনায়াহ্ ওনার মেয়ে না তাহলে, কার মেয়ে?কি সম্পর্কই বা শান স্যারের সাথে?”

আসক্তি সিজন ২ পর্ব ৫