এই অবেলায় তুমি পর্ব ১২

এই অবেলায় তুমি পর্ব ১২
Sabihatul Sabha

ইরিন দাঁড়িয়ে আছে ফুচকার দোকানের সামনে।ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে।
ইরিন নিজে নিজে বিরবির করে বলছে, ” বেয়াদব মাইয়া,নূরের বাচ্চা আজ খালি তরে হাতে পাই।এক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আর এই মেয়ের কোনো খবর নাই।আমাকে নিজেই বললো আসতে আবার নিজেই উধাও!!

“এই হরিণ ”
ইরিনের এখন মন চাচ্ছে নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় বসাতে। কেনো যে নূরের কথা শুনে আসতে গেলো।এখন আবার আরেক পাগলের আমদানি হইছে!!
ইরিন আগের মতই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
নীল ওর সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,” এই মেয়ে ভয়ডর নাই। এখানে একা একা কি করো?
ইরিনঃ সেটা যেনে আপনার কাজ কি?আপনি আপনার নিজের রাস্তায় জান!..
নীলঃ হরিন তুমি রেগে আছো কেনো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইরিন তো এমনিতেই রেগে ছিলো তারপর নীল আবার হরিন বলেছে।আগুনের উপর ঘি ঢালবার মতো অবস্থা।
ইরিন রেগে বলে উঠলো, ” এই ছেলে! এই আপনার সমস্যা কি? আপনি যদি আরেক বার হরিণ বলেছেন একদম মুখ সেলাই করে দিবো!! বোন একঘন্টা ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে আর ভাই আসছে মাথা খাইতে।”
নীল ভদ্র ছেলের মতো মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললো আর বলবো না।এবার বলো এখানে কি করছো?
ইরিনঃ ফুচকা খেতে এসেছি।

নীলঃ তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
ইরিনঃ নূ….বলে থেমে গেলো। কাউকে বলা যাবে না নূরের কথা। এমনি…
নীলঃ এমনি!! নাকি কারো জন্য অপেক্ষা করছো?
ইরিনঃ কার জন্য অপেক্ষা করবো?
নীলঃ আরে তুমি তো দেখছি কিছুই বুঝো না। এক কাজ করো ফুচকার বদলে ফিটার খাও,কাজে দিবে।
ইরিন রেগে বললো, ” আপনি আসলে কি বলতে চাচ্ছেন। ক্লিয়ার করে বলুন?”
নীলঃ দেখো আমার থেকে লুকিয়ে লাভ নেই।আমি সব জানি..
ইরিনঃ কি জানেন আপনি?

নীলঃ তুমি যে মাঝে মাঝে একটা ছেলের সাথে রিক্সায় করে আসো। আমি কিন্তু দেখেছি।
ইরিন নীলের কথা শুনে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।তারপর হাসতে হাসতে বললো,” ওটা তো আমার ভাই ”
নীল চোখ ছোটো ছোটো করে বললো,” কেমন ভাই?”
ইরিনঃ আমার আপন বড় ভাই!…
ইরিনের কথা শুনে নীলের মন চাচ্ছে নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় মারতে।ওই ছেলে ইরিনের ভাই আর ও কিনা কতো কিছু ভেবে রেখেছে ওদের নিয়ে।
ইরিনঃ ফুচকা খাবেন?

নীলঃ কখনো খাইনি।তবে আজ খাওয়া যায়!
ইরিন মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো ফুচকা আনতে।
ইরিনঃ মামা দুই প্লেট ফুচকা দেন তো।
ফুচকাওয়ালাঃ মামুনি ঝাল কেমন দিমু?
ইরিন শয়তানী হাসি দিয়ে বললো, ” একটায় প্রচুর ঝাল দেন।আরেকটায় মিডিয়াম।”
ইরিন মুচকি হেসে ফুচকার প্লেট নীলের হাতে দিলো।

নীল একটা ফুচকা মুখে দিয়েই মুখ লাল হয়ে গেলো।চোখ বন্ধ করে আছে।
ইরিন অবাক হয়ে গেলো নীলের মুখ দেখে।
নীলের মনে হচ্ছে কান দিয়ে গরম ধুঁয়া বের হচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। নীল ঝাল একদম খেতে পারে না৷
ইরিন নীলের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।দৌড়ে গিয়ে পানি নিয়ে আসে।কিন্তু নীল এর আগেই চলে যায়। পানি নিয়ে এসে ইরিন কাউকে পায় না। সে হাটু ভেঙে বসে কান্না করে দেয়। সে কি নিজের অজান্তেই ছেলেটাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললো।

বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করে চলেছে আদিবা। শরীরে বিভিন্ন জায়গায় মারের দাগ।ব্যথায় শরীর নারাতেও পারছে না। কিন্তু ঠিকি শুনতে পাচ্ছে বাহির থেকে ওর মামির অশ্রাব্য গালাগালির আওয়াজ।আজ দেরি করে বাসায় ফেরার কারনে ওর মামি ওকে খুব মেরেছে।

(আজ যখন কিস করার পর ছেলেটা ওর দিকে ফিরে আবিরকে দেখেই ভয়ে ও জ্ঞান হারায়, এমনিতেই শরীর খুব দুর্বল ছিলো তার উপর এতোটা ভয় নিতে পারেনি জ্ঞান হারায়।তারপর যখন জ্ঞান ফিরে নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করে। সামনে আবিরকে দেখেই বুঝতে পারে ওকে আবির নিয়ে এসেছে।ও উঠতে নিলে,
আবিরঃ আপনার শরীর তো খুব দুর্বল উঠবেন না শুয়ে থাকুন!

” আদিবা জানতে চায় কয়টা বাজে?”
আবিরঃ এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আপনি এতোক্ষন ঘুমিয়ে ছিলেন।
আদিবাঃ কিইইইই!! আমি এতো সময় ঘুমিয়েছি!! ডাক দিলেন না কেনো?
আবিরঃ আপনার শরীর প্রচুর দুর্বল ছিলো। তাই ঘুমের ওষুধ দিয়ে ছিলো। আপনার বাসার ঠিকানা বলুন! না হলে নাম্বার দিন। ফোন দিয়ে বলি আসার জন্য।
আদিবা ভাবছে উনি কি ভুলে গেলেন নাকি, আমি যে উনার গালে ছি!ছি!ছি নিশ্চয়ই আমাকে নির্লজ্জ মেয়ে ভাববেন উনি।
আবিরঃ কি হলো নাম্বার দেন?

আদিবাঃ ধন্যবাদ ভাইয়া আমাকে সাহায্য করার জন্য। হসপিটাল বিল কতো এসেছে বলেন? আমি এখন বাসায় যাবো!
আবিরঃ আরে আপনি তো অসুস্থ একা যেতে পারবেন না। আর হসপিটাল বিল আমি দিয়ে এসেছি!
আদিবা কাঠকাঠ কন্ঠে বলে উঠলো, ” আপনি কেনো দিবেন? কারো করুনা আমার পছন্দ না।”
আবিরঃ আমি আপনাকে করুনা কেনো করবো। এখন তো আপনার কাছে টাকা নেই।কোথায় থেকে দিবেন। আর আপনাকে বলছি নাম্বার দিতে তাও দিচ্ছেন না।

আদিবা লজ্জা পেয়ে গেলো, আসলেই তো সাথে তো এক টাকা ও নেই।
আদিবাঃ আমি আপনার টাকা ফিরিয়ে দেবো!! এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে।
আবিরঃ হুম সাবধানে যাবেন।আর রাস্তার মধ্যে যাকে তাকে কিস করবেন না! সবাই আমার মতো না!…
আদিবা লজ্জায় তারাহুরো করে বের হতে গিয়ে পরে যেতে নেয়। আবির আগলে নেয় ওকে। আদিবার মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই থমকে যাক।সারাজীবন আবির ওকে এভাবে আগলে নিক।এই জাহান্নাম জীবন থেকে মুক্তি দিক।
বাসায় ঢুকেই বুঝতে পারলো ওর মামি খুব রেগে আছে।ওর সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো কোথায় ছিলো। ভার্সিটি তো অনেক আগেই ছুটি তাহলে এতোক্ষন কার সাথে ছিলো।

আদিবা ভয়ে চুপ করে আছে।
আদিবাকে চুপ করে থাকতে দেখে ওর মামি আকটা লাঠি নিয়ে আসে আর ওকে ইচ্ছে মতো মারতে থাকে।আদিবা তাও চুপ করে থাকে।মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ ও বের করে না।মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে বলেন, ” আজ তোর মামু আসুক, আজ যদি তোর বিচার না করে। আমি বাপের বাড়ি চলে যামু। এই বাড়িতে তুই থাকবি না হলে আমি।)
আদিবা এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে। আর মা-বাবার নামে হাজারো অভিযোগ আল্লাহর কাছে বলছে।

রুহিঃ কেনো আদি কেনো এমন করছো তুমি?আগে তো এমন ছিলে না! তুমি আমাকে এভয়েড করছো।তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না!?
আদিঃদেখো রুহি ঝামেলা করো না।
রুহিঃ কিইই!! আমি ঝামেলা করছি নাকি তুমি? সব সমস্যার মূল ও নূর তাই না!!?
আদিঃ আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। যত তোমাকে দেখছি। তুমি না ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমাদের মতো কিছু মেয়ের কারনেই মানুষ বেস্ট ফ্রেন্ড নামক বন্ধন টাকে এতো ঘৃণা করে।

রুহিঃ ভালো মানুষি একদম দেখাবে না! তুমি নিজে কি? আমি না হয় বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি আর তুমি! তুমি তো প্রেমিক ছিলে কেনো ঠকালে? কেনো ওর বিশ্বাস নিয়ে খেললে? ওকে রেখে ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের দিকে কেনো নজর দিলে?ওর থেকে মন উঠে গিয়ে ছিলো বুঝি, পুরাতন হয়ে গিয়ে ছিলো আর আজ সেই মেয়েই আবার রসগোল্লা হয়ে গেলো।আমি এখন আবার আমি পুরাতন হয়ে গেয়েছি।

আদিঃ নূরের প্রতি তোমার এতো কিসের রাগ?
রুহিঃ ওর প্রতি আমার কোনো রাগ না, ঘৃণা হয় আমার ঘৃণা। ওর কারনে আমি সব হারিয়েছি!! সব!!ওকে আমি ছাড়বো না..
আদিঃ ওর কিছু করলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো না!!

নূর ভয়ে ভয়ে পিছন ফিরে দেখলো রুদ্র রাগি মুডে তাকিয়ে আছে,( ওদের বাসায় নিয়ম, সন্ধ্যার পরে কোনো মেয়ে একা বাসা থেকে বের হতে পারবে না। এটা ওর বড় আব্বুর নিয়ম।).
আচমকাই নূর দৌড়ে গিয়ে রুদ্রের হাত ধরে বললো,” প্লিজ ভাইয়া বড় আব্বুকে বলবেন না। আমি আপনাকে দুইটা চকলেট কিনে দেবো!! আমার নাতি-নাতনীদের নানা বানাবো!! রুদ্রকে দেখে ভয়ে কি বলতে গিয়ে কি বলছে সে নিজেও হয়তো জানে না!!

রুদ্র বললো,” সত্যি নানা বানাবে তো!?
নূরঃ হ্যাঁ পাক্কা সত্যি, তাও বইলেন না!
রুদ্র হেসে বললো,” আবার ভেবে বলো”?
নূর আবার বলতে গিয়ে থেমে গেলো। যখন বুঝলো ও কি বলেছে।লজ্জায় এক দৌড়ে বাসার মধ্যে চলে গেলো।
রুদ্র এখনো ওখানে দাঁড়িয়ে হাসছে।

মাহি হা করে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। ভালো করে চোখগুলো কচলে আবার সামনে তাকালো।তাও তো ফায়াজ কে দেখছে। খাট থেকে নেমে ফায়াজের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর হাত বাড়িয়ে ফায়াজের হাতের উপর হাত রেখে দিলো এক চিমটি। ব্যথায় ফায়াজ” আহহহ” বলে উঠলো।
মাহিঃ তার মানে আপনি সত্যি আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন!?

ফায়াজঃ কেনো আমাকে কি তোমার স্বপ্ন মনে হচ্ছে।? তুমি কি এর আগে আমাকে স্বপ্নে দেখেছো নাকি? আমি জানি আমি দেখতে হ্যান্ডসাম একটা ছেলে৷ যে কোনো মেয়ে একবার দেখলেই দ্বিতীয় বার স্বপ্নে দেখা শুরু করে।
মাহি হা করে তাকিয়ে ভাবছে,” একটা মানুষ কিভাবে নিজের প্রসংশা নিজে করতে পারে৷ এই ছেলেকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না। আবার মাথায় আসলো এই ছেলে এখানে কি করছে?

শুভ্রতা নিজের খাট গোছাচ্ছে এমন সময় পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলো কেউ।
শুভ্রতা বলে উঠলো, ” এই ছাড়েন বলছি! ধরবেন না আমাকে।আমি কে? আমার কথার কি কোনো দাম আছে আপনার কাছে?

জিসান শুভ্রতাকে না ছেড়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘারে থুঁতনি রেখে বললো,” আমার লক্ষি বউটা কি আমার উপর রাগ করেছে?আমার বউটা তো অবুঝ নয় সে তো বুঝে তার বরের কতো কাজ। কাজ শেষ না করে বাসায় আসি কিভাবে।
শুভ্রতাঃ কাজ!কাজ! কাজ, আপনার কাছে কাজ টাই বড়।আমি যে বলে ছিলাম আজ একটু ঘুরতে যাবো।বিয়ের পর কোনো দিন আমাকে নিয়ে আপনি কোথাও গিয়েছেন?যখনি বলি আপনার শুধু কাজ।

জিসানঃ আজকে অপরাধের পাল্লাটা কি বেশি হয়ে গেছে।দেখো আসার সময় তোমার জন্য চকলেট নিয়ে এসেছি।
না শুভ্রতা তাও ফিরে তাকালো না। কত সখ করে শাড়ি পরে ছিলো সেজে ছিলো। ঘুরতে যাবে বলে কিন্তু তার স্বামী কি করলো।ওর সব আশায় পানি ঢেলে দিলো।

জিসানঃ কাল নিয়ে যাবো প্রমিজ। এবার তো ফিরো লক্ষি বউ আমার।
শুভ্রতাঃ এটা তো আপনি প্রতি রাতেই বলেন। দিন হলে তো আপনার ছায়াও দেখা যায় না।
জিসানঃ সরি বউ,এই দেকো কানে ধরলাম আর এমন হবে না।
জিসানের কানে ধরবার স্টাইল দেখে শুভ্রতা ফিক করে হেসে দিলো।
জিসানঃ নাও এবার একটু জড়িয়ে ধরো।

এই অবেলায় তুমি পর্ব ১১

মাহিঃ আপনি এখানে কি করছেন? বাসা চিনলেন কিভাবে?
ফায়াজ কিছু বলবে তার আগেই নূর দৌড়ে মাহির রুমে ঢুকতে নিয়ে ফায়াজের সাথে ধাক্কা খায়। ফায়াজ তাল সামলাতে না পেরে গিয়ে পরে মাহির উপর।
নূরঃ একি আপু তুই বয়ফ্রেন্ড নিয়ে বাসায় চলে আসছোস!!!??

এই অবেলায় তুমি পর্ব ১৩