এই শহরের পাখিগুলো ডানা মেলে উড়তে জানেনা গল্পের লিংক

এই শহরের পাখিগুলো ডানা মেলে উড়তে জানেনা পর্ব ১
লেখিকাঃ তামান্না

পাচঁতারকা হোটেলটির রুম থেকে নিজের স্বামীকে অন‍্য নারীর সঙ্গে হাতে নাতে ধরেছে মেহরিন! চোখে তার অজস্র পানি, অনেকদিন ধরে মেহরিন অসুস্থ , তাই হয়তো আকাশ নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি, পুরুষ মানুষ কতই বা সহ‍্য করতে পারে। অফিস থাকাকালীন কলিগ রাশেদ বললো আপা ভাইকে দেখলাম একটা হোটেলে একটা মেয়ের সাথে… যদিও বা ছেলেটি আমতা আমতা করছিল বলতে তারপর ও মেহরিন বুঝেগেল ব‍্যাপার টা ঠিক কি হতে পারে।লোকেশন নিয়ে চলে এলো সাথে সাথে। আকাশের শার্টের কলার হাতের মুঠোয় ধরে বলল-

” ও কে আকাশ?
এই মেয়েটাকে নিয়ে তুমি তাহলে এখন হোটেলে আসো?
ছি! ছি! এত নোংরা মন তোমার! ”
আকাশ-” মেহরিন তুমি আসলে..”
মেহরিন-” আসলে নকলে কিছু বুঝতে চাইনা,তোমরা এখানে কিসের জন‍্য এসেছো তা আমাকে পুরোপুরি ভাবে বলো!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আকাশ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে, মেহরিন এবার আকাশের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল –
“এই জন‍্য বাচ্চা এবোরর্শন করাইতে চাইছিলা। তোমরা মা ছেলে যুক্তি করে এটা করছিলা! আমার টাকা দেখে আমাকে ঘরের বউ করে আমার পিঠ পিছনে অন‍্য নারী নিয়ে হোটেলে রঙ্গ তামাশা করতে আসো। আর তোমার মা সেখানে আমাকে দিনরাত কথা শুনিয়ে আমার টাকায় সব করে মেয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় সব। এবার আরো চিৎকার করে বলে উঠলো –

“খুব ভালো প্ল‍্যান করছো তোমরা।”
আকাশ অপরাধীর মত মাথা নিচু করে রাখলেও এবার আর সহ‍্য করলো না। আশেপাশের লোকজন চেয়ে আছে। একেতো মেয়েটাকে নিয়ে এসে একটু একান্তে সময় কাটাবে তাতে বাধা পরলো। এখন আবার মানুষ নাচানাচি, আর হাসি তামাশা। আকাশ মেহরিনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।মেহরিন হোটেলের বারান্দার রেলিংয়ের কাছে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে পরেগেল।মেহরিনের কপাল ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এটাই তো ছিল কপালে! যেখানে নিজের স্বামী পরনারীতে আসক্ত, সংসার থেকেও না থাকার মত।

এমনই তো হওয়ার কথা!”
মেহরিন উঠে দাড়ালো,আশেপাশে অনেক লোক জোড়ো হয়েছে। লোকগুলোর সামনে নিজের লেডিস ব‍্যাগ নিয়ে মেয়েটির মুখে টাকা ছুড়ে মারলো।
ভরা লোকসভায় চিৎকার করে বলল-

“পতিতাবৃত্তিতে যখন নেমেছিস তাহলে কিছুতো পেতেই হবে তাইনা। আচ্ছা আকাশ তো কৃপণ মানুষ, যার হাতে নিজের স্ত্রীকে সময় দিতেই সামান‍্য সময় থাকতো না সে তোকে নিশ্চয় তেমন ভালো পরিমাণ পেমেন্ট দিতে পারেনা। নে ধর, আজ আমি তোকে এত টাকা দিলাম। এমনিতে হোটেলের লোকজন তোকে চিনে ফেলেছে। এদের মধ‍্যে আবার যখন কাউকে ধরবি নিশ্চয় আরো বেশি পেমেন্ট পাবি। আমার ব‍্যাগে এতটুকুই ছিল। নাহলে আমি তোকে আরো অনেক টাকা দিতাম। খদ্দের হিসেবে আজ তুই এই পেমেন্ট টা আমার কাছ থেকে নে। মেয়েটির আরেকটু সামনে গিয়ে,- “তুই চাইলে এর থেকে বড় ক্লাইন্ট যোগাড় করে দিতে পারি।”

মেয়েটি লজ্জায় মুখে শাড়ির আচঁল দিয়ে ঢেকে ফেলেছে। আশেপাশের মানুষগুলো কেমন করে তার দিকে চেয়ে আছে। ছি! ছি! এতদিন আসলেও আজ এই গঠনায় তার সমস্ত শরীর কেমন কাটা দিয়ে উঠছে। এমন বিশ্রী আর দম বন্ধ কর অবস্থা সে আর পরেনি। আকাশের সঙ্গে সম্পর্ক তার বিয়ের আগেই ছিল। মামাতো ভাই আকাশকে সব সময় চাইতো একরকম পাগল পাগল যাকে বলে। মেহরিনের সঙ্গে বিয়ের পর সব শেষ হয়ে যায়। দুবছরের সংসারে আকাশ কখনোই মেহরিনকে তেমন কেয়ার করতো না বিয়ের একবছর না ফুরাতেই আকাশ শীলাকে নিয়ে মেতে উঠে। মেহরিন ছিল আকাশের তুরুপের তাস! মেহরিন ব‍্যাংকার ভালো মাইনে পায়। সঙ্গে বিভিন্ন রকমের সংস্থায় উঠাবসা আছে। মেহরিনের মেধার কারনে চাকরি ও যেন তার হাতের মুঠোয়। তাই আকাশ তাকে বিয়ে করেছে। আকাশ মেহরিনকে ধমক দিয়ে উঠলো –

“মেহরিন আমার কিন্তু সহ‍্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে!”
মেহরিন -” তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না, এতদিন পরে পরে মার খেলেও এখন আমার কিচ্ছু আসে যায় না। এতদিন কটু কথা শুনে আসলেও এখন আমার কিচ্ছু আসে যায় না! যেখানে স্বামীই স্বামীর যায়গায় নেই বেহায়া নর্দমার কীট, পশু হয়েগেছে এরকম স্বামী থাকার থেকে না থাকা ভালো। বিধবা হলেও সম্মান নিয়ে বাচঁতে পারবো। যে পুরুষ নিজের সন্তানকে হত‍্যা করতে পারে সংসার ধর্ম ফেলে রাতের পর রাত বাইরে ফষ্টি- নষ্টি করতে পারে তাকে আমার চাই না। কালকের মধ‍্যে ডিবোর্স লেটার পেয়ে যাবেন আপনি!”

আকাশের মধ‍্যে কোন অনুভূতিই যেন প্রকাশ পেলো না।
সে এখন রাগে থরথর করে কাপছে। তার সামনে দাড়ানো ফুফাতো বোন শীলা মুখে কাপড় পেচিয়েহোটেল থেকে লোকেদের আড়ালে বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করছে।
মেহরিন চোখের পানি মুছে হোটেল থেকে বেরিয়ে পরলো। আজ আর তার পিছুটান নেই, যে সংসার সে আগলে রাখতে চেয়েছিল সেই সংসার আগেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। শুধু তার জন‍্য কিছুটা জোড় ছিল এই সম্পর্কের আজ সেটাও শেষ করে দিয়েছে সে।

এখনো মনে পরে আকাশের কুকির্তির কথা। প্রথম বাচ্চাটা আসার পর জোর করে এবোরর্শন করিয়েছে। কেরিয়ার নাকি নষ্ট হবে, দিত্বীয় বার আবার একই প্রসঙ্গ টেনে জোর করিয়ে বাচ্চা নষ্ট করিয়েছে। ছয়মাস সে একটা ঘোরের মধ‍্যে কাটিয়েছে। কোনদিন তাকে প্রশ্ন করেনি কেমন আছে সে। দুটো বাচ্চা, দুটো নিষ্পাপ প্রাণ কি করে শেষ করতে পারে কেউ এমন করে? মেহরিন ভাবতে ভাবতে সিএনজি থেকে নেমে গিয়েছে।

অন‍্যদিকে আকাশের মা হায় হায় করতে করতে প্রায় দুবার মূর্ছা গেছেন। তার সোনার হরিণ হাতছাড়া হয়েগেল। মেয়েটা তার বাবার বাড়ি থেকে কম সম্পত্তি পেতো না প্রায় এক কোটি তো পেতো! আর তার ছেলে সব শেষ করে দিলো! এই ছেলের জন‍্যই তো পাচঁতলা বাড়ি এখন বন্দক! এই ছেলের জন‍্যই তো মেয়েটাকে তিনি নিয়ে এসেছেন। মেয়ে ও তার কাছে এসে পরে থাকে নিজের যত স্বাদ আহ্লাদ মায়ের কাছে এসে মেটায়। মেয়ের যৌতুক আর ছেলের উগ্র চালচলনে বাড়ি তার আগেই শেষ। একমাত্র সম্বল ছিল ঐ মেয়েটা ওকেও ছেলেটা থাকতে দিলো না।

বাড়ির চৌকাঠে পা দেওয়ার সাথে সাথে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো তার। শরীরটা বড্ড দৃর্বল! দরজা খুলতেই মা তাকে দেখে চমকে উঠলো।
– “কিরে তুই হঠাৎ! ”
– “আসতে পারি না?”
– “হ‍্যা, কিন্তু এমন ভাবে না জানিয়ে এলি!”
-” ঝড় কি বলে আসে মা? ঝড় তো যখন তখন তান্ডব নৃত‍্য চালিয়ে আসে।”
মেহরিনের মা, মেয়ের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেন না। মেয়ের মুখে হাত দিয়ে বলে উঠলেন –
“এই তুই অসুস্থ নাকি?

চোখমুখ কেমন ফোলা ফোলা কেদেছিস তুই? মেহরিন কি হয়েছে তোর?”
মেহরিন দৌড়ে তার রুমে চলেগেল। ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। অসহ‍্য লাগছে তার, মনে হচ্ছে বিষ! বিষ খেয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়, আরেকবার মনে হয়

শরীর টাকে আগুনে ঝলসে পুড়িয়ে দিলে মনে হয় জ্বালাটা কিছুটা কমতো। কেন এত কষ্ট? স্বামীর সঙ্গে পরনারী দেখায় কেন এত কষ্ট? এত কষ্ট করে নিজের স্বপ্ন দিয়ে গড়া সংসার অন‍্য আরেকজন কেড়ে নিচ্ছে। সেখানে তো সে জোড় গলায় অনেক কথাই শুনিয়ে এলো। কিন্তু কিভাবে সে এসব সহ‍্য করবে?কিভাবে সে সহ‍্য করবে?মাথা যেন তারা চরম ভাবে খারাপ হয়েগেছে। হাতের কাছে কিছু খুজতে খুজতে নজর পরলো টেবিলে রাখা ছুড়ি!..
বাহির থেকে দরজা যেন একদম ভেঙ্গে ফেলবে।
মার সাথে তাল মিলিয়ে ভাই, বাবা, ভাবী ও যেন ডেকে সারা হয়েগেলেন।

এই শহরের পাখিগুলো ডানা মেলে উড়তে জানেনা পর্ব ২