এই শহর আমার পর্ব ১৬ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

এই শহর আমার পর্ব ১৬
Suraiya Aayat

মুগ্ধতা পড়ার টেবিলে বসে আচ্ছে , স্পর্শর দিকে তাকাচ্ছে আর কেবল একটা এটা করে বইয়ের পাতা উল্টেই যাচ্ছে, পড়াশোনা নামক জিনিসটার সাথে এই মুহূর্তে আর সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না ৷ রাত 1টা বাজে, স্পর্শ ফিরেছে 11.30টাই তারপর ওর সাথে কোনরকম কোন কথা না বলেই ঘুমিয়ে পড়েছে ৷
নাহ , এভাবে আর পারা যাই না ৷ মুগ্ধতা বইটা বন্ধ করে ধীর পায়ে স্পর্শর পাশে গিয়ে বসলো ৷ স্পর্শ পাশ ফিরে শুয়ে আছে ৷

মুগ্ধতা অনেকখন ধরে বসেই আছে, স্পর্শর দিক থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই, ও খুব ভালো করেই জানে যে স্পর্শ এখনো ঘুমাইনি , যতখন না মুগ্ধতা ঘুমায় ততখন স্পর্শ জেগেই থাকতো ৷ বিয়ের আগেও মুগ্ধতা ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্পর্শ রোজ ফোন করতো, মুগ্ধতা ঘুমালে ও ঘুমাতো ৷
স্পর্শর আভিমানের পরিমানটা কি এতোটাই বেশি যে একবার পাশ ফিরে মুগ্ধতার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকে বুকে জড়িয়ে নেওয়া যাই না ৷

মুগ্ধতার চাপা কান্না আসছে, নিমেষেই ফুপিয়ে কেঁদে ফেলতে পারে ৷
মুগ্ধতা এবার সাইড থেকে স্পর্শর গায়ের ওপর মাথা দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো ৷ চোখের জলগুলোকে আর আটকানো গেল না, স্পর্শর শার্ট ভেজাচ্ছে মুগ্ধতার চোখের জল ৷
মুগ্ধতা বলতে শুরু করলো

” আমার ডিক্সনারিতে থাকা প্রতিটি শব্দের অর্থগুলো বড্ড জটিল, পেরে উঠি না আমি এত কঠিন কঠিন জিনিস গুলোকে মানিয়ে নিতে , বড্ড অসহ্য লাগে আর অবশেষে একসময় ক্লান্ত হয়ে যাই ৷ সেই অর্থে বলতে গেলে ভালোবাসা , ম্যাচিওরিটির সংজ্ঞাগুলোও ভুল ৷ এতোদিন ভাবতাম যে মুখে প্রকাশ না করলে ভালোবাসা যাই না, রাগ আভিমান না দেখালে ম্যাচিওরিটি প্রকাশ পাই না , কিন্তু আমার ধারনাকে বারবার ভুল প্রমানিত করেন আপনি ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সত্তি বলতে ভাবলেও ভালো লাগে যে প্রকাশ্যে কেউ একজন আমাকে ভালো না বাসলেও আড়ালে ভালোবাসে, হয়তো সে আর পাঁচ জনের মতো তার ভালোবাসাটাকে প্রকাশ করে পারে না হয়তোবা প্রকাশ করতে চাই কিন্তু ভালো তো বাসে , আমার এই বেখেয়ালি স্বভাবগুলোকে ভালোবাসে যেগুলোকে সহ্য করার ক্ষমতা আল্লাহ কেবলমাত্র তাকেই দিয়েছেন ৷ আর সেই মানুষটা হলো আমার পিংকিশ বান্দর মানে আপনি ৷আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো আমার প্রতি বিরক্ত হয়ে হয়তো আমাকে ছেড়ে চলেই যেতো ৷ কথায় বলে স্বামী স্ত্রী হলো একে অপরের পরিপূরক , কথাটা সেই অর্থে আমার কাছে বেশি গ্রহনযোগ্যতা লাভ করেনি কারন আপনি আমার আদর্শ পরিপূরক কিন্তু আমি হয়তো সেই দায়িত্বটা পালন করতে অক্ষম ৷

আপনাকে এখন যদি বলি যে আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি তাহলে সেটা হয়তো বড্ড হাস্যকর হবে ৷ভালোবাসি শব্দটা শুনতে ছোট হলেও অর্থটা বৃহৎ , কেউ বা নিমেষেই বলে দেই আবার কেউ আবার সারাজীবনেও তা বলতে পারে না , ভালোবাসি শব্দটা আজকাল বড্ড সস্তার একটা শব্দে পরিনত হয়েছে, যার গাম্ভীর্যটা যেন আর আগের মতো নেই ৷ বছরের পর বছর ভালোবাসি শব্দটা বলা সহজ কিন্তু ভালোবেসে যাওয়াটা বড্ড কঠিন ৷

আপনি হলেন আমার জীবনে এমন একজন যাকে আমি অন্য কোন তৃতীয় ব্যাক্তির সাথে যুক্ত করার কল্পনাও করতে পারি না, নিজেকে বড্ড স্বার্থপর করে তার থেকে আপনাকে ছিনিয়ে নিতে ইচ্ছা করে ৷ তবে এটা ভাববেন না যে সুইসাইড করার মতো ভুলটা আমি আর কখনো করবো, শেষবার যখন 7 টা হজমের ওষুধকে ঘুমের ওষুধ ভেবে খেয়েছিলাম তখনই জীবনের আসল অর্থটা বুঝেছিলাম, সবচেয়ে বেশি জেকে বসেছিলো আপনাকে হারানোর যন্ত্রনাটা ৷ যাকে পাওয়ার জন্যই আমি সেগুলো খেয়েছিলাম তাকেই তো আমি আর কখনো পাবো না মরে গেলে, সেখানেই তো আমার জীবনটা শেষ, কিছুই রইলো না আর ৷ বাঁচার জন্য ছটফট করছিলাম ৷ মানুষের হয়ত মরার আগের মুহূর্তটাতেই তাদের বাঁচার ইচ্ছাটা বেড়ে যাই,তারাও হয়তো ভাবে ” ইশশ্ ভুল করে ফেলেছি, বেঁচে থাকলে মন্দ হতো না ৷ আচ্ছা আমার কি আর কোন সুযোগ নেই বেঁচে ওঠার !”

যতদিন আমি আছি প্লিজ আমি ছাড়া অন্য কাউকে নিজের জীবনে আনবেন না তাহলে আমার বাঁচার ইচ্ছাটা শেষ হয়ে যাবে ৷ আমি আর সকলের চোখে ম্যাচিওর হতে চাই কিন্তু আপনার চোখে না, কারন আমার এমন পাগলামো, উদ্ভট ব্যাবহার শুধু আপনার জন্য আর কারোর জন্য নয় ৷ আপনার হৃদয়ের শহর জুড়ে থাকবে শুধু আমারই বসবাস, আর যেখান থেকে আমি চিৎকার করে সারা পৃথিবীকে জানতে পারবো #এই_শহর_আমার ৷”
কথাটা বলে মুগ্ধতা থেমে গেল , চোখ থেকে নোনা জল গুলো এখনো বড্ড বেহায়ার মতো ঝরে পড়ছে ,থামার নাম নিচ্ছেনা ৷

মুগ্ধতা স্পর্শর শার্টটা খামচি মেরে ধরলো ৷ মানুষটাকে ও হারাতে চাইনা , নিজের করে রাখতে চাই ৷
স্পর্শ একটা মলিন হেসে মুগ্ধতার দিকে ফিরে ওকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে চুপটি করে শুয়ে রইলো ৷ আবেগে মুগ্ধতার কান্নার বেগ বেড়ে গেল, স্পর্শ মুগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরে মুগ্ধতার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

” ভালোবাসা জিনিসটা বলে বলে হাজার বিশ জনকে জানানোর মতো এটা সাধারন শব্দ নয় ৷ আমি নিস্তব্দে ভালোবাসি, প্রকাশ করা খুব সহজ একটা বিষয় কিন্তু আমি প্রকাশ করি না, খালি মনে হয় এই বুঝি ভালোবাসা ফুরিয়ে গেল, সে বুঝি দ্বীতীয়বার আর ” ভালোবাসি ” শব্দটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে আর চেয়ে থাকবে না , অপেক্ষা করবে না আগের মতো আগ্রহ নিয়ে শোনার জন্য , আগের মতো ছটফটানি আর থাকবেনা শুধুমাত্র আমি তাকে ভালোবাসি এই কথাটা শোনার জন্য ৷ তাই এতদিন আমি তোমাকে কখনো বলিনি ৷ আমি বলিনা মানে এটা নয় যে ভালোবাসি না, করলাম না প্রকাশ, সমস্যা কোথায় ?”

মুগ্ধতা কিছু বলতে যাবে তখনই স্পর্শ হালকা কন্ঠে বলল
” নো মোর ওয়ার্ডস , ঘুমাও, আমি ভীষন টায়ার্ড ৷”
মুগ্ধতাও শান্ত হয়ে রইলো ৷ রোজা ঠিকই বলে , স্বামী নামক মানুষটা হলো একটা বড় আর অদ্ভুত রকমের প্রাপ্তি যার প্রতি আসবেনা কখনো কোন বিতৃষ্ণা ৷

দেখতে দেখতে আজ মুগ্ধতার লাস্ট এক্সাম ৷ এই কদিনে রাতের ঘুম হারম করে দিনরাত এক করে পড়াশোনা করেছে ৷ স্পর্শ রাত 3 টে অবধি মুগ্ধতার সাথে জেগে থাকতো , আবার সকালে 8টার মধ্যে হসপিটাল যেতো ,তারপর 6টার মধ্যে বাসায় এসে আবার মুগ্ধতাকে নিয়ে পড়তে বসতো ৷ পড়াশোনার মাঝে থেকে ওর জীবন অতিষ্ট ৷ আজকে হসপিটাল থেকে স্পর্শ তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়েছে , মুগ্ধতার এক্সাম শেষ হলে আজকে ও মুগ্ধতাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে ৷
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো 4.28 ৷ 4.30 তে এক্সাম শেষ ৷ অবশেষে কিছুখন পর এক্সাম শেষ হতেই সবাই আসতে আসতে বার হয়ে আসতে লাগলো , কিন্তু মুগ্ধতাও আসছে না আর না আসছে শুভ্রতা ৷ স্পর্শ গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার সামনে দাঁড়ালো ৷ নাহ এখনো মুগ্ধতা আসছে না দেখে স্পর্শ কলেজে ঢুকতে গেলেই দেখলো ওরা দুজন বার হয়ে আসছে , মুগ্ধতা আর শুভ্রতা দুজনের হাতেই একটা করে কার্ড ৷ স্পর্শ এ নিয়ে বেশি ভাবলো না, মুগ্ধতা এসে তো ওকে সবটাবলবে সেই জন্যই ৷

এই শহর আমার পর্ব ১৫

মুগ্ধতা খুশি খুশি মুখ করে স্পর্শর দিকে তাকিয়ে বলল
” হাই হ্যান্ডসাম ৷ কি চলে ?”( দাঁত বর করে হেসে)
স্পর্শ অবাক হয়ে বলল
” ডাল মে কুছ কালা হে ৷ কি হয়েছে বলো ! এক্সাম কি খুব ভালো হয়েছে নাকি খুব খারাপ !”
মুগ্ধতা আর শুভ্রতা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল ৷
স্পর্শ জহুরীর মতো তাকিয়ে বলল
” ঘাপলাটা কি ! নতুন করে কোন সয়তানি করোনি তো মুগ্ধ !”
শুভ্রতা হাসি থামিয়ে বলল

” ভাইয়া এই নিন বিয়ের দাওয়াত , বিয়েতে আসবেন কিন্তু ৷”
স্পর্শ কার্ডটা হাতে নিতেই বলল
” এটা হলো নীতু কুটনির বিয়ের কার্ড ‌৷”
অথঅটা বলে আবার হসলো ৷
স্পর্শ রগী চোখে তাকিয়ে বলল
” মুগ্ধ ! এভাবে কেউ বলে ?”
মুগ্ধতা আরো হেসে বলল
” ওঅঊ নীতু কুটনি ম্যাক্স প্রো ৷ ” এবার শান্তি!”
স্পর্শ কার্ডের লেখা পড়ে বলল
” বাহ এটা তো গুড নিউ ৷ কংগ্রেটস হার ৷”
মুগ্ধতা মুখ ভঙচি দিয়ে বললো
” ফাইনালি আপদ বিদায় হচ্ছে ৷ ইতনি খুশি ৷”
শুভ্রতা আর মুগ্ধতা হাসতে লাগলো ৷ স্পর্শ গাড়ি স্টার্ট দিলো ৷

এই শহর আমার পর্ব ১৭