এই শহর আমার পর্ব ১৭ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

এই শহর আমার পর্ব ১৭
Suraiya Aayat

স্পর্শ ল্যাপটপের দিকে একমনে তাকিয়ে কাজ করছে আর মুগ্ধতা স্পর্শর দিকে তাকিয়ে আছে ৷স্পর্শ কাজ করতে করতে বলল
” এভাবে তাকিয়ে নজর দিচ্ছো তাও নিজের জামাই এর ওপর !”
মুগ্ধতা হো হো করে হেসে স্পর্শকে বলল
” চলুন না আমরাও আবার বিয়ে করি, নীতু কুটনির ও বিয়ে হচ্ছে, শুধু আমাদেরই হলো না ৷ আমি কতো আনলাকি?৷”
স্পর্শ ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলল

” তো মিস ফারহাত মুগ্ধতা আপনি আবার বিয়ে করতে চান ? কিন্তু কাকে ? কে সেই ভাগ্যবান থুড়ি কে সেই হতভাগা তার নামটা জানতে আর শুনতে চাই ৷”
মুগ্ধতা রেগে ওর হাতের কাছে থাকা বালিশটা এবার ছুড়ে ফেলে বিছানা থেকে নেমে বলল
” করতে হবে না আপনার বিয়ে ,আমি একাই বিয়ে করবো হু ৷”
স্পর্শ বাকা চোখে তাকিয়ে বলল
” একা বিয়ে করবে ! কীভাবে ? আমাকেও বলো তাইলে আমিও একটু ট্রাই করবো ৷”
মুগ্ধতা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল
” হাহ ! আপনাকে বলবো না , এই না বললেন বিয়ে করবেন না ৷ আপনাকে এসব বলাই বেকার?৷”
মুগ্ধতা রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ স্পর্শ হাসতে হাসতে বলল
” নতুন করে আবার বিয়ে করাই যাই, পিংকিশ নাগিন ভুল কিছু বলেনি ৷?”
স্পর্শ মুচকি হেসে ওর কাজে মন দিলো ৷

মুগ্ধতা সিড়ি দিয়ে নামছে আর রাগে গজগজ করছে ৷ হুঠহাঠ করে নামছে, হঠাৎই সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, আর এদিক ওদিক চাওয়াচায়ি করছে হয়তো কাউকে খুজছে ৷ মুগ্ধতা ছেলেটাকে দেখে পা পিছলে পড়ে গেল ৷ হঠাৎ হুড়মুড় করে নামার কারনে মেঝেতে ধপ করে পড়ায় বেশ আওয়াজ হলো, ছেলেটা মুগ্ধতার দিকে তাকালো ৷ মুগ্ধতার বেশি লাগেনি শুধু কনুইতে একটু ছিলে গেছে, আর স্পর্শ একবার তা দেখতে পেলে ওর গোষ্টি উদ্ধার করে দেবে কথা শোনাতে শোনাতে ৷ মুগ্ধতাও হঠাৎ পড়ে গিয়ে ছেলেটার দিকে বেকুব দৃষ্টিতে তাকালো ৷
ছেলেটা মুগ্ধতাকে ধরতে আসলেই মুগ্ধতা বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” ইটস ওকে ৷ আমি ঠিক আছি ৷”
” ম্যাম একটু দেখে তো নামবেন ৷”
মুগ্ধতা থতমত খেয়ে বলে উঠলো
” আরেহ না , লাগবে কেন আমি তো এভাবেই সিঁড়ি দিয়ে নামি তাই আমার লাগেনি ?৷”
ছেলেটা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
” মানে আপনি এভাবেই নামেন ?”
” হমম ৷”
” এভাবে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়তে পড়তে ?”
মুগ্ধতা এবার লজ্জা বোধ করছে , কিন্তু ছেলেটার সামনে আর বোকামো করা চলবে না তাই একটু ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল
” কেন নামতে পারি না বুঝি ! আমি এভাবেই নামি , আপনার কোন সমস্যা ৷”
ছেলেটা আবুলের মতো হয়ে বলল

” না না আমার কোন সমস্যা হতে যাবে কেন! আমি তো যাস্ট এমনি বললাম ৷ বাই দা ওয়ে sir .কি বাসাতে আছে ?”
” হমমম আছে, তবে আপনি কে , ঠিক চিনলাম না তো, ওনার ফ্রেন্ড?”
ছেলেটা কিছু বলতে যাবে তার আগে মুগ্ধতা বলল
” ওহ না না আপনি ফ্রেন্ড হবেন কেন ! ফ্রেন্ডরা কি sir বলে নাকি ?”
উনি একটু হেসে বললেন

” স্পর্শ sir এর সাথে একটু দরকার ছিলো, ওনাকে হসপিটাল পেলাম না তাই বসায় চলে এলাম ৷”
“আচ্ছা আপনি বসুন আমি ওনাকে ডেকে দিচ্ছি ৷”
মুগ্ধতা ওপরে গেল, গিয়ে জোরে ডাকতে লাগলো
” স্পর্শ , এই স্পর্শ তোর চ্যালা এসেছে দেখ , তোকে ডাকে ৷”
স্পর্শ মুগ্ধতার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল
” হোয়াট রাবিশ, কি বলছো এগুলো ,নাম ধরে ডাকছো কেন তুমি ?”
মুগ্ধতা মুখ বেকিয়ে বলল

” আপনি আমার কাজিন শুধু,বিয়ে করতে বললাম করেননি ৷বিয়ে করলে না হয় স্বামী স্বামী বলে আপনার কান ঝালাফালা করে দিতাম কিন্তু তা তো হবে না, তাই স্পর্শ ডেকেছি,এনি প্রবলেম ৷”
স্পর্শ বুঝতে পারলো মুগ্ধতা এখন ঝগড়া করার মুডে আছে তাই মুগ্ধতাকে আর বেশি কিছু না বলে বলল
” চ্যালা না কি বলছিলে যেন,হোয়াটএভার, তা কে এসেছে শুনি ?”
” আমি কি করে জানবো, দেখলাম একটা ছেলে এসেছে ,আরিপনাকে sir বলে ডাকছে ৷ যেমন আপনি তেমন আপনার চামচা ?৷”
স্পর্শ কিছু একটা ভেবে বলল

” হাইট ভালোই , চুলগুলো কোঁকড়ানো , চোখের মনি ঘন বাদামী, চেহারা সাদা ফরসা , আর ডান কাঁধে একটা ব্যাগ ঝোলানো রাইট ?”
মুগ্ধতা অবাক হয়ে বলল
” হমম ৷ বাট আপনি এত কিছু জানলেন কি করে ?”
স্পর্শ একটা চোখ মেরে নীচের দিকে ছুটলো ৷
মুগ্ধতা তো অবাক ৷

মুগ্ধতাও স্পর্শর পিছন পিছন গেল কী হচ্ছে তা বোঝার জন্য ৷ ওপর থেকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরেছে রীতিমতো কোলাকুলি করেছে স্পর্শ ,যেন অনেক বছর দেখা হলো ৷
মুগ্ধতা ওপর থেকে অবাক হয়ে দেখছে ওদের কান্ড কারখানা ৷ তাহলে কি এটা স্পর্শের কোন ফ্রেন্ড? যদি তাই হয় তাহলে মুগ্ধতা তো কখনো দেখেনি ছেলেটাকে , আর স্পর্শকেই বা sir বলার মানে কি?
স্পর্শ ছেলেটাকে ছেড়ে ওপরে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললো

” মুগ্ধ কাম ৷”
মুগ্ধতা অবাক হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গেলেই ছেলেটা বলে উঠলো
” এই ম্যাডাম আর যেন আপনার সিঁড়ি দিয়ে নামার সেই ইউনিক স্টাইলটা আমাকে আর দেখাবেন না প্লিজ, আমি রীতিমত শকড ৷”
স্পর্শ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল
“কেন কি হয়েছে? ”
ছেলেটা স্পর্শের কাঁধে হাত রেখে বলল

“আরে দোস্ত আর বলিস না ,আমি বাসায় ঢুকে এদিক ওদিক কে তাকায়ে তোকে খুজছিলাম কিন্তু তোকে কেন, কাওকেই দেখলাম না, তারপর এই পিচ্চি মেয়েটা সিঁড়ি দিয়ে নামছিল আর হঠাৎ আমাকে দেখে লাস্টের তিনটে সিঁড়ি থেকে হুড়মুড় করে গড়িয়ে পরল ফ্লোরে ৷ আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম যে উনার লাগেনি তো উনি তখন বললেন যে উনি নাকি এভাবেই সিঁড়ি থেকে নামেন সবসময় মানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ৷ স্ট্রেঞ্জ না?”
স্পর্শের কাছে যেন সবকিছু দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি হয়ে গেল, মুগ্ধতার দিকের রাগী চোখে তাকিয়ে তারপর ওকে বলল

” হাত টা দেখাও, কোথায় কেটেছে আমিও দেখি ৷”
মুগ্ধতা হাতটা পিছনে লুকিয়ে বলল
” না কোথাও কাটেনি ৷ আর এই ছেলেটা এক নম্বরের বেয়াদব , ওনার দিকে তাকাতে গিয়েই তো আমি এভাবে পড়ে গেলাম, আর আমাকে সিড়ি থেকে কেন আপনি কি কখনো আমাকে পড়ে যেতে দেখেছেন??”
ছেলেটা মুগ্ধতার দিকে চোখ টিপ মেরে বলল

” প্রেমে পড়ে গেলে নিকি পিচ্চি ৷”
” পিচ্চি কাকে বলছেন হ্যাঁ! আমি যথেষ্ট বড়ো হাহ !”
স্পর্শ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল
” ও তোর ভাবি হয় ৷ কল হার ভাবি ৷ ”
ছেলেটা সেই মুহূর্তে কানে হাত দিয়ে মুগ্ধতার দিকে তাকালো , যেন এই মুহূর্তে মুগ্ধতার সাথে ফ্লার্ট করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভুলটা সে করে ফেলেছে, তারপর কান ধরে বলল
” সরি ভাবী মজা করছিলাম ৷ আর আপনার সেই যার জন্য আমাদের স্পর্শ প্রেমে পাগল , আওয়ারা মজনু ৷”
মুগ্ধতা অবাক হয়ে তাকালো ৷
মুখ ফুটে বলেই ফেলল
” কি !? ”
স্পর্শ মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলল

” তুমি রহিমা খালাকে বলো আমাদের জন্য 2 কাপ কফি করে দিতে ৷ আর তোমাকে তো আমি রাতে দেখে নেব ৷”
মুগ্ধতা এই মুহূর্তে স্পর্শর চোখ রাঙানি থেকে বাঁচার জন্য বলে উঠলো
” আমি বানাই কফিটা?”
“তুমি ব্ল্যাক কফি পারো?”
” আমি তো সব পারি ৷ ”
বিড়বিড় করে বলল
” চাইলে তো এই ছেলের মাথাও ফাটাতে পারি, বেয়াদপ একটা , আজ তোর জন্য আমার পানিশমেন্ট মিলবে? ৷”
স্পর্শ ভ্রু উচিয়ে বলল
” কিছু বললে ৷”
মুগ্ধতা হেসে বলল

” নাহ , কিছু বলিনি ৷ নাহ আমি যাই , আপনাদের জন্য কফি নিয়ে আসি ৷”
স্পর্শ আর আতিফ নামের ছেলেটা সোফাতে বসলো ৷ দুজনের আজ প্রায় 2 বছর পর দেখা,ফোনেও মাঝে মাঝে কথা হয় কিন্তু ঠিক সেভাবে দেখা করা হয়ে ওঠেনা ৷
আতিফ স্পর্শর দিকে চোখ মেরে বলল
” কি মামা বিয়ে করে নিলে এদিকে কিছু জানালেও না ৷”
স্পর্শ হো হো করে হেসে বলল
” আমার বিয়েটা নেহাতই কাকতালীয় ভাবে এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে,নাহলে মুগ্ধ এখনো ছোট, ও আর একটু বড়ো হলে বিয়ে করতাম ৷ ওর বাচ্চামো স্বভাবটা এখনো যাইনি, ওকে দেখে বুঝতেই তো পারছিস ৷”
আতিফ হেসে বলল

” ভাবি কিন্তু খুব,মজার মানুষ আর মনটা অনেক ভালো ৷ ”
স্পর্শ মুচকি হাসলো ৷
আতিফ ওর ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বার করে স্পর্শর হাতে দিয়ে বলল
“মামা বিয়ে করছি, তোর ভাবির, আঙ্কেল আর আন্টির দাওয়াত রইলো ৷ বিয়ের প্রথম থেকে তোকে চাই , কোন কথা শুনছি না ৷”
স্পর্শ হাসলো, কার্ড খুলে নাম পড়তেই অবাক হলো, এখানে যে পাত্রীর নামের জায়গায় নীতুর নাম ৷ এই কার্ড এখন যদি মুগ্ধতাকে দেখানো হয় তাহলে মুগ্ধতা রিফাত আর নীতু দুজনেরই পিন্ডি চটকাবে ৷
স্পর্শ এই ধক্কাটা সামলে বললো

” আচ্ছা , তোর বিয়ে বলে কথা নিশ্চয়ই যাবো ৷ ”
ওদের কথার মাঝে মুগ্ধতা এসে কফি দিয়ে গেল, কফিটা দেখে ঠিকঠাক ই মনে হচ্ছে, খেতেও হয়তো ভালোই হবে ৷
স্পর্শ মুগ্ধতার থাকাকালীন কিছু বলল না ৷ মুগ্ধতা ওখান থেকে চলে যাওয়ার আগে দেখলো স্পর্শর হাতে একটা কার্ড ৷ ওর ও দেখার ইচ্ছা হলো খুব যে ওটা কিসের কার্ড ৷
রাত,,,,9টা

মুগ্ধতা ডিনার করে এসে রূমে ঢুকতেই দেখলো স্পর্শ কিছু একটা ওয়াড্রবে রেখে লক,করে দিলো ৷ বিয়ের দিন আতিফকে বর আর নীতুকে বউ হিসাবে দেখবে তাতে সমস্যা নেই কিন্তু এখন ওটা মুগ্ধতাকে দেখানো যাবে না ৷
মুগ্ধতা,স্পর্শর পিছনে দাড়িয়ে উকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো ৷স্পর্শ লক করে পিছন ঘুরতেই দেখলো
মুগ্ধতা খুব উঁকিঝুকি,মেরে দেখার চেষ্টা করছে ৷ওকে এভাবে দেখে স্পর্শর ভ্রু কুঁচকে এলো, ও মুগ্ধতার দিকে ভ্রু উচিয়ে বলল
“কি দেখছো এভাবে উকি মেরে ৷”
মুগ্ধতা ধরা খেয়ে হেসে বলল
“আপনি ওখানে কি রেখে দিলেন লক করে ??”
“কিছুনা ৷ ”
কথাটা বলে চলে যেতে নিলেই মুগ্ধতা বলল

এই শহর আমার পর্ব ১৬

“আপনার ওই ফ্রেন্ডটা,কি করতে এসেছিলো আর আপনিই বা আমার থেকে কি লুকাচ্ছেন , আবার আমাকে কোন মিথ্যা বলছেন না তো ?”
স্পর্শ বুঝলো মুগ্ধতা এখন ওকে প্রশ্ন করতেই থাকবে আর যতখন না ও উত্তর দেবে ততখন এই একই ভাঙা রেকর্ড চালাতেই থাকবে তাই ওর বকবাকানি থামাতে বলে উঠলো
” ওয়েট ওয়েট ,তুমি তখন সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলে আর তোমার হাত ও কেটে গেছে তাইনা ! আর তার দরুন এখন তোমার একটা পানিশমেন্ট ও বাকি আছে তাইনা ?”
মুগ্ধতা স্পর্শর কথা শুনে দু কদম পিছিয়ে গেল, ভয়ার্ত গলায় বলল
” একটা ডাক শুনেছেন?”
স্পর্শ প্রশ্ন করে উঠলো
“কিসের ডাক শুনি ! নাগিনের ডাক নাকি ?”
মুগ্ধতা হাত নাড়িয়ে বলতে লাগলো

“আরেহ না না তা হতে যাবে কেন, আমাকে তো ফুপি ডাকছে ,হয়তো কোন দরকারে ৷”
“বাট তোমার পানিশমেন্ট এখনো বাকি,আছে ৷”
মুগ্ধতা দৌড়ে রূম থেকে বেরিয়ে গেল, আর চিৎকার করে বলল
“আল্লাহ হাফেজ ৷ভালো থাকুন ভালো রাখুন ৷দৌড় দে মুগ্ধ ৷”

এই শহর আমার শেষ পর্ব