এই শহর আমার পর্ব ১৫ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

এই শহর আমার পর্ব ১৫
Suraiya Aayat

অনেকক্ষন ধরেই শীতশীত অনুভব করছে স্পর্শ , ঠান্ডা হাওয়া বইছে বাতাসে ৷ এখনো ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে, তবে মুষলধারা আর নেই ৷ মুগ্ধতার দিকে ঘুরে তাকাতেই দেখলো মুগ্ধতা চাদরটা নিয়ে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে ৷ স্পর্শ চাদরটা মুগ্ধতার গা থেকে টেনে নিয়ে মুগ্ধতার গায়ে ভালো করে চাদরটা জড়িয়ে দেবে বলে চাদরটা সরাতেই দেখলো মুগ্ধতা পেটে হাত দিয়ে চেপে শুয়ে আছে, স্পর্শ দেখলো মুগ্ধতা চোখ বন্ধ করে আছে , চোখের কোনে জমে থাকা জলগুলো শুকিয়ে গিয়েছে অনেক আগেই তবুও তার ছাপ স্পষ্ট ৷

স্পর্শ বুঝতে পারলো মুগ্ধতার পেইন হচ্ছে তাই মুগ্ধতার গায়ে ভালো করে চাদরটা টেনে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ গাড়িতে ওর একটা ঔষুধের বক্স থাকে সবসময়, তাতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ স্পর্শ রেখে দেই ৷ ছিটেছিটে বৃষ্টি পড়ছে, ছাতার খুব একটা দরকার হবে না বলেই মনে হচ্ছে তাই অনেকটা দৌড়ে গিয়ে গাড়ি থেকে ওষুধের বাক্সটা নিয়ে এলো ৷ শিফা খান সকালের নাস্তা বানাচ্ছে আর রোজা ভাবিও ওনার হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে ৷ স্পর্শকে তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকতে দেখে রোজা বলল

” আরে স্পর্শ ভাইয়া কোথায় গিয়েছিলেন? বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে ছাতা নিয়ে যাননি ?”
স্পর্শ থেমে একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল
” গাড়িতে একটা মেডিসিনের বক্স ছিলো ওটাই আনতে গিয়েছিলাম ৷”
শিফা খান চিন্তিত সুরে বললেন
” তোমার কি শরীর খারাপ বাবা ! মুগ্ধ তো কিছু জানালো না ! মেয়েটা কি এখনো ঘুমাচ্ছে !”
” আসলে মুগ্ধর শরীরটা ভালো লাগছে না তাই ওকে মেডিসিন দেওয়ার জন্যই বক্স টা আনতে গিয়েছিলাম ৷”
মুগ্ধতার শরীর ভালো না শুনে ওনারা আর কেউ কোন কথা বাড়ালেন না , কারন এসব ব্যাপার স্পর্শই ভালো বুঝবে যতই হোক ও ডক্টর আর মুগ্ধতার হেল্থ নিয়ে স্পর্শ যথেষ্ট পজেসিভ ৷
রোজা স্পর্শকে এমন আপত্তিকর মূহুর্ত থেকে বার করে আনার জন্য বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আচ্ছা ভাইয়া , আমি আপনার আর মুগ্ধর ব্রেকফাস্ট রুমে দিয়ে আসবো ,আপনি যান ওকে তাড়াতাড়ি মেডিসিনটা দিন ৷”
রোজার কথা শুনে স্পর্শ মুচকি হাসলো ৷ সকাল সকাল এমন একটা কিছু হবে ও ভাবতে পারেনি ৷ রোজা ভাবি ওকে সবসময় হেল্প করে , মুগ্ধতা যে এখানে এসেছে সেই খবরটাও রোজাই দিয়েছে ওকে ৷
তাড়াতাড়ি করে রুমে গেল, মুগ্ধতাকে ডাকলো ৷
” এই মুগ্ধ ওষুধ টা খেয়ে নাও, ইউ উইল ফিল বেটার ৷”
মুগ্ধতা স্পর্শর কথা কানে নিলো না যেন ৷ চুপচাপ শুয়ে রইলো ৷ স্পর্শ আবার বলল
” ওষুধটা খাও পেইন কমে যাবে ৷”
মুগ্ধতা এবার ভারী গলায় বলল
” আমার কিছু হয়নি ৷ আমার ঘুম পাচ্ছে বিরক্ত করবেন না ৷”
স্পর্শ বক্সের ঢাকনাটা দিতে দিতে বলল
” ভালো কথায় কি কাজ হবে নাকি আমাকে আবার অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করতে হবে ৷”
মুগ্ধতা রেগে গিয়ে বলল

” বিরক্ত করছেন কেন বললাম না আমার কিছু হয়নি ৷”
স্পর্শ বুঝলো ভালো কথায় কাজ হাসিল হবে না তাই এবার মুগ্ধতাকে টেনে বিছানা থেকে তুলে দিলো ৷ মুগ্ধতার সামনে ওষুধটা ধরলো ৷
” তাড়াতাড়ি খাও, নাহলে পেইন কিন্তু বেড়ে যাবে ৷”
মুগ্ধতা রাগী চোখে তাকিয়ে ওষুধটা খেয়ে নিলো, ওষুধটা খেয়ে আবার শুতে গেলেই স্পর্শ বাধা দিলো,মুগ্ধতার দুটো হাত নিজের হাতের মাঝে মুঠিবদ্ধ করে নিয়ে মুগ্ধতার চোখের পাতায় চুমু দিলো ৷
মুগ্ধতা চোখ খুলতেই স্পর্শ ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো ৷
মুগ্ধতাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে বলল

” তোমার ওই চোখে এই রাগ মানায় না মুগ্ধ, তোমার চোখে আগের সেই দুষ্টুমি ভরা চাহনি আর দেখি না, ম্যাচিওর হওয়া ভালো কিন্তু এতোটা ম্যাচিওর হয়ো না যাতে তোমার নিজের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট গুলো হারিয়ে যাই ৷ তুমি যেমন তোমাকে ঠিক সেভাবেই মানায় লাইক পিংকিশ নাগিন টাইপ তোমার কথায় ৷”
কথাটা বলে মুগ্ধতাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো ৷ ওয়াশরুমে ঢুকে গেল স্পর্শ ৷ মুগ্ধতা বিছানার চাদরটা আকড়ে শক্ত করে ধরে আছে ৷ কান্না পাচ্ছে ভীষন , স্পর্শ সবসময় এমন পাষানের মতো ব্যাবহার করে কেন ?

” হমম ফুপি বলো ৷ কেমন আছো?”
তনিমা আহমেদ ভারী সুরে বললেন
” এভাবে পর পর হয়ে কথা বলছিস কেন মা !”
মুগ্ধতা মিথ্যা হাসার চেষ্টা করে বলল
” কি যে বলোনা তুমি, কোথায় পরপর করে কথা বললাম ৷ আমি তো তোমার মেয়ে তা পর হলাম কি করে ! নাকি তোমার ছেলের জন্য. নতুন বউ পেয়েছো তাই আমাকে পর মনে হচ্ছে কোনটা ?”
উনি মৃদু ধমকের সুরে বলল
” থাপ্পড় দেবো মুগ্ধ আর একবার ও এমন কথা বললে ৷ তোর কথা বলার ধরনটা শুনে আমার মনটা কেমন করে উঠলো তাই জন্যই তো এমন বললাম আর তুই
ও না ৷ ”

মুগ্ধতা এবার সত্তিই হেসে ফেলল, হেসে বলল
” তা আমার মা জননীটার কি মন খারাপ ?”
” তা নয় তো কি, তোকে বললাম না তাড়াতাড়ি ফিরবি ৷ আমার একা মন টিকছে না ৷ তাছাড়া স্পর্শ তো হসপিটালে আছে এখন, কিছুখন আগে ফোন করে বলল যে একটা নাকি এমানরজেন্সি অপারেশন আছে, আর রাত্রে বাসায় ফিরবে না , মানে তোদের বাসায় যাবে ৷”
কথাটা শুনে মুগ্ধতা চুপ করে রইলো কারন স্পর্শ হসপিটালে যাওয়ার আগে ওর সাথে খানিকটা তর্ক বিতর্ক করে গেছে মুগ্ধতার বাসায় ফেরা নিয়ে ৷
মুগ্ধতা চুপ করে আছে দেখে তনিমা আহমেদ আবার বললেন
” নীতু আর মধু বলে দুটো মেয়ে এসেছিলো সকাল সকাল,তোর সাথে দেখা করবে বলছিলো কি যেন দরকার আছে তোর সাথে ৷”

নীতু নাম শুনে মুগ্ধতা ঘাবড়ে গেল ৷ তবুও আমতা আমতা করে বলল
” কি দরকার আমার সাথে ?”
” সেটা আমি কি করে বলি বলতো ৷ সে যাই হোক তুই তাড়াতাড়ি বাসায় ফের মা আমার আর ভালো লগছে না ৷”
মুগ্ধতা অভিমান করে বলল
” আমি ওই বাসায় এখন ফিরবো না ফুপি ৷ আর তোমার ছেলেকেও বলো যেন আমাকে ফেরানোর বৃথা চেষ্টা না করে ৷ ”
” ঠিক ধরেছি, স্পর্শ নিশ্চয়ই তোকে কিছু বলেছে তাইনা ! ছেলেটাকে কিছু বলিনা তাই বলে এটা না যে মেনে নেবো ৷আমার ফুলের মতো মেয়েটাকে এভাবে কেউ বকে ! ওর অপারেশন শেষ হোক ওকে যদি না বকেছি তো আমিও ওই পিংকিশ বান্দরের মা না ৷”

কথাটা শুনে মুগ্ধতা ফিক করে হেসে দিলো ৷ মুগ্ধতার হাসি দেখে তনিমা আহমেদ ও হেসে ফেললেন ৷
আরো কিছুখন কথা বলে কলটা কেটে মুগ্ধতা বিছানায় বসলো কিছুখন ৷ হঠাৎ করে রোজা এলো ৷
” কি গো ননদিনী তলে তলে টেম্পো চালাও ৷”
মুগ্ধতা অবাক হয়ে বলল
” কি যা তা বলো ভাবি ৷? আমি আবার কি টেম্পো চালালাম ৷”
রোজা ফাজলামি করে বলল

” তুমি কতোটা কি করো জানি না কিন্তু রাতবিরেতে স্পর্শ ভাই এসে বউয়ের সাথে আবার ঠিক রোমেন্স করে চলে যাচ্ছে ৷ আমারাও বুঝি গো, আমাদের ও চোখে পড়ে অনেক কিছুই ৷”
কথাটা বলে রোজা হাসলো ৷ মুগ্ধতার খানিকটা লজ্জা আর রাগ মিশ্রিত অনুভুতি হচ্ছে ৷
মুগ্ধতা কথা ঘোরানোর জন্য বলল

” আহ ভাবি কি শুরু করলে কি , এবার থামো ,তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না, উনি সিলেট গিয়েছিলেন আর আসার পথে উনি অনেকটাই ভিজে গিয়েছিলেন তাই এখানে চলে এলেন, মিরপুর যেতে গেলে অনেকটা দেরি হয়ে যেতো ৷”
” আহা তোমাকে এতো বিস্তারিত বলতে বলেছে কেউ?, রোমান্স করেছো করেছো লজ্জা পাওয়ার কি আছে, নতুন নতুন বিয়ে করেছো এটুকু ভালোবাসা দেখাবেনা তা হয় !”
মুগ্ধতার ক্রমশ অসস্তি হচ্ছে রোজার এমন কথায় , তাই কথা ঘোরাতে বললো
” ভাবি একটা কথা বলবো ?”
” হমম হমম বলো কি বলবে ৷”

“যখন তুমি জানবে যে তোমার জামাইয়ের ওপর কেউ ক্রাশ খাই, তাকে পছন্দ করে তাকে নিজের করে পেতে চাই তখন তুমি কি করবে ৷”
” কি করবো আবার জামাইকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো যাতে আমি ছাড়া তার ধারেপাশে কেউ ঘেষতে না পারে ৷”
কথাটা বলে রোজা হাসতে লাগলো ৷ মুগ্ধতা বিরক্ত হয়ে বলল
” উফফফ তুমিও না ! আমি একটা সিরিয়াস কথা জিজ্ঞাসা করছি আর তুমি সমানে মজা করে চেলেছো ৷ যাও তোমাকে আর কিছু বলবো না ৷”
রোজা মুগ্ধতার নাক টা টেনে দিয়ে বলল

” শোনো মুগ্ধ স্বামী নামক মানুষটা না অনেকটা আলাদিনের ওই প্রদীপটার মতো , তুমি যদি তোমার জীবনটাও তোমার কাছে হাজির করে দিতে বলো তাহলে সে তাও দেবে যদি সে তোমাকে সতিই ভালোবাসে ৷ স্বামীকে অমান্য করে তার কথার অবাধ্য হয়ে তুমি হয়ত তোমার নিজের কাছে নিজকে বিজয়ী বলে মনে হবে কিন্তু আল্লাহর কাছে তুমি সবচাইতে নিকৃষ্ট মানুষ হিসাবে গন্য করো যদি তুমি স্বামীর কথার অমান্য করো ৷ স্বামীর ভালোবাসা কখনো ফেরাতে নেই ৷ একটা সম্পর্ক তখনই মজবুত হয় যখন নিজেদের প্রতি বিশ্বাসটা অটুট থাকে ,যদি সম্পর্কে বিশ্বাস ,ভরসা আর ভালোবাসা না থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক অর্থহীন ৷ দেখোনা তোমার ভাইয়া আমার সাথে রোজ ফ্লার্ট করে বলে
” একটা বাচ্চার বাপ হয়ে গেলাম তবুও গ্ল্যামার কমেনি, আজকেও একটা মেয়ে প্রপোজ করেছে জানোতো রোজা ৷ মেয়েটা কিন্তু অপরুপ সুন্দরী ৷”

তোমার ভাইয়ার কথা শুনে আমি কখনো রেগে যাইনা, বরং খুব হাসি পাই কারন সে আমাকে হাসানোর জন্য কথাগুলো মজা করে বলে, আমার তার প্রতি বিশ্বাস আছে, আমার প্রতি তার অসীম ভালোবাসা আছে তাই অন্য নারীর প্রসংসা করলেও ওনার নজর আমার থেকে সরবে না কখনোই৷ তেমনি স্পর্শ ভাইয়া ৷ ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে, ভাইয়ার চোখে তোমার প্রতি ভালোবাসা যেন স্পষ্ট লক্ষ করা যাই ৷ সাকালবেলা তোমার পেটে পেইন হচ্ছে বলে তুমি না বলতেই তোমার অসুবিধা বুঝে সে ওষুধ আনতে ছুটেছে , সব পুরূষই একটা নারীকে নিজের করে পেতে চাই কিন্তু পরে সেই নারীর কষ্টটা কতজন পুরূষ বুঝতে পারে বলোতো ৷

সবাই কিন্তু পারে না ৷ স্পর্শ ভাইয়া নিজের থেকেও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে ৷ জানোতো হসপিটালে যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেছে তুমি যেন ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করো,ঠিকঠাক যেন মেডিসিন নাও , সে ফিরলে সেই সামলাবে তোমাকে কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে আমি যেন তোমাকে একটু খেয়াল রাখি ৷ কতজন পারে এমন বলোতো মুগ্ধ ৷ কখনো ভাইয়ার ওপরে রাগ করে তাকে দূরে ঠেলে দিও না , এটা মনে রাখবে একটা মানুষ তার ওপরেই বেশি অধিকার খাটাই যাকে সে সবথেকে বেশি ভালোবাসে ৷ ভাইয়া তোমাকে কখনো বকাঝকা করলে রাগ করবে না, বুঝবে যে সে তোমার ভালো চাই,তাই খারাপটা তোমার সামনে তুলে ধরে তোমাকে সাবধান করে ৷ যাক অনেক কিছু বলে ফেললাম ৷ এবার তোমার প্রশ্নের উত্তর পেলে ?”

মুগ্ধতা বিছানায় গুটিগুটি করে শুয়ে পড়লো , থমথমে গলায় বলল
“ভাবী আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে ! আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ৷ চোখদুটো বড্ড,ক্লান্ত ৷”
রোজা মুচকি হেসে মুগ্ধতার কপালে একটা চুমু দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আর বললো
“বাবা মা আর স্বামীর ভালোবাসা হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা,যা কখনো ফেরাতে নেই তাহলে আল্লাহ নারাজ হয় ৷”
মুগ্ধতা চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো, ঘুম আসছে না বরং মনের মাঝে অস্স্তির মাত্রা দ্বিগুন হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে তখন স্পর্শকে ফিরিয়ে দিয়েছে ও এই কথা ভেবে ৷ চোখের কোনের নোনা জলের ধারায় বালিশ ভিজছে, ভাঙছে অভিমানের মস্ত পাহাড় ৷

অবেলায় ঘুমিয়েছে মুগ্ধতা, এমন সময়ে ও ঘুমাই না কিন্তু মাথার মধ্যে হাজার হাজার ভাবনায় অসস্তি হচ্ছিল, অসস্তি কাটাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো, যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখলো রাত 8টা বাজে, ভাবতেই অবাক লাগলো যে এতোটা সময় ওকে একবার ও কেউ ঘুম থেকে ডাকলো না ! হয়তো ওর শরীর ভালো নেই বলে রোজা বলেছে যেন কেউ ওর ঘুম না ভাঙায় তাই হয়তো আর কেউ ডাকেনি,৷ শুভ্রতাকে ফোন করতে গেলেই মনে পড়লো যে স্পর্শ একবার ও কল করেনি হয়তো মুগ্ধতার ওপর রাগ করেছে সেই কারনে ৷ বেশি কিছু না ভেবে শুভ্রতাকে ফোন করলো,ওর এই অসস্তি কাটানোর এই মুহূর্তে একমাত্র উপায় শুভ্রতা, ওকে বলে মনটা হালকা করবে ‌৷
শুভ্রতা কল ধরতেই শুভ্রতাকে সবটা বললো মুগ্ধতা ৷
দুপুরবেলার ঘটনা,,,,

মুগ্ধতা দুপুরের খাওয়াদাওয়া করে সবে বইটা নিয়ে একটু বসেছে, শরীরটা এতখনে তাও ঠিক হয়েছে ৷ ওর সবচেয়ে অপ্রিয় ফিজিওলজির বইটা হাতে নিয়ে বসেছে, প্রথমে মুখটা একটু কাচুমাচু করলেও পরে নিজেকে সামলে নিলো, এমন তো নয় যে এই সাবজেক্ট টা পরীক্ষায় হবে না ! অপ্রিয় জিনিসটাকে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস বানানোর মধ্যে এক অদ্ভুত খুশি লুকিয়ে থাকে যা উপভোগ করার চেষ্টায় আছে মুগ্ধতা ৷
হঠাৎ খেয়াল করলো স্পর্শ চটপট শার্ট গায়ে দিচ্ছে,মুগ্ধতা দেখে চোখ ঘুরিয়ে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলো ৷ স্পর্শ বলে উঠলো
” মুগ্ধ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমারা বাসায় ফিরবো ৷”
মুগ্ধতা ওর কথা কানে নিলো না ৷ জোরে জোরে পড়তে লাগলো আরো ৷ স্পর্শ শার্টের বোতাম লাগাতে লগাতে বলল
” মুগ্ধ তোমাকে বাসায় দিয়ে আমি হসপিটাল যাবো, আরজেন্ট একটা অপারেশন আছে , উই আর গেটিং লেট, ডু ফাস্ট ৷”

মুগ্ধতা স্বাভাবিক ভাবেই বলল
” আমি যাবো না, আপনি একা যান ৷”
স্পর্শ একটু রেগে বলল
” আমার ওপর রাগটা পরে দেখাবে, বাসায় গেলে আমাকে শাস্তি দিও মাথা পেতে নেব এখন আপাতত কোন আরগিউ চাইছি না আমি ৷ তাড়াতাড়ি রেডি হও , আর তুমি যদি বাসায় ধা যেতে চাও তবে ফাইন আমি হসপিটাল থেকে এখানেই আসবো, রাতে এখানেই থাকবো চিন্তা নেই ৷”
মুগ্ধতা বিরক্ত হয়ে বইটা শব্দ করে বন্ধ করে দিয়ে বলল

” কেন ? এখানে আসবেন কেন? ইমম্যাচিওর একটা মেয়েকে ম্যাচিওরিটি দেবেন বলে ? আমি তো অবুঝ , কিছু বুঝি না ,তাছাড়া আমার মনে হয়না আপনি আমার সাথে ভালো আছেন, আমি অনেকটাই অবুঝ , আপনার সাথে আপনার মতোই কাউকে মানায় ৷ তাছাড়া যতদিন না আমার মনে হবে যে আমি আপনার কাছে থাকার জন্য উপযুক্ত ততদিন আমি ফিরবো না ৷ এম আই ক্লিয়ার টু ইউ ? ”
স্পর্শ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

এই শহর আমার পর্ব ১৪

” তোমার ভাষায় তুমি ম্যাচিওরিটির সংঞ্জা বলতে যা বোঝ আমার ভাষায় আমি তা বুঝি না, আমার ভাষায় ম্যাচিওরিটি বলতে সিরিয়াসনেস বা মুখভার করে রেগে রেগে কথা বলা নয় ‌বা দূরে দূরে থাকাও নয় ৷ ম্যাচিওরিটি হয় মনের দিক থেকে, মনের দিক থেকে নিজেকে বড়ো করতে হবে, মনের দিক থেকে সাবলম্বী হতে হবে, সবটা বুঝতে শিখতে হবে ৷ নিজের মনের ভাষার সাথে অনে্্যর চোখের ভাষা বুঝতে শিখতে হবে, সেদিন তুমি হবে প্রকৃত ম্যাচিওর ৷ আই হোপ আমি তোমাকে বোঝানোর চেষ্টাতে ব্যার্থ হয়েছি ৷ যাই হোপ আমার কাছে সত্তিই এনাফ টাইম থাকতো তোমাকে বোঝানোর জন্য কিন্তু এখন আপাতত নেই, আই নিড টু গো ৷ যেদিন ফিরতে ইচ্ছা হয় ফিরো ৷”
কথাটা বলে স্পর্শ চলে গেল ৷

কথাগুলো শুভ্রতাকে বলে থেমে গেল মুগ্ধতা ৷ যতখন না নিজে থেকে স্পর্শর বুকে মাথা রেখে বলবে যে
” সকলের কাছে ম্যাচিওর হলেও আপনার এই মনের শহরে আনম্যচিওর হয়েই আজীবন থাকতে চাই, এভাবেই আপনাকে দুষ্টুমি করে বিরক্ত করতে চাই ৷”
যতখন না এগুলো স্পর্শ কে বলবে ততখন ওর মনের এই অশান্তি দূর হবে না ৷ ওর রাগ, ওর ভালোবাসা, ওর অভিমান আর ওর পিংকাশ টাইপের সব ব্যাবহার সবকিছুই কেবল স্পর্শর জন্য , আর কারোর জন্য নয় ৷
স্পর্শর সাথে ভালোবাসার এই প্রতিযোগীতাই ও নামতে চাই যেখান থেকে ওদের মাঝে ভালোবাসা বাড়বে কখনো কমবে না ৷

এই শহর আমার পর্ব ১৬