একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ১১

একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ১১
অরনিশা সাথী

স্টাডি রুমে বসে আছে শ্রাবণ। সানিয়া মেহরাব এসে শ্রাবণের কাঁধে হাত রাখলো। শ্রাবণ মাথা তুলে তাকালো মায়ের দিকে। সানিয়া মেহরাব পাশের চেয়ারটাতে বসতে বসতে বললো,
–“ঘর থেকে চেঁচামেচির শব্দ এলো কেন শ্রাবণ?”
শ্রাবণ কিছু না বলে চুপ করে রইলো। সানিয়া মেহরাব আবারো বললেন,

–“বিয়ের রাতেই তো আয়ুকে বলে দিয়েছিস তুই বিয়েতে বিশ্বাসী না। তার মানে ওকে বউ হিসেবেও মানিস না তুই। তাহলে ওর যা ইচ্ছে পড়ুক না, যেভাবে ইচ্ছে চলুক। তাতে তোর কি?”
–“ছেলেগুলোর আপত্তিকর মন্তব্যগুলো তুমি শুনোনি আম্মু, আমি শুনেছি।”
–“সো হোয়াট? আয়ুকে তো তুই মানিস না। সবকিছুতে কি একটু বেশিই রিয়্যাক্ট করে ফেলছিস না তুই?”
শ্রাবণ শান্ত দৃষ্টিতে শুধু মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছু বলতে পারলো না। সানিয়া মেহরাব এবার শ্রাবণের কাঁধে হাত রেখে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“বিয়ে পবিত্র সম্পর্ক শ্রাবণ৷ মুখে মানিনা বললেই হয় না। বিয়ের বন্ধন এত ঠুনকো না। তুই নিজেও এ ক’দিনে বুঝতে পেরেছিস বিয়ের বন্ধন কতটা শক্ত, জোড়ালো। বল বুঝতে পেরেছিস না?”
শ্রাবণ এবারেও চুপ করে রইলো৷ সানিয়া আবারো বললো,

–“সবাই ছেড়ে যায় না শ্রাবণ৷ সবাই তোর বাবার মতো না৷ মেয়েটার সাথে শুধু শুধুই ওরকম রুঢ় বিহেভিয়ার করলি তুই। কেন ও কি ভালো বিহেভিয়ার আশা করতে পারে না তোর থেকে? বিয়ের পর এ ক’দিনে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেছিস মেয়েটার সাথে? হাসিমুখে কথা বলেছিস একটু? বলিসনি। মানলাম ছোট বেলায় একটা আঘাত পেয়েছিস আর সেই আঘাতটা ধরেই এখন অব্দি বসে আছিস। কেন শ্রাবণ?

যে মেয়েটা তোর ভরসায় নিজের পরিবার ছেড়ে এসেছে সেই মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো রাইট নেই তোর। ওই একটা ঘটনাকে ধরে বসে থাকিস না শ্রাবণ৷ সবটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা কর। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন কর আয়ুর সাথে৷ ভালোবাসাটা ঠিক একদিন হয়ে যাবে। একটা মানুষের সাথে থাকতে থাকতে ভালোবাসা এমনিতেই হয়ে যায়। তুই যদি ওর সাথে না মিশিস, ভালো ভাবে কথা না বলিস তাহলে কেমনে হবে বল?”

শ্রাবণ চেয়ার থেকে নেমে ফ্লোরে বসে মায়ের কোলে মুখ গুজলো। ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে শ্রাবণের শরীর। সানিয়া মেহরাব স্পষ্ট বুঝতে পারছেন শ্রাবণ কাঁদছে। ভেজা কন্ঠেই শ্রাবণ বললো,
–“ভয় হয় আম্মু, কাউকে ভালোবাসতে ভীষণ রকমের ভয় হয় আমার। বাবা যেমন তোমাকে ছেড়ে গেছে তেমন ভাবে আমাকেও কেউ ছেড়ে যাক আমি চাই না। তুমি আমাদের জন্য নিজেকে সামলে নিয়েছো, কিন্তু আম্মু আমি কার জন্য নিজেকে সামলে নিবো তখন?”
সানিয়া মেহরাব ছেলেরে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

–“সবাই ছেড়ে যায় না তো। তোর ভালোবাসা দিয়ে আটকে রাখবি, ছেড়ে যেতে দিবি না তুই।”
–“তোমার ভালোবাসায় তো আটকে থাকেনি বাবা।”
–“আমি ব্যর্থ হয়েছি বলে কি আমার ছেলেও ব্যর্থ হবে নাকি?”
শ্রাবণ কিছু বললো না। আবারো মায়ের কোলে মুখ গুজে বসে রইলো। সানিয়া মেহরাব বললো,
–“শ্রাবণ একটা সত্যি কথা বলবি?”

শ্রাবণ মাথা উচুঁ করে তাকালো মায়ের দিকে। সানিয়া বললো,
–“আয়াতকে তোর ভালো লাগে না?”
শ্রাবণ অনেকটা সময় চুপ থেকে বললো,

–“ভালো না লাগার মতো মেয়ে আয়ু নয়। ওকে প্রথম যখন দেখি তখন ও দিহান আর রাফিয়ার সাথে ব্যালকোনিতে বসে ছিলো। অনেকটা বিরক্তির চোখেই আমার গাড়ির দিকে তাকিয়ে ছিলো ও। আমি অনবরত হর্ন বাজানোতে ওর চোখমুখে বিরক্তির আভাস স্পষ্ট বোঝা গেছে। সেদিন না চাইতেও অচেনা মেয়েটার দিকে ঘুরেফিরে চোখ যায় আমার। তারপর ও এখানে যে ক’দিন ছিলো সে ক’দিনে অকারণেই ওর প্রতি একটা ভালো লাগা সৃষ্টি হয়েছে আমার।”

কথাগুলো বলে থামলো শ্রাবণ। সানিয়া মেহরাবের চোখমুখে স্পষ্ট হাসির আভাস। সানিয়া মেহরাব বললো,
–“আর সেই মেয়েটা তো এখন তোর বিয়ে করা বউ, ভালোবাসতেও সময় লাগবে না দেখিস।”
–“ভালোবাসতে চাই না আমি৷ ওকে ভালোবাসলে, ওর মায়ায় পুরোপুরি বাঁধা পরলে আয়ুও বাবার মতো করে ছেড়ে যাবে৷ তার থেকে এমনিতেই ভালো আছি আমি।”

–“ভালোবাসার আগেই হারানোর ভয় পাচ্ছিস? এই ভয়টাকে কাটিয়ে উঠ বাবা। এই ভয়কে যতদিন বয়ে বেড়াবি ততদিন ভালো থাকতে পারবি না। আমি চাই তুই আর শান সারাজীবন ভালো থাক৷ তোদের ভালো থাকা সুখে থাকাটাই আমার কাছে সবকিছু শ্রাবণ। আয়ুর সাথে তোকে সুখে সংসার করতে দেখতে চাই আমি।”
শ্রাবণ কিছু বললো না। সানিয়া মেহরাব শ্রাবণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“অনেক রাত হয়েছে, ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়।”

শ্রাবণ সম্মতি জানালো। সানিয়া মেহরাব উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো। শ্রাবণ সেখানে বসেই মায়ের বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করলো।

ফাহিম এসে দরজায় টোকা দিতেই ফারাবী দরজা খুলে দিলো। ফাহিম ফারাবীর পাশে গিয়ে বসলো। ফারাবী জিজ্ঞেস করলো,
–“কিছু বলবি?”
–“ভাবীকে সত্যি সত্যিই ডিভোর্স দিয়ে দিলে ভাইয়া?”
ফারাবী চোখ তুলে তাকালো ভাইয়ের দিকে। ফাহিমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“মা বাবাকে ডাক, কথা আছে আমার।”
ফাহিম চুপচাপ উঠে গিয়ে ওর বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে আসলো। ফারাবীর মা বললো,

–“ডেকেছিস আমাদের?”
–“হ্যাঁ কথা আছে কিছু।”
ফারাবীর বাবা জিজ্ঞেস করলো,
–“কি কথা?”
ফারাবী কিছু সময় নিরব থেকে বললো,
–“শুধুমাত্র রাইতার সাইন নিয়েছি ডিভোর্স পেপারে। আমি এখনো সাইন করিনি।”

ফারাবীর কথায় সবাই অবাক হলো। এখনো ওদের ডিভোর্স হয়নি তাহলে এভাবে মিথ্যে বলে বের করে দিলো কেন বাসা থেকে সেটাই ভাবছে সকলে। ফারাবীর বাবা কড়া স্বরে বললো,
–“এত রাতে মেয়েটাকে একা এভাবে বের করে দেওয়ার কোনো মানে হয় না ফারাবী। রাইতা এখনো তোমার স্ত্রী।”
ফারাবী ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো,

–“বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসিসনি রাইতাকে?”
ফাহিম সম্মতি জানালো। ফারাবী বললো,
–“বিবেক বুদ্ধি অতটাও লোপ পায়নি যে রাইতাকে এই রাতের বেলা একা একাই ছেড়ে দিবো আমি। ও আমার সাথে প্রতারণা করতে পারে, কিন্তু মানুষ হিসেবে এতটাও খারাপ না আমি।”
ফারাবীর মা বললো,

–“ডিভোর্স তো হয়নি তোদের, তাহলে ওকে বের করে দিলি কেন? আর এরকম করার কারণ কি?”
–“বড্ড তো বলে ভালোবাসি ভালোবাসি, যেই ভালোবাসার জন্য নিজের সম্মানহানি করতেও দু-বার ভাবেনি। যে ভালোবাসার জন্য আমার আয়াতকে আমার থেকে দূরে সরিয়েছে, রাইতার যে ভালোবাসার জন্য আমার আয়াত আজ অন্যের স্ত্রী। দেখি না রাইতার সেই ভালোবাসা ক’দিন থাকে।

ডিভোর্স হয়ে গেছে জেনেও ক’দিন ভালোবেসে যেতে পারে আমায় আমিও দেখি না। ও যে কাজ করেছে তার জন্য তো একটা শাস্তি অবশ্যই প্রাপ্য ও। সেটা না হয় এভাবেই দিলাম। ও যদি শুধরে যেতে পারে, আমার অনুপস্থিতিতেও আমাকে ভালোবেসে আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারে, তখন না হয় ভেবে দেখবো এই বিয়েটাকে একটা সুযোগ দেওয়া যায় কিনা। ততদিন অব্দি কেউ কিচ্ছু জানাবে না রাইতাকে। ও ওর বাসাতেই থাকবে।”

ফাহিম বললো,
–“ভাইয়া আয়াত আপুর তো বিয়ে হয়েই গেছে তাহলে___”
–“আয়াতের বিয়ে হয়ে গেছে বলেই এই বিয়েটাকে একটা সুযোগ দিতে চাচ্ছি আমি। এভাবে রাইতাকে বোঝাতে চাচ্ছি নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে সরে গেলে কতটা কষ্ট হয়। আয়াতের বিয়ে না হলে আমার আর রাইতার এই বিয়েকে কখনোই সুযোগ দিতাম না আমি। তেমন কোনো সুযোগ থাকলে আয়াতকে বিয়ে করেই এই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতাম আমি। কিন্তু বিধাতা বোধহয় চায়নি সেটা। তাই তো এরকম খেল খেললেন আমার সাথে।”
ফারাবীর বাবা বললো,

–“সবই তো বুঝো, তাহলে রাইতাকে শুধু শুধু কষ্ট কেন দিবে?”
ফারাবী ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“শুধু শুধু? আমার তো তোমাদের সাথে কথা বলতেও কষ্ট হয় ভীষণ। কেননা তোমরা সেদিন নিজের ছেলেকে বিশ্বাস না করে ওই রাইতাকে বিশ্বাস করেছিলে। তোমরা সেদিন আমার কথা বিশ্বাস করলে আজ এমন কিছুই হতো না। আয়াতকে হারানোর জন্য যেমন রাইতা দোষী তেমনি কোনো না কোনো ভাবে তোমাদেরও দোষী মনে করি আমি।”
ফারাবীর মা কেঁদে উঠলেন ছেলের এহেন কথায়। ফারাবী তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

–“রাইতা একা কেন কষ্ট পাবে? তোমরাও তো আমার চোখে দোষী, সে হিসেবে কিছুটা কষ্ট তোমাদেরও প্রাপ্য।”
এই বলে ড্রয়ার থেকে একটা পেপার এগিয়ে দিলো ওর বাবার দিকে। ওর বাবা সেটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
–“তুমি এ দেশ ছেড়ে, আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছো?”
ফারাবী মৃদু হেসে বললো,

–“হ্যাঁ, থাকবো না এখানে। সিঙ্গাপুরের একটা কোম্পানিতে জবের এপ্লাই করেছিলাম, এপ্রুভ হয়েছে সেটা। আর একটা পেপার বের হলেই হয়ে গেলো। তারপরই বাংলাদেশ ছাড়বো আমি।”
ফারাবীর মা এগিয়ে এসে ফারাবীর চোখমুখে হাত বুলিয়ে বললো,
–“এরকম করে না বাবা, তুই ক্যানসেল করে দে সবকিছু। আমরা তোকে দূরে রেখে ভালো থাকবো কি করে?”
–“যেদিন মনে হবে তোমাদের কষ্টটা এবার কমানো উচিত সেদিনই ফিরবো আমি, নয়তো না।”
ফাহিম বললো,

–“ভাইয়া একবার__”
–“সবাই এখন যাও, ঘুমাবো আমি।”
ফারাবীর এমন কথায় কেউ আর কিছু বলতে পারলো না। মলিন মুখে সকলেই বেরিয়ে গেলো ফারাবীর ঘর থেকে। ফারাবীর মায়ের কান্না থামছে না। ফারাবী দরজা আটকে দিয়ে বিছানায় বসলো। ফোনের গ্যালারি ঘেটে আয়াতের একটা ছবি বের করলো। ছবিটার দিকে তাকিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে। ফারাবী ফোনটা বুকে চেপে ধরে বললো,

–“এমনিতেই তো তোমার থেকে অনেকটা দূরে আমি। আরো দূরে চলে যাবো। আমি চাই আমার আয়ু-পাখি যেন সবসময় ভালো থাকে। জানি বরকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে, বড্ড ভালোবাসো কিনা আমাকে? তবুও চাই তোমার নতুন জীবন সুখের হোক। ভালোবাসা আর সুখে ভরে উঠুক তোমার সংসার৷ আমার মনের এক কোনে আজীবন থেকে যাবে তুমি। তোমার জায়গাটা কখনো কেউ নিতে পারবে না।

আমি জানি তুমি যেমন আমার মনের কোথাও একটা থেকে যাবে, ঠিক তেমন ভাবে তোমার মনেও কোথাও না কোথাও আমিও ঠিক থেকে যাবো। সব ভালোবাসা তো পূর্ণতা পায় না৷ আমাদের ভালোবাসাটা না হয় অপূর্ণতার লিস্টেই থাক। আমি চাই খুব তাড়াতাড়ি তোমার জীবনে নতুন করে আবারো #একটা_বসন্ত_বিকেল আসুক। হয়তো বা আমার জীবনেও নতুন কোনো #একটা_বসন্ত_বিকেল আসবে, হয়তো বা আসবে না। তবে চাই তোমার জীবনে আসুক। তোমরা সুখটা আমি দেখতে চাই। আমাকে না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণাটা তোমার মাঝে দেখতে চাই না আমি, একদমই দেখতে চাই না।”

দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো শ্রাবণ। আয়াত লাইট অন করেই বিছানার এক কোনে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো ও। আয়াতের দিকে ক্ষানিকটা ঝুকলো। ওর চোখের কার্নিশে পানিগুলো শুকিয়ে আছে। তারমানে মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়েছে? শ্রাবণ তপ্ত শ্বাস ফেললো একটা৷ আয়াতের কাছ থেকে সরে এসে ঘরের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করলো। সোফায় বসে বেশ ক্ষানিকটা সময় তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত আয়াতের দিকে।

এতক্ষণ যাবত স্টাডি রুমে বসে ওর মায়ের কথাগুলোই ভাবছিলো। কথাগুলো একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো না। মেয়েটাকে শুধু শুধুই কষ্ট দিচ্ছে ও। মনে মনে ঠিক করে নিলো আয়াতের সাথে আর রুঢ় বিহেভিয়ার করবে না ও। আর পাঁচটা কাপলের মতোই স্বাভাবিক বিহেভিয়ার করবে। স্বাভাবিক হতে হবে ওকে। সবাইকে নিজের বাবার মতো ভাবলে চলবে না। একটা মেয়েকে যেহেতু নিজের জীবনের সাথে জড়িয়েছে তাহলে তাকে তার প্রাপ্যটা তো দিতেই হবে। নানান রকম চিন্তাভাবনা শেষে বিছানাতেই শুতে গেলো আজ। তবে মাঝে বর্ডার হিসেবে কোলবালিশ তো আছেই। ভাবলো কালই এ বিষয়ে কথা বলবে আয়াতের সাথে। কথা বলেই সবটা স্বাভাবিক করে নিবে।

সকালে ঘুম ভেঙে শ্রাবণকে বিছানায় দেখে ক্ষানিকটা অবাক হলো আয়াত। পরমূহুর্তেই ভাবলো এটা শ্রাবণের ঘর, শ্রাবণের যেখানে ইচ্ছে ঘুমাতে পারে। আর শুধুমাত্র ওর পাশে শোয়ার নয়, আয়াতের সবকিছুর উপরই এখন সবথেকে বেশি অধিকার এই শ্রাবণেরই। এই ভেবে উঠে দাঁড়ালো আয়াত৷ ফ্লোরের দিকে চোখ যেতেই দেখলো পুরে ছাঁই হয়ে যাওয়া শাড়িটা৷ কাল রাতের কথা মনে হতেই আবারো একরাশ মন খারাপ এসে হানা দিলো। ভীষণ পছন্দের শাড়ি ছিলো ওটা৷ আয়াত একজন সার্ভেন্টকে ডেকে ফ্লোর পরিষ্কার করতে বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

সাড়ে আটটা বাজে। শ্রাবণ তখনো ঘুমোচ্ছে। আয়াত নিচে সানিয়া মেহরাবের সাথে বসে গল্প করছিলো। শানও ঘুম থেকে উঠেনি এখন অব্দি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সানিয়া মেহরাব বললো,
–“শ্রাবণ আজ উঠেনি এখনো?”
–“আমি বের হওয়ার সময় ঘুমেই ছিলো।”
–“যা তো, ঘুম থেকে ডেকে তোল। নাস্তা ঠান্ডা হয়ে যাবে আবার৷ আমি গিয়ে শানকে ডাকছি।”
–“আমি ডাকবো?”
–“তোর বর, তুই ডাকবি না তো কে ডাকবে?”

আয়াত কিছু বললো না। চুপচাপ উঠে উপরে নিজেদের ঘরে চলে গেলো। ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলো শ্রাবণ তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন৷ উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। আয়াত গুটিগুটি পায়ে শ্রাবণের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। শ্রাবণের দিকে কিছুটা ঝুকে ওকে ডাকার আগেই চোখ মেলে তাকালো শ্রাবণ। মুখের উপর গরম নিশ্বাস পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় শ্রাবণের। নিজের দিকে আয়াতকে এভাবে ঝুঁকে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো শ্রাবণ। আচমকা শ্রাবণকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে আয়াত দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ালো। শ্রাবণ উঠে বসতেই আয়াত আমতা আমতা করে বললো,

–“আস্ আসলে আপনাকে ডাকার জন্যই ওভাবে__”
–“ইট’স ওকেহ৷”
–“আপ্ আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন, মা নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছে।”
শ্রাবণ সম্মতি জানিয়ে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। শ্রাবণ পিছন ঘুরে দেখলো আয়াত বিছানা ঠিক করছে। কিছু একটা ভেবে শ্রাবণ বললো,
–“আয়ু?”

আচমকা শ্রাবণের মুখে নিজের নাম শুনে তড়িৎ শ্রাবণের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো আয়াত। এই অব্দি শ্রাবণ কখনো ওর নাম ধরে ডাকেনি, আজই প্রথম। আয়াতকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণ বললো,
–“কাল রাতের জন্য আ’ম স্যরি৷ আমার ওভাবে রিয়্যাক্ট করা ঠিক হয়নি।”
আয়াত তখনো অবাক চোখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা ওকে স্যরি বলছে? আয়াত যেন মানতে পারছে না এটা৷ শ্রাবণ বললো,

একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ১০

–“কি হলো? কি ভাবছো?”
আয়াত হকচকিয়ে যায় শ্রাবণের কথায়। আমতা আমতা করে বলে,
–“কি্ কিছুনা।”
–“স্যরি এক্সেপ্ট করেছো?”
আয়াত মাথা নাড়াতেই শ্রাবণ ওয়াশরুমের দরজা আটকে দিলো।

একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ১২