একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ৭

একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ৭
অরনিশা সাথী

বাসায় ঢুকতেই দরজার সামনে শ্রাবণের মুখোমুখি হয় আয়াত। ফোনে কথা বলতে বলতেই বাসা থেকে বের হচ্ছিলো। আয়াত সরে দাঁড়াতেই শ্রাবণ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলো। শ্রাবণকে এসময় ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো আয়াত৷ আয়াতকে অবাক চোখে শ্রাবণের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইরা বললো,

–“ওভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন লোকটার দিকে?”
–“উনি আমাদের বাসায় কি করছে?”
ইরা বিরক্ত হয়ে বললো,
–“তুই আর আমি তো সবেই বাসায় ফিরলাম। তুই না জানলে আমি কি করে জানবো? আশ্চর্য!
আয়াত তপ্ত শ্বাস ফেলে বাসায় ঢুকতেই দেখতে পেলো শান আর সানিয়া মেহরাব সোফায় বসে আছে। সাথে আয়াতের দুই মামা আর রাফিয়াও আছে। ইরফান চৌধুরীর সাথে কথা বলছে সানিয়া মেহরাব। শান আয়াতকে দেখতে পেয়ে উঠে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। একগাল হেসে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“চমকেছো?”
–“ভীষণ।”
–“এর থেকেও বড় চমক অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।”
–“মানে?”
শান আর কিছু বলার আগেই সানিয়া মেহরাব আয়াতকে কাছে ডাকলেন। ইরা আয়াতের হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে আয়াতের ঘরে চলে গেলো। সানিয়া মেহরাব আয়াতকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে বললো,

–“সকালে বেরিয়ে এখন ফিরলে, নিশ্চয়ই টায়ার্ড? ফ্রেস হয়ে রেস্ট নাও।”
আয়াত সম্মতি জানিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। ইরা ওয়াশরুমে, নিশ্চয়ই শাওয়ার নিচ্ছে। তাই আয়াত বেরিয়ে কিচেনে চলে গেলো। আয়াতকে দেখে আশা চৌধুরী বললো,
–“গোসলে যাসনি এখনো? গোসল সেরে নে দ্রুত।”
–“ইরা গেছে।”
–“আয়াশের বা আমাদের ওয়াশরুমে চলে যা।”

আয়াত সম্মতি জানিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়েও গেলো না। আশা চৌধুরীর নিকটে দাঁড়িয়ে বললো,
–“মামারা, আর সানিয়া আন্টি হুট করে আমাদের বাসায় যে?”
–“শ্রাবণের জন্য তোর বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে বড় ভাইজান।”
ভ্রু কুঁচকে গেলো আয়াতের। কথাটা যেন ঠিক হজম হলো না ওর। বিস্ময় নিয়ে বললো,
–“কি বললে?”

–“তোকে দেখতে এসেছে উনারা।”
–“আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না আম্মু।”
–“গোসলটা সেরে নে, তারপর তোর আব্বুকে যা বলার বলিস।”
–“আম্মু প্লিজ, বোঝার চেষ্টা করো।”
আশা চৌধুরী এবার আয়াতের দিকে মনোযোগ দিলো। মেয়েটার চোখে পানি। আশা চৌধুরী মেয়ের গালে হাত রেখে বললো,

–“ফারাবীর তো বিয়ে হয়ে গেছে মা, তাহলে তোর বিয়েতে সমস্যাটা কোথায়?”
–“আম্মু আমি তো বলিনি বিয়ে কখনো করবো না কিন্তু আমাকে একটু সময় তো দিবে?”
–“আজ হোক, কাল হোক বিয়ে তো করতেই হবে। তাহলে সেটা এখন হলে সমস্যা কি?”
আয়াত কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতেই চলে গেলো ঘরে। ইরা ততক্ষণে গোসল সেরে বেরিয়েছে। আয়াতকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে গেলো ইরা। জিজ্ঞেস করলো ও কাঁদছে কেন? আয়াত ইরাকে জাপ্টে ধরে এবার শব্দ করেই কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

–“আমি বিয়ে করতে চাই না ইরু, চাই না বিয়ে করতে।”
ইরা আয়াতের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“দেখতে এসেছে?”
আয়াত সম্মতি জানালো। ইরা হালকা হেসে বললো,
–“আরেহ পাগলী দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না।”

আয়াত কিছু না বলে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে শাওয়ার অন করেই কাঁদতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে বসে পড়লো। হাটুতে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ফারাবীর মুখটা বারবার ভেসে উঠছে। এভাবে অনেকটা সময় যাওয়ার পর দরজায় কড়া নেড়ে ইরা বললো,
–“আয়ু গোসল হয়নি? আংকেল এসেছে, কথা বলবে তোর সাথে।”
–“আসছি।”

কথাটা বলার মিনিট দশেক বাদে বেরিয়ে এলো আয়াত। ইরা আয়াতের হাত থেকে ভেজা জামা নিয়ে ব্যালকোনিতে মেলে দিয়ে আসলো। ইরফান চৌধুরী মেয়েকে কাছে ডাকলেন। ধীর পায়ে এগিয়ে বাবার পাশে গিয়ে বসলো আয়াত৷ ইরফান চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

–“কি হয়েছে আমার মেয়ের? কেঁদেছে কেন?”
–“আব্বু আমি___”
–“তুমি বলার আগে আমি কিছু কথা বলি?”
আয়াত সম্মতি জানালো। ইরফান চৌধুরী বললো,

–“আমি জানি তুমি ফারাবীকে ভালোবাসতে অনেকটা। হয়তো এখন ভালোবাসো। ফারাবীর যদি বিয়ে না হতো তাহলে নিঃসন্দেহে ফারাবীর সাথেই তোমার বিয়ে দিতাম। কারণ তোমার খুশিতেই আমরা সকলে খুশি মা। কিন্তু এখন তো এরকমটা হওয়ার নয়। আর ফারাবীর জন্যও তোমার জীবন থেমে থাকবে না। তুমি যদি অন্যকারো সাথে নিজেকে না জড়াও তাহলে ফারাবীকে সহজে ভুলতে পারবে না।

কষ্ট হবে ভীষণ তোমার। তাই যতদ্রুত অন্যকারো সাথে নিজের জীবন জুড়ে নিবে তত তাড়াতাড়িই ফারাবীকে ভুলতে সক্ষম হবে তুমি। হয়তো বা ভুলতে পারবে না, কিন্তু তোমার কষ্টটা আর হবে না মা। প্রথম প্রথম কষ্টটা একটু বেশিই হবে। কিন্তু শ্রাবণের সাথে থাকতে থাকতে অবশ্যই সবটা ঠিক হয়ে যাবে৷ বিয়ে পবিত্র সম্পর্ক। সয়ং আল্লাহ তা’আলা জুটি নির্ধারণ করে রাখেন। বিয়ের পর তিনিই মায়া মহব্বত সৃষ্টি করে দিবে একে-অপরের প্রতি। কিন্তু মা তোমাকেও তো চেষ্টা করতে হবে। তুমি যদি এখন ফারাবীর জন্য বিয়ে করবে না বলে বসে থাকো এতে তোমার কষ্ট বাড়বে, কমবে না।”

কথাগুলো বলে ইরফান চৌধুরী থামলেন। আয়াত চুপচাপ বাবার কথাগুলো শুনে গেলো। ওর চোখ দিয়ে তখনো টপটপ করে পানি পড়ছিলো। আয়াত চোখের পানিগুলো মুছে বললো,
–“কিন্তু আব্বু এখনই কেন এসব নিয়ে ভাবতে হবে? আমাকে সামলে নেওয়ার সময়টা দিবে না?”
ইরফান চৌধুরী বললেন,

–“আগে ফারাবীর বিয়ে করে নেওয়ার কারণটা তুমি জানতে না আয়ু৷ কিন্তু এখন জানো কোন পরিস্থিতিতে ফারাবী বিয়েটা করেছে৷ তাই তুমি চাইলেও নিজেকে সামলে নিতে পারবে না অত সহজে। কারণ তুমিও জানো ফারাবী শুধু তোমায় ভালোবাসে। রাইতার সাথে একঘরে থাকলেও ওর দিকে ঘুরেও তাকায় না৷ মাস খানেক আগেই কথাগুলো জানতে পেরেছো তুমি। তার পর থেকেই ফারাবীর প্রতি আবারো নরম হয়ে এসেছো তুমি।

যা তোমার, ফারাবীর বা রাইতার কারো জন্যই ভালো না। ওদের বিয়ে হয়ে গেছে ওরা নিজেদেরটা নিজেরা বুঝে নিবে। হ্যাঁ ফারাবী বোধহয় এখনো ভালোবাসে তোমাকে। কিন্তু রাইতার সাথে থাকতে থাকতে একসময় ওদের মাঝেও ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। আল্লাহ ফারাবীকে রাইতার জন্য বানিয়েছিলো তাই হয়তো এত ভালোবাসারও পরও তোমরা এক হতে পারোনি। ছল চাতুরী করে হোক আর যেভাবেই হোক ফারাবী আর রাইতার বিয়েটা হয়ে গেছে আয়ু৷ বিয়েটা তো আর মিথ্যে না।”

আয়াত এবারেও কিছু বললো না। ও নিজেও চায় যা হয়েছে, হয়েছে। রাইতা ওর শাস্তি ঠিক পাবে৷ কিন্তু বিয়েটা যেহেতু একবার হয়ে গেছে তাই ও আর ফারাবী-রাইতার মাঝে থাকতে চায় না। তাই বলে এক্ষুনি নিজে বিয়ে করে নেওয়ার কথা চিন্তাও করেনি। তার উপর আবার শ্রাবণকে? এটা তো কল্পনাতেও ভাবে না ও। আয়াতকে চুপ থাকতে দেখে ইরফান চৌধুরী বললো,

–“আমার বোঝানোর দরকার আমি বুঝিয়েছি এবার সিদ্ধান্ত তোমার। আমরা জোর করে কিছুই চাপিয়ে দিবো না তোমার উপর। তুমি যা বলবে তাই হবে।”
এই বলে উনি আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ইরা এসে বসলো আয়াতের পাশে। আয়াত ইরার কাঁধে মাথা রেখে বললো,
–“কি করবো আমি এখন? আব্বুর কথাগুলো একেবারে ফেলনা নয় আমি জানি। কিন্তু__”
–“আবার কিন্তু আসছে কেন আয়ু?”
–“ফারাবী__”

–“তুই নিজেই তো লাস্ট যখন ফারাবীর সাথে দেখা করলি তখন ওকে বলে এসেছিস ওদের সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে। তাহলে তুই নিজে কেন একটা সুযোগ নিতে পারবি না বল? আর ফারাবীকে ওই কথাগুলো বলার এক মাস হয়ে এসেছে। ফারাবী কি চেষ্টা করেনি বল? অবশ্যই করেছে, নয়তো এরপর কি আর কোনো ফোন/ম্যাসেজ করেছিলো তোকে?”

–“ফোন দেয়, ব্লক করে রেখেছি আমি।”
আয়াতের কথায় তপ্ত শ্বাস ফেলে ইরা বললো,
–“আংকেল তো বললো সব তোর উপর ডিপেন্ড করছে, ভাব তুই।”

–“সব ঠিক আছে ইরু, কিন্তু এই লোকটার সাথে কিভাবে বল? শ্রাবণ প্রচন্ড একরোখা গম্ভীর জেদি একজন মানুষ। কথা বলে না সহজে। সাতদিন ঢাকায় থেকেছি কখনো সামনে পড়লেও তাকায়নি, কথা বলেনি। চট্টগ্রাম উনার সাথে এসেছিলাম আমি। সারা রাস্তায় একবারো কথা বলেনি। প্রচুর এটিটিউড লোকটার। তাছাড়া একটু আগেই তো দেখলি দেখা হলো অথচ মুখে কোনো হাসি নেই, সেই গুরুগম্ভীর করে রেখেছে মুখটা। মনে হয় ধরে বেঁধে নিয়ে আসা হয়েছে উনাকে। উনার সাথে সারাজীবন থাকবো কি করে আমি? উনার থেকে তো শানও অনেক ভালো।”

–“বিয়ের বিষয়ে কাউকে জোর করা যায় আয়ু? তার উপর পুরুষ মানুষ। উনার সম্মতি না থাকলে উনি নিশ্চয়ই এখানে আসতো না।”
আয়াত আর কিছু বলার আগেই আয়াশ আসলো। ওকে দেখে চুপ হয়ে গেলো আয়াত। আয়াশ এসে বোনের পাশে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“কেঁদে কি হাল করেছিস নিজের? তোর উপর তো জোর নেই আয়ু, আব্বু তো বলেছে তোর উপর সবটা ডিপেন্ড করছে৷ তুই রাজি না থাকলে বলে দে। কাঁদছিস কেন পাগলী।”

আয়াত কিছু না বলে আয়াশকে জড়িয়ে ধরে বসলো। বেশ কিছুক্ষণ নিরব থাকে আয়াত। ভাবে ও বিয়েটা করে নিলে হয়তো ফারাবী নিজের জীবনের দিকে এগোবে। সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করবে। এসব ভেবেই আয়াত ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,

–“তোমরা যা ভালো বুঝো করো।”
–“উঁহু, বলা হয়েছে তো সম্পূর্ণটা তোর উপর নির্ভর করছে। সেখানে আমাদের চাওয়া-পাওয়া থাকবে না। তোর হ্যাঁ/না দুই সিদ্ধান্তেই আমরা খুশি।”
–“তোমরা নিশ্চয়ই আমার খারাপ চাইবে না? তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো। তোমাদের সকল সিদ্ধান্তে আমিও খুশি আছি।”

গাঢ় গোলাপী রঙের কাতান শাড়ি পড়ে নিজের ঘরে বসে আছে আয়াত৷ সানিয়া মেহরাব সাথে করে শাড়ি আর প্রয়োজনীয় সকল গয়না নিয়ে এসেছে। তার মানে উনি বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলো একেবারে। ইরা আর রাফিয়া মিলে আয়াতকে সাজিয়ে দিলো। রাফিয়া আয়াতের পাশে বসে বললো,

–“আমার ক্রাশ আজ থেকে তোর বর হয়ে যাবে ভাবা যায়?”
আয়াত তাকালো রাফিয়ার দিকে। ভেবেছিলো রাফিয়ার চোখে কষ্টের ছাপ দেখা যাবে। যেভাবে সবসময় ক্রাশ ক্রাশ করতো। কিন্তু আয়াত ওর চোখমুখে আজ দুষ্টুমির ছাঁপ দেখছে। তবুও আয়াত বললো,
–“উনি না তোর ক্রাশ? আমি ভাইয়াকে বলি সব? তাহলে আজ এখানে তোর সাথেই উনার বিয়েটা হলেও হতে পারে।”
রাফিয়া চোখমুখ কুঁচকে বললো,

–“এই একদম না। মানলাম শ্রাবণ ভাইয়া আমার ক্রাশ। কিন্তু উনার মতো আনরোমান্টিক এ্যারোগ্যান্ট মানুষকে বিয়ে করে আমি সারাজীবন নিরামিষ হয়ে থাকতে পারবো না৷”
রাফিয়ার কথায় ইরা শব্দ করে হেসে দিলো। আয়াত অন্যদিকে তাকালো। এমন সময় ড্রয়িংরুম থেকে ডাক পাঠালো আয়াতকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আয়াতের মন দুরুদুরু করছে। বুকের ভিতর চিনচিনে কষ্ট অনুভব করছে ফারাবীর জন্য। আজকের পর থেকে ওই মানুষটাকে একতরফা ভাবেও ভালোবাসার অধিকারটা ওর থাকবে না। আয়াতকে নিয়ে শ্রাবণের পাশে বসানো হলো।

সব নিয়ম কানুন মেনে ঘরোয়া ভাবেই আয়াত আর শ্রাবণের বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ এসেছে পর থেকে শ্রাবণ প্রয়োজনীয় ব্যাতিত একটা কথাও বলেনি। ইরফান চৌধুরী এমন ভাবে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিতে কিছুতেই ইচ্ছুক ছিলেন না। কিন্তু সানিয়া মেহরাব এমন ভাবে আয়াতকে চাইলেন নিজের ছেলের জন্য তখন উনি আর দ্বিমত করতে পারেনি। আটটা নাগাদ ওদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলে সকলে একসাথেই ডিনার করতে বসে।

অতঃপর খাওয়া-দাওয়া শেষে ওরা সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। যাওয়ার সময় মা ভাই বাবাকে জড়িয়ে ধরে আয়াতের সেকি কান্না। ইরা আর আয়াত দুজন দুজনকে কিছুতেই ছাড়ছিলো না। সানিয়া মেহরাব আয়াতকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। অতঃপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সকলে।

সাড়ে দশটা নাগাদ মেহরাব ম্যানশনে এসে পৌঁছায় আয়াত ওরা। টুকটাক নিয়ম কানুন পালণ করে রাফিয়া গিয়ে আয়াতকে শ্রাবণের ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসলো। পুরো ঘরটা ফুলে ফুলে সাজানো। শান ফোন করে দিহানকে বলতেই দিহান ওর আর শ্রাবণের বন্ধুদের নিয়ে পুরো ঘরটা সাজিয়ে রাখে। শ্রাবণ ঘরে ঢুকতে গেলেই ওর বন্ধুরা দরজায় আটকায় ওকে বাসরঘরের টাকা নেওয়ার জন্য। শ্রাবণ কথা না বাড়িয়ে ওয়ালেট বের করে দিহানের হাতে দিয়ে দিতেই শ্রাবণের বন্ধু নিহান বললো,

–“বাহ, তোর দেখি আর তর সইছে না শ্রাবণ৷ আমরা এমাউন্ট বলার আগেই তুই পুরো ওয়ালেট ধরিয়ে দিলি আমাদের।”
–“টায়ার্ড আমি, কথা বাড়াতে চাই না। তাই তোরা ঝামেলা করার আগেই দিয়ে দিলাম।”
গম্ভীর স্বরে কথাগুলো বলে ভিতরে চলে গেলো শ্রাবণ। শ্রাবণের পেছন পেছন রাফিয়া আর শানও গেলো। রাফিয়া খুব ভয়ে ভয়ে বললো,

–“শ্রাবণ ভাই, একটু আয়াতের পাশে বসবেন প্লিজ? কয়েকটা ছবি নিতাম।”
শ্রাবণ হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতেই জবাব দিলো,
–“প্রয়োজন নেই।”
–“শ্রাবণ ভাই প্লিজ।”
রাফিয়ার কাঁদো কাঁদো কন্ঠস্বর শুনে একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে শ্রাবণ আয়াতের পাশে বসে পড়লো বেশ দূরত্ব রেখে। তা দেখে শান ওদের একটু চেপে বসতে বললো। শ্রাবণ রাগী চোখে তাকাতেই শান বললো,
–“আজকেই তো প্লিজ।”

শ্রাবণ আর কিছু বললো না৷ আয়াতের পাশ ঘেঁষে বসলো। রাফিয়া আর শান বেশ কয়েকটা ছবি তুলে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। শ্রাবণ দরজা আটকে দিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। বেশ কিছুক্ষণ বাদে ফ্রেশ হয়ে এসে চুপচাপ ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসলো শ্রাবণ।

একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ৬

আয়াত গুটিগুটি পায়ে উঠে লাগেজ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানার এক কোনে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। শ্রাবণ এক পলক আয়াতের দিকে তাকিয়ে আবারো মনোযোগ দিলো ল্যাপটপে। কিন্তু এই মূহুর্তে কাজে মন বসাতে পারছে না ও। তাই ওঠে ব্যালকনিতে চলে গেলো।

একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ৮