একটুখানি আশা গল্পের লিংক || মেহরাফ মুন(ছদ্মনাম)

একটুখানি আশা পর্ব ১
মেহরাফ মুন(ছদ্মনাম)

বিয়ের একদিন আগেই মুন জানতে পারলো তাঁর হবুবর একজন মাফিয়া। এত বড়ো ধোঁকা খাবে তা মুন ভাবেনি
আজ বিয়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করার জন্য তাঁর মা জোর করে তাঁর কাজিন আরিফার সাথে পাঠিয়েছে শপিংমলে। সব কেনাকাটা শেষে রিকশা করে বাড়ি যাওয়ার সময় এমন কিছু দেখে মুন যেন চোখের পলক ফেলতেই ভুলে গেল।
মুনকে এক দৃষ্টিতে আরিফার পাশ দিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও মুনের নজর অনুসারে ঐদিকে তাকিয়েই স্তব্ধ হয়ে গেল। ‘আহান ভাইয়া’ বলে বিড়বিড় করে উঠলো আরিফা।

-‘মুনাপু এটা আহান ভাইয়া, না?’ আরিফা কোনোমতেই মুনকে জিজ্ঞেস করল।
মুন যেন কথার খেও হারিয়ে ফেলেছে। আরিফা আবারও বলে উঠলো,’এই মেয়েটা কে? আর হাত ধরাধরি করে এমন হোটেল থেকেই কেন বা বের হচ্ছে?’ এটা বলতে বলতে আরিফা রিকশাওয়ালা মামাকে হাত দিয়ে ইশারা করল রিকশা থামানোর জন্য।
রিকশা থামার পরে আরিফা খুব দ্রুত নেমে পড়লো রিকশা থেকে। মুনকে উদ্দেশ্য করে ডাক দিতেই মুনের হুঁশ ফিরলো। সেও দ্রুত রিকশা থেকে নেমে পড়লো। মুন আহানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আহান সাথে সাথেই ভুত দেখার মত চমকে উঠলো আর কোনোমতে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘মুনননন তুমিই এখানে?’
-‘কেন রঙলিলা করতে কী শুধু আপনারাই পারেন? আমরা কী আসতে পারি না?’ মুন ভেতরে ভেতরে কষ্টে ফেটে যাচ্ছে কিন্তু উপরে কাওকে এটা দেখাতে চাচ্ছে না।
-‘মুন তুমি ভুল বুঝছো, দেখো রিয়া আমার জাস্ট ফ্রেন্ড।’
-‘হ্যাঁ কেমন জাস্ট ফ্রেন্ড তা তো বুঝতে পারছিই।’ মুন আহান আর রিয়ার হাত ধরার দিকে তাকিয়েই বলল।
আহান তা দেখে রিয়ার হাত ছেড়ে দিল।

-‘ভুলে যান এই বিয়ে আর হবে না।’ মুন দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে বলল।
-‘মুন বোঝার চেষ্টা করো, আমি তোমায় ভালোবাসি। এই বিয়ে ভাঙতে দিয়ো না।’
-‘যে ছেলে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও বিয়ের আগেরদিন অন্য মেয়ের সাথে ফস্টিনঃষ্টি করে হোটেল থেকে বের হতে পারে সেই ছেলের আর কী গ্যরান্টি? আর আমি আপনার সাথে এত কথা বলছি কী জন্য? আমি এখনই বাসায় গিয়ে আপনার এই ভালোর মুখোশটা টেনে-ছিঁড়ে এই মুখোশটা দেখিয়ে দিব।’ এই বলেই মুন বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিলেই আহান মুনের উড়নার এক কোনার অংশটা টেনে ধরলো।

মুন পিছন ফিরেই দেখল আহান তাঁর উড়নার অংশ টেনে ধরে বাঁকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখন আহানকে দেখতে অসভ্যের চরম পর্যায়ে মনে হচ্ছে।
-‘এখন যদি এখান থেকে আর ফিরতেই না পারো? তাহলে কীভাবে বলবে তুমি আমার মুখোশের কথা? আর বললেও তোমার কথা প্রমান ছাড়া কীভাবে বিশ্বাস করবে সবাই?’ আহান মুনের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে বলে উঠলো।
-‘মমানে?’মুন কোনোমতে বলে উঠলো।

-‘মানে সিম্পল, তুমি তো এই বিয়েতে রাজী ছিলে না। পরিবারের দিকে তাকিয়ে রাজী হয়েছিলে এটা তো সবাই জানে। তাহলে এখন মনে করবে তুমি এই বিয়ে না করার জন্যই এমন করছো।’
মুন মনে মনে ভাবল তাই তো। কেন যে আগ-বাড়িয়ে এখানে আসতে গেল চুপে চুপে মোবাইলে ছবি তুলে নিয়ে পরিবারকে দেখালেই তো হতো, মুনের এখন নিজের মাথায় বাড়ি মারতে ইচ্ছে হচ্ছে । মুনের ভাবনার মাঝেই আহান আবারও বলে উঠলো,

-‘হোটেলে আসছি যখন হবু বউয়ের সাথেও একটু টাইম স্পেন্ড করি? কী বলো। আর এর মুখ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা তো আমি করব।’আহান আরিফার দিকে তাকিয়ে বলল।
আরিফা তা দেখেই আহানের দিকে রাগীভাবে এগিয়ে এসেই আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলল,
-‘কী করতে পারবেন আপনি? মুনাপুকে ছেড়ে দেন নাহলে কিন্তু পরিবারের সবাইকে আমিই বলবো আপনার কথা। মুনাপুর কথা বিশ্বাস না করলেও আমার কথা কিন্তু বিশ্বাস করবে।’

আরিফার কথায় আহান বাঁকা হেসে রিয়াকে কিছু একটা ইশারা করতেই রিয়া ‘হ্যাঁ’ বোধক মাথা নেড়ে আরিফার সামনে গিয়ে মোবাইলে কিছু একটা দেখাতেই আরিফা রাগী চোখে আহানের দিকে তাকাতেই আহান বাঁকা হেসে বলে উঠলো,
-‘তুমি বাসায় গিয়ে মুখ খুললে এদিকে তোমার ভালোবাসাকে চিরতরে হারাবে। এখনো কী পরিবারকে গিয়ে বলবে আরিফা?’
আরিফা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইল। একদিকে মুনাপুর ভবিষ্যত আর অন্যদিকে তাঁর ভালোবাসা। তাঁর মানে কী আহান সত্যিই খারাপ? পরিবারের সামনে ভালোর মুখোশ পড়ে থাকে। আরিফার এখন ভয় লাগছে রিহানের জন্য। এদিকে পরিবারকে বললে সত্যিই কী আহান ভাইয়া রিহানকে মেরে দিবে? আরিফা কী করবে মাথায় আসছে না।

মুনের গা রি রি করে উঠলো আহানের এমন কথায়। আরিফা ভীত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল মুনের দিকে। সে এখন কী করবে বুঝতে পারছে না। পাশেই কয়েকজন হোটেলের মানুষ তাকিয়ে দেখে রইল কিন্তু কেউ সামনে এগিয়ে আসছে না। আহানকে তারা কী এত ভয় পায়? আহানও এখানে কাওকে ভয় পাচ্ছে না। তাঁর মানে কী আহান..! আরিফা ভাবনাতে এমন কিছু আসতেই সে জড়োসড়ো হয়ে কাঁপতে লাগলো। তাঁর এখন মুন আপুর জন্য অনেক আফসোস হচ্ছে, কেন যে আগ বাড়িয়ে এখানে আসতে গেল।

মুন রাগী চোখে আহানের দিকে তাকালো। যদিও সে ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভয় পাচ্ছে তবুও উপরে ভয়টা দেখালে চলবে না, তাঁর যেভাবেই হোক এই বিয়েটা ভাঙতে হবেই। মুন এমনিও এই বিয়েতে রাজী ছিল না তাঁর ভিন্নদেশে পড়ার ইচ্ছে ছিল ভীষণ করে। তবুও পরিবারের জোরাজুরিতে সে রাজী হয়েছিল। তাঁর উপর আজকে এমন একটা ঘটনা দেখে এই বিয়ে কিছুতেই করবে না মুন।

-‘কী বেবি? নিব না-কি রুম আবার আমাদের জন্য?’ আহান বিশ্রীভাবে হেসে বলল।
-‘আপনাকে যতটুকু ভেবেছি তাঁর চেয়ে বেশি অসভ্য আপনি। কাপুরুষ। আমার পথ ছাড়ুন নাহলে কিন্তু খারাপ হবে।’
-‘হবুবউ বলে ছেড়ে দিলাম আজকে। বিয়ের আগে খারাপ হতে চায় না। নাহলে আমাকে কাপুরুষ ডাকার ফল দেখিয়ে দিতাম। এর ফল বিয়ের পর প্রতি পদে পদে পাবে। তোমার এই অহংকার দেখিয়ে দিব আর মাত্র দুইদিন।’ আহান পথ ছেড়েই বলল।
মুন দ্রুত আরিফার হাত ধরে ওখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই আহান বলে উঠলো,
-‘বাসায় মুখ খুললেই খবর আছে, তোমার মেসেঞ্জারে সারপ্রাইস হিসেবে পাঠিয়েছি একটা, বাসায় বললে ওই ফলটা তুমিও পাবে।’

মুন না শোনার ভান করে রিকশায় উঠে গেল। রিকশায় উঠতেই মুনের মেসেঞ্জারে টুং করে শব্দ হলো। মুন মোবাইল চোখের সামনে ধরতেই আহানের পাঠানো ছবিগুলো দেখে কেঁপে উঠলো। পাশ থেকে আরিফা উঁকি দিয়ে দেখতেই সেও ভয়ার্ত চোখে মুনের দিকে তাকালো। আহানের ছবিগুলো ছিল মূলত কোনো মানুষকে খুন করার। মানুষ এতটাও নৃশংস হতে পারে? শেষ পর্যন্ত এমন মানুষের কপ্পরে পড়লো মুন?

-‘মুনাপু কী করবে এখন? পরশুদিন তোমার ওই অসভ্যটার সাথে বিয়ে। বাবা চাচাদের কী বলবে? এত্তো খারাপ মানুষের সাথে কীভাবে সংসার করবে? আরিফ ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে উঠলো।
-‘আর যায় হোক এমন মানুষকে তো জীবনেও বিয়ে করব না আমি।’ মুন শক্ত কণ্ঠে বলল।
-‘কিন্তু ওই ছবিগুলোর মত কিছু করলে? আপু আমার ভীষণ ভয় করছে। ওরা রিহানের খোঁজও পেয়ে গেছে।’
-‘আচ্ছা তোকে তখন ওই মেয়েটা মোবাইলে এমন কী দেখিয়েছিলো যে তুই এত ভয় পেলি?’
-‘আমার বফ রিহানের উপর টার্গেট করে রেখেছিলো। কেউ একজন রিহানকে ফলো করছিলো। যখন দেখিয়েছিলো রিহানা তখন বাইকে জ্যামে ছিল।’ আরিফা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল।

-‘চিন্তা করিস না, আমি আছি।’ মুন শান্ত কণ্ঠে চলন্ত রিকশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।
-‘আপু আমার তোমার জন্য ভীষণ ভয় করছে। আহান ভাইয়ার ভালো মানুষের আড়ালে এই মুখোশটা তো আমাদের পরিবারের কেউই জানে না, উনি একজন মাফিয়া এটা তো কেউ জানে না। সবাই জানে উনি অনেক ভালো, ভদ্র ছেলে।’

মুন আরিফার কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কী করবে সে বুঝতে পারছে না। কালকের দিন বাদে পরশুদিন তাঁর বিয়ের জন্য বাবা, চাচারা সব কিছু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে। পরিবারের বড়ো মেয়ে বলে কথা! সেও সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজী হয়েছিল, আহানকে তাঁর পছন্দ না তবুও মনে করেছিল মানিয়ে নিবে কিন্তু আজ এমন এক ঘটনা দেখে কেমনে বিয়ে করবে সে? বাবা, চাচারাও প্রমান ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করবে না।

একটুখানি আশা পর্ব ২