একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৫

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৫
সাদিয়া জাহান উম্মি

নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে হাটছে ইশি।গন্তব্যে এখন শিকদার উদ্দেশ্যে।মনটা বিষাক্ত হয়ে আছে ওর।পারছে না চিৎকার করে কাঁদতে।জীবনটা কেন এমন দূর্বিষহ ওর?কেন এতোটা নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে হয় ক্ষনে ক্ষনে।কেন একটা নরমাল ফ্যামিলির মতো জীবনটা উপভোগ করতে পারে না ও।ইশির দু চোখ বেয়ে টসটসে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো।তা সন্তর্পনে মুছে নিলো ইশি।শিকদার বাড়ি এসে পরেছে।মনটা ভালো নেই।সেই উদ্দেশ্যেই এখানে আসা প্রাহি আর হেমন্ত কেউ ওর ফোন রিসিভ করছে না।ভার্সিটিতেও আসিনি ওরা।তাই সোজা এখানে দুজনের সাথে দেখা করার জন্যে চলে এসেছে।ইশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলিংবেলে দুবার চাপ দিলো।কিয়ৎক্ষন বাদে দরজা খুলে দিলো বাড়ির একজন সার্ভেন্ট।ওপাশ থেকে হেমন্ত’র কন্ঠস্বর শোনা গেলো,

‘ কে এসেছে?’
‘ আমি হেমন্ত!’ ইশির ধীর জবাব।
হেমন্ত শীতল দৃষ্টিতে তাকালো ইশির দিকে।আজ সারাদিনে মেয়েটার সাথে একটুও কথা হয়নি।মনটা কেমন ছটফট করছিলো।ভেবেছিলো সন্ধ্যার পরেই ইশির সাথে দেখা করার জন্যে বেরোবে।কিন্তু এখন দেখি না চাইতেও চাঁদ হাতে পেয়ে গিয়েছে হেমন্ত।হেনা বেগম ইশির কন্ঠস্বর শুনেই গলা উচিঁয়ে ডাকলেন,
‘ ইশি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?এখানে আসো!’
ইশি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।কিন্তু ড্রয়িংরুমে সোফায় বসা সবার কাছাকাছি আসতেই ও থমকে গেলো।অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রাহির দিকে।ওর থমকানো দৃষ্টিতে এক আকাশসম বিষ্ময়।সেই সাথে ওর হাত-পা থরথর করে কাঁপছে।অর্থ’র কাধে মাথা রেখে চোখ বুজে থাকা প্রাহির দিকে তাকিয়ে আছে ও এলোমেলো চাহনী।হেমন্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দ্রুত এগিয়ে গেলো ইশির দিকে।অসহায় কন্ঠে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ ইশি হাইপার হবি না একদম।আমি তোকে সবটা বলছি।প্লিজ এরকম করিস নাহ।’
হেমন্ত ইশির হাত ধরতে নিতেই ইশি ছিটকে সরে গেলো।অর্থ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ও জানে প্রাহি,ইশি আর হেমন্ত কতোটা আপন একে-অপরের জন্যে। একজনের কিছু হলে অপরজনের কলিজা ফেটে যায় তা খুব ভালোভাবে জানে।তবে আপাততো ইশিকে বুঝাতে হবে।অর্থ বলে উঠে,
‘ ইশি দেখো হেমন্ত আর আমাদের সবাইকে বলার সুযোগ দেও একটু ওকে।’
ইশি ঢোক গিললো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
‘ কিভাবে হলো ওর এরকম?’

হেমন্ত অসহায়ভাবে একে একে সবটা বললো ইশিকে।ইশি সবটা শুনে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো প্রাহির দিকে।ডাকলো,
‘ এই প্রাহি! উঠ।তাকা আমার দিকে।আমার কথা শোন।তাকা!’
ঘরে ভালো লাগছিলো না দেখে অর্থ’র সাথে জিদ করে ড্রয়িংরুমে আসে প্রাহি।কিন্তু ঔষুধের করা ডোজে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলো ওর খেয়ালই ছিলো না।ইশির অনবরত ডাকে চোখ মেলে তাকায় প্রাহি। ইশিকে ওর সম্মুখে দেখে।চট করে চোখজোড়া স্বাভাবিকভাবে মেলে তাকায় প্রাহি।ওর দৃষ্টিতে ভয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ইশি ভাঙ্গা গলায় বলে,
‘ আমি কি তোদের এতোটাই পর যে তোর সাথে এতো বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলো আমাকে একবার ইনফোর্ম করার সুযোগ দিলি নাহ?আমি কি তোদের আপন কোনদিন হতে পারিনি?’
প্রাহির বুকটা ধ্বক করে উঠলো ইশির কন্ঠস্বর শুনে।প্রাহি অস্থির কন্ঠে বলে,
‘ ইশি আমি জানাতাম তোকে। এমন হয়ে যাবে ভাবিনি আকস্মিক এসব হওয়ায় তোকে জানানোর কথা ভুলে গিয়েছিলাম। তুই প্লিজ এইভাবে কথাগুলো বলিস নাহ!’

ইশির চোখ ভরে উঠলো।গাল গড়িয়ে পরতে লাগলো কষ্টের জলগুলো।ইশি তাচ্ছিল্যের কন্ঠে বলে,
‘ আমি তোদের কাছে কোন ইম্পোর্টেন্ট ব্যাক্তি না যে আমাকে তোরা কিছু জানাবি।ইম্পোর্টেন্ট হলে অবশ্যই আমাকে এইসব জানাতি।আমাকে তোরা তোদের জীবনে কিছুই মনে করিস না।আজ ফোন দিতে ভুলে গেছিস।দু’দিন পর পুরো এই আমিটাকেই তোরা ভুলে যাবি। মিছে মায়া সৃষ্টি করে আর কি লাভ বল?তোরা মুখেই বলে দে আমাকে তোরা আর চাস না।এখানেই নাহয় আমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাবে।’

হেমন্ত আর প্রাহির ইশির প্রতিটা কথায় হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে ওদের। হেমন্ত ইশির দুহাত ওর হাতে নিয়ে বলে,
‘ দেখ ইশি পরিস্থিতি ওরকম ছিলো না…..!’
ইশি একঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো।চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আরে কিসের কি পরিস্থিতি?হ্যা! প্রাহি অসুস্থ মানলাম।কিন্তু তুই?তুই কি একটাবার একমিনিটের জন্যে আমাকে ফোন দিয়ে এসব জানাতে পারলি নাহ?পরিস্থিতির কথা বলছিস আমাকে?’
একটু থেমে আবার তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,
‘ হাহ্ যারা আমাকে আপনই ভাবে না তাদের কাছে এসেছিলাম আমি আমার দুঃখগুলো সেয়ার করতে।এই জীবনে বোধহয় উপরওয়ালা আমার কপালে সুখ লিখেনি।না লিখেছে আপন বলতে কোন মানুষ।তোদের আপন ভেবেছিলাম কিন্তু তোরা তো আমাকে দু পয়সারও দাম দিলি নাহ।জীবনটা আমার এমন কেন বানালো আল্লাহ্! আত্মহত্যা পাপ না হলে তো কবেই এই নিঃশ্বাস ত্যাগ করে দিতাম।কেন মা’র সাথে সাথে আমাকেও নিয়ে গেলেন নাহ আল্লাহ্! ‘
প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘ এইভাবে বলিস না ইশি!’
ইশি দুহাতে চোখের জল মুছে নিলো।জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বলে,
‘ আমি তোদের উপর রেগে নেই যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।আর হ্যা কাল আমার এংগেজমেন্ট তোদের সবার দাওয়াত রইলো।পরিবার নিয়ে চলে আসিস।বাবা এদিক দিয়ে ভালোই করেছেন জলদি বিয়ে সাদি করে অনেক দূরে চলে যেতে পারবো তোদের থেকে।তোরা ভালো থাকিস।আসি!’
ইশি দৌড়ে চলে গেলো।এদিকে ইশি আর প্রাহি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ইশির প্রতিটা কথা শুনে।কি বলে গেলো ইশি এই মাত্র?ওর এংগেজমেন্ট তাও কাল?কিন্তু কিভাবে কি?কিসের দুঃখের কথা বলতে এসেছিলো ইশি?তবে কি ওর বাবা ওকে জোড়-জবরদস্তি বিয়ে দিচ্ছেন?মেয়েটা অনেক আঘাত পেয়েছে।অজান্তেই ওরা আজ ইশিকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।এমনিতেই মেয়েটা ছোট থেকে কষ্ট পেতে পেতে বড় হয়েছে।আর আজ ওদের থেকে এতোবড় একটা কষ্ট পেলো।মেয়েটা সহ্য করতে না পেরেই এইভাবে আজ কথাগুলো বলেছে।প্রাহি বামহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠলো।অর্থ প্রাহির মাথাটা বুকে চেপে ধরে বলে,

‘ কাঁদে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।ইশি এখন একটু বেশি কষ্ট পেয়েছে।তাই এইভাবে কথাগুলো বলেছে।একটু পর ও নিজেই সব বুঝতে পেরে ও নিজেই আসবে তোমার কাছে দেখো! আর হেমন্তকে আমি পাঠাচ্ছি ওকে আনতে।তুমি কেঁদোনা।’
প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ মেয়েটা এইভাবে কোনদিন আমাদের সাথে কথা বলেনি।আজ ও আমার আর হেমন্ত’র থেকে অনেক বড় একটা আঘাত পেয়েছে আমার আর হেমন্ত’র ওকে সবটা জানানো উচিত ছিলো।ও আমাদের দুজনকেই ওর সবচেয়ে আপন মানে।কিন্তু আমরা তা ধরে রাখতে পারলাম।আমরা বন্ধু নামে কলংক।’
হঠাৎ চট করে মাথা তুলে প্রাহি তাকালো হেমন্ত’র দিকে।হেমন্ত এখনো বিষ্ময় নিয়ে সেইভাবেই দাঁড়িয়ে।প্রাহি চিৎকার দিয়ে বললো,

‘ হেমন্ত হুশে আয়! ইশি কি বলে গেলো শুনিস নি?ওর কাল এংগেজমেন্ট।তুই না ওকে ভালোবাসিস?তাহলে যা ওকে আটকা।ইশিকে নিজের মনের কথা বলে দে হেমন্ত।এইটাই সুযোগ।ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে কিন্তু আর পাবি নাহ।’
হেমন্ত চোখ বড়বড় করে প্রাহির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ ওর এংগেজমেন্টের খবর দিতে এসেছিলো ও? ও ইচ্ছে করে এটা করছে না আমি জানি।ওর বাবা ওকে জোড় করে বিয়ে দিচ্ছেন।আমি এটা হতে দিবো না প্রাহি।’
‘ হ্যা! যা হেমন্ত আটকা ওকে।’
হেমন্ত বেড়িয়ে যেতে নিয়েও থেমে গেলো।দৌড়ে বাড়ির সকলের কাছে এলো।এতোক্ষন সবাই নীরব দর্শক হয়ে দেখছিলেন সবটা। বাচ্চাদের ব্যাপার তাই তারা কিছু বলেনি। কি আর বলবে?বন্ধুদের ব্যাপার তারাই মিট-মাট করে নিবে।এখানে তো তাদের কথা বলার কোন দরকার নেই।হেমন্ত সবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ মা,বড়মা,বাবা,বড় বাবা,হিয়া,ভাই তোমাদের কি কারো কোন সমস্যা আছে ইশিকে এই বাড়ির ছোট পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে?’

সবাই তো আগেই বুঝে গিয়েছিলেন প্রাহির কথায়।তাই সবাই জানালো তাদের কোন সমস্যা নেই ইশিকে এই বাড়ির ছোট বউ হিসেবে গ্রহন কর‍তে।হেমন্ত প্রাপ্তির হাসি দিয়ে বলে,
‘ তাহলে সবাই তৈরি হয়ে নেও।আমি আজ এক্ষুনি গিয়ে ইশিকে বিয়ে করে নিয়ে আসবো।তোমরা বউ বরন করার জন্যে প্রস্তুতি হেও।’
আরাফকে উদ্দেশ্য করে হেমন্ত আবার বলে,

‘ আরাফ ভাই।অর্থ ভাইয়া তো যেতে পারবে না প্রাহিকে রেখে।তুমি এক কাজ করো তুমি হিয়া,বাবা,মা, বড় মা,আর বড় বাবাকে নিয়ে কাজি অফিসে চলে যাও।আমি সেখানেই ইশিকে নিয়ে আসছি।সব কিছুর দায়িত্ব তোমাকে দিলাম।’
আরাফ মুচঁকি হেসে সম্মতি দিতেই হেমন্ত দৌড়ে চলে গেলো বাড়ির বাহিরে এখন সমস্যা একটাই যে করে হোক ইশিকে মানাতে হবে।তারপর ওর এতোদিনের আশা ইশিকে ও আজ বিয়ে করবে।যেভাবেই হোক আজ বিয়ে করেই ছাড়বে।ইশির হিটলার বাপকে যদি হেমন্ত সায়েস্তা না করতে পারে তবে হেমন্ত ওর নিজের নাম পাল্টে রাখবে।ব্যাটার কতোবড় সাহস ওর ইশিকে অন্যকারো গলায় ঝুলানোর ফন্দি আটছিলো।এসব করার জন্যে উনাকে হারে হারে পস্তাতে হবে।

নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে হাটছে ইশি।গন্তব্যে এখন শিকদার উদ্দেশ্যে।মনটা বিষাক্ত হয়ে আছে ওর।পারছে না চিৎকার করে কাঁদতে।জীবনটা কেন এমন দূর্বিষহ ওর?কেন এতোটা নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে হয় ক্ষনে ক্ষনে।কেন একটা নরমাল ফ্যামিলির মতো জীবনটা উপভোগ করতে পারে না ও।ইশির দু চোখ বেয়ে টসটসে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো।তা সন্তর্পনে মুছে নিলো ইশি।শিকদার বাড়ি এসে পরেছে।মনটা ভালো নেই।সেই উদ্দেশ্যেই এখানে আসা প্রাহি আর হেমন্ত কেউ ওর ফোন রিসিভ করছে না।ভার্সিটিতেও আসিনি ওরা।তাই সোজা এখানে দুজনের সাথে দেখা করার জন্যে চলে এসেছে।ইশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলিংবেলে দুবার চাপ দিলো।কিয়ৎক্ষন বাদে দরজা খুলে দিলো বাড়ির একজন সার্ভেন্ট।ওপাশ থেকে হেমন্ত’র কন্ঠস্বর শোনা গেলো,

‘ কে এসেছে?’
‘ আমি হেমন্ত!’ ইশির ধীর জবাব।
হেমন্ত শীতল দৃষ্টিতে তাকালো ইশির দিকে।আজ সারাদিনে মেয়েটার সাথে একটুও কথা হয়নি।মনটা কেমন ছটফট করছিলো।ভেবেছিলো সন্ধ্যার পরেই ইশির সাথে দেখা করার জন্যে বেরোবে।কিন্তু এখন দেখি না চাইতেও চাঁদ হাতে পেয়ে গিয়েছে হেমন্ত।হেনা বেগম ইশির কন্ঠস্বর শুনেই গলা উচিঁয়ে ডাকলেন,
‘ ইশি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?এখানে আসো!’
ইশি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।কিন্তু ড্রয়িংরুমে সোফায় বসা সবার কাছাকাছি আসতেই ও থমকে গেলো।অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রাহির দিকে।ওর থমকানো দৃষ্টিতে এক আকাশসম বিষ্ময়।সেই সাথে ওর হাত-পা থরথর করে কাঁপছে।অর্থ’র কাধে মাথা রেখে চোখ বুজে থাকা প্রাহির দিকে তাকিয়ে আছে ও এলোমেলো চাহনী।হেমন্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দ্রুত এগিয়ে গেলো ইশির দিকে।অসহায় কন্ঠে বলে,

‘ ইশি হাইপার হবি না একদম।আমি তোকে সবটা বলছি।প্লিজ এরকম করিস নাহ।’
হেমন্ত ইশির হাত ধরতে নিতেই ইশি ছিটকে সরে গেলো।অর্থ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ও জানে প্রাহি,ইশি আর হেমন্ত কতোটা আপন একে-অপরের জন্যে। একজনের কিছু হলে অপরজনের কলিজা ফেটে যায় তা খুব ভালোভাবে জানে।তবে আপাততো ইশিকে বুঝাতে হবে।অর্থ বলে উঠে,
‘ ইশি দেখো হেমন্ত আর আমাদের সবাইকে বলার সুযোগ দেও একটু ওকে।’
ইশি ঢোক গিললো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
‘ কিভাবে হলো ওর এরকম?’

হেমন্ত অসহায়ভাবে একে একে সবটা বললো ইশিকে।ইশি সবটা শুনে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো প্রাহির দিকে।ডাকলো,
‘ এই প্রাহি! উঠ।তাকা আমার দিকে।আমার কথা শোন।তাকা!’
ঘরে ভালো লাগছিলো না দেখে অর্থ’র সাথে জিদ করে ড্রয়িংরুমে আসে প্রাহি।কিন্তু ঔষুধের করা ডোজে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলো ওর খেয়ালই ছিলো না।ইশির অনবরত ডাকে চোখ মেলে তাকায় প্রাহি। ইশিকে ওর সম্মুখে দেখে।চট করে চোখজোড়া স্বাভাবিকভাবে মেলে তাকায় প্রাহি।ওর দৃষ্টিতে ভয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ইশি ভাঙ্গা গলায় বলে,
‘ আমি কি তোদের এতোটাই পর যে তোর সাথে এতো বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলো আমাকে একবার ইনফোর্ম করার সুযোগ দিলি নাহ?আমি কি তোদের আপন কোনদিন হতে পারিনি?’
প্রাহির বুকটা ধ্বক করে উঠলো ইশির কন্ঠস্বর শুনে।প্রাহি অস্থির কন্ঠে বলে,
‘ ইশি আমি জানাতাম তোকে। এমন হয়ে যাবে ভাবিনি আকস্মিক এসব হওয়ায় তোকে জানানোর কথা ভুলে গিয়েছিলাম। তুই প্লিজ এইভাবে কথাগুলো বলিস নাহ!’

ইশির চোখ ভরে উঠলো।গাল গড়িয়ে পরতে লাগলো কষ্টের জলগুলো।ইশি তাচ্ছিল্যের কন্ঠে বলে,
‘ আমি তোদের কাছে কোন ইম্পোর্টেন্ট ব্যাক্তি না যে আমাকে তোরা কিছু জানাবি।ইম্পোর্টেন্ট হলে অবশ্যই আমাকে এইসব জানাতি।আমাকে তোরা তোদের জীবনে কিছুই মনে করিস না।আজ ফোন দিতে ভুলে গেছিস।দু’দিন পর পুরো এই আমিটাকেই তোরা ভুলে যাবি। মিছে মায়া সৃষ্টি করে আর কি লাভ বল?তোরা মুখেই বলে দে আমাকে তোরা আর চাস না।এখানেই নাহয় আমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাবে।’

হেমন্ত আর প্রাহির ইশির প্রতিটা কথায় হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে ওদের। হেমন্ত ইশির দুহাত ওর হাতে নিয়ে বলে,
‘ দেখ ইশি পরিস্থিতি ওরকম ছিলো না…..!’
ইশি একঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো।চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ আরে কিসের কি পরিস্থিতি?হ্যা! প্রাহি অসুস্থ মানলাম।কিন্তু তুই?তুই কি একটাবার একমিনিটের জন্যে আমাকে ফোন দিয়ে এসব জানাতে পারলি নাহ?পরিস্থিতির কথা বলছিস আমাকে?’
একটু থেমে আবার তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,
‘ হাহ্ যারা আমাকে আপনই ভাবে না তাদের কাছে এসেছিলাম আমি আমার দুঃখগুলো সেয়ার করতে।এই জীবনে বোধহয় উপরওয়ালা আমার কপালে সুখ লিখেনি।না লিখেছে আপন বলতে কোন মানুষ।তোদের আপন ভেবেছিলাম কিন্তু তোরা তো আমাকে দু পয়সারও দাম দিলি নাহ।জীবনটা আমার এমন কেন বানালো আল্লাহ্! আত্মহত্যা পাপ না হলে তো কবেই এই নিঃশ্বাস ত্যাগ করে দিতাম।কেন মা’র সাথে সাথে আমাকেও নিয়ে গেলেন নাহ আল্লাহ্! ‘
প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘ এইভাবে বলিস না ইশি!’
ইশি দুহাতে চোখের জল মুছে নিলো।জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিয়ে বলে,
‘ আমি তোদের উপর রেগে নেই যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।আর হ্যা কাল আমার এংগেজমেন্ট তোদের সবার দাওয়াত রইলো।পরিবার নিয়ে চলে আসিস।বাবা এদিক দিয়ে ভালোই করেছেন জলদি বিয়ে সাদি করে অনেক দূরে চলে যেতে পারবো তোদের থেকে।তোরা ভালো থাকিস।আসি!’
ইশি দৌড়ে চলে গেলো।এদিকে ইশি আর প্রাহি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ইশির প্রতিটা কথা শুনে।কি বলে গেলো ইশি এই মাত্র?ওর এংগেজমেন্ট তাও কাল?কিন্তু কিভাবে কি?কিসের দুঃখের কথা বলতে এসেছিলো ইশি?তবে কি ওর বাবা ওকে জোড়-জবরদস্তি বিয়ে দিচ্ছেন?মেয়েটা অনেক আঘাত পেয়েছে।অজান্তেই ওরা আজ ইশিকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।এমনিতেই মেয়েটা ছোট থেকে কষ্ট পেতে পেতে বড় হয়েছে।আর আজ ওদের থেকে এতোবড় একটা কষ্ট পেলো।মেয়েটা সহ্য করতে না পেরেই এইভাবে আজ কথাগুলো বলেছে।প্রাহি বামহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠলো।অর্থ প্রাহির মাথাটা বুকে চেপে ধরে বলে,

‘ কাঁদে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।ইশি এখন একটু বেশি কষ্ট পেয়েছে।তাই এইভাবে কথাগুলো বলেছে।একটু পর ও নিজেই সব বুঝতে পেরে ও নিজেই আসবে তোমার কাছে দেখো! আর হেমন্তকে আমি পাঠাচ্ছি ওকে আনতে।তুমি কেঁদোনা।’
প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ মেয়েটা এইভাবে কোনদিন আমাদের সাথে কথা বলেনি।আজ ও আমার আর হেমন্ত’র থেকে অনেক বড় একটা আঘাত পেয়েছে আমার আর হেমন্ত’র ওকে সবটা জানানো উচিত ছিলো।ও আমাদের দুজনকেই ওর সবচেয়ে আপন মানে।কিন্তু আমরা তা ধরে রাখতে পারলাম।আমরা বন্ধু নামে কলংক।’
হঠাৎ চট করে মাথা তুলে প্রাহি তাকালো হেমন্ত’র দিকে।হেমন্ত এখনো বিষ্ময় নিয়ে সেইভাবেই দাঁড়িয়ে।প্রাহি চিৎকার দিয়ে বললো,

‘ হেমন্ত হুশে আয়! ইশি কি বলে গেলো শুনিস নি?ওর কাল এংগেজমেন্ট।তুই না ওকে ভালোবাসিস?তাহলে যা ওকে আটকা।ইশিকে নিজের মনের কথা বলে দে হেমন্ত।এইটাই সুযোগ।ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে কিন্তু আর পাবি নাহ।’
হেমন্ত চোখ বড়বড় করে প্রাহির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ ওর এংগেজমেন্টের খবর দিতে এসেছিলো ও? ও ইচ্ছে করে এটা করছে না আমি জানি।ওর বাবা ওকে জোড় করে বিয়ে দিচ্ছেন।আমি এটা হতে দিবো না প্রাহি।’
‘ হ্যা! যা হেমন্ত আটকা ওকে।’
হেমন্ত বেড়িয়ে যেতে নিয়েও থেমে গেলো।দৌড়ে বাড়ির সকলের কাছে এলো।এতোক্ষন সবাই নীরব দর্শক হয়ে দেখছিলেন সবটা। বাচ্চাদের ব্যাপার তাই তারা কিছু বলেনি। কি আর বলবে?বন্ধুদের ব্যাপার তারাই মিট-মাট করে নিবে।এখানে তো তাদের কথা বলার কোন দরকার নেই।হেমন্ত সবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ মা,বড়মা,বাবা,বড় বাবা,হিয়া,ভাই তোমাদের কি কারো কোন সমস্যা আছে ইশিকে এই বাড়ির ছোট পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে?’

সবাই তো আগেই বুঝে গিয়েছিলেন প্রাহির কথায়।তাই সবাই জানালো তাদের কোন সমস্যা নেই ইশিকে এই বাড়ির ছোট বউ হিসেবে গ্রহন কর‍তে।হেমন্ত প্রাপ্তির হাসি দিয়ে বলে,
‘ তাহলে সবাই তৈরি হয়ে নেও।আমি আজ এক্ষুনি গিয়ে ইশিকে বিয়ে করে নিয়ে আসবো।তোমরা বউ বরন করার জন্যে প্রস্তুতি হেও।’
আরাফকে উদ্দেশ্য করে হেমন্ত আবার বলে,

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৪

‘ আরাফ ভাই।অর্থ ভাইয়া তো যেতে পারবে না প্রাহিকে রেখে।তুমি এক কাজ করো তুমি হিয়া,বাবা,মা, বড় মা,আর বড় বাবাকে নিয়ে কাজি অফিসে চলে যাও।আমি সেখানেই ইশিকে নিয়ে আসছি।সব কিছুর দায়িত্ব তোমাকে দিলাম।’
আরাফ মুচঁকি হেসে সম্মতি দিতেই হেমন্ত দৌড়ে চলে গেলো বাড়ির বাহিরে এখন সমস্যা একটাই যে করে হোক ইশিকে মানাতে হবে।তারপর ওর এতোদিনের আশা ইশিকে ও আজ বিয়ে করবে।যেভাবেই হোক আজ বিয়ে করেই ছাড়বে।ইশির হিটলার বাপকে যদি হেমন্ত সায়েস্তা না করতে পারে তবে হেমন্ত ওর নিজের নাম পাল্টে রাখবে।ব্যাটার কতোবড় সাহস ওর ইশিকে অন্যকারো গলায় ঝুলানোর ফন্দি আটছিলো।এসব করার জন্যে উনাকে হারে হারে পস্তাতে হবে।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৬

1 COMMENT

Comments are closed.