একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি বোনাস পর্ব 

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি বোনাস পর্ব 
সাদিয়া জাহান উম্মি

লাল বেনারসী গায়ে জড়ানো,চোখে কাজল,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর সাথে হালকা পাতলা কিছু স্বর্নের গহনা পরানো বঁধুবেশে ইশিকে যেন কোন হুরপরী লাগছে।লজ্জার রেশ পুরো মুখশ্রীতে জুড়ে রয়েছে ওর।সেই সাথে প্রানভুলানো লাজুক হাসি ঠোঁটে।পাশেই হেমন্ত বসে আছে ওর সাথে লেপ্টে।ইশি লজ্জায় সেই যে চোখ নামিয়ে নিয়েছে আর একটুও তাকায়নি কারো দিকে।

একটু আগেই ওর আর হেমন্ত’র বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।ইশি আর হেমন্তকে এতোটা হাসিখুশি দেখে সকলের যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছেন হাতে।ওনাদের ছেলেমেয়েরা যেখানে এতো হাসিখুশি সেখানে আর কিইবা চাইবেন তারা।হেনা বেগম আসেননি।তবে প্রয়োজনীর সকল কিছু নিজ হাতে গুছিয়ে দিয়েছেন রায়হানা বেগমের কাছে।গহনা গাটি, আর নিজের বিয়ের বেনারসীটাও দিয়েছেন।এগুলো যেন তার পুত্রবধুকেই পরিয়ে বিয়ে দেওয়া হয় তা আদেশ জারি করে দিয়েছেন তিনি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিজ হাতে নিজের পুত্রবধুকে বরন করার সকল আয়োজন একা হাতে করছেন তিনি।ইশি মেয়েটাকে খুব ভালো লাগে উনার।নিজের ছেলের বউ হিসেবে ইশিকেই চাইতেন তিনি।কিন্তু ছেলের সাথে রাগারাগি হবে ভেবে কোনদিন সাহস পাননি তিনি।তবে আজ তার মনের আশা পূর্ন হয়েছে।তার খুশির যেন বাধ মানছে না। কলিংবেল বাজতেই হেনা বেগম ছুটে গেলেন দরজা খোলার জন্যে।দরজা খুলে দিতেই উনি ইশি আর হেমন্তকে একে-অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন প্রানটা জুরিয়ে গেলো উনার।এদিকে হেমন্ত আর ইশিকে দেখে প্রাহি অর্থকে বলে,
‘ আমাকে একটু উঠতে সাহায্য করুন নাহ।ওরা এসে গেছে। আমিও যাবো ওখানে!’
অর্থ ভ্রু-কুচকে তাকালো প্রাহির দিকে।গম্ভীর কন্ঠে বলে,

‘ ওখানে যাওয়ার মতো কি হয়েছে?ওদের বরন করে তো এখানেই আনবে তাহলে উঠে ওখানে যাওয়ার কি হলো?তুমি যে অসুস্থ সেই খেয়াল কি তোমার নেই?’
প্রাহি অর্থ’র কথায় মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।অর্থ ভ্রু-কুচকে এখনো তাকিয়ে প্রাহির দিক।মেয়েটা এমন বাচ্চা কেন?নিজের ভালোমন্দ কেন বুঝে না?বিরক্তির শ্বাস ছাড়লো অর্থ।মুখ ফুলিয়ে থাকুক তাও উঠতে দিবে না অর্থ ওকে। হেমন্ত আর ইশিকে বরন করে আনতেই ওদের দুজনকে সোফায় এনে বসানো হলো।প্রাহি অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইশির দিকে।ইশি আলতো হেসে উঠে গিয়ে অনেক সাবধানে প্রাহিকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।প্রাহির ঠোঁটের কোনেও হাসি ফুটে উঠলো।ইশি ছাড়তেই প্রাহি বলে উঠে,

‘ আই এম সরি ইশি।আমার কারনে তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস!’
ইশি আলতো হেসে বলে,
‘ আরে ধুর কিসের সরি।আমার তখন মাথা ঠিক ছিলো না।তাই মুখে যা এসেছে বলে দিয়েছি।তুই এতে মন খারাপ করিস না।আর তুই এখানে কি করছিস?তুই না অসুস্থ?ঘুমাসনি কেন?ক’টা বাজে খেয়াল আছে?’
অর্থ ইশির কথা শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো প্রাহির দিকে।চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
‘ এই মেয়ে কারো কথা শুনে?সেই কখন বলেছি চলো রুমে চলো।কিন্তু সে তোমাদের না আসা পর্যন্ত এখান থেকে একপাও নরবেনা বলেছে।খাওয়া দাওয়া করিয়েছি তাও জোর করে। অসুস্থ দেখে কিছু বলছিনা নাহলে এতোক্ষনে থাপড়ে থাপড়ে গালের চামড়া উঠিয়ে ফেলতাম।অসভ্য মেয়ে আমার কোন কথা শুনে নাহ!’

অর্থ’র এতোসব কথা শুনে মুহূর্তেই প্রাহির চোখ ভরে এলো।লোকটা ওকে এইভাবে বকতে পারলো?কিভাবে যাবে ও?যেখানে আজ নিজের দুজন বেষ্টফ্রেন্ডের বিয়ে। তাও ওরা একে-অপরের সাথে।এতো খুশিতে কি প্রাহির ঘুম আসবে চোখে?লোকটা কি বুঝে না? প্রাহি কাঁদো গলায় বলে উঠে,
‘ মা তোমার ছেলে আমায় বকছে দেখো!’
রায়হানা বেগম হেসে দিলেন প্রাহির কথায়।পরক্ষনে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে,
‘ অর্থ তুই আমার বউমাকে বকছিস কেন?ওর বেষ্টফ্রেন্ডেদের বিয়ে একটু সজাগ থাকলে কিছু হবে নাহ।’

প্রাহি আঁড়চোখে তাকিয়ে অর্থকে ভেংচি কেটে দিলো।অর্থ এখনো রাগিভাবে তাকিয়ে প্রাহির দিক।চোখের ইশারায় বুঝাচ্ছে রুমে গিয়ে নেই তারপর তোমাকে কে বাচায় দেখবো।প্রাহি শুকনো ঢোক গিললো।এর মাঝে আরাফ আর হিয়া একগাধা ফুলের ব্যাগ নিয়ে হাজির।তারা কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা হেমন্ত’র রুমে চলে গেলো।একঘন্টা যেন তাদের কেউ ডিস্টার্ব না করে জানিয়ে দিয়েছে তারা এখন বাসর সাজাবে।সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আরাফ হিয়ার কানে কানে বললো,

‘ হেমন্ত আমার ছোট হয়েও বিয়ে করে নিলো।আমি এখনো সিংগেল ঘুরছি।ও হিয়াপাখি রাজি হয়ে যাওনা।চলো আমরাও বিয়ে করে নেই।’
হিয়া রাগি চোখে তাকিয়ে দাঁত খিচিয়ে বলে,
‘ সেটা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকুন।আমি আপনাকে কখনো বিয়ে করবো না!’

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৬

বলেই হিয়া হনহন উপরে উঠে চলে গেলো।আরাফও চললো ওদের পিছু পিছু। এক দেঢ় ঘন্টা পর বাসর সাজানো হলে হেমন্ত আর ইশিকে বাসর ঘরে ডুকানো হয়।অবশ্য এতে হেমন্তকে দশহাজার টাকা দিয়ে বাসর ঘরে ডুকতে হয়েছে।নাহলে যে কিছুতেই হিয়া আর আরাফ যেতে দিচ্ছিলো না।শেষমেষ না পেরে দশহাজার টাকাই দিয়েছে।নাহলে আজ বউ ছাড়াই থাকতে হবে ওকে।বিয়ে করেছে কি বউ ছাড়া থাকতে?উহু মোটেও না।হেমন্ত এটা মেনে নিবে না।এদিকে প্রাহিও এসবে সামিল হতে যাচ্ছিলো কিন্তু অর্থ প্রাহিকে ধমকে ধামকে রুমে নিয়ে গিয়েছে।প্রাহিও আর কি করবে অর্থ’র কথাই গাল ফুলিয়ে মেনে নিয়েছে।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৭