একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩১

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩১
সাদিয়া জাহান উম্মি

টপটপ করে গাল গড়িয়ে পরছে চোখের অশ্রুগুলো। হিয়া আনমনে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।এতো চেষ্টা করেও চোখের জলগুলো আটকাতে পারছে না।আরাফ চলে যাবে এখান থেকে বাক্যটা যতোবার কানে বাজে ততোবার মনে হয় কি যেন একটা বিষাক্ত ছুড়ির ন্যায় ক্ষতবিক্ষত করে দেয় ওর হৃদপিন্ডটা।এমন নিস্তব্ধ পরিবেশে একটা কন্ঠ ঝংকার তুললো,

‘ এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো হিয়া?আর তুমি কি কাঁদছো?’
আরাফের কন্ঠস্বর কানে পৌছাতেই হকচকিয়ে যায় হিয়া।দ্রুত নিজের জলগুলো লুকানের জন্যে অন্যদিকে ফিরে যায়।আরাফ মলিন হাসে।সে দেখেছে হিয়া কাঁদছে।শুধু শুধু ব্যর্থ চেষ্টা করছে মেয়েটা।ভীতরে ভীতরে এতো কষ্ট পাচ্ছে তাও মুখ ফুটে ওকে ভালোবাসার কথাগুলো ব্যক্ত করছে না।এতো জেদি কেন মেয়েটা?আরাফ বিরক্তির শ্বাস ফেললো।নিজের ব্যালকনি টপকে হিয়ার ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো।হঠাৎ আওয়াজে হিয়া পিছনে ফিরে তাকায়।তাকাতেই আরাফকে দেখে অভিমান করে চলে যেতে নেয়।আরাফ সাথে সাথে হিয়ার হাত টেনে ধরে।তারপর বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কেন এমন লুকোচুরি খেলছো হিয়া?কেন স্বিকার করছো না তুমি আমায় ভালোবাসো?’
‘ আপনি বলেছেন বুঝি?’ হিয়ার অভিমানি কন্ঠস্বর।আরাফ অবাক হলো।এরজন্যেই বুঝি মেয়েটার এতো অভিমান?ও ভালোবাসার কথাটা ব্যক্ত করেনি বলেই কি এতো রাগ ওর উপর?আরাফ হাসে।ধীরে এগিয়ে যায় হিয়ার দিকে।দুরুত্ব কমায় দুজনার।হিয়ার কানের কাছে মুখটা এগিয়ে নেয়।হিয়া ঘাবড়ালো,ভড়কালো।সরে আসতে চাইলো কিন্তু পারলো না।তার আগেই আরাফের ভরাট কন্ঠস্বর ওর কানে এসে লাগলো,’একটা কথা কি জানো?আমি,আমার জীবনকে ভালবাসি কারণ এটি তোমাকে দিয়েছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। কারণ তুমিই আমার জীবন।’

হিয়ার সারাশরীর কেপে উঠে আরাফের মুখের প্রতিটা বাক্য শুনে।কি ভয়ানক বানিগুলো।ভালোবাসার কথা শুনলে বুঝি এমনি লাগে?হিয়ার কেমন যেন লাগছে।এক দিকে আরাফের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে খুশি হয়েছে অপরদিকে আরাফ চলে যাবে এই কথাটা ভাবলেই দম আটকে আসে ওর।হিয়া চোখ বুজে বড়বড় নিশ্বাস নিলো।তারপর ধরা গলায় বলে,
‘ কি হবে এতো ভালোবেসে?চলেই তো যাবেন আপনি।ভালোবাসলে কেউ কি নিজের ভালোবাসার মানুষকে এইভাবে ফেলে চলে যায়?’

‘ আমি যাবো!’ আরাফের এহন বাক্য শুনে হিয়া আতংকিত নজরে তাকায়।সেদিকে মুচকি হেসে আরাফ বলে,
‘ আমি যাবো কারন কয়েকদিন পর তো এই বাড়ির একমাত্র মেয়েকে আমার বউ করে নিয়ে আসবো।তাই আর আগে সব ব্যবস্থা করতে হবে নাহ?এইভাবে বিয়ের আগে শশুড়বাড়ি থাকলে তো সবাই আমাকে আজেবাজে বলবে আমার বউটা এতে কষ্ট পাবে।তাই আমি চাইছি বিয়ের আগে যেকয়টা দিন আছে আমি আমার ফ্লাটে গিয়ে থাকবো।বিয়ের পর নাহয় যতো ইচ্ছে শশুড়বাড়ি বেড়াবো।তখন কেউ আমাকে বাধা দিলেও শুনবো না।বউয়েরও নাহ!’
আরাফের কথায় হিয়া ফিঁক করে হেসে দিলো।আরাফ মুগ্ধ হয়ে দেখলো সেই হাসি।ইসস,মেয়েটা এইভাবে কেন সবসময় হাঁসে নাহ?মেয়েটার হাঁসিটা একেবারে কলিজায় গিয়ে লাগে।আরাফ বুকে হাত দিয়ে বলে,
‘ এইভাবে হেঁসো না মেয়ে।বুকে বড্ড লাগে।’
হিয়া মুঁচকি হেসে ঝাপিয়ে পড়ে আরাফের বুকে।বিরবির করে বলে,
‘ আমি আজ থেকে হাঁসবো।আজীবন হেঁসেই যাবো।কারন আমি আজ থেকে বলতে পারবো আমি আপনাকে ভালোবাসি।’
আরাফ তৃপ্তিতে চোখ বুজে নেয়।আরো নিবীড়ভাবে জড়িয়ে নেয় নিজের প্রিয়তমাকে নিজের সাথে।

ইশি রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে হেমন্ত’র দিকে।আর হেমন্ত বাচ্চা বাচ্চা লুক দিচ্ছে ইশির দিকে।ইশি ভয়ানকভাবে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে,
‘ তুই কি বাচ্চা?আমি কতোক্ষন যাবত এই পড়াটা তোকে বুঝাচ্ছি।কিন্তু তুই এইভাবে আমার দিকে ভ্যাবলার মতোন তাকিয়ে থাকছিস কেন?’
হেমন্ত নাক মুখ কুচকে ফেলে ইশির কথায়। দাঁত খিচিয়ে বিরবির করে বলে,
‘ আমার কি দোষ?এইভাবে শুভ্র রঙে নিজেকে আবৃত করে, ভেজা চুলে, আমার সামনে আসলে আমি তো তাকিয়ে থাকতেই বাধ্য হবো।পড়া কিভাবে মাথায় ঢুকবে আমার?সব দোষ তো তোর।’
ইশি পুরোটাই শুনেছে।বলে,

‘ কি?কি বললি তুই?’
হেমন্ত রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ কি বলেছি?শুনিস নি?নিজেকে এইভাবে আমার সামনে হাজির করলে আমার ধ্যান পড়ার দিকে কিভাবে যাবে বলতো?তোকে এইভাবে দেখে যে আমার ভীতর কিছুমিছু হচ্ছে তা কি তুই বুঝিস না?’
হিয়া ধরাস করে হাত দুটো টেবিলে রেখে।তেজ নিয়ে বলে,
‘ গুষ্টি কিলাই তোর কিছুমিছুর।তুই এইভাবে থাক।ফেইল যদি করেছিস পরিক্ষায়।আমি তোকে জামাই হিসেবে পরিচয় দেবো না।একদম দিবো নাহ!’
হেমন্ত কপাল চাপড়ে বলে,
‘ এইজন্যেই বলে বেষ্টফ্রেন্ড বিয়ে করতে নেই।তার উপর বেষ্টফ্রেন্ড যদি হয় মেধাবি ছাত্রী।তাহলে তো জীবন ত্যানাত্যানা হয়ে যায়।’

‘ হ্যা তো যা না।অন্য কাউকে বিয়ে কর।আমাকে বিয়ে করেছিস কেন?আমি কি বলেছিলাম?রাস্তার মাঝে তো আমাকে বিয়ে করার জন্যে রাস্তার পাগলদের মতো গড়াগড়ি খাচ্ছিলি!’
ইশি কথাগুলো বলে ধুপধাপ পা ফেলে ব্যালকনিতে চলে যায়।মেজাজ ওর পুরো চটে আছে।একটা অংক সেই একঘন্টা যাবত বুঝাচ্ছে ইশি হেমন্ত’কে।কিন্তু হেমন্ত সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু ওর দিকেই তাকিয়ে থাকে।এমন করলে কি চলে?এর মাঝে ইশিকে পিছন থেকে ঝাপ্টে ধরে হেমন্ত।ইশি অভিমানে বারবার ছোটার জন্যে চেষ্টা করছে।কিন্তু হার মানলো হেমন্ত’র কাছে।হেমন্ত হেসে দিয়ে বলে,
‘ কি সব তেজ শেষ?আমার সাথে পেরে উঠা এতো সহজ নাহ বউ!’

হেমন্ত’র মুখে বউ ডাক শুনে ইশির সমস্ত রাগ গলে পানি হয়ে গেলো।গলে গেলো একদম বরফের ন্যায়।ঘুরে তাকায় হেমন্ত’র দিকে।হেমন্ত ইশির ছোটছোট চুলগুলো কানেদ পিছনে গুজে দেয়।ইশি পরম আয়েশে হেমন্ত’র বুকে মাথা রাখে।হেমন্ত’ও আগলে নেয় নিজের ভালোবাসাকে। ইশি ধীর গলায় আওড়ালো,
‘ দেখ হেমন্ত।আমি যা বলছি তোর ভালোর জন্যেই বলছি।আমি চাইনা তোর জীবনটা নষ্ট হোক।পরিক্ষায় রেজাল্ট যেন তোর খারাপ না হয়।কেউ যেন এই অভিযোগ করতে পারেনা যে,হেমন্ত বিয়ে করে বউ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে তাই পড়ার সময় পাইনি। বিয়ে করার কারনেই ওর রেজাল্ট খারাপ হয়েছে।এসব যেন না বলতে পারে।তাহলে আমি নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাবো হেমন্ত।আমি চাই তুই ভালোভাবে পড়াশোনা কর।তারপর ভালো একটা চাকরি পেয়ে নিজের পায়ে দাড়া।আমি যেন গর্ববোধ নিয়ে সবার সামনে মাথা উচু করে বলতে পারি, দেখো আমার স্বামি পেরেছে আমার স্বামি কারো থেকে পিছিয়ে নেই। আমি ভালোবাসি তোকে হেমন্ত।তোকে ভালো রাখার জন্যে আমি সব করতে পারবো হেমন্ত,সব!’

ইশির প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে হেমন্ত।তারপর ইশির মাথাটা বুক থেকে তুলে বলে,
‘ আমি করবো সব করবো।তোর সকল কথা রাখবো।কোন অভিযোগ দিবো নাহ।প্রমিস!’
ইশি মিষ্টি হাসলো।হেমন্ত ঢোক গিললো।নিজেকে আটকে না রেখে ইশির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে গভীর চুমুতে লিপ্ত হলো ও।ইশি আবেশে হেমন্ত’র চুল খামছে ধরে।তারপর সমান তালে তাল মিলাতে থাকে হেমন্ত’র সাথে।

পুরো রুমটা কালোর রাজ্যে তৈরি করা হয়েছে। জানালার পর্দাগুলো কালো লাগানো হয়েছে।বাতাসের দাপটে তা ক্ষনে ক্ষনে উড়ছে।কালো মোমবাতিগুলো বাতাসের ধাক্কায় দুলেদুলে উঠছে।আর নিজেদের আলোতে রুমটা আরো মোহনীয় করেছে।ফ্লোরে লাল গোলাপের পাপড়ী আর কালো বেলুনের ছড়াছড়ি।বিছানায় বিছানো কালো চাঁদরের উপর লাল গোলাপ দিয়ে হার্ট শেপ আঁকা সেখানে লিখা ” I Love You Aartho!’ বিছানার চারদিকে কালো আর লাল গোলাপ দিয়ে সুন্দরভাবে ডেকোরেশন করানো হয়েছে।মোহনীয় পরিবেশ।অর্থ পুরো রুমটা অবাক হয়ে শুধু দেখে যাচ্ছে।অর্থ নিজের লাইফে কখন এতোটা সার্প্রাইজড হয়নি কোনদিন।অর্থ’র হৃৎপিন্ডটা বুঝি এইবার লাফালাফি করতে করতে ওর বুক চিরেই বেড়িয়ে আসবে।এসব কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না অর্থ।নিজেকে কেমন যেন ছন্নছাড়া লাগছে।অর্থ আবারো চারদিকে চোখ বুলালো। নাহ,কাঙ্খিত ব্যাক্তিটি রুমের কোথাও নেই।অর্থ সাতপাঁচ না ভেবে সোজা চলে গেলো ব্যালকনিতে।সেখানে যেতে দেরি অর্থ সাথে সাথে ব্যালকনির দরজা ধরে সামাল দিলো।নাহলে আরেকটু হলেই তো ও পরে যেতো।এ কাকে দেখছে অর্থ।ওর রুমে এমন সাক্ষাৎ হুরপরী দেখে তো নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।অর্থ জোড়েজোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।চোখ বুঝে বারবার মাথা ঝাকাচ্ছে।প্রাহি এতোক্ষন লজ্জায় চোখ তুলে ঠিকভাবে তাকাতে পারিনি অর্থ’র দিকে।কিন্তু এইবার অর্থকে এমন করতে গেলে শাড়ির কুচিগুলো ভালোভাবে সামলে নিয়ে এগিয়ে যায় অর্থ’র দিকে।অর্থ’র হাতে আলতো স্পর্শ করে আতঙ্কিত গলায় বলে,

‘ কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন?আপনার কোথায় কষ্ট হচ্ছে?আমাকে বলুন প্লিজ।’
প্রাহির কন্ঠস্বর শুনতেই তাকায় অর্থ।প্রাহির বুকটা ধ্বক করে উঠে অর্থ’র এমন চাহনী দেখে। অর্থর চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।কেমন যেন অস্থির চাহনী।প্রাহি অর্থ’র গালে দুহাত রেখে বলে,
‘ কি হলো আপনার?এমন করছেন কেন?বলুন নাহ!’
অর্থ কয়েকপলক তাকিয়ে থাকলো প্রাহির দিকে।তারপর হুট করে প্রাহিকে টেনে নিয়ে আসে নিজের বুকে মাঝখানে।প্রাহি অর্থ’র এহন কান্ডে অবাক হয়ে যায়।এদিকে অর্থ চোখ বুজে নেশাময় আবার অনেকটা ব্যাকুল কন্ঠে বলে,

‘ কি করেছো তুমি প্রাহি?এইভাবে আমাকে পাগল করে দিলে?দেখো প্রাহি তোমার এমন ঝলসানো রূপ দেখে আমি অসুস্থ হয়ে পরেছি প্রাহি।আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না প্রাহি?এ কি করলে তুমি আমার?এমন ভয়ানক রূপ ধারন করে আমার সম্মুখে কেন আসলে প্রাহি?আমি তো নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছি প্রাহি।এখন যদি ভুল কিছু করে ফেলে প্রাহি?কি করবে তুমি প্রাহি?প্রাহি বলো না কথা বলো?’
এদিনে প্রাহি জমে বরফ হয়ে গিয়েছে।কি জবাব দিবে ও?ও তো নিজেও যায় অর্থ করে ফেলুক কিছু ভুল। করুক একটু পাগলামি।প্রাহি সব সহ্য করে নিবে মানুষটার জন্যে এই মানুষটার জন্যেই তো আজ তার মনের মতো সেজেছে প্রাহি।কালো শাড়ি,কালো চুরি,চোখে গাঢ়ো করে কাজল টেনেছে।লম্বা কেশগুলো আলগোছে হাতখোপা করে তাতে লাগিয়েছে দুটো কাঠগোলাপ,আলতা পড়েছে হাতে,পায়ে। মানুষটার ভালোবাসায় নিজেকে মুরিয়ে নেওয়ার জন্যে প্রাহি যে নিজেকে আজ পুরোপুরি তৈরি করেছে।অর্থ প্রাহিকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো প্রাহির দিকে।আবিষ্ট কন্ঠে বলে,

‘ সূর্যের দীপ্তিমান কিরণকেও হার মানানো যায় আজ সেটাও দেখলা।রামধনুর সাত রং কেও হরণ করা যায় আজ তাও দেখলাম।বসন্তের প্রকৃতির রূপকেও ফিকে করা যায় আজ সেটাও দেখলাম।
কারণ আজ তোমার রূপের সামনে এদের রূপ ম্লান হয়ে গেছে।’
প্রাহির অন্তর কেঁপে উঠে অর্থ’র কথায়।লজ্জায় লাল হয়ে উঠে মুখশ্রীটা।অর্থ মনের সবটুকে আদর ঢেলে প্রাহির কপালে চুমু খায়।প্রাহি আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। অর্থ দুহাতে প্রাহির কোমড় আঁকড়ে ধরে প্রাহিকে আরো নিকটে নিয়ে আসে।বলে,
‘ আজ আমি এক ইঞ্চি দুরুত্বও মানবো না আমাদের মাঝে।সব তোমার দোষ।কেন পাগল করলে আমায়।’
প্রাহি মনে মনে বলে, এমন দোষ আমি হাজার বার করতে রাজি অর্থ।কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারছে না মেয়েটা।আজ শুধু অর্থ বলছে আর প্রাহি শুনছে।কারন লজ্জা নামক অদৃশ্য এক শিকল প্রাহিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে যেমন।

‘ জানো প্রাহি?একটা অবাক করা বিষয় কি জানো
একটা সময় তোমাকে চিনতাম না।আর এখন তোমাকে ছাড়া আমার চলেই না।তোমাকে দেখার পরে।যে ভালোবাসা শুরু হয়েছে।
মনের ভিতর তার শেষ বলে কিছু নেই।’
প্রাহি চোখ ভরে আসে অর্থ’র প্রতিটা কথায়।লোকটা যে ওকে এতোটা ভালোবাসে তা বুঝতে পারিনি প্রাহি।প্রাহি কি করবে?কোথায় যাবে?এতো সুখ কোথায় রাখবে ও?কিন্তু তাও প্রাহি বড্ড লোভী।এতো কিছুর পরেও অর্থ’র মুখে ভালোবাসি শোনার জন্যে প্রাহি লোভী।অর্থ হয়তো বুঝতে পারছে প্রাহির মনের কথা।তাই কাল বিলম্ব না করে চট করে প্রাহিকে কোলে তুলে নেয় অর্থ।প্রাহি নিজেকে সামলাতে একহাতে অর্থ’র কাঁধ আঁকড়ে ধরে আরেকহাতে অর্থ’র বুকের কাছের শার্ট আঁকড়ে ধরে।অর্থ মুঁচকি হেসে প্রাহির লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া নাকের ঢগায় আলতো চুমু খেলো।তারপর সরে আসতে প্রাহি ব্যাকুল নয়নে তাকিয়ে রইলো অর্থ’র দিকে।অর্থ কানের কাছে ঠোঁট নিলো।ওর প্রতিটা গরম নিশ্বাস প্রাহি অঙ্গসহ হৃদয় শুদ্ধ কাঁপিয়ে দিচ্ছে।অর্থ অনেকটা সুর দিয়েই মনের কথাগুলো ব্যক্ত করলো,

‘ আঁধার রাতের পরী যে তুমি,
আমার হিঁয়ার পাখি..
মনের আলোয় তোমারই ছবি,
কোথায় তোমাকে রাখি!
তোমারই ছোঁয়ায় প্রাণ পায় মোর
সুখ যে রাশি রাশি;
সূর্যালোকে, বর্ষা জলে
শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।’
আহ! এইতো এইতো প্রাহির কানের কাছে বলা ভালোবাসি কথাটা প্রাহির সাত বছরের ভালোবাসে অপেক্ষা করার সার্থকতা দিয়েছে।প্রাহি আর পারলো না নিজেকে সামলাতে অর্থকে ঝাপ্টে ধরে কেঁদে দিলো।অর্থ হাসলো।সে জানে প্রাহির এই কান্না সুখের কান্না।অর্থ শীতল কন্ঠে আবারও সেই ভয়ানক বানিগুলো প্রতিধ্বনীত করলো,

‘ ভালোবাসি বউ।ও বউ, শুনছো? ভালোবাসি!’
প্রাহি ঢুকরে কেঁদে উঠে বলে,
‘ আমিও ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি।আই লাভ ইউ।’
অর্থ চোখ বুঝে ফেলে।অর্থ’র আজ এতো সুখ একসাথে পেয়ে বোধহয় পাগল হয়ে যাবে।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।আলতো করে প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে প্রাহির বিপরীত পাশে গিয়ে সুয়ে পরে।গভীর নয়নে প্রাহিকে দেখে অর্থ।প্রাহি সিক্ত চোখে তাকাতেই হুট করে প্রাহির অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দেয় অর্থ।সর্বাঙ্গ ঝংকার তুলে কেঁপে উঠে প্রাহির।দুহাতে অর্থ’কে ঝাপ্টে ধরে।অর্থ যেন উন্মাদ হয়ে গিয়েছে প্রাহির ঠোঁটেজোড়ায় মাতালের মতো চুমু খাচ্ছে অর্থ।খানিকবাদে সরে আসে অর্থ।প্রাহি নিভু নিভু চোখে তাকায় অর্থ’র দিক।অর্থ আবারও ঝুকে গিয়ে প্রাহির সর্বমুখশ্রীতে আদরে আদরে ভরিয়ে তুলছে।এদিকে প্রাহির ছোট্ট হাত দুটো অর্থ’র বলিষ্ট দেহে জড়ানো শার্টের প্রতিটা বোতাম খুলে ফেলেছে।অর্থ উঠে বসে শার্টটা খুলে ছুড়ে ফেলে দেয় দূরে।তারপর হাত বাড়িয়ে প্রাহির শাড়ির আচঁল সরিয়ে দেয়।

লজ্জায় জুবুথুবু প্রাহি তৎক্ষনাৎ অন্যদিকে ঘুরে যায়।এদিকে প্রাহির উন্মুক্ত প্রতিটি নারী দেহের ভাঁজগুলো যেন নিজেদের সৌন্দর্য দ্বিগুন রূপে বেড়ে গিয়েছে।বেষামাল হলো অর্থ,এলোমেলো হলো মস্তিষ্ক।প্রাহির কোমড়ের ভাঁজে চুমু খেলো অর্থ।প্রাহি বিছানার চাঁদর খামছে ধরে অস্পষ্ট স্বরে গুঙ্গিয়ে উঠে। অর্থ’র মাতাল করা স্পর্শগুলো সহ্য করতে না পেরে উঠে বসে অর্থকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মুখ লুকালো অর্থ’র বুকে।কিন্তু অর্থ তা হতে দিলে তো।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩০

অর্থ একটানে প্রাহির খোপা করা চুলগুলো খুলে ফেলে।আলতো হাতে প্রাহির চুলের গোঢ়া নিজের হাতের মাঝে নিয়ে প্রাহির মুখশ্রী উঁচু করে ধরে।প্রাহি চোখ বুজে থরথর করে কাঁপছে।অর্থ মুখ ডুবিয়ে দেয় প্রাহির গলায়।ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো প্রাহিকে। সেই অবস্থাতেই প্রাহিকে আবারও সুইয়ে দেয়।প্রাহি অর্থ পিট খামছে ধরে নিজের সুখের জানান দিচ্ছে। আজ পূর্ণতা পাবে তাদের ভালোবাসা।পূর্ণতা পাবে পেলো প্রাহির সাত বছরের অপেক্ষা,ভালোবাসা।আজ দুজন দুজনকে উজাড় করে ভালোবাসবে।ভালোবাসার এক রঙ্গিন দুনিয়ায় তারা ভ্রমন করবে।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩২

1 COMMENT

Comments are closed.