একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩০

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩০
সাদিয়া জাহান উম্মি

একসপ্তাহ কেটে গিয়েছে এর মাঝে।প্রাহি এখন পুরোপুরিভাবে সুস্থ।তাই ও আজ ভার্সিটি যাবে।অর্থই ওকে পৌছে দিয়ে আসবে।ব্রেকফাস্ট করছে সবাই।আরাফ সবাইকে কিছু একটা বলার জন্যে হাসফাস করছে।অর্থ ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।প্রাহির দিকে দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দিতেই প্রাহি নাক সিটকায়।অর্থ রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে প্রাহি করুনভাবে তাকায়।অর্থ ধমক দিয়ে বলে,
‘ চুপচাপ শেষ করো!’

অর্থ’র এমন রাম ধমক খেয়ে আর কিছু বলার সাহস পেলো না প্রাহি।চুপচাপ দুধটুকু নিজের পেটে চালান করতে লাগলো।অর্থ এইবার গম্ভীর কন্ঠে আরাফকে উদ্দেশ্য করর বলে,
‘ কিরে কিছু বলবি তুই?এমন অস্থির হচ্ছিস কেন?’
আরাফকে খানিক গম্ভীর দেখালো।সেইভাবেই উত্তর দেয়,
‘ দেখ অর্থ রাগারাগি করবি না।আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সবার ভালোর জন্যেই নিয়েছি।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কি সিদ্ধান্ত সেটা তো বলবি?’
আরাফ লম্বা একটা শ্বাস ফেললো।বললো,
‘ আমি নতুন ফ্লাট কিনেছি অর্থ।কাল সেখানেই সিফ্ট হয়ে যাবো।আর কতো থাকবো এখানে?অনেক তো হলো?এইভাবে বন্ধুর বাড়িতে দিনের পর দিন থাকাটা দৃষ্টিকটু দেখায়!’
আরাফের কথায় অর্থ’র মাঝে কোন ভাবান্তর হলো না।ওকে বেশ শান্ত দেখালো।শান্ত স্বরেই বলে,

‘ ওকে তুই যা ভালো মনে করিস।আমি সবসময় তোর পাশে আছি।’
আরাফ সস্তির নিশ্বাস নিলো।হাসি মুখে কিছু বলবে তার আগে নজর যায় হিয়ার দিকে।হিয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে।হিয়ার চোখে চোখ পড়তেই হিয়া দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।তপ্ত একফোটা জল গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে।হিয়া তা অতি সাবধানে মুছে নিলো।কিন্তু তা দৃষ্টির আড়াল হলো না আরাফের।আরাফ মলিন হাসলো।হিয়া দৃষ্টি নত রেখেই বলে,

‘ আমার খাওয়া শেষ।আমি আসছি।ভার্সিটি যেতে দেরি হয়ে যাবে।’
হিয়া বেড়িয়ে যেতেই।হেমন্ত,ইশি,অর্থ,প্রাহি,আরাফ ওরাও বেড়িয়ে পরলো।ইশি হেমন্ত’র সাথে বাইকে করে চলে গেলো।এদিকে প্রাহি বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অর্থ গাড়ি নিয়ে আসছে না।এইভাবে কতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে।আজ একটা জরুরি ক্লাস আছে।এমনিতেই কতোগুলো দিন ভার্সিটি যায়নি।সামনেই এক্সাম।আর মাত্র তিন কি আড়াই মাস আছে।প্রাহি যখন বিরক্তিতে তেতো মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ একটা বাইক এসে ওর সামনে ব্রেক করে।প্রাহি ভয় পেয়ে যায় এতে।তাকিয়ে দেখে বাইকে অর্থ বসে আছে ।মুখশ্রী গম্ভীর।প্রাহি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ এসব কি?আর আপনি এইভাবে মানে বুঝলাম নাহ?’

অর্থ তীর্জক চাহনী প্রাহির দিক নিক্ষেপ করে বলে,
‘ তোমার ওতো বুঝা লাগবে না।জলদি উঠো বসো বাইকে।দেরি হয়ে যাচ্ছে!’
প্রাহি তপ্ত নিশ্বাস ফেলে।বাইকের পিছনে উঠে বসলো।একহাত অর্থ’র কাঁধে আলগোছে রাখলো।এতে অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘ আমাকে ভালোভাবে ধরে বসো।এমন আলগোছে আমাকে ধরলে দেখা যাবে তুমি পিছন থেকে পরে গেছো!’
প্রাহির রাগ লাগলো অর্থ’র কথায়,বললো,
‘ আপনি আমাকে সবসময় এমন খোটা দিয়ে কথা বলেন কেন?হ্যা?’
‘ তোমাকে খোটা দিলাম কোথায়?আমি তো সত্যি কথাই বলছি তোমাকে।’
‘ হয়েছে আপনার আর সত্যি কথা বলা লাগবে না।জলদি চলুন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

অর্থ আর কথা বাড়ালো না।বাইক স্টার্ট দিয়ে ছুটলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।অর্থ এতো জোড়ে বাইক চালাচ্ছে যে প্রাহি নাকেমুখে কিছু দেখছে না।ভয়ে একদম সিটিয়ে গিয়েছে প্রাহি।প্রাহি অবশেষে সহ্য করতে না পেরে বলে,
‘ এমন জোড়ে চালাচ্ছেন কেন?আপনারা দুভাই কি একরকম নাকি?এমনভাবে কেউ বাইক চালায়?প্লিজ স্পিড কমান!’
অর্থ বললো,

‘ আমি এইভাবেই বাইক চালাই।ইভেন আরো জোড়ে চালাই।আজ তুমি আমার সাথে দেখে একটু কম স্পিডেই চালাচ্ছি।আমাকে ভালোভাবে ধরে বসো প্রাহি।’
প্রাহি উপায় না পেয়ে একহাত দিয়ে অর্থ’র কাধ শক্ত করে ধরে রাখলো।অন্যহাত দিয়ে অর্থ’র কোমড়ের অংশ আকড়ে ধরলো।অর্থ মুচকি হেসে লুকিং গ্লাসে প্রাহির দিকে তাকালো।বাতাসের কারনে মেয়েটার চুল এলোমেলো হয়ে সারামুখে বিচড়ন করছে।মায়া মায়া চেহারাটায় এখন অনেক অনেকগুলো আদর দিতে ইচ্ছে করছে অর্থ’র কিন্তু চেয়েও পারবে না অর্থ।মুচঁকি হেসে নিজের প্রেয়সীকে দেখতে দেখতেই ভার্সিটিতে।প্রাহি সাবধানে নেমে দাড়ালো।অর্থ প্রাহির গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,

‘ নিজের খেয়াল রেখো।আমি আবার আসবো তোমাকে নিতে।আর যদি না পারি ফোন করে জানিয়ে দিবো হেমন্ত’র সাথে চলে যেও কেমন?মন খারাপ করবে না।তবে আমি চেষ্টা করবো আসার।’
প্রাহি আলতো হেসে মাথা দুলালো।অর্থ চোখ বুঝে প্রাহির কপালে চুমু খেলো।প্রাহি’র ঠোঁটের কোনে লাজুক হাসি ফুটে উঠলো।আলতো স্বরে বলে,
‘ আসছি তবে।সাবধানে যাবেন।আর বাইকটা প্লিজ আস্তে চালাবেন।’
অর্থ ঠোঁট কামড়ে হাসলো।মেয়েটা তো আর জানেনা যে ও ইচ্ছে করেই জোড়ে চালাচ্ছিলো যাতে প্রাহি ওকে ভালোভাবে ধরে বসে।তবে অর্থ আর কিছু বললো না।প্রাহির থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো নিজের অফিসের উদ্দেশ্যে।প্রাহিও নিজের ক্লাসের দিকে চলে গেলো।

দুপুর ৩ টা বাজে ভার্সিটি থেকে মাত্রই বাড়িতে ফিরেছে প্রাহি,হেমন্ত আর ইশি।অর্থ ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে যে ও আসতে পারবে না।জরুরি কাজ পরে গিয়েছে।প্রাহির এতে মন খারাপ হয়নি।বরং ভালো লেগেছে যে অর্থ ওকে জানিয়ে দিয়েছে ব্যাপারটা।প্রাহির নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।বিছানায় সুয়ে একটু জিরিয়ে নিলো।তারপর উঠে গিয়ে আলমারির দিকে অগ্রসর হলো।গোসল নিতে হবে ওকে।বাহিরে প্রচন্ড গরম পরেছে ভ্যাপ্সা।বৃষ্টি আসতে পারে আজকে সম্ভবত।আকাশটাও খানিক মেঘলা মেঘলা।আলমারি খুলে নিজের জামা বের কর‍তে নিয়েই ভুলবসত কয়েকটা শাড়িও নিচে পড়ে যায়।প্রাহি বিরক্ত হয়ে বিরবির করে,

‘উফ! তাড়াতাড়ি করতে গেলেই সব কিছুতে এমন দেরি হয় কেন বুঝি না।এখন আবার এইগুলোকে ভালোভাবে গুছিয়ে রাখো।’
প্রাহি শাড়িগুলো আবারও ভাজ করতে লাগলো।নিচে পড়ে যাওয়ার কারনে অনেকটাই অগোছালো হয়ে গিয়েছে।প্রাহির অনেকগুলো শাড়ি।কয়েকটা আর রায়হানা দিয়েছেন, কয়েকটা হেনা দিয়েছেন আর হিয়াজ শিকদার,হিয়ান্ত শিকদারও দিয়েছেন।তবে অর্থ ওকে অনেকগুলো শাড়ি দিয়েছে।কিন্তু পরা হয়নি একটাও প্রাহির।অর্থও কোনদিন জোড় করেনি প্রাহিকে।বলেছে প্রাহি যেটাতে কম্ফোর্ট ফিল করে সেটাই যেন ও পরে।তাই প্রাহি ওতোটা মাথা ঘামায়নি।আসলে প্রাহির শাড়ি পড়তে কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে।তাই প্রাহি শাড়ি পরে না।তবে আজ কালো শাড়িটা দেখে প্রাহির আজ এই শাড়িটা পরতে মন চাচ্ছে খুব।

এই শাড়িটাও অর্থ এনে দিয়েছিলো।বলেছিলো কালো রঙ নাকি তার খুব পছন্দ।প্রাহি কালো শাড়িটা বিছানায় রেখে বাকি শাড়িগুলো আলমারিতে তুলে রাখলো।তারপর আবারও বিছানায় ফিরে এলো।কালো শাড়িটাতে হাত বুলিয়ে মুচঁকি হাসলো।পরক্ষনেই অর্থ’র সেদিনের কথাগুলো মনে পরে গেলো।কিরকম অস্থির হয়ে গিয়েছিলো লোকটা।অনেকটা উন্মাদনায় মত্ত হয়ে গিয়েছিলো। কিভাবে ওকে কাছে পাওয়ার আকুলতা জাহির করেছিলো ওর কাছে।তবে প্রাহির সেদিন কিচ্ছু করতে পারিনি।

‘ তোমাকে দেখলেই আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় প্রাহি।নিজেকে তখন নিয়ন্ত্রন করা অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়।আমার ভীতরটা অস্থিরতায় ছেঁয়ে যায়।এই দুরত্ব আর কতদিন প্রাহি?তুমি কি আমায় স্বামি হিসেবে একটুও মানতে পারছো না?আমি কি তোমার উপর খুব জোড় করে ফেলছি?’ অর্থ’র বলা কথাগুলো স্মরন করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রাহি।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।অনেক হয়েছে আর না। অনেক সহ্য করেছে লোকটা।প্রাহি আর তাকে কষ্ট দিতে পারবে না।প্রাহি ভালোবাসে লোকটাকে।আর এও জানে অর্থ’ও ওকে ভালোবাসে।

লোকটা গুমড়োমুখো তাই তো ভালোবাসার কথাটা ওকে বলতে পারেনাহ।তবে ভালোবাসা মুখে স্বিকার করবে এমন কিছু না।ভালোবাসা তো অনুভব করার বিষয়।আর প্রাহি অর্থ’র ভালোবাসার গভীরতা প্রতি দিন নতুন নতুন ভাবে অনুভব করে।প্রাহি আর ওর আর অর্থ’র মাঝে কোন দুরুত্ব রাখবে না।আজ নিজেকে সপে দিবে নিজের স্বামির কাছে।নিজেকে পুরোপুরিভাবে বিলিন করে দিবে নিজের স্বামির কাছে।স্বামির ভালোবাসায় নিজের উষ্মতা খুজে নিবে প্রাহি। ও আজ পুরোপুরিভাবে অর্থ’র হয়ে যাবে।কথাগুলো মনে মনে ভাবতেই।ঠোঁটের কোনে লাজুক হাসি ফুটে উঠে প্রাহির।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৯

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আপনাদের কি গল্পটা একগেয়ামি লাগছে?আমি আস্তেধীরে আগাতে চাচ্ছি।তবে যদি আপনাদের ভালো না লাগে আমি তাড়াতাড়ি টেনে দিবো গল্পটা।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩১