একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৯

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৯
সাদিয়া জাহান উম্মি

রাত বারোটা বেজে ছাব্বিশ মিনিট।অর্থ আর আরাফ বাড়িতে এসে পৌছিয়েছে সবে মাত্র।ক্লান্ত দেহ টেনেটুনে কোনরকম সোফায় বসলো অর্থ আর আরাফ।রায়হানা বেগম দু গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দিতেই দুজনে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।পানি পান করা শেষে অর্থ সোফায় মাথা এলিয়ে দিলো।শরীরটা আর চলছে না যেন।রায়হানা বেগম বললেন,

‘ খাবি না তোরা?’
অর্থ কোন জবাব দিলো না।তাই আরাফ বলে,
‘ আন্টি আমরা দুজন খেয়ে এসেছি।আজ যাদের সাথে মিটিং ছিলো তাদের ডিনারের জন্যে ইনভাইটেশন দেওয়া হয়েছিলো।সেই কারনে আমাদেরকেও উনাদের সাথে ডিনার করতে হয়েছে।’
আরাফের কথা শুনে রায়হানা বেগম চিন্তিত হয়ে বললো,
‘ তোরা খেয়ে নিয়েছিস?কিন্তু মেয়েটা এই অসুস্থ শরীর নিয়েই তো না খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।এখন কিভাবে খাওয়াবে ওকে?’
অর্থ ধপ করে চোখজোড়া মেলে তাকালো মায়ের দিকে।বললো,
‘ প্রাহি খায়নি মা?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ না।মেয়েটাকে এতো করে বললাম কিছু খেয়ে নেহ।কিন্তু বারবার বললো তুই আসলে নাকি খাবে।দুপুরেও তেমন একটা কিছু খায়নি।রুমে ওকে দেখার জন্যে গিয়েছিলাম দেখি একগাদা চিপ্স আর চকলেট খেয়ে সারারুম ভরে রেখেছে।তাই দুপুরেও ভালোভাবে খেতে পারিনি।এমন করলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।’
অর্থ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কি করবে অর্থ।রাগ করেও লাভ নেই।এইযে আজ সারাদিন রাগ করে থাকলো অর্থ।এতে তো ওর বুকটাই জ্বলেপুরে খাঁক হয়ে গিয়েছে।বারবার প্রাহির করুন মুখশ্রীটা ভেসে উঠেছে চোখের সামনে।মিটিংরুমে কয়েকবার বেখায়ালি হয়ে গিয়েছিলো অর্থ।ভাজ্ঞিস আরাফ ওকে সামলে নিয়েছে।অর্থ শীতল কন্ঠে বলে,

‘ তুমি একপ্লেট খাবার দিয়ে দেও তো মা।আমি উপরে গিয়ে ওকে খাইয়ে দিবো।’
রায়হানার যেন চিন্তা মুক্ত হলো।তার ছেলে যখন বলেছে তখন আর কোন টেন্সন নেই।রায়হানা বেগম চলে যেতেই।আরাফ ও হাই তুলে উঠে দাঁড়ালো বললো,
‘ আমি ঘুমোতে গেলাম।গুড নাইট!’
‘ শুভ রাত্রি!’
আরাফ চলে গেলো নিজের রুমে।এদিকে রায়হানা বেগম খাবার নিয়ে আসতেই অর্থ ওর মাকে ঘুমিয়ে পরতে বলে নিজেও রুমের দিকে অগ্রসর হলো।

দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো অর্থ।সাথে সাথে চোখ পরলো বিছানায় সয়নরত প্রাহির দিকে।মেয়েটা অনেকটা এলোমেলোভাবেই ঘুমোচ্ছে।গায়ের টপ্সটা পেটের একটু উপরে উঠে গিয়েছে।ফলে ফর্সা পেটটা ড্রিমলাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।গায়ে উড়নাটাও নেই।প্লাজুটাও হাটুর উপরে উঠে গিয়েছে।অর্থ শুককো ঢোক গিললো।নারী দেহের প্রতিটা আকর্ষনীয় ভাঁজগুলো যেন তীব্রভাবে টানছে ওকে।অর্থ চোখ বুজে ফেললো বিরবির করে বলে,
‘ এই মেয়ে নির্ঘাত একদিন আমায় মেরে ফেলবে।’

এগিয়ে গিয়ে খাবারটা টেবিলের উপর রাখলো।তারপর প্রাহির কাছে গিয়ে খুব সাবধানে ওর সবকিছু সামলে দিয়ে ভালোভাবে সুইয়ে দিলো।এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে গিয়ে গালে স্পষ্ট অশ্রুরেখার দেখা মিললো।ধ্বক করে উঠলো অর্থ’র বুকটা।ও কি বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললো মেয়েটাকে?নাহলে এইভাবে তো এইভাবে কাঁদতো না।বুকের বা-পাশটায় চিনচিনে ব্যাথার উপলব্ধি করতে পারলো অর্থ।দুহাতে প্রাহির গাল দুটো আলতো স্পর্শ করলো।খুব সাবধানে অতি আদুরেভাবে ঠোঁটের ছোঁয়া দিলো কপালে।আস্তে আস্তে পুরো মুখশ্রীতে।প্রাহি হালকা কেঁপে উঠলো।অস্পষ্টভাবে গুঙ্গিয়ে উঠলো একটু।ঘুমকাতুরে গলায় বিরবির করে বলে,

‘ ছুঁ…ছুঁবেন না আ…আমায়। আ..আপনি খুব খারাপ।আ….আমি অপেক্ষা করেছিলাম আপ… আপনার জন্যে।ধরবেন না আমায়!’
অর্থ মায়া মায়া চোখে তাকালো প্রাহির দিকে।মেয়েটা দিনদিন ওকে এতোটা পাগল করে দিচ্ছে যে ও নিজের মাঝেই নিজে থাকে না।অর্থ প্রাহির কানের কাছে মুখ নিলো ফিসফিস করে বলে,
‘ আর এমন করবো না জান।আর অপেক্ষা করাবো না আমার বউটাকে।এখন থেকে আমার বউটার সাথে তিনবেলা খাবার খাবো।আমার যতো কাজই থাকুক না কেন!প্রমিস!’

প্রাহির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।তা দেখে অর্থও হাসলো।প্রাহি আবারও ঘুমে তলিয়ে যেতেই অর্থ উঠে গিয়ে জামাকাপড় নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে ডুকে ফ্রেস হয়ে নিলো।আজ সারাদিন বাহিরে ছিলো।শরীরে কতো ধুলোবালি এইভাবে ফ্রেস না৷ হয়ে প্রাহির কাছে যাওয়া ঠিক হবে নাহ।ফ্রেস হয়ে বের হয়ে অর্থ খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে বিছানায় এসে বসলো।প্রাহিকে সাবধানে টেনে নিজের বুকে নিয়ে আসলো।সাবধানে ভাত মাখিয়ে একলোকমা ওর ঠোঁটের কাছে নিয়ে বলে,

‘ হা করো প্রাহি খেয়ে নেও।’
প্রাহির ঘুমের মাঝে এতো ব্যাঘাত ভালো লাগছে না।বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করেই বলে,
‘ উফ! ভালো লাগছে না।কেন এমন করছেন।আমি ঘুমাবো!’
‘ আচ্ছা তুমি ঘুমাও আমি তো মানা করছি না।শুধু আমি তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খেয়ে নেও!’
প্রাহির আর কথা বলতে ইচ্ছে করলো না।চুপচাপ খেতে লাগলো খাবারটা।অর্থও এইভাবে খাওয়াতে লাগলো। হঠাৎ প্রাহি বলে,
‘ আর খাবো না!’

অর্থও আর জোড় করলো না।প্লেট’টা রেখে সাবধানে আবার প্রাহিকে সুইয়ে দিলো।বাকি খাবারটুকু নিজেই খেয়ে নিলো।উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে নিয়ে প্রাহির মুখ মুছিয়ে ওকে পানি খাইয়ে দিলো।অতঃপর বিছানায় সুয়ে প্রাহিকে নিজের বুকে টেনে নিলো।আহ! সারাদিন পর যেন একটু প্রশান্তি পেলো অর্থ।প্রাহির চুলে মুখ ডুবিয়ে নিজেও ঘুমের রাজ্যে পারি দিলো।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে কারো বাহুডোরে আবিষ্কার করলো প্রাহি।বুঝতে আর বাকি রইলো না মানুষটি কে।চোখ তুলে তাকালো প্রাহি।অর্থ’র ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকাতেই হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেলো প্রাহির।ঘুমন্ত অবস্থাতে লোকটাকে আরো সুন্দর লাগে।আলতো হাতে অর্থ’র মুখশ্রীতে হাত বুলালো প্রাহি।কে বলবে এই লোকটা এতো রাগি।কাল কি রাগটাই না দেখালো।অথচ দেখো কিভাবে ওকে বুকে নিয়ে ঘুমাচ্ছে।প্রাহি অর্থ’র কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।এতে অর্থ’র ঘুম খানিকটা পাতলা হয়ে এলো।ঘুম ঘুম গলায় বলে উঠলো,
‘ উফ! প্রাহি নড়েনা এতো।ঘুমাচ্ছি তো আমি!’

প্রাহি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। লোকটার ঘুম ঘুম কন্ঠস্বর শুনে মনে হয় এই বুঝি প্রাহির হার্ট এট্যাক হয়ে গেলো।প্রাহি মিনমিন করে বলে,
‘ আমাকে তো উঠতে দিবেন?আপনি ঘুমান!’
অর্থ প্রাহিকে আরেকটু নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ উহুম! তুমিও আমার সাথে ঘুমাবে!’
‘ উফ এসব বললে কিভাবে হবে?আমি কাল প্রায় সারাদিনই ঘুমিয়েছি।এখন আর ঘুমোতে পারবো না।ছাড়ুন আমায়।আর আপনি আমাকে ধরেছেন কেন?দূরে যান।কাল আমার সাথে অনেক খারাপ বিহেব করেছেন একদম ধরবেন না আমায়!’
অর্থ চোখ খুলে তাকালো।প্রাহির সর্ব মুখশ্রীর দিকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,

‘ আমি আমার বউকে ধরেছি। বুঝেছো মেয়ে।এতো বেশি বুঝো না!’
প্রাহি ভড়কে গেলো।এলোমেলো দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে,
‘ এখন বউ হয়েছি না?কাল তো এই বউয়ের কথা একটুও মনে ছিলো না।আমাকে কাল সারাদিন ইগনোর করেছেন!’
অর্থ ঝুকে আসলো প্রাহির দিকে আরেকটু।দুষ্টুমি কন্ঠে বলে,

?’ আমি তোমাকে ইগনোর করলে তোমার কি? বাই চান্স প্রেমে টেমে পরে গেছো নাকি আমার? প্রেমে পরলে বলে দিতে পারো।’
প্রাহি অর্থ’র কথায় মনে মনে বলে, প্রেমে তো পড়েছি সেই কবে। আজ থেকে না আরো সাত বছর আগে থেকে।সেটা তো আর আপনি জানেন না।আপনি আমাকে ইগনোর করলে আমার কেমন লাগে তা তো আপনি বুঝতে পারেন নাহ।বুঝলে কি আমাকে এইভাবে ইগনোর করে কষ্ট দিতেন?নিষ্ঠুর লোক!
তবে মুখে আর কিছু বললো না।অর্থ প্রাহির গালে ধরে নিজের দিক ফিরালো।প্রাহি তাকাতেই অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,

‘ তুমি আমার কথা শুনো না একটুও।তাই কাল বুঝালাম এইভাবে কারো কথার দাম না দিলে কেমন লাগে।আমি তোমার ভালোর জন্যেই বলি প্রাহি।তাও তুমি আমার কথা শুনো না।তবে এখন থেকে আর ইগনোর করবো না।আমার কথা যখন থেকেই ইগনোর করবে তখনই চেপে ধরে চুমু খেয়ে নিবো।তাও একেবারে ঠোঁটে, বুঝেছো?’

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২৮

ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।ছোট হয়ে যাওয়ার জন্যে দুঃখিত।আসলে ঈদ উপলক্ষে আমার বাবা এসেছে বাড়িতে দুই মাস পর।তাই লিখার টাইম বেশি একটা পারছি না।ক্ষমা করবেন।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩০