একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি বোনাস পর্ব

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি বোনাস পর্ব
সাদিয়া জাহান উম্মি

-‘ আপনাকে অভিনন্দন।কারন আপনার স্ত্রী মা আর আপনি বাবা হতে চলেছেন।ইনফেক্ট আপনাদের সবাইকেই অভিনন্দন।’
ডাক্তার কথাটা বলেই চলে গেলেন।তিনি যাওয়ার সাথে সাথে অর্থ থপ করে চেয়ারে বসে পরলো।বাড়ির সকলের প্রচন্ড পরিমানে খুশি হয়েছে কথাটা শুনে।কিন্তু আবার কষ্টও লাগছে রাবেয়া বেগমের জন্যে।ইসস,নাহ পারলো মেয়ের বিয়েটা দেখে যেতে না পারলো মেয়ের ঘরের সন্তানদের জন্ম দিতে।একদিক সুখ তো আরেকদিকে দুঃখ।অর্থকে বিধস্ত দেখাচ্ছে।কেমন যেন হাত পা ছেড়ে দিয়েছে ও।হেমন্ত সিক্ত চোখে ভাইকে দেখে তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে যায় অর্থ’র দিকে।অর্থ’র কাছাকাছি আসতেই হেমন্ত বলে,

-‘ কি হয়েছে ভাই?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?তুমি খুশি হওনি?’
অর্থ কিছুই বললো না।কেমন কেমন যেন এলোমেলো দৃষ্টিতে হেমন্ত’র দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ালো।ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো প্রাহির কেভিনের দিকে।হেমন্ত হাসলো।সে জানে তার ভাই কেন এমন করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আপনি মা হতে চলেছেন মিসেস প্রাহি! ‘ ডাক্তারের কথাটা যখনই কর্ণপাত হয়েছে তখন থেকে বিমূঢ় হয়ে বসে রয়েছে প্রাহি।কাঁপা কাঁপা হাতজোড়া ওর পেটে রাখলো প্রাহি।ও মা হবে।ওর মাঝে আরেকটা প্রান আছে।অবশ্য এই খবরটাতো ওর আব্বু আম্মু আগেই ওকে স্বপ্নে এসে ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছে।প্রাহির চোখ হতে টপটপ করে অশ্রুকণা ঝড়ে পরছে।প্রাহি বড়বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলালো।নাহ কাঁদলে হবে না।তাকে এখন স্ট্রোং হতে হবে।হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকায় প্রাহি।অর্থকে দেখে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায় প্রাহি।অর্থ ধীরপায়ে প্রাহির কাছে এগিয়ে আসে।কাছে এসে বসে প্রাহির। তাকিয়ে থাকে প্রাহির দিকে।নিষ্পলক,নির্নিমেষ।তারপর হুট করে প্রাহিকে জড়িয়ে নেয়ে নিজের বাহুডোরে।প্রাহিও দুহাতে খামছে ধরে অর্থ’র পিট।প্রাহি স্পষ্ট টের পেলো অর্থ’র পুরো শরীর কাঁপছে।তার কিছুক্ষন পরেই ঘারে ভেজা অনুভব করলো প্রাহি।তবে কি অর্থ কাঁদছে?প্রাহি অর্থ’র চুলের ফাকে হাত গলিয়ে দিলো।ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাবার চেষ্টা করে বলে,

-‘ কাঁদছেন কেন আপনি?’
-‘ আমি বাবা হবো প্রাহি!’ বলেই প্রাহিকে দিয়ে ওর পেটে মুখ গুজে দেয় অর্থ।কেঁপে উঠে প্রাহি।তবে কিছু বলেনা।আজ এই প্রথম অর্থকে প্রাহি কাঁদতে দেখলো।এইভাবে কাঁপতে দেখলো।অতি আনন্দে বুঝি মানুষ কাঁদে?সে জানে অর্থ এখন মুখে বলে নিজের আনন্দটা প্রকাশ করতে পারছে না।তবে প্রাহি জানে অর্থ ঠিক কতোটা খুশি হয়েছে যতোটা খুশি হলে এমন কঠিন হৃদয়ের একজন পুরুষ কাঁদে।

পরেরদিন রাবেয়া বেগমের জানাযা দেওয়া হয়।খুব কেঁদেছিলো প্রাহি।চেয়েও নিজেকে শক্ত রাখতে পারেনি।কাঁদতে কাঁদতে বার দুয়েক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। শরীর এতোটাই দূর্বল হয়ে পরেছিলো যে ওকে দু’দিন হাসপাতালে ভর্তি করে রাখানো হয়েছিলো।প্রাহি এমন অবস্থায় অর্থ যেন পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলো।কি থেকে কি করবে ওর পুরো হুশ হারিয়ে ফেলেছিলো।অর্থ’র অবস্থা দেখে প্রাহি নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।

তবে ডাক্তার প্রাহিকে বুঝিয়েছে এই সময় এমন কান্নাকাটি,দুশ্চিন্তা করা যাবেনা।তাহলে বাচ্চা মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।প্রাহি বুঝতে পারে ডাক্তারের কথা।তাই সেদিন হতে আর কান্নাকাটি করেনি প্রাহি।ওর ভাগ্যে এইটাই লিখা ছিলো বলে ভাগ্যকে মেনে নেয় প্রাহি বিনা বাক্যে।এদিকে বাড়ির প্রতিটি মানুষ যেন বাচ্চা আসার কথা শুনে তারা নিজেই বাচ্চা হয়ে গিয়েছে।রাবেয়া বেগম চলে যাওয়ায় দুঃখতো সবার মনেই আছে।কিন্তু তাদের হাতে তো আর কিছু করার ক্ষমতা নেই।যে যাওয়ার সে চলে যাবেই।

তবে যে আসতে চলেছে তাকে তো সাদরে গ্রহন করতে হবে তাই নাহ?প্রাহি তাদের এমন হাসিখুশি দেখে ও নিজেও আর এমন বিষন্ন মুখে থাকতে পারলো না।যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো।কিন্তু রাত হলেই মা বাবার জন্যে বুকটা খা খা করে উঠে।কিন্তু অর্থ এসে ওকে নানানভাবে সামলে নেয়।আবার নিজের সন্তানের কথা ভেবেও প্রাহি নিজেকে সামলে নেয়।সে যে এখন মা হতে চলেছে।মায়েদের যে এতো ভেঙ্গে পরতে নেই।মায়েরা হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি স্ট্রোং।যে নিজের সন্তানের জন্যে সব কিছু কর‍তে পারে।সব মানে সব।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি  পর্ব ৩৮

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।এক আপু এতো সুন্দর আর কিউটভাবে রিকুয়েস্ট করেছে যে আমি বোনাস না দিয়ে পারলামই নাহ।অথচ আমার শরীরটা ভালো না।কয়েকদিন যাবত গরুর গোস্ত খেতে খেতে।শরীরে এলার্জি উঠে অবস্থা খারাপ।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৯