একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৯+৪০

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৯+৪০
সাদিয়া জাহান উম্মি

অফিস থেকে ফিরতে আজ একটু লেটই হয়েছে অর্থ’র।ইম্পোর্টেন্ট মিটিং ছিলো তাই যাওয়া অফিসে যাওয়া নাহলে অর্থ এখন অফিসে যায় নাহ।বাড়িতেই অফিসের কাজ সেড়ে নেয়।আর অফিস সামলানোর দায়িত্ব গিয়ে পরেছে হেমন্ত আর আরাফের উপর।প্রাহির চারমাস চলছে।মেয়েটা অর্থ’কে না দেখে একদন্ডও থাকতে চায়না।অর্থ একটুখানি চোখের আড়াল হলেই কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে যায়।

একদিন ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে অফিসে গিয়েছিলো না বলে।তার কিছুক্ষন বাদেই ফোন করে রায়হানা জানান প্রাহি নাকি কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে উঠেছে।শ্বাসও ফেলতে কষ্ট হচ্ছে।বার বার ওর নাম ধরে ওকে ডাকছিলো।শেষে না পেরে অর্থ তৎক্ষনাৎ ছুটে চলে এসে দেখে প্রাহি কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।ও আসা মাত্রই সেইযে বুকের সাথে লেপ্টে ছিলো আর ছাড়েনি।সেই হতে অর্থ অফিস যাওয়া বাদ দিয়েছে।তবে আজও যেতো পারতো না।অনেক কষ্ট বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখে এসেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তাও প্রাহি শর্ত দিয়েছে যতোক্ষন ও অফিসে থাকবে ওর সাথে যেন ভিডিও কলে কানেক্টেড থাকে।অর্থও মাথা পেতে নেয় স্ত্রীর সব আবদার হাসি মুখে।কতোবার যে জিজ্ঞেস করেছে কখন আসবেন আপনি?এই একপ্রশ্ন বারবার করে গেছে মেয়েটা।এতে একটুও বিরক্তি হয়নি অর্থ। উলটো ভালোলাগায় প্রানটা ছেঁয়ে গেছে।অফিসের সবাই অর্থ আর প্রাহির ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ।ক্লাইন্ট রা যখন জানতে আরে অর্থ বাবা হতে চলেছে অর্থকে সবাই হাসি মুখে অভিনন্দন জানায়। মিটিং করতে করতে চোখ যায় প্রাহি ঘুমিয়ে পরেছে।মিটিং রুমে সবার কোলাহলে ডিস্টার্ব হতে পারে ভেবে ফোন রেখে দেয় অর্থ।তারপর দ্রুত মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরে আসে।মুচঁকি হাসে অর্থ।ড্রয়িংরুমে আসতেই রায়হানা একগ্লাস পানি দিলে তা খেয়ে নেয়।তারপর জিজ্ঞেস করে,

-‘ প্রাহি খেয়েছে মা?’
রায়হানা বেগম চিন্তার ভাজ কপালে ফেলে বলে,
-‘ আমি গিয়ে দেখি ঘুমাচ্ছে।ঘুম থেকে ডেকে তুলি।উঠে বসতেই ল্যাপটপের চোখ পড়তেই দেখে তুই ভিডিও কল কেটে দিয়েছিস।কান্না করার আগে আমি আর ইশি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করি।তারপর জোড় করে একপ্লেট ফলমূল খাওয়াই।কিন্তু শেষে দুধটুকু অনেক কষ্টে এক চুমুক খাওয়াতেই বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছে সব কিছু।এই নিয়ে চারবার বমি করলো।লাস্ট দুবার তো তিতা পানিটুক ছাড়া আর কিছুই বের হয়নি।এখন কেমন নিশ্চল হয়ে পরে আছে।বললাম কিছু খেয়ে নেহ।বলে আর খাবে না।এখনো নাকি গা গুলাচ্ছে।তুই আসলে নাকি তোর সাথে খাবে।ইশি আছে ওর পাশে।দেখ গিয়ে কিছু খাওয়াতে পারিস নাকি।মেয়েটার জন্যে আমার এতো চিন্তা হয়।’

অর্থ রায়হানা বেগমের কথা শুনে অস্থির হয়ে দ্রুত পায়ে উপরে উঠে নিজের রুমে যায়।গিয়ে দেখে ইশির কোলে মাথা দিয়ে আছে প্রাহি।চোখ দুটো বুজে আছে।কেমন ক্লান্ত দেখাচ্ছে মায়াবী মুখটা।অর্থ গলা খাকারি দিলো।ইশি তাকিয়ে অর্থ’কে দেখে বলে,

-‘ এসে পরেছেন ভাইয়া?’
-‘ হ্যা হেমন্ত তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে।যাও ওর কাছে।’ গম্ভীর কন্ঠে বললো অর্থ।
ইশি মুচঁকি হেসে প্রাহির মাথাটা বালিশে রেখে উঠে দাড়ালো। যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই অর্থ ডেকে উঠলো।
-‘ ইশি শোনো!’
ইশি তাকায়।
-‘ জ্বি ভাইয়া!’
অর্থ মুচঁকি হেসে বলে,

-‘ ধন্যবাদ বোন।এতোক্ষন প্রাহির খেয়াল রাখার জন্যে।’
-‘ কি যে বলেন না ভাইয়া।এটা আমার কর্তব্য।আপনি ফ্রেস হয়ে নিন আগে।প্রাহি কিন্তু কিছু খায়নি।যাও খেয়েছে সব বমি করে দিয়েছে।আমি স্যুপ পাঠাচ্ছি।আর আপনার খাবারটাও পাঠিয়ে দিচ্ছি।খেয়ে নিয়েন।’
অর্থ মাথা দুলালো।ইশি মুচঁকি হেসে চলে গেলো।ইশি যেতেই অর্থ প্রাহির কপালে ভালোবাসার স্পাই দিয়ে।ফ্রেস হতে চলে গেলো।বেশি সময় নিলো না।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রায়হানা খাবার টেবিলে রাখছেন।অর্থ যেতেই তিনি বলেন,

-‘ খেয়ে নিস দুজনে।রাত তো কম হলো না।’
অর্থ হালকা হাসলো।মা’কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ তুমি আর বাবা খেয়েছো মা?’
-‘ হ্যা আমি তোর বাবা।হিয়ান্ত ভাই আর হেনা একসাথে খেয়েছি।এখন শুধু তুই,প্রাহি,আরাফ,হিয়া,হেমন্ত আর ইশি বাকি আছে।’
অর্থ এগিয়ে গিয়ে মায়ের কপালে চুমু খেলো।বললো,

-‘ এখন গিয়ে সুয়ে পরবে।আর কোন কাজ করা লাগবে না।এতো কেন দৌড়াদৌড়ি করো তুমি?বাড়িতে এতোগুলো সার্ভেন্ট্স তুমি কেন খাবার নিয়ে আসলে?যাও এখনি ঘুমাবে গিয়ে।’
-‘ আচ্ছা বাবা। আর এতো চিন্তা করিস না।আমার এতো তাড়াতাড়ি কিছু হবে না।আমি ভাই আমার নাতি নাতনীনের বিয়ে শাদি দেখেই মরবো। এখনো হিয়া আর হেমন্ত’র ঘরেরটা বাকি আছে।ওদের না দেখে কি আমি এতো জলদি যাচ্ছি নাকি?’

মরার কথা শুনে রেগে গেলো। রাবেয়া বেগম মরার পর থেকে অর্থ প্রতিনিয়ত ওর মায়ের জন্যে অস্থির হয়ে থাকে।প্রাহিকে ধ্বুকে ধ্বুকে কাঁদতে দেখে ওর হৃদয়টাও কাঁদে।অর্থ’র এমন রিয়েকশনে হেসে দেন রায়হানা বলেন,
-‘ হয়েছে আর এমন করতে হবে না।আসছি আমি।খেয়ে নিস।’

রায়হানা বেগম যেতেই অর্থ প্রাহির কাছে গেলো।প্রাহির পাশে বসে একধ্যানে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর হুট করে প্রাহির গলায় মুখ গুজে দিয়ে সেখানে ছোট ছোট ভালোবাসার আবেশে ভড়িয়ে দিতে লাগলো প্রিয়তমাকে।মেয়েটা দিনদিন আগের থেকে আরো সুন্দর হয়ে যাচ্ছে।দেখলেই আদর আদর পায় অর্থ’র।হঠাৎ ঘুমের মাঝে ব্যাঘাত ঘটায় চোখ কুচকায় প্রাহি।আস্তে আস্তে সম্ভিত ফিরে পেতেই বুঝে যায়।এ আর কেউ না ওর প্রান প্রিয় স্বামি।কতোক্ষন হয়ে গেছে লোকটাকে দেখে না। প্রাহি হুট করে দুহাতে জড়িয়ে ধরে অর্থকে।ফুফিঁয়ে উঠে বলে,

-‘ এতো দেরি করে আসলেন কেন?জানেন আমি আপনাকে কতো মিস করেছি?’
প্রাহির অভিমানমিশ্রিত কথায় মুচঁকি হাসে অর্থ।প্রাহির পিঠের নিচে হাত গলিয়ে দিয়ে সাবধানে প্রাহিকে টেনে উঠিয়ে কোলে এনে বসায়।প্রাহি এইবার অর্থ’র ঘার জড়িয়ে ধরে।অর্থ হালকা হেসে বলে,
-‘রাগ করেনা বউ।আমি কি সহজে তোমাকে ফেলে রেখে যেতে চাই বলো?আজ জরুরি কাজ ছিলো অফিসে জানোই তো।রাগ করেনাহ!’
প্রাহির অভিমান একটুও কমলো না।বরংচ বললো,

-‘ তাহলে ভিডিও কল কাটলেন কেন?আমি বলেছি না আমার সাথে ভিডিও কলে রেখে তারপ্র কাজ করবেন।’
অর্থ এইবার সাবধানে প্রাহির গাল ধরে ওর মুখোমুখি করলো।প্রাহির কপালে চুমু দিয়ে বলে,
-‘ আমি তো তাই করছিলাম।কিন্তু আমার ঘুমকাতুরে বউটা তো নিজেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।তাই যেন আমার বউয়ের ঘুমে সমস্যা না হয়।এইজন্যে আমিই ফোনটা কেটে দিয়েছি।তাও আমার দোষ।এখন এই দোষি আপনার কাছে হাজারবার ক্ষমা চাইলো।এইবার তাকে মাফ করেন।’

প্রাহি ফিঁক করে হেসে দিলো।অর্থ’র কথার রিয়েকশনে।অর্থ নিষ্পলক মুগ্ধ হয়ে দেখলো সেই হাসি।মেয়েটা এই একটুতেই এখন কেঁদে দেয় আবার একটুতেই হাসে।ডাক্তার বলেছে এই সময় এমন মুডসুয়িং হয়।প্রাহি দূর্বল নয়নে পিটপিট করে তাকালো।বললো,

-‘ কি দেখেন?’
অর্থ জবাবে বলে,
-‘ তোমাকে।দিনদিন এতো সুন্দর হয়ে যাচ্ছো।আমার তো শুধু তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করে।ইসস, একদম মারাত্মক আবেদনময়ী লাগে।নিজেকে কন্ট্রোল করা বড্ড কষ্ট হয়ে যায় বউ।’
অর্থ’র কথায় প্রাহি মুখটা একটুখানি করে বাচ্চাদের মতো করে বলে,

-‘ আপনি বড্ড খারাপ।’
অর্থ ভ্রু-কুচকে বলে,
-‘কেন?আমি খারাপ হলাম কেন?’
-‘ খারাপই তো।আপনি আমাকে এখন আর আগের মতো আদর করেন না আপনি।বুঝি তো আমি সব বুঝি।এখন আমি আর আগের মতো সুন্দর নাহ।সব আপনি মিথ্যে কথা বলেন।আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসেন নাহ।’
অর্থ প্রাহিকে বুকে চেপে ধরে তৎক্ষনাৎ।ধীর কন্ঠে আওড়ালো,

-‘ কিছু শুনতে পাচ্ছো প্রাহি?’
প্রাহি চোখ বুঝেই মাথা নাড়িয়ে জানায় ‘হ্যা!’। অর্থ জিজ্ঞেস করে,
-‘ কি শুনতে পাচ্ছো বলো তো?’
প্রাহি ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।মাথা উঠিয়ে অর্থ’র চোখে চোখ রেখে বলে,
-‘ এটাই শুনতে পাচ্ছি।আপনার হৃদয় প্রতিনিয়ত আমাকে বলছে, আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রাহি।!’
-‘ তাহলে এসব কেন বলো? আমার কষ্ট হয়না হয় বউ!’
প্রাহি একহাত দিয়ে কান স্পর্শ করে বলে,

-‘ সরি আর বলবো না।আমি তো জানি আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন।’
বলেই খিলখিল করে হাসে প্রাহি।অর্থ দেখে দেখে প্রান জুরায়। আবারও বুকে চেপে ধরে প্রাহিকে।অনেকক্ষন কেটে যায় এইভাবেই।হঠাৎ প্রাহিকে খাওয়ানোর কথা মনে পড়তেই।দ্রুত প্রাহিকে ছেড়ে দেয়।তারপর প্রাহিকে বেডে বসিয়ে খাবার নিয়ে আসে।প্রাহিকে খুব সাবধানে খাইয়ে দেয়।এতো সহজে কি খায় মেয়েটা?রিতিমতো যুদ্ধ করতে হয় অর্থকে।খাওয়ানো শেষে হাফ ছাড়ে অর্থ।অতঃপর নিজেও খেয়ে নেয়। প্লেটগুলো গুছিয়ে রেখে প্রাহিকে সুইয়ে দিয়ে।ওর কপালে চুমু খায় অর্থ।তারপর প্রাহির হাটুর কাছে এসে প্রাহি কামিজ তুলে উপরের দিকে উঠিয়ে দেয়।প্রাহির হালকা ফুলো পেটে চুমু খায় অর্থ।প্রাহি পেটে কান লাগিয়ে বলে,

-‘ জলদি চলে এসো মামনি।আমার রাজকন্যা!বাবা অনেক অপেক্ষা করছি তোমার জন্যে।’
প্রাহি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে অর্থ’র দিকে। লোকটা রোজ নিয়ম করে এমন পাগলামি করে।ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে এইভাবে পেটে কান লাগিয়ে।অর্থ’র ধারনা বাবুরা তার কথা বুঝে।প্রাহি কিছু বলেনা।শুধু দেখে যায় নিজের প্রিয়তমের ভালোবাসাময় পাগলামিগুলো।

ইশিকে বুকে নিয়ে সুয়ে আছে হেমন্ত।ইশি এখনো ঘুমায় নি।হেমন্ত ইশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।হঠাৎ ইশি নিরবতা ভেঙ্গে বলে,
-‘ শুনছো?’
হেমন্ত ভ্রু-কুচকালো। মেয়েটা এখনো ঘুমায়নি।হেমন্ত তাও কিছু বললো নাহ।জবাব দেয়,
-‘ হ্যা বলো?’
-‘ আগে বলো তুমি রাগ করবো নাহ!’
-‘ রাগের কথা হলে অবশ্যই রাগ করবো।’ গম্ভীর কন্ঠ হেমন্ত’র।
ইশি মুখ লটকিয়ে বলে,

-‘ থাক তাহলে বলা লাগবে নাহ।’
হেমন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এই মেয়েটা এতো জেদি।
-‘ আচ্ছা রাগ করবো না।বলো তুমি।’
ইশি হেমন্ত’র উদোম বুকে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
-‘ প্রাহি মা হচ্ছে।কয়েকদিন পর ওর ছোট্ট একটা বেবি হবে।ছোট ছোট হাত পা হবে।ডাগর ডাগর চোখে তাকাবে।ছোট ছোট হাতপা দিয়ে পুরো বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করবে।কি সুন্দর লাগবে তাই নাহ?’
হেমন্ত হালকা হেসে বলে,

-‘হ্যা।অনেক সুন্দর লাগবে।আমি চাচ্চু হবো।ওকে সারাদিন কাধে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো।’
-‘ শুনো না বলছিলাম কি?’
হেমন্ত এইবার রেগে গেলো।সেই কখন থেকে মেয়েটা আমতা আমতা করছে।তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-‘ বলো কি বলবে?এমন করছো কেন?’
-‘ আমিও মা হবো হেমন্ত।আমারও একটা বেবি লাগবে।আমারও মা ডাক শুনতে ইচ্ছে করে হেমন্ত।’

হেমন্ত চাঁপা শ্বাস ফেললো।এটা হেমন্ত আগেই বুঝেছে।হেমন্ত ইশিকে নিবিড়ভাবে বুকে আকড়ে ধরে বলে,
-‘ দেখো ইশি তুমি আমি এখন মাস্টার্সে ভর্তি হবো।তুমি নিজেই তো দেখছো আমাদের বয়স হয়নি তেমন।আমরা দুজন কিন্তু সেম এইজ ইশি।আমি তোমার থেকে মাত্র তিনমাসের বড়।আমরা বাচ্চা নিলে তোমার আমার পড়ালেখায় অনেক সমস্যা হবে ইশি।দেখো প্রাহিরই এইবছর গ্যাপ যাবে।একটা বছর লস বুঝো?

তুমি নাহলে গ্যাপ দিলে কিন্তু আমারও একটা দায়িত্ব আছে তাই নাহ?তোমার এই অবস্থায় আমি চাইবো সবসময় তোমার আশেপাশে থাকবে।ঠিক যেমন ভাইয়া থাকে প্রাহির পাশে।কিন্তু এখন আমরা বাচ্চা নিলে আমি পড়ালেখা সাথে অফিসের চাপে তোমাকে ঠিকঠাক সময় দিতে পারবো না।নাহ পারবো তোমার ছোট ছোট আবদারগুলো পূরন করতে।তখন আমি নিজেই নিজের কাছে ছোট হয়ে যাবো ইশি।আমি তোমাকে মানা করবো না ইশি।শুধু বলবো সবটা ভেবে তুমি আমাকে উত্তর দেও।তারপরেও যদি তুমি বেবি নিতে চাও।আমি না করবো নাহ।আমি সবসময় তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করবো।’

ইশি ভরে উঠে।ছেলেটা ওকে এতো বুঝে।ইশি তো আবেগে ভেসে বেবি নেওয়ার কথা বলে ফেলেছে।আসলে প্রাহিকে দেখে ওরও ইচ্ছে করছিলো অনেক।কিন্তু এখন বুঝতে পারছে কি বোকামিটাই না করছিলো ও।হেমন্ত’ও তো ঠিকই বলছে।ওর কারনে হেমন্ত’র লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে।হেমন্ত’র ভবিষ্যত পিছিয়ে যাবে।এটা ইশি চায়না।ইশির চোখ থেকে একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো।না কষ্টে না সুখে।হেমন্ত এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে ও আজ অনেক সুখী।তাই তো সুখের কান্না কাঁদছে মেয়েটা।ইশি ধরা গলায় বলে,

-‘ আমাকে ক্ষমা করো হেমন্ত।আমি কোনকিছু না ভেবে হুট করে এমন একটা কথা বলে ফেললাম।তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেললাম তাই নাহ?’
হেমন্ত হালকা হেসে ইশির চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।বলে,
-‘ দূর বোকা মেয়ে।এখানে কান্নার কি আছে?এটা প্রতিটি মেয়েই চাইবে।কেইবা না চাইবে সন্তানের মুখে মা ডাক শুনতে?আমিও তো চাই আমাদের সন্তান আমাকে বাবা আর তোমাকে মা ডাকবে।আমরা ওকে অনেক অনেক আদর করবো।তবে তা অবশ্যই হবে।শুধু সঠিক সময় আসুক।আমরা দুজন আরেকটু ম্যাচিউর্ড আর সাবলম্বি হই।তখন আর তোমাকে বাধা দিবো না আমি প্রমিস।’

ইশি হেমন্ত’কে জড়িয়ে ধরলো।আবেগি কন্ঠে বলে,
-‘ আই লাভ ইউ হেমন্ত!আমি ভালোবাসি খুব তোমাকে।’
হেমন্ত ইশি কথায় চোখ বুঝে ফেলে।এই মেয়েটার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনলে হৃদয়টা প্রশান্তিতে ভরে যায়।তখন মন চায় মেয়েটাকে আদরে আদরে ভড়িয়ে দিতে।এখনো সেটাই মনে চাচ্ছে।তাই মনকে আর বাধাদিলো না হেমন্ত।ইশির চুলগুলো ঘাড়ের একপাশে নিয়ে ইশির কানেকানে ফিসফিস করে বলে,
-‘ আমি তোমায় খুব ভালোবাসি আমার ইশিরানি।’

হেমন্ত উষ্ম নিশ্বাসগুলো ইশির ঘাড়ে এসে লাগছে কেঁপে কেঁপে উঠছে ইশি।হেমন্ত ইশির গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।গভীরভাবে ঠোঁটের ছোঁয়া দিতে লাগলো ইশিকে।ইশি ঘনঘন শ্বাস ফেলছে।ঘামছে ধরে হেমন্ত’র পিঠ।হেমন্ত ইশিকে বিছানায় সুইয়ে দিলো।কিয়ৎক্ষন মায়াভরা মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে ইশির কপালে,দুচোখে,গালে চুমু খেলো।তারপর ইশির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।ইশি আবেশে হেমন্ত’র পিঠ খামছে ধরলো।তলিয়ে গেলো দুটি মানুষ ভালোবাসার সাগরে।

রাত তিনটা বাজে বাহিরে হালকা বৃষ্টি পরছে।অর্থ’র উদোম বুকে সুয়ে আছে প্রাহি।হঠাৎ এমন সময় ঘুম ভেঙ্গে যায় ওর।চোখমুখ কুচকে খুব সানধানে অর্থ’র বুক থেকে সরে উঠে বসে।ভালোলাগছে না কিছু।কেমন যেন অস্থির লাগছে প্রাহির।মাথার ভীতরে অশান্তি লাগছে।অর্থকে ডাকতে ইচ্ছে করছে না প্রাহির লোকটা মাত্র দু কি তিনঘন্টা হয়েছে ঘুমিয়েছে।মূলত ওর জন্যেই ঘুমায়নি।সারাদিন প্রায় বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটানোর কারনে।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি বোনাস পর্ব

রাতে সহজে ঘুম আসেনা প্রাহির।তাই অর্থ’রও প্রাহির সাথে সাথে জেগে থাকালাগে।অনেক খাটখোড় পুরিয়ে প্রাহিকে ঘুম পারায় অর্থ।মাঝে মাঝে অর্থ’র জন্যে অনেক কষ্ট লাগে প্রাহির।লোকটা কতোটা কষ্ট করে ওর জন্যে।ও কতো জ্বালায় তাও লোকটা ওর প্রতিটা আবদার মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রাহি।পানি তেষ্টা পেয়েছে ওর বেজায়।পাশের টেবিলল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দেখে বোতলে পানি নেই।প্রাহি আর অর্থকে ডাক দিলো।ধীরে বিছানা থেকে নেমে আলতো পায়ে চলে গেলো পানি আনতে নিচে কিচেন থেকে।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৪১