এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৭

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৭
নুসাইবা রেহমান আদর

সানার মুড প্রুচুর খারাপ। মন চাচ্ছে সাফোয়ান কে ধরে যদি সে পিটাতে পারতো। এই লোক তাকে মোটা বলে অপমান করলো।
সানা: আদিল ভাইয়া আপনি হুইলচেয়ার এর ব্যাবস্থা করুন।আমি চাইনা কেউ আমাকে নিজের ইচ্ছায় কোলে নেক, এরপর আমাকে মোটা বলে অপমান করুক।
আদিল : আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী আমি নিয়ে দেখছি কোথায় হচ্ছে আর পাওয়া যায়।
সাফোয়ান এতক্ষণ বোকার মত তাদের কথা শুনছিল কি বলতে গেছিল আর কি হয়ে গেছে। চেয়েছিল হাসি খুশি রাখতে। আর এই দিকে রেগে গেছে।

সাফওয়ান: আদিল ভাই তুমি আগুনে ঘি ঢালার কাজ কইরো না। এক কাজ করো একটা নার্স ডেকে নিয়ে আসো, আমি সানার ওষুধগুলো কিনে নিয়ে আসি। ওর খেয়াল রাইখো, আর উল্টাপাল্টা কোন বুদ্ধি তুমি তাকে দিবানা।
সানা বসে বসে অপেক্ষা করছিল কখন সাফোয়ান ফিরে এসে তাকে বাসায় নিয়ে যাবে। তার এখানে বসে থাকতে একটু ভালো লাগছে না।
আদিল: ভাইয়া ভাবিকে কি নিয়ে আসবেন নিয়মিত চেক আপের জন্য?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাফোয়ান:এক কাজ করো আদেল তুমি আমাদের বাসায় তোমার সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে আইসো। এই পচা মহিলারে নিয়ে তো সবসময় আসা যাওয়া করা পসিবল না। আর আমার অনেক কাজ আছে তাই না? সবসময় কাজ ফাঁকি দিয়ে আমি যদি ঘোরাফেরা করি তাহলে আমাকে পার্লামেন্ট থেকে বাদ দিয়ে দিবে । আর যেহেতু আমি একজন মন্ত্রী আমার তো ঘরের মানুষের খেয়াল রাখলে হবে না জনগণের ও খেয়া রাখতে হবে।
সানা:আদিল ভাইয়া এই লোককে বলে দেন এই লোকটা আমাকে নিয়ে বারবার হসপিটালে আসা লাগবে না। আমি বরঞ্চ একা একা আসতে পারবো।

এই লোক যতবার আমাকে খোটা দেয় তার থেকে ভালো না আমি নিজে একা একা চলাফেরা করবো।
আদিল:আহা ভাবি আপনি বুঝতে পারছেন না রাগ কেন করছেন? সমস্যা নেই আমি আপনাদের বাসায় যাব প্রতিদিন আপনাকে চেকাপের জন্য।
আদিল মনে মনে ভাবছে সে যদি প্রতিদিন অই বাসায় যায় তাহলে এই উছিলায় সে সিনথীয়া কে ও দেখতে পারবে। আদিল বুঝতে পারছে না সিনথীয়ার প্রতি তার এই অনুভুতির শেষ কোথায় বা এর পরিনতি কি।
আদিল থেকে বিদায় নিয়ে সাফোয়ারার সানা বাসার দিকে রওনা দিলো।পথের মধ্যে ফুচকার দোকান দেখে সাফোয়ান গাড়ি থামায়।

সাফোয়ান:কেউ যদি ফুচকা খাইতে চায় তাহলে আমাকে বলতে পারে।
সাফওয়ান যে সানাকে ইঙ্গিত করে কথাটি বলল তা সানা ভালোভাবে বুঝতে পারছে।ফুচকা খাওয়াবে তো সোজাসুজি ভাবে বললেই পারে এভাবে নাটক করা মানে কি?

সানা:এত নাটক না করে সোজাসুজি বলেই তো হয় ফুচকা খাওয়াতে চান আমাকে।
সাফোয়ান: না কেউ যদি আমার টাকায় ফুচকা খেতে না চায় তাহলে তো কিছু করার নাই তাই না?
সানা:যদি ফুচকা খাওয়াইতে চান তাহলে খাওয়ান, না খাওয়াইলে গাড়ি স্টার্ট করেন বাসায় যাবো ভালো লাগতেছে না।
সাফোয়ান:এক কাজ করি! ফুচকা কিনে বাসায় নিয়ে যাই। সবাই একসাথে খাওয়া যাবে।
সানা: তাহলে তাই বসেছেন কেন।

সাফওয়ান গাড়ি থেকে নেমে ফুচকা কিনে এনে তারা বাসায় চলে যায়।
অন্যদিকে সাফোয়ানের বাবা মা আলোচনা করছেন । কিভাবে তারা সাফোয়ানের সব সম্পত্তি নিজেদের নামে করে নিবে। সাফোয়ানের বাবা মৃত্যুর আগে সব সম্পত্তির সাফয়ানের নামে লিখে দিয়েছিল। যখন সাফওয়ান বিয়ে করবে এবং তার সব সম্পত্তি তার স্ত্রী পাবে।

তাই তো সানার মামা বুদ্ধি খাটিয়ে সানার সাথে বিয়ে দেয় সানার সার্টিফিকেটে ১৮ বছর বয়স দেখিয়ে। যায়ে কম বয়সী সানা সম্পত্তি নিয়ে মাথা না ঘামায় আর কৌশলে সানার মামা তার নামে সব লিখিয়ে নিতে পারে। সাফোয়ান মিথীলা কে ভালোবাস তো। তাই মিথীলা চলে যাওয়ার পর ভেবেছিলো যে সানাকে তো সাফোয়ান ভালোবাসবে না। তাই সম্পত্তি পাওয়ার পর সানা আর সাফোয়ানের তালাক করিয়ে দিবে। অথচ ঘটলো সব উল্টো। একদিকে সাফোয়ান সানাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে অন্যদিকে সানার সন্তান হবে।

সন্তান আসলে তো সব সম্পত্তি সানার আর সাফোয়ানের বাচ্চার হবে। তাই তো বুদ্ধি খাটিয়ে তারা সানার বাবা মাকে দিয়ে সানার বাচ্চাকে নষ্ট করলো। অন্যদিকে সাফোয়ানকে সানার থেকে আলাদা করতে পারলো। সানার বাবা-মা টাকার জন্য অনেই চাপ দিচ্ছিলো সাফোয়ানের মা কে। তাদের উপর সব দোষ চাপিয়ে তাদের ও নিরুদ্দেশ করে দিলো। সানার বাবা- মা আর বেচে নেই। সানার মামা তাদের নিজের হাতে খুন করেছে।

এটা নতুন না সাফোয়ানের বাবাকে ও সানার মামা আর সাফোয়ানের মা মিলে হত্যা করে।লিমা বেগম সাফোয়ানের সৎ মা যেটা সাফোয়ান আজও জানেনা। যখন জানবে তখন কি হবে কে জানে। এতোক্ষন ধরে তাদের এসব বুদ্ধি আলোচনা সব শুনলো একজন।তারা বুঝতেও পারল না তাদের পরিকল্পনা অন্য কেউ দরজা আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনে ফেলছে। সাইফ এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যা শুনছে তা শুনে তার মাথায় আকাশ ফেটে পরলো।সাইফ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বাবা-মা এত বড় নোংরা পরিকল্পনা করছে। মানুষ এত জঘন্য কিভাবে হতে পারে?সে কিভাবে সাফওয়ান কে জানাবে তার বাবা-মা এতো বড় ষরযন্ত্রণা করেছে তার বিরুদ্ধে। সাইফ সাবধানে ওখান থেকে সরে গেল।

সাফোয়ান আমাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হল।
সাফোয়ান:রেহানা আপা ও রেহানা আপা কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি এখানে আসো।
সাফওয়ানের ডাক শুনে রেহেনা তাড়াতাড়ি ড্রয়িং রুমে চলে আসলো।
রেহানা : কি হয়েছে ভাইজান আমাকে কিসের জন্য ডাকাডাকি করছেন, কিছু কি হয়েছে?
সাফোয়ান: হ্যাঁ এখানে কতগুলো ফুচকা আছে এগুলা সব ড্রয়িং রুমে সার্ভ করে রাখো। আমি সানিকে ফ্রেশ করে নিয়ে আসছি।

রেহানা : ঠিক আছে ভাইজান।ভাবিজানের পা ঠিক হবে কবে?
সাফোয়ান:এক মাসের জন্য বেড রেষ্ট দিয়েছে।কিছুদিন পর পর এসে পায়ের ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে দিয়ে যাবে।
রেহানা : ঠিক আছে ভাইজান। আপনি ভাবিজানকে ফ্রেশ করে নিয়ে আসেন। আমি বাকি সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি।।
সাফওয়ান রেহানার কোথায় শায় জানিয়ে সানাকে নিয়ে উপরে চলে গেল।সানা চুপচাপ সাফোয়ান আর রেহানার কথা শুনছিল কোন কথা বলে নাই।রেহানা সবকিছু টেবিলে সাজিয়ে রাখল। এরপর বাকি সবাইকে ডেকে নিয়ে আসলো ড্রয়িং রুমে। সিনথীয়া ফুচকা দেখি খুব এক্সাইটেড হয়ে গেল। রাফিয়া এসে সেও ফুচকা খাওয়া শুরু করে দিলো।সবার আগে একা একা খাওয়া দেখে সাইফ বিদ্রুপের সুরে বলল।

সাইফ: ভাইয়া আর ভাবি এই ফুচকা এনেছে তারা না আসার আগে এক খাদক সব খেয়ে নিচ্ছে।
সাইফ যে রাফিয়াকে ইঙ্গিত করে এই কথাটি বলো তা রাফিয়া খুব ভালোভাবে বুঝতে পারলো।সাইফের কোথায় রেহানার আর সিনথীয়া অনেক জোরে হেসে ফেলল। সাইফের কথার কারণে রাফিয়া অনেক লজ্জা পেলো। অনেকদিন পর ফুচকা দেখে লোভ সামলাতে পারে নাই রাফিয়া।আসলে ফুচকা এমন একটা জিনিস যা দেখে কোন মেয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। সিনথীয়া নিজের হাসি থামিয়ে সাইফকে উদ্দেশ্য করে বলল।

সিনথীয়া: আহা ভাইয়া তুমি আপুকে এমন ভাবে লজ্জা দিচ্ছো কেন। আর ভাইয়া ভাবী এনেছে দেখে কি তাদের ছাড়া খাওয়া মানা? ভ ভাইয়া শুনলে তো তোমাকেই বকা দিবে ।
তখন ঐ সাফোয়ানকে দেখা গেল সানার হুইল চেয়ার সিঁড়ির ওখানে থামিয়ে। সানাকে কোলে করে নিচে নেমে সাইফ কে হুইলচেয়্যার নিচে নিয়ে আসার জন্য বলল । সাইফ ও ভাইয়ের আদেশ মেনে নিয়ে আসলো৷
সাইফ: কি ভাই তুমি থাকতে ভাবিকে হুইলচেয়ারে ঘুরতে হয়।

সানা : আর বইলো না। আমাকে দুই তিনবার কুলে নিয়ে একদিন এর মধ্যে তোমার ভাইয়া হাপিয়ে গেছে। আজকে আদিল ভাইয়ের চেম্বারে আমি কে ছোটখাটো বাচ্চা হাতি বলে অপমান করছে।
সাইফ:ছি ছি বড় ভাইয়া তুমি মন্ত্রী হয়ে নিজের বউয়ের সেবা করতে পারছ না। বাহিরের জনগণের কি সেবা করবে?
সাফোয়ান: ভাই দেখ তুই আগুনে ঘি ঢালার কাজ করিস না। এমনি বউ আমার উপর রেগে বম হয়েছে আর তোর কথাই তো।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৬

সাফোয়ানের করুণ চাহনি দেখে ড্রয়িং রুমে হাসির রোল পড়ে গেল। সানাম মুখ ভেঙ্গে বলল,
সানা:হয়েছে আর কারো ঢং করা লাগবে না। আপু তুমি ফুচকা বানাবা না কি আমি চলে যাবো?
সাফোয়ান সানার কথায় বুঝলো সানার মুড ভালো না। সবাইকে খাওয়া শুরু করতে বললো। নিজের হাতে সে ফচুকা বানিয়ে সানার মুখের সামনে ধরলো। সানা সাফোয়ানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফুচকা খেয়ে নিলো।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৮