এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৬

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৬
নুসাইবা রেহমান আদর

সানা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সানার এক্সপ্রেশন দেখে সাফোয়ানের খুব হাসি পাচ্ছে। সানাকে জোর করে কোলে নিয়ে আসছে গড়িতে। সানা নিজেই হেটে আসতে চেয়েছিলো। সানা মোটামুটি অনেকটাই ভার। এভাবে সানাকে কোলে নিয়ে হাটা সাফোয়ানের জন্য অনেকটাই কষ্টসাধ্য। যতোই মুখে বলুক না কেন এতোটুকু আসতেই সাফোয়ানের দম আসে আর যায়। একটা হুইলচেয়ার কিনে আনতে হবে না হলে এভাবে কোলে নেওয়া সবসময় সম্ভব না। আর বারবার নেওয়া তো ইশ সাফোয়ান নিজেই না অক্কা পায়।

– এভাবে মুখ ফুলিয়ে যেনো বসে থাকেনা যেনো কেউই!
– আমার কোনো অচেনা মানুষের সাথে কথা বলার ইচ্ছা নাই।
– আমি অচেনা তোমার কাছে সানা? এতো সহজে বলে দিলে।
– আপনার মুখে কি এটা মানায় সাফোয়ান? আপনি যখন নিজ থেকে একটা ঘুড়ির সুতো ছেড়ে দিলেন। সেটা সেই দূর বিশাল আকাশে হারিয়ে গেলো। তখন কি আপনি তা ফিরিয়ে আনতে পারবেন। যখন আপনাকে আমার বেশি প্রয়োজন ছিলো ছিলেন আপনি আমার পাশে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভরসার হাত বাড়িয়ে বলেছিলেন যে সানা কষ্ট পেয়ো না আমি তোমার সাথে আছি? যেখানে দেখেছিলেন আমার বয়সটা কতোটুকু আমার সব আমার মা- বাবা শেষ করে দিয়েছিলো। আমার মা -বাবা মিলে সেই ছোট্ট আমার থেকে আমার সন্তান কেড়ে নিলো। আমি কিভাবে এতো কিছু একা একা সামলেছি। আমার কষ্ট কি আদোও কেউ অনুভব করেছিলো? একদিকে বাচ্চা হারানো মেয়েটি আরেকদিকে মা-বাবার থেকে ধোকা খাওয়া। যখন মেয়েটি আশা করলো তার স্বামী তাকে সাপোর্ট দিবে তাকে সামলাবে সেই সময় সেও তাকে বুঝলো না। একা ছেড়ে দিলো নিজেও কথা শুনালো। নিজের না হওয়া সন্তানের খু-নী বানালো। তখন সেই ১৬ বছরের মেয়েটির উপর দিয়ে কি কি ঝড় বয়েছে গেছে আপনি কি ভেবেছিল?

– শুনো সানা আমি!
– দাড়ান এক মিনিট সাফোয়ান আমার কথা শেষ হয় নি। আমাকে বলতে দিন। মানসিকভাবে কতোটা সাফার করেছি একা একা আমি নিজে জানি। আমি একা ঘুমাতে পারতাম না আগে থেকেই জানতেন না আপনি? তবুও নিজের থেকে আমাকে আলাদা করে দিলেন। আমি একা যখন ঘুমাতাম আমার মনে হতো আমার বাচ্চাটা আমাকে ডাকছে। আমি ঘুমাতে পারতাম না সারারাত কাদতাম।

খুজতাম একটু আশ্রয়ের জন্য আপনাকে অথচ আপনি ছিলেন না। কিভাবে থাকবেন আপনি কি আমাকে ভালোবাসতেন? বাসতেন না। আপনি তো প্রথমেই বলে দিয়েছিলেন আমাকে মেনে নিবেন না। আমি ছিলাম আপনার একমাত্র অনাকাঙ্ক্ষিত দায়িত্ব যা আপনার অনিচ্ছাকৃতভবে পালন করতে হয়েছে। যখন এটা উপলব্ধি করেছি তখন থেকে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেছি। নিজেকে পালটে নিয়েছি। সানা নিজেকে পালটে নিয়েছিলো। সেই হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি আমার বাচ্চাটার দেহ নাকি আপনাকে দিয়েছে। অথচ তা কি করেছেন এই অব্দি আমাকে জানান নাই। কেন মিস্টার সাফোয়ান আমার কি অধিকার নাই?

সানা কাদছে, খুব করে কাদছে। নিজের মধ্যে রাখা সব কথা আজ উগলে দিয়েছে সে। সাফোয়ানের এমন স্বাভাবিক ব্যাবহার সানা নিতে পারছিলো না। এতোকিছু হওয়ার পরে এতোদিন পর হঠাৎ সাফোয়ানের এমন ব্যাবহার সত্যি সত্যি সানার ক্ষত স্থানে লবণ ছেটানোর মতো। সানাকে কাদতে দেখে অর্ধেক রাস্তায় সাফোয়ান গাড়ি থামিয়ে দেয়। সে বুঝতে পারছে কতোটা ব্যার্থ মানুষ সেম কিভাবে একজন কে তিলেতিলে সে এতো কষ্ট দিলো। কথায় আছেনা মানুষ সবসময় নিজের দিকে টাই ভালো দেখে। সাফোয়ানের ক্ষেত্রেও তা হয়েছে সে নিজের দুঃখে এতোটাই বিভোর ছিলো যে সানার অবস্থা সে দেখেই নাই। অথবা দেখেও এড়িয়ে গেছে। যখন সে ব্যাপারটা উপলব্ধি করেছিলো তখন অনেক দেড়ি হয়ে গিয়েছিলো তাই সে লজ্জায় নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো।

– আমি তোমাকে বলবো না সানা যে আমার দোষ নাই। আমি জানি আমি দোষী আমাকে যা ইচ্ছে শাস্তি দিও। আমি বলবো না যে আমার সাথে তুমি সব ঠিক করে নেও। শুধু বলবো আজ ডক্টর দেখিয়ে নাও। তোমার পা ঠিক না হওয়া অব্দি তোমার জন্য যা যা করা লাগে সব কাজ আমাকে ক রার সুযোগ দিয়ে দেখো। আমি জানি তোমার জিবনের হারিয়ে যাওয়া সময়,কষ্ট হয়তো আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না।

– বাদ দেন সাফোয়ান। যা ভাগ্যে ছিলো হয়েছে আমি ওসব কথা আর বাড়াতে চাই না। গাড়ি চালানো শুরু করুন। সাইফ ভাইয়া আর আদিল ভাইয়া হয়তো মেডিকেলে পৌছে গেছে।
সাফোয়ান আর কথা বাড়ালো না। সানার মনের মধ্যে হয়তো অনেক কষ্ট হচ্ছে। অভিমান জমে জমে পাহার হয়ে গেছে। এখন সাফোয়ানের হাজার বার বললেও সানার কাছে তিক্ত লাগবেই। সাফোয়ান জানে সানা যেদিন সাফোয়ান কে মন থেকে ক্ষমা করতে পারবে সেদিন ই সানা আবার আগেরমতো সহয হবে তার সাথে। মেডিকেলে পৌছেই সানাকে আগে পায়ের এক্সরে করানো হলো। আদিলের চেম্বারে বসে আছে সানা,সাফোয়ান,আর সাইফ। তারা রিপোর্ট আসার অপেক্ষা করছে। আজকে আদিল কোনো পেশেন্ট দেখবে না, আজ শুধু রাউন্ডে যাবে সে। সরকারি হাসপাতাল গুলোর এমন নিয়ম। সাফোয়ান এবার আদিল কে বলে উঠলো।

– বয়স তো কম হলো না তোমার তা বিয়ে কেনো করছো না তুমি?
– আমার বয়স বেশি কবে হলো ভাইয়া?
– তুমি আর সাইফ বুড়ো হয়ে গেলেও তোমাদের বয়স বাড়বে না তাইনা?
– এইভাবে লজ্জা কেনো দিচ্ছো ভাইয়া তুমি? আদিল বুড়ো হতে পারে আমি না।
– ঠিক সময় বিয়ে হলে এখন তোদের দুটোর বাচ্চা স্কুলে পড়তো গাধাদের দল।
আদিল এবার বলে উঠলো।

– জানেন সাফোয়ান ভাই আমার আর সাইফের বাজি ছিলো যতোদিন সাইফ না বিয়ে করছে ততোদিন আমিও করতে পারবো না। ওর বিয়ের পর আমাকে বিয়ে করতে হবে। সালায় নিজেও বিয়ে করছে না আর আমাকেও করতে দিচ্ছে না।
সাফোয়ানের বাকা চোখে তাকানো দেখেই আদিল বুঝতে পারলো সে কি ভুল বলে ফেলছে। তারাতাড়ি মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো। সাফোয়ান এবার বললো।

– এভাবে চেহারা অন্যদিকে নিলে কি যা বলেছো সেই কথা ফিরত চলে আসবে? সাইফ তোমার সালা কীভাবে হয় বলোতো? আমাদের বোন এখোনো ছোট বুঝছো তোমার মতো বুড়োর কাছে ভুলেও বিয়ে দিচ্ছি না।
সাফোয়ানের কথায় দাত কেলিয়ে হাসছে সাইফ। আদিল কে বুড়ো বলায় আদিলের মুখ চুপসে আসে। সাইফ এই জিনিসটার মজা নিচ্ছে। সানা সেদিকে খেয়াল করলো।

– সাইফ ভাইয়া শুনুন এভাবে দাত কেলাবেন না। উনি যখন আদিল ভাইয়া কে বুড়ো বলছে ভেবে নেন ইন্ডাইরেক্টলি আপনাকে বলছে। আদিল ভাইয়া আর আপনি সমবয়সী৷
সানার কথা শুনা মাত্র সাইফের হাসি হাসি মুখ টা অন্ধকার হয়ে গেলো।
– তোমরা জামাই বউ মিলে আমাদের দুই অসহায় যুবোক কে এভাবে অপমান করতে পারো না এটা আমরা কোনো ভাবেই মেনে নিবো না।

– বিয়েটা করে নে এবার তাহলে তো আর বলছি না।
সাফোয়ান দুজন কেই উদ্দেশ্য করে বললো। তখন আবার সানার রিপোর্ট চলে আসায় তাদের আলোচনা এখানে স্থগিত হলো। আদিল এবার সানার রিপোর্ট গুলো ভালো ভাবে চেক করছে।
– ভাইয়া ভাবির পা বে মোচরে পরায় এক সিড়ির সাথে বাড়ি খেয়ে হাড্ডি তে একটু ইফেক্ট হয়েছে। ওনাকে সসম্পূর্ণ একমাস বেড রেষ্টে থাকতে হবে তাও পা ব্যান্ডেজ করে। কিছুদিন পরপর এই ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করতে হবে।

– আচ্ছা এখন তুমি যা যা লাগবে করে দেও আর যা যা ঔষধ লাগবে তা সাইফ কে লিখে দিও সে নিয়ে আসবে। আর ব্যান্ডের চেঞ্জের কাজ ওটা রাফিয়া করতে পারবে। আর একটা সাহায্য লাগবে একটা হুইলচেয়ারের ব্যাবস্থা করতে পারবে?
হুইলচেয়ারের কথা শুনে আদিল বললো।

– কেনো ভাইয়া হুইলচেয়ার দিয়ে কি হবে? আপনি ভাবিকে কোলে নিয়ে যাবেন আসবেন কি রোম্যান্টিক দৃশ্য।
– তোমার রোম্যান্টিক দৃশ্য তোমার কাছেই রাখো ভাই৷ আমার দ্বারা এতোবার কোলে নিয়ে আসা যাওয়া সম্ভব না। এসব ছবিতেও ভালো লাগে দেখতে। তোমার ভাবি মা শা আল্লাহ ছোটখাটো বাচ্চা হাতি এরব বার বার নেওয়া মেনে কোনো একসময় আমার হাত অথবা কোমড় ভেঙ্গে যাওয়া।
– ভাবি ভাইয়া আপনাকে ডাইরেক্টলি মোটা আর হাতি বললো।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৫

সাফোয়ান বোকার মতো তাকিয়ে আছে সবার দিকে। নিজের কথায় এভাবে ফেসে যাবে সে ভাবেনাই। আদিলটা যে এভাবে তাকে ফাসিয়ে দিবে কল্পনাও করতে পারে নাই। সানার মনে রাগ্ব ফেটে যাবে।
– আমি কি নিজে আপনাকে কোলে নিতে বলছি? নিজ থেকে কোলে নিবেন আবার কথা শুনাবেন। আমি মোটা আমি বাচ্চা হাতি? ব্যাটা বুইরা হইয়া অন্যের দোষ খোঁজেন।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৭