এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৫

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৫
নুসাইবা রেহমান আদর

কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজে সাফোয়ানের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ফ্লোরে তাকিয়ে দেখে সানা পরে আছে। সাফোয়ানের ঘুম ঘুম ভাব টা পালিয়ে গেলো। উঠে এসে সানাকে কোলে নিয়ে খাটে বসালো। সানার দিলে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো।
– এই মেয়ে নিচে নেমেছো কেনো? কিভাবো নিজেকে যে একা একাই সব পারবে। একে তো পা ভেঙ্গে বসে আছো তার উপর নিজে নিজে মাতব্বরি করছো?
সানা সাফোয়ানের বকা খেয়ে চুপসে গেলো। কিছু বলতে গিয়েও বললো না।

– আসলে আমার ওয়াসরুমে যেতে হবে। আপনি ঘুমাচ্ছেন দেখে একা একা যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
– আমি ঘুনাচ্ছিলাম দেখে কি হয়েছে আমাকে কি তুমি একটু জাগাতে পারতে না।
– এখন কি এখানে কথা বলে সময় অপচয় করবেন? না আমাকে ওয়াসরুমে দিয়ে আসবেন।
অনেকদিন পর সাফোয়ানের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে সানা। সাফোয়ান সানাকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াসরুমের ভিতরে দিয়েদ্ম দাঁড়িয়ে থাকে৷ তা দেখে সানা বিরক্ত হয়ে বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– আপনি কি ওয়াসরুমের ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকবেন? আশ্চর্য।
– ছিহঃ দুষ্টু এইভাবে কেউ নিজে ওয়াসরুমে থেকে বরকে ডাকে। দিন দিন তুমি অনেক দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো সানা।
সাফোয়ানের কথায় সানা বোকা বনে গেলো। সাফোয়ান কোন কথা থেকে কোন কথায় গেলো। কিসব বলছে সে মাথার তার কি ছিড়ে গেলো নাকি।

– আপনি ঠিক আছেন?
– আমার আবার কি হবে।তোমার হয়েছে, তুমি গেলা ওয়াসরুমে সেখানেও বরকে রোমাঞ্চ করতে ডাকছো। ছিহ সানা ছিহ।
– আপনি যাবেন এখান থেকে। হাতি কাদায় পরলে চামচিকায় ও লাথি মারে কথাটা প্রমানিত।
– নিজেকে নিজে হাতি বলছো? তা খুব একটা খারাপ বলো নাই জান্স। তুমি হাতি না হলেও ছোট খাটো একটা হাতি বাচ্চাই বলা যায়। কাল রাত থেকে কোলে তুলতে তুলতে আমি শেষ।
সাফোয়ানের কথায় সানার রাগ হচ্ছে প্রচুর। তাকে কি না হাতি বাচ্চা বলছে। আজ পায়ে ব্যাথা দেখে এই লোক সুযোগ পেয়ে কথাই শুনাচ্ছে। পা একবার ঠিক হোক দেখাবো মজা।

– দয়া করে বাহির থেকে দরজা লক করে রুমে গিয়ে বসুন। আমার হলে আমি আপনাকে ডাক দিবো।
সাফোয়ান হাসতে হাসতে দরজা লক করে দিলো। অনেকদিন পর সানাকে এভাবে জালাচ্ছে সে। তার খুব ভালো লাগলো এতোদিন পর সানার সাথে কথা বলে। এই মেয়েটার সেই বাচ্চামো সব কিছু মিস করে সাফোয়ানের। সেই চঞ্চক দুষ্টু মিষ্টি সানা যেনো সময়ের সাথে কোথায় হারিয়ে গেছে জানা নাই।

রাফিয়া আর সিনথীয়া ঘুমাচ্ছে৷ ঘুমের মধ্যে সিনথীয়া আদিল কে স্বপ্নে দেখছে। সিনথীয়া আর আদিল একে অপরকে ধরে আছে আর হাসছে। স্বপ্নের মধ্যে আদিল সিনথীয়ার কাছে চুমু চাচ্ছে। সিনথীয়া লজ্জা পেয়ে ধীরে ধীরে আদিলের দিকে এগিয়ে আদিলের গালে চুমু খেলো। তখন ই রাফিয়ে কপালে হাত দিয়ে উঠে বসলো। একবার নিজের কপালে হাত দিচ্ছে আরেকবার সিনথীয়ার দিকে তাকাচ্ছে। রাফিয়ার মধ্যে বিষ্ময়কর এক মুহুর্ত যেনো এটা। এই মেয়ে ঘুমের মধ্যে কেনো তাকে চুমু খাচ্ছে।

– এই সিনথু সিনথু?
– কি হয়েছে আপাই ডাকছো কেনো?
ঘুমু ঘুমু কন্ঠে রাফিয়ার ডাকে উত্তর দিলো সিনথীয়া।
– তুই কাকে চুমু খাচ্ছিস?

রাফিয়ার কথায় এক লাফে উঠে বসে সানা। রাফিয়া কি আদিল কে চুমু দিতে দেখে ফেললো নাকি। সিনথীয়াকে এইভাবে লাফিয়ে উঠতে দেখে চমকে যায় রাফিয়া। কি করছে এই মেয়ে জ্বীনে টিনে ধরলো না কি। আসে পাশে তাকিয়ে দেখে সে তার রুমে আদিলের কোনো চিহ্ন নাই। পরে মনে পরলো সে আর রাফিয়া তো নিজের রুমে ঘুমাচ্ছে আদিল আসবে কোথা থেকে। তাহলে রাফিয়া কিভাবে জানলো যে সে চুমু খেয়েছে।
– কি বলছো তুমি আপু আমি কাকে চুমু দিবো আবার?
– তুই মাত্র আমার কপালে চুমু দিছোস লুচি মহিলা। সত্যি করে বল ঘুমের মধ্যে কারে ভেবে আমারে দিছোস? নাহলে লাত্থি দিয়ে খাট তে ফেলে দিবো।

-সত্যি বলছি আপু কাউকে না। কিভাবে কি করছি আমি জানিনা।
সিনথীয়া কোনোমতে বিছানা থেকে উঠে ওয়াসরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। আর রাফিয়া সেদিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। এরপর বিছানা তুলতে লাগলো।
অন্যদিকে আদিল আর সাইফ ঘুমিয়ে আছে। তখন সাইফের ফোন বেজে উঠলো। ঘুমের চোখে ফোন রিসিভ করলে বললো।

– হায় টিনা বেব আম বেডলি মিসিং ইউ।
ফোন স্পিকারে থাকায় ওপর পাশের মেয়েটা যা বললো তা আদিল ও শুনতে পেলো।
– আর ইউ স্লিপিং সাইফ? আ*ম নট টিনা।
– ওপ্সস সরি বেব মাই মিস্টেক হু আর ইউ?
– আমাকে তুমি চিনতে পারছো না? লাইক সিরিয়াসলি সাইফ। আমি তোমার জিএফ।
– আমাএ জিএফ বুঝি তা কত নাম্বার টা তুমি।ডোন্ট ডিস্টার্ব মি ইয়ার। গো টু হেল।

মেয়েটি রেগে ফোন কেটে দিলো। এতোক্ষন আদিপ চুপচাপ সাইফের কথোপকথন শুনছিলো। ফোন কেটে যেতেই হো হো করে হেসে উঠলো আদিল। আদিল কে হাসতে দেখে সাইফ উঠে বসে। এইভাবে আদিল কে হাসতে দেখে বিরক্ত হয়ে বলে।
– কি ব্যাপার আদিল তুই বিটকেলের মতো হাসছিস কেনো এইভাবে? বিশ্বাস কর প্রচুর ভয়ানক লাগছে।
– এই বিটকেল কে আবার?
– ওয়েট আ মিনিট দোস্ত তুই বিটকেল কে চিনিস না?
-নাহ।

আদিল বিটকেল কে চিনে না শুনে সাইফ এবার নিজেই হাসা শুরু করলো।
– স্টার জলসায় একটা বাংলা সিরিয়াল হতো নাম কিরণমালা। সেখানে এক রানী রাক্ষসী ছিলোনার তার সেনাপতি ছিলো একজন রাক্ষস। আর সেই রাক্ষস সেনাপতির নাম হলো বিটকেল।
সাইফের মুখে বিটকেলের কাহিনী শুনে আদিলের মুখটা চুপসে যায়। যেই হাসির উপর কত কত মেয়েরা ক্রাশ খেয়ে বসে আজ সেই হাসিকে সাইফ কার সাথে তুলনা করলো। আদিলের অবস্থা দেখে সাইফ হাসতে হাসতে বিছানায় আবার শুয়ে পড়লো।

– তুই কবে থেকে সিরিয়াল দেখলি? হাসি থামা ব্যাটা।
– আর বলিস না না গতবার যখন ছুটিতে এলাম না দেশে তখন দেখছি। সিনথু তখন ছোট ছিলো সারাদিন এসব দেখতো। আর আমি চ্যানেল চেঞ্জ করলেও কান্নাকাটি ক রতো তাই বাধ্য হয়ে ওর সাথে দেখতাম।
– যেমন ভাই তার তেমন বোন। যা সর ফ্রেশ হতে হবে আমার আবার হস্পিটাল আছে কখন জানি আবার তোর ভাই।
– হ্যাঁ ঠিক বলছোস আচ্ছা শোন সানাকে থুক্কু ভাবির পা যদি মোটামুটি ও ভালো থাকে তাহলে এভাবে ব্যান্ডেজ করবি আর খুলতে না করবি যাতে এক মাস অব্দি সব কাজ ভাইয়ার করা লাগে।

– আমি এসব পারবো না। একেতো এটা আমাত প্রফেশন তার উপর তোর মিনিষ্টার ভাই জানলে আমার চাকরি শেষ করে দিবে।
– আরে শালা ভয় পাচ্ছিস কেন আমি আছিনা। আমার ছুটি আরো ৬ মাসের আছে গরু আমি সামলে নিবো।
– আমার বোন নাই যে তুই আমাকে সালা ডাকলি। বরং তোকে সালা ডাকতে পারি তোর কিন্তু বোন আছে।
– ভুলেও ভাবিস না সালা বুইরা ডাক্তার তোর কাছে আমার বোন বিয়ে দিবো। নিজেকে আয়ানায় দেখ। আর ভাই শুনলে তোরে ছাদ তে ধাক্কা দিবো।

– তোর অই ডায়েনী মারকা বোন রে বিয়ে করার আমার কোনো শখ নাই ভাই মাফ কর। আমি বুইরা হইলে তুই কি ভুলে যাইস না আমার এক। আসের বড় তুই।
– হ দিলে না করবি যা ভাগ।
– আমি ফ্রেশ হয়ে আসি যাই। নিজে নিজে বিছানা তুল ভাই। তোর বউ নাই যে তোর সব কাজ করে দিবে।
– আর মনে করাইস না আমার সিংগেল লাইফের কষ্ট তুই।
সানাকে নিয়ে আসে রুমে সাফোয়ান। সানা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ফ্রেশ হওয়ার সময় ভুলবশত পানি পরে সানার শাড়ি ভিজে গেছে। এখন সে চেঞ্জ করে থ্রিপিস কিভাবে পড়বে এই পা ব্যাথায়। সানালে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে সাফোয়ান সানাকে জিজ্ঞেস করে।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৪

– কি হয়েছে?
– রাফিয়া আপুকে ডেকে দিবেন একটু আমার চেঞ্জ করা লাগবে।
– তা আমাকে বললেই হয় আমি হেল্প করছি।
সাফোয়ানের দিকে চোখ গরম করে তাকায় সানা। সাফোয়ান মেবি অনেক ভুল বলে ফেলছে।সানার দৃষ্টি তোয়াক্কা না করে সাফোয়ান আলমারি থেকে শাড়ি এনে সানার হাতে দেয়।
– আমি নিজে পর‍তে পারলে নিশ্চয়ই আপুকে ডাকতে বলতাম না?
– ওহ হ্যাঁ তাই তো। আমি শাড়ি পরাতে পারি দাড়াও আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।

এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব ১৬