কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১৭

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১৭
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

বাসায় আসার বাকিটা রাস্তা ধ্রুব আর সকাল কেউই কোনো কথা বললো না।কোনো এক অজানা কারণে সকাল কথা বলতে পারলো না।ধ্রুব বারবার মাথা ঘুরিয়ে সকালকে দেখছিলো।সকাল সেটা বুঝতে পেরে লজ্জা পায়, অজানা ভালো লাগায় মন ছেয়ে যায়,বুকের টিপটিপ বাড়ে দ্বিগুণ।ধ্রুব সকালের হাতটা আস্তে করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।সকাল ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে।ধ্রুব যেনো সকালের হাসি দেখে আশকারা পায় শক্ত করে সকালের হাতটা চেপে ধরে।বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে সকালের হাতের পিষ্ট ঘষে দেয়।সকাল হাত ছাড়াতে চাইলে ধ্রুব তার ছটফটানি দেখে হাসে।মনে মনে ভাবে,বাচ্চা!বরের স্পর্শ পেয়ে কেমন করছে।মনে হচ্ছে গা পুড়ে যাচ্ছে।”

অথচ সকাল ছটফট করলেও মনে মনে ঠিক ধ্রুবর সানিধ্য চায়,ধ্রুবর আদুরে স্পর্শে তার শুষ্ক মনে প্রেমের ছিটা পড়ে ঠিক ভিজে যাচ্ছে।সে খেয়াল ধ্রুব না রাখলেও সকাল নিজের মনের এই পরিবর্তন বেশ লক্ষ করছে,মনের এই পরিবর্তন লক্ষ করেই কিনা লজ্জারা চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে ধরে।তবুও সারাটাক্ষন ধ্রুবর কাছে থাকতেই ইচ্ছে করে।
শাহীনের মা তাছলিমা আর দাদী নুরজাহান ড্রয়িং রুমে বসে আছে।সকাল উনাদের দেখে মিহিয়ে যায়,আস্তে করে সালাম দিয়ে রুমে চলে যেতে পা বাড়ালে নুরজাহান বেগম তেতে উঠা গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“রাত করে কই থেকে আসলা?”
সকাল কিছু বলার আগে ধ্রুব পায়ের জোতা খুলে সু-রেকে রাখতে রাখতে বললো,
“আমার সাথে গিয়েছিলো।”
তাছলিমা ফুসে উঠে বললো,
“দেখলে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে পারেনা।ফাজিল মেয়ে।”

উনার কথা শুনে সকাল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।ফুরফুরে মনটা নিমিষেই বিষন্ন হয়ে যায়।চোখ তুলে ধ্রুবর দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেয়।ধ্রুব আস্তেধীরে জুতা খুলে দাদীর সামনে এসে দাঁড়ায়।তাছলিমা তখনো চোখ বড়ো বড়ো করে সকালের দিকে তাকিয়ে আছে।ধ্রুব শান্ত গলায় বললো,
“আমার বউ এটা।ধর্মমতে বিয়ে করা বউ নিয়ে আমি সারা-রাত বাহিরে থাকতে পারি এতে করে কারো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।চরিত্রহীন হওয়ার চেয়ে বউয়ের সাথেই রাত বিরাতে ঘুরাফিরা করা কি ভালো না?”
তারপর তাছলিমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“ভাজা মাছ তো আপনারা কেউই উল্টাতে পারেন না,আমার বউ না হয় আপনাদের মাছটা উল্টিয়ে দেবে।কি বলেন?”
ধ্রুবর এমন কথায় তাছলিমা আর নুরজাহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।সকাল কিছু না বলে রুমের দিকে চলে যায়।মনোয়ারা তার রুম থেকে সবটা শুনে কিন্তু বের হয় না,উনি চায় এই মোকাবিলাটা ধ্রুব করুক।ইতোমধ্যেই সকালের প্রতি ধ্রুবর যত্ন দেখে উনি সন্তুষ্ট।উনার ভরসা ধ্রুব কখনো সকালকে কষ্ট দেবেনা।

সকাল ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।সবার কটু কথায় মনের তাল ঠিক রাখতে পারছেনা।মন একবার বলছে সবাই যাই বলুক সকাল সেই কথায় কান দেবেনা কিন্তু পরক্ষণেই মন খারাপ হয়ে যায়।সকালের বয়সের তুলনায় তার সাথে হওয়া কাজগুলো খুবই খারাপ হয়েছে আর তাই হয়তো সে মানতে পারছেনা।মন খারাপ করবেনা করবেনা করেও একরাশ মন খারাপের কালো মেঘ তাকে জাপটে ধরছে।

এইতো কিছুক্ষণ আগে তার খালা,মিতু তাকে রাতের খাবার খেতে জোড় করে ডেকে গেলো কিন্তু সকালের একটুও খেতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না।তারপরও খেতে যেতো যদি ধ্রুব একটু বলতো।সে তো একবারও বলেনি,সকাল যে মন খারাপের পসরা সাজিয়েছে সেই খেয়াল কি বুড়ো বরের আছে?না নেই!থাকলে নিশ্চয়ই ছোট্ট পুতুল বউটাকে খেতে নিয়ে যেতো।ধ্রুব তো জানেই সকালের মন খারাপের কারণ তবুও এতো অবজ্ঞা!তাইতো মন খারাপের পরিমাণ হু হু করে বাড়ে,গলা ধরে কান্না আসে চোখের পাতা হয় ভারী।

ধ্রুব ভাত খেয়ে চেয়ারে বসে থাকে।মনোয়ারা ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।ছেলের মনের ভাব বুঝতে তার একটুও কষ্ট হচ্ছে না কিন্তু উনি নিজ থেকে কিছু বলতে বা করতে নারাজ,ধ্রুবর মুখ থেকে শোনাই উনার মূল উদ্যেশ্য।সবাই তখনো রাতের খাবার খাচ্ছে।ধ্রুব তার আম্মার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আম্মা..।”
মনোয়ারা ডালের ভাটি থেকে ডাল নিতে নিতে ধ্রুবর দিকে একপলক তাকায়।নির্লিপ্ত গলায় বললো,
“বল।”

ধ্রুব কাউকে পরোয়া করেনা।নিজের ভালো মন্দ আদায় করে নিতে সর্বদা প্রস্তুত।কিন্তু এখন যে কথাটা বলতে চাচ্ছে সেটা বলতে ভয় না বরং লজ্জা হচ্ছে।টেবিলে তার আব্বা,চাচা বসে আছে।সে তাদের দিকে এক পলক তাকায়।দাদী আর চাচীর কটু কথার ধা/রালো আ/ঘাতে সকাল কষ্ট পেয়েছে,সেই কষ্টের কারনেই সে খাবে না।তার আম্ম, মিতু কতো করে সাধলো কিন্তু না সকাল খাবেই না।ধ্রুব অবশ্য সাধেনি তার মনে যে অন্য ইচ্ছা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলো।মনোয়ারার দিকে তাকিয়ে বললো,

“সকালের খাবার রুমে নিয়ে যাবো আম্মা।এতোবড়ো রাত না খেয়ে থাকবে কিভাবে?”
মনোয়ারা কিছুক্ষন চুপ থাকলেন।আড়চোখে নিজের স্বামী সারোয়ার মির্জার দিকে তাকালেন।উনিও তার দিকে তাকিয়ে আছেন।ধ্রুবর বলা কথাগুলো দুজনের মনেই তীব্র আকারে নাড়া দিয়ে গেছে।মনোয়ারার মনে পড়ে অতীতের কথা।
সারোয়ার আর মনোয়ারার তখন নতুন বিয়ে হয়েছে।স্বামী হিসেবে সারোয়ার খুবই আন্তরিক,আর যত্নশীল কিন্তু প্রচুর মা ভক্ত।মায়ের কথার বাহিরে যেতে পছন্দ করতো না।

সবার অগোচরে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিলোনা।একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় এসে দেখেন স্ত্রীর হাত কেটে একাকার।ডান হাতে গভীর ক্ষত।রাতে সবার ভাত খাওয়া হয়ে গেলেও মনোয়ারা ভাত খেতে পারছিলো না,সারোয়ার সবার অগোচরে স্ত্রীর জন্য ভাত নিয়ে রুমে যায়,আর পরম যত্নে ভাত খাইয়ে দেয়ার এক পর্যায়ে নুরজাহান এসে হাজির হয়,ভাতের প্লেট টেনে ফেলে দেন।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলেছিলেন,
“তোকে বড়ো করছি কি বউরে ভাত খাইয়ে দিতে?বউয়ের কামলা খাটতে?”
মায়ের কাজে সারোয়ার হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো।লজ্জায় স্ত্রীর দিকে তাকাতে পারেনি।মনোয়ারা স্বামীর লজ্জার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলেছিলো,

“আরে তুমি এতো ঘাবড়াচ্ছো কেনো?মুরুব্বীরা এমন একটু করেই।আমি মানিয়ে নেবো।”
সারোয়ার কিছু বলতে পারেনি শুধু স্ত্রীর হাতটা আকঁড়ে ধরেছিলো।মনোয়ারা ঠিক সামলে নিয়েছিলেন,শত বাধা,কটুক্তির পরেও সারোয়ারের শান্তির কারণ হয়েছেন।সেই সারোয়ারের চোখে আজ আফসোস,কিন্তু মনোয়ারার চোখে আনন্দ।তিনি যা উপভোগ করতে পারেননি সে সব উনার ছেলে আর ছেলের বউ উপভোগ করবে।ছেলে যদি বউকে খাইয়ে দেয় তাহলে আশেপাশের মানুষের সমস্যার কথা না।আর বউয়ের যত্ন করলে তাকে কামলা খাটা বলেনা।সব নারীই স্বামীর কাছে একটু গুরুত্বপূর্ণ,ভিষণ আদুরী হয়ে থাকতে চায়।

ধ্রুব আবার বললো,
“আম্মা;তুমি দিয়ে আসবা নাকি আমি নিয়ে যাবো?”
মনোয়ারা মুচকি হেসে বললো,
“রান্নাঘর থেকে প্লেট নিয়ে আয়,যা যা লাগবে নিয়ে যা।”
ধ্রুব রান্নাঘর থেকে প্লেট এনে শুনে নুরজাহান বেগম বলছে,
“তোর বউয়ের কি পা নাই?রুমে নিয়ে আবার কিসের খাওয়া?”
ততক্ষণে ধ্রুবর বাপ চাচারা খেয়ে উঠে গেছে।ধ্রুব দাদীর দিকে তাকিয়ে বললো,

“আমার ইচ্ছা হইছে আমার বউকে রুমে নিয়ে খাওয়াইতে।নতুন নতুন বিয়ে হইছে একটু বেশি মোহাব্বত এর দরকার না?দাদী হয়ে এসব তুমি না বুঝলে কিভাবে কি বলো?”
দুই বউয়ের সামনে নাতীর এমনতর কথায় নুরজাহান বেশ অসস্থিতে পরে।আর কেউ কোনো শব্দ না করলেও মিতু খিলখিল করে হেসে উঠে।নুরজাহান চোখ পাকিয়ে তাকালে মিতু বললো,
“আমার ভাইয়ের সাথে নো পাঙ্গা।ও’কে দাদীজান!”

ধ্রুব খাবার এনে টেবিলে রাখে।রুমে চোখ ভুলিয়ে বুঝতে পারে পাখিটা এখনো বারান্দায়।সে ধীর পায়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে যায়।সকালের বিষন্ন মন অন্ধকার হাতরে বেড়াচ্ছে।অন্ধকারে এতোটাই বিভোর ছিলো যে ধ্রুবর উপস্থিতি টের পায়নি।ধ্রুব কাছে এসে দাঁড়ায়।সকাল ধ্রুবকে দেখেও হাসে না,ফের মুখ ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।ধ্রুব মিটিমিটি হেসে বললো,

“আমার বউ কি রাগ করেছে?”
সকাল কিছু বলেনা।ধ্রুব সকালের বাহুতে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“কথা বলবেনা।”
সকাল মৃদু স্বরে বললো,
“হুম।”
ধ্রুব খানিক ঝুকে সকালের দিকে আসে।
“রাগ করেছো?”
“না।”
“তাহলে কথা বলছেনা কেনো আমার পাখিটা?”

ধ্রুবর মুখে আদুরে কথাগুলো শুনে সকালের মন খারাপের রেশ কিছুটা কমে যায়।সকাল কমাতে চায় না কিন্তু বেহায়া মন ধ্রুবর সানিধ্য পেয়েই গলে যাচ্ছে।আচ্ছা এমন কেনো হয়?মেয়েরা এতো তাড়াতাড়ি কেনো নরম হয়ে যায়?পুরুষের একটু আদুরে কথায় কেনো মনের সব অভিমানের দেয়াল ভেঙে যায়?
ধ্রুব লম্বা বেনী হাতে নিয়ে সকালের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“পাখিটা এত্তো রাগ করলো কেনো?আমার কি অ/পরাধ?”

সকাল ধ্রুবর চোখে তাকায়।ধ্রুব কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে।এই চোখের দৃষ্টি সকালের মনে বসন্তের দোলা দিয়ে যায়।আস্তে করে বললো,
“রাগ করিনি।”
ধ্রুব সকালের দিকে তাকিয়ে হাসে।
“সত্যি?”
ধ্রুবর হাসি দেখে সকালও হাসে।মাথা নেড়ে আস্তে করে বললো,
“হ্যাঁ।সত্যি।”
“তাহলে মিষ্টি করে হাসো।”

সকাল ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে হাসে।ধ্রুব তার বুকে বেশামাল কাঁপন টের পায়।এই মেয়েটা হাসলে বুকে এমন শিরশির করে কেনো?সে সকালের গালে হাত দিয়ে বললো,
“সবসময় এভাবেই হাসবে।আমার ভালো লাগে।”
সকাল বুঝদার বালিকার মতো মাথা হেলিয়ে বললো,

“আচ্ছা।”
“তোমার জন্য ভাত এনেছি।খাবে চলো।”
সকাল চমকে তাকায়।
“এসবের দরকার ছিলোনা।”
ধ্রুব খানিক থেমে বললো,
“আমি খেতে বলিনি বলে রাগ করেছো?”

ধ্রুব মনের ভাব বুঝে গেছে বিধায় সকাল মাথা নিচু করে নেয়।ধ্রুবটা এতো বুঝে কেনো?আর বুঝলেও এভাবে সরাসরি বলে দিতে হয়?সে কি বুঝেনা তার এমন ছোট ছোট কথাতেও সকাল লজ্জা পায়।ধ্রুব সকালের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি জানতাম দাদীর কথায় তুমি কষ্ট পেয়েছো,আর সে কারণেই খেতে যেতে চাচ্ছিলে না।তাই খাবার নিয়ে এসেছি।”
সকাল নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে।ধ্রুব বললো,
“আমি যদি তোমাকে খাইয়ে দেই তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?”
সকাল ঘোরগ্রস্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

“না নেই।”
ধ্রুব সকালের খুশীতে জ্বলমল মুখের দিকে তাকায়।সকাল মুচকি হেসে বললো,
“আপনি খুব ভালো।”
ধ্রুব সকালের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“পরে কিন্তু খারাপ বলতে পারবেনা।তোমার কাছে আমি কিন্তু ভিষণ খারাপও হয়ে যেতে পারি।”
সকাল অন্যদিকে মুখ লুকিয়ে বেশ আস্তে বললো,
“খারাপ হলেও আমার।”
ধ্রুব শুনে হেসে উঠে।চিকচিক করে উঠে মুখটা।পাখির ছটফটানি বেশ লক্ষ করছে।উত্তেজিত গলায় বললো,
“কি বললে?”

সকাল মাথা নেড়ে বুঝায় কিছু না।ধ্রুব সকালের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
“একটা কথা বলি?”
সকাল ধ্রুবর দিকে তাকায়।দুজনে কাছে হওয়াতে সকাল লম্বা ধ্রুবর দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়।
“কী?”
ধ্রুব নিঃসংকোচে বললো,
“একবার জড়িয়ে ধরি?”
সকাল কিছু না বলে তাকিয়েই থাকে।ধ্রবই আবার বলে,
“যেভাবে আছো সেভাবেই থাকো আমি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবো।হ্যাঁ?”

সকাল চুপ করেই থাকে।মাথা নিচু করে যেনো নিজের সম্মতি প্রকাশ করে।ধ্রুব সকালের পেছনে যায়।তারপর কোমল স্পর্শে জড়িয়ে ধরে প্রণয়ীনিকে,এই এতো বছরের জীবনে কোনো নারীকে ভালোবাসায় স্পর্শ করা,তার দেহ মন দুলে উঠে বন্য তাড়নায়।মিশে যেতে চায় পাখির ছোট দেহটার সাথে।ধ্রুব নিজেকে সামলায়,চুপচাপ সকালের চুলে নিজের নাকটা ডুবিয়ে দেয়।
প্রণয় পুরুষের স্পর্শে সকালের ছোট্ট নরম দেহখানা কেঁপে ওঠে।আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে বুকের খাঁচা জানান দেয় যেকোনো মূহুর্তে হৃদপিণ্ডটা বেরিয়ে চলে আসবে।সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ধ্রুব সকালের কানের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে বললো,

“খারাপ লাগছে?”
সকাল কি বলবে ভেবে পেলো না।ধ্রুব কানে ঠোঁট ছুঁয়াচ্ছে কেনো?সকালের মনে হচ্ছে সে নির্ঘাৎ পা/গল হয়ে যাবে।গলায় কথা আটকে আসে,কোনোরকমে ঠোঁট নাড়িয়ে বললো,
“উহু।”
এইটুকু শব্দেই ধ্রুবর বুকের চিনচিন ব্যাথা বুক থেকে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে,কাঁপা কাঁপা পুরুষালী ঠোঁট নামিয়ে সকালের কাধে আনে।বন্য তাড়নায় ঠোঁট চেপে ধরে ছোট পাখির কোমল,নরম কাধে।সকাল কিছু বুঝে উঠার আগেই সে পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে দেয়।
অধরের স্পর্শে সকালের পা নেতিয়ে আসে।এইটুকু স্পর্শে এতো যাদু!তার সারা দেহে কেমন নাম না জানা শিহরণ নেচে যায়,দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে।ছটফটিয়ে সরতে চাইলে ধ্রুবর হাতের বাধন শক্ত হয়।গলায় মুধুর বান ছেড়ে ফিসফিস করে বললো,

“প্লিজ।প্লিজ আর এক মিনিট।”
এমন আদুরে আহব্বান কি প্রত্যাখ্যান করা যায়?যায় না।সকাল তো প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। সকাল চুপচাপ ধ্রুবর আদরটুকু সাদরে গ্রহন করে নিলো।একটু পর ধ্রুব সকালকে ছেড়ে দেয়।হাত দিয়ে চুল টেনে ঠিক করে;বিজয়ীর মতো হাসলো,যেনো কোনো বড়ো যুদ্ধ জয় করে এসেছে।ধ্রুবর এমন জ্বলমলে হাসি দেখে সকাল লজ্জা পায়।মাথা নিচু করে ফেলে।ধ্রুব বললো,

“খাবে না?”
ধ্রুবর বলা কথায় সকাল চমকে উঠে।কথাটার অন্য মানে বের করে নিজেই কেঁপে উঠে বললো,
“কি?”
সকালের মনের ভ/য় টের পেয়ে ধ্রুব হাঁত কেলিয়ে হাসে।সকালের লম্বা বেনীতে দোল দিয়ে বললো,
“ভাত।”
ধ্রুবর রসিকতা বুঝতে পেরে সকাল গাল ফুলিয়ে বললো,
“আপনি খুব খা/রাপ।ভিষণ!”
ধ্রুব দরজার দিকে যেতে যেতে বললো,
“তাতো আগেই বলেছিলাম।”

সকাল অ/সহ্যকর সুখে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে।ধ্রুব দিনে দিনে তাকে নতুন নতুন সুখের সন্ধান দিচ্ছে।সকাল মুচকি হেসে রুমের দিকে পা বাড়ায়।এই হাসি পূর্ণতার।ছোট্ট সকালের মন তাকে জিজ্ঞেস করে” এতো সুখ কেনো চারিপাশে?”
সকাল চুপিচুপি বলে,
“আমার ধ্রুব আছে বলেই এতো সুখ।”

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১৬

❝বেশী রোমান্টিক হয়ে গেছে?হোক।একজন আমাকে উপাধি দিয়েছে আমি নাকি খুবই বেশী রোমান্টিক লেখিকা ভাবছি তার কথা যথার্থ পূরণ করে দেবো।❞
❝আজকে বড়ো পর্ব দিয়েছি যারা পড়বেন রেসপন্স করবেন।লাইক কমেন্ট করতে ভুলবেন না।❞
(ভালোবাসা পাখিদের)

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১৮