কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১৮

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১৮
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

ধ্রুব নিজের হাতে সকালকে খাইয়ে দেয়।সকাল মুগ্ধ চোখে ধ্রুবকে দেখে।মনে মনে ভাবে এতো সুখ কোনো তার কপালে?ধ্রুব তার এতো যত্ন করে কেনো?সকাল ভাবতে ভাবতে খাবার খায়।ধ্রুব খাবার খাওয়া শেষে বিছানায় বসে বললো,
“তা মহারানী।খাবার কেমন ছিলো?”
সকাল ততক্ষণে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে।ধ্রুবর কথায় বললো,

“মজা।”
ধ্রুব সকালের মুখোমুখি বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে বললো,
“আর খাইয়ে দেয়া মানুষটা?”
সকাল ধ্রুবর কথায় ঠোঁট টিপে হাসে।ধ্রুবের চোখে মুখে দুষ্টুমির রেশ,সে তাকানোতে ধ্রুব ভ্রু নাচিয়ে দেয়।সকাল বললো,
“ভালোই।”
ধ্রুব সকালের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভালো?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে প্রেমে কেনো পড়ছো না?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ধ্রুবর কথায় সকাল খিলখিল করে হেসে উঠে।হাসতে হাসতে কম্বলের নিচে নিয়ে মুখ লুকায়।ধ্রুব কম্বল টেনে বললো,
“লুকাচ্ছো কেনো?উত্তর দাও আগে তার পর লুকিও।”
সকাল ধ্রুবর গভীর চোখে চোখ রাখে।ধ্রুবর চোখের ভাষা কেমন নেশা নেশা,ঘোরলাগা।সকালের শরীর ঝিমঝিম করে উঠে।ধ্রুব সকালের হাত ধরে নেয়।সকালের শরীর কেঁপে ওঠে।আস্তে করে বললো,
“প্রেমে পড়তে হবে নাকি?”
“হ্যাঁ।এতো ভালো একটা ছেলে তোমার আশেপাশে ঘুরছে প্রেমে না পড়লে হবে?”

“আচ্ছা পড়বো।”
ধ্রুব জেদ করে বললো,
“এখনি পড়ো।”
ধ্রুবর জেদ দেখে সকাল হাসে।
“আচ্ছা।পড়লাম।”
ধ্রুব মাথা নেড়ে না করে বললো,
“এভাবে না।আমাকে একটা চুমু খাও তাহলে বুঝবো আসলেই প্রেমে পড়েছো।”
কি বলে?পা/গল নাকি!চুমু খেয়ে প্রেমে পড়ার প্রমাণ দিতে হবে?সকাল হতভম্ব চোখে তাকিয়ে বললো,

“কখনো না।”
ধ্রুব নাছোড়বান্দার মতো বললো,
“তাহলে আমি দেই?”
এটা বলে সকালের হাতে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিলো।
সকাল ফিসফিস করে বললো,
“হাত ছাড়ুন।”
“কেনো?”
“লজ্জা লাগছে।”

ধ্রুব মাথা নেড়ে না বুঝালো।সকাল বললো,
“হাত না ছাড়লে আমি মিতু আপুর রুমে চলে যাবো।”
ধ্রুব মুখ অন্ধকার করে ফেলে।এই বাচ্চা তাকে হু,মকি দেয়?গম্ভীর গলায় বললো,
“বিয়ে করা বর হই তোমার।এইটুকুন আদর তো নিতেই পারি।অন্যদের মতো জোড় করে অধিকার আদায় করলেই ভালো হতো!হুহ”

সকাল নিজেও মনে মনে ধ্রুবর উপর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।ধ্রুব অন্যদের থেকে আলাদা,শরীরের চাহিদা মিটাতে তাকে কষ্ট দেয়নি,বরং সময় নিয়ে কাছে আসছে।তার ছোট মনে ঝ/ড় তুলে তা সু/নামীর রূপ ধারন করাচ্ছে।বড়োই পাজি এই ছেলেটা।ধ্রুবর অন্ধকার মুখের দিকে তাকিয়ে সকাল মিষ্টি করে হাসে।ধ্রুবকে খুশী করতে বললো,
“রেগে যাচ্ছেন কেনো?মজা করে বলেছি।আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো?”
ধ্রুব সকালের নরম হাত তার খোচাখোচা দাড়িযুক্ত গালের নিচে দিয়ে শুয়ে পড়ে।সকালের হাসি তার ঠোঁট পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।

“যেতে দিলে তো যাবে।আমি ছাড়ব’ই না।”
সকাল আরেক হাত দিয়ে ধ্রুবর কপালের উপর পড়ে থাকা চুল ঠিক করে বললো,
“আচ্ছা;আমিও যাবো না।এখন ঘুমোন।”
ধ্রুব সকালের চোখে নিজের দৃষ্টি স্থির করে বললো,
“তুমি এতো আদুরে কেনো?খালি আদর করতে মন চায়।”

ধ্রুবর কথায় সকাল লজ্জা পায়।লজ্জায় নাকের ডগায় তিরতির করে অনুভূতির কাঁপন বয়।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে মুচকি হাসে।
ধ্রুব নেশাগ্রস্তের মতো সকালের দিকে তাকিয়ে থাকে,সকালের জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরার দৃশ্য তাকে নাড়িয়ে দেয়।বুকে উঁকি দেয় মাতাল ইচ্ছা।মুখের ভাব তখন কেমন ভাসা ভাসা।সুপ্ত বাসনাকে পাত্তা দিতেই কিনা ধ্রুব এগিয়ে যায়,আঁকড়ে ধরতে চায় সকালের নরম অধর।ধ্রুবর হঠাৎ করা কাজে সকাল চমকে যায়,ছটফট করে বললো,

“না না না না। ”
ধ্রুব বাধা পেয়ে থেমে যায়।করুন চোখে তাকিয়ে বললো,
“কেনো?”
সকাল কোনো রকমে বললো,
“আর কয়টা দিন প্লিজ।আমি নিজেই….”
ধ্রুব সকালের কথা শেষ হবার আগেই বললো,
“আচ্ছা;সমস্যা নেই।”

ধ্রুব সরে যায়।নিজের বালিশ টেনে ঠিক করে।চোখ বন্ধ করে ওপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে।সকাল অভিমানী ধ্রুবকে দেখে নিজেই কষ্ট পায়।হাত দিয়ে ধ্রুবর পিঠে টোকা দেয়।ধ্রুবর কোনো হেলদোল নেই।সকাল এবার ডাকে।
“এই;এই শুনছেন?এদিকে ফিরেন না।”
ধ্রুব গম্ভীর গলায় বললো,
“ঘুমাও সকাল।”

সকাল এটা সেটা বলে ধ্রুবর মন গলাতে চায়,কিন্তু ধ্রুব কিছুতেই সকালের দিকে তাকায় না।
সকাল তার স্বামীর অভিমানের পাল্লার উজন দেখে।তারপর আস্তে করে বললো,
“আচ্ছা।যা বলবেন সব মেনে নিতে রাজি।অকে।”
ধ্রুব সাথে সাথেই সকালের দিকে ফিরে।মুখ তখনো কঠিন।

“সত্যি?”
সকাল মাথা নেড়ে বললো,
“হ্যাঁ।”
ধ্রুব কিছুই করতে চায় না শুধু হাত দিয়ে সকালের নরম ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।সে জানে এখন অধরে অধর মিলানো মানে মহাপ্রলয় যা সকাল এখন চাইছে না,আর সকাল চাইছে না মানে ধ্রুবও চায় না।
ধ্রুব গভীর চোখে সকালকে পর্যবেক্ষণ করে।
সকাল ধ্রুবর স্পর্শে কেঁপে উঠে।এতো গভীর কারো স্পর্শ হয়?ধ্রুবর এই সামান্য স্পর্শে তার এমন পা/গল পা/গল লাগছে কেনো?এই ছেলেটা তাকে মে/রে ফেলার পায়তারা করছে নিশ্চয়ই!সুখে সুখে ঠিক মে/রে ফেলবে।ধ্রুব তখন বিরবির করে বললো,

“সকাল,তুমি আমার পাখি।মিষ্টি আদুরে পাখি।”
একসময় দুজনেই ঘুমিয়ে যায়।মাঝরাতে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হয়।ধ্রুবর ঘুম ভেঙে যায়।অবাক হয়ে লক্ষ করে,শীত কালে আবার বৃষ্টি হয় নাকি?আশ্চর্যের কথা তো!সে হাত বাড়িয়ে বেডসুইচ চেপে লাইট জ্বালায়।
ধ্রুব ঘুমন্ত সকালের দিকে তাকিয়ে ভাবে,এই ছোট মেয়েটা তার বউ!উহু মেয়ে না বলে পুতুল বললেই বোধহয় ভালো হবে,দেখতে যে একদম পুতুলের মতো!

ধ্রুব গলা অবধি কম্বল টেনে দুহাত বুকে ভাজ করে রাখে।সকালের ঘুমানোর ভঙ্গিমা ভালো না,গায়ের কম্বল কয়েকবার ফেলে দিয়েছে।এই যে এখনো এক লাত্থি মেরে কম্বল কোমড় অবধি নামিয়ে ফেলেছে।ধ্রুব সকালের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে আবার তাকায়।লম্বাচুলের বেনী গলার পাশে এসে লুটিয়ে আছে।ধ্রুব হাত দিয়ে বেনীটা পেছনে ফেলে,হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি সকালের নরম গালে ঘষে দেয়।সকাল চোখ খুলে তাকায়।ধ্রুবর স্পর্শ পেয়ে ঘুম থেকে আধো জেগে উঠে।ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে জড়ানো গলায় বলে,

“ঘুমাননি?”
“বৃষ্টি হচ্ছে,তাই জেগে গেছি।”
সকাল জড়ানো গলায় বললো,
“আচ্ছা।এখন ঘুমোন।”
“না।”
“কেন?”
“তোমাকে দেখছি।”
সকাল চোখ বন্ধ করেই বললো,
“আমি রি রসগোল্লা যে এমন ড্যাবড্যাব করে দেখতে হবে?”
ধ্রুব একনজরে তার পুতুলটাকে দেখে বললো,

“হ্যাঁ।তাইতো দেখছি কখন না কোন পিপড়া মিষ্টি ভেবে খেতে চলে আসে।”
সকাল বললো,
“ধুর।”
“তুমি কি আসলেই মিষ্টি?”
“জানি না তো।”
ধ্রুব আস্তে করে বললো,
“আমি জানাই?”
সকাল কম্বলে নিজেকে ঢেকে বললো,

“দরকার নেই।”
ধ্রুব আর সকাল এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলো।ভালোবাসা,ভালোলাগায় দুজনে কাছে আসছিলো।অনুভূতির কাঁপনে দুজনের হৃদয় দোলাচ্ছিলো।ধ্রুব সকালকে সময় দিচ্ছে।সে চাইছে সকাল নিজ থেকে তাকে কাছে যাওয়ার আহব্বান করুক।এভাবেই কেটে যায় দুই দিন।
শুক্রবার,বিকাল পাঁচটা বাজে। কলিংবেলের শব্দে মিতু দরজার দিকে এগিয়ে যায়।গলায় পেচানো ওরনা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে নেয়।দরজা খুলে তাকিয়ে তার মুখের ভাবাবেগ বদলে যায়।মুখের ভাব হয়ে উঠে কঠিন।কিছু না বলে আস্তে করে দরজা থেকে সরে রুমে চলে আসে।

সামির অবাক হয়ে মিতুর প্রস্তান দেখলো।মেয়েটা কি তার উপরে এখনো রেগে আছে?তাইতো সামিরের সাথে দেখা করছেনা এমনকি ফোনটাও রিসিভ করছেনা।মিতুর এমন নির্লিপ্ত আচরণে সামির আরো নিশ্চুপ হয়ে যায়,বুকের ক্ষ/ত হয় দ্বিগুণ।যেই মেয়ে তাকে একদিন না দেখলে পা/গল হয়ে যেতো সেই মেয়েই আজ তিনদিন যাবত দেখা দিচ্ছে না।অথচ কাজল চোখের রাজকন্যা জানেও না তাকে দেখতে আরেকজন ব্যাকুল হয়ে গেছে।
মিতু চলে যাওয়ার পরে মনোয়ারা সেখানে উপস্থিত হয়েছে।সামিরকে দেখে হেসে বললো,

“একি সামির!বাহিরে কেনো?কতোদিন পরে আসলে বলো তো?”
সামির তখন হতবিহ্বল হয়ে নিজেকে সামলাচ্ছে।হাসি দেয়ার বৃথা চেষ্টা করে বললো,
“আসার সময় পাই না আন্টি।ধ্রুব আছে?”
“হ্যাঁ আছে।তোমাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে যে!”
সামির যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু আন্টি কিভাবে বুঝে ফেললো?অবশ্য একশো চার ডিগ্রী জ্বর নিয়ে চলাফেরা করলে বুঝারই কথা।সামির মাথা নেড়ে বললো,

“তেমন কিছুনা আন্টি।ওই বৃষ্টিতে ভিজে একটু জ্বর।”
মনোয়ারা চিন্তিত্ব গলায় বললো,
“কি যুগ আসলো শীতকালেও বৃষ্টি হয়!তা এই অসময়ের বৃষ্টিতে না ভিজলেও পারতে।”
সামির মাথা নিচু করে ভাবে কেনো ভিজেছি সে কথা শুনলে আর ভেতরেই ডুকতে দিবেন না।তাই কিছু না বলে মনোয়ারাকে প্রতি-উত্তরে একটা মুচকি হাসি উপহার দিলো।
মনোয়ারা সামিরকে ঘরে এনে;ধ্রুবকে ডাকলেন।ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে সামিরকে দেখে বললো,
“সালা;কই লুকাও তুমি?দেখাই যায় না।”

এটা বলতে বলতে সোফায় বসে।সামির আশেপাশে নজর ভুলিয়ে বললো,
“আমি লুকাই নাকি তুমি লুকাইছো?বউ পাইয়া তো বাসা থেকে বেরোনোই বন্ধ।সালা লু/চ্চা।”
ধ্রুব মুচকি হেসে বললো,
“আরে ধুর এসব কিছুনা।”
সামির সোফায় গা এলিয়ে বসে।একচোখ টিপে বললো,
“বুঝি বুঝি সবই বুঝি।”
“বুঝার বয়স হইছে তো,বুঝারই কথা।”
সামির আস্তে করে ফিসফিস করে বললো,
“বন্ধু;দিনরাত কেমন যায়?নিশ্চয়ই বিন্দাস?”
ধ্রুব চ কারান্ত শব্দ করে বললো,

“কেমন আবার;এখনো ব্যাচেলার ফিলং পাই।”
“কেনো?”
ধ্রুব হাত দিয়ে কপাল চুলকে বললো,
“আরে বাচ্চা মেয়ে,আমারই কেমন জানি লাগে।বয়সের পার্থক্য দেখছিস?”
সামির বুঝানোর সুবিধায় কাছে এসে বসে তারপর গলার স্বর নিচু করে বললো,
“বয়স আবার কি?এটা ব্যাপার না।আর কিসের বাচ্চা!আর বাচ্চা হইলেই বা সমস্যা কই শিখাই পড়াই নে দেখবি তোর মাস্টার হয়ে যাবে।”
ধ্রুব বললো,

“তোরে বলছে।যেভাবে এডভাইস দিচ্ছিস মনে হচ্ছে বাসায় দুই তিনটা বউ পালিস।”
সামির গলার কলার টেনে বললো,
“বউ পালতে হয় না;এসব বুঝাই যায়।”
ধ্রুব আরো কিছুক্ষন কথা বলে বললো,
“তোর চোখ লাল কেনো রে?”
সামির কপালে হাত দিয়ে বললো,
“একটু জ্বর তাই হয়তো।”

ধ্রুব সামিরের কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠে,সামিরের গা রীতিমতো পুড়ে যাচ্ছে।সে চিন্তিত্ব গলায় বললো,
“এই জ্বর নিয়ে এতোক্ষণ ঠাট্টা করছিস?”
“ব্যাপার না ”
“ওষুধ খাইছিস?”
সামির মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়।কিন্তু সত্য হচ্ছে সে নাপা ছাড়া কিছুই খায়নি।মাসের শেষ হাতে একদম টাকা নেই।তার ধারণা দুইতিন দিন পর জ্বর এমনিতেই সেড়ে যাবে।এর জন্য অন্যের থেকেক ধার নেয়ার মানে হয় না।
ধ্রুব বললো,

“এই অবস্থায় বের হইছিস কেনো?”
“একটা দরকার ছিলো।”
সামির যে মনের জ্বর সারাতে এসেছে সেটা আর ধ্রুবকে বললো না।
ধ্রুব সামিরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“শরীরের এই অবস্থা এর চেয়ে বেশি কি দরকারী?”
সামির বললো,

“মিতুকে একটু ডেকে দে তো।ওরে ওইদিন একটা নোটস দিয়েছিলাম।আজকে সেটা আমার এক স্টুডেন্ট কে দেয়ার কথা।”
ধ্রুব উঠে মিতুর রুমে যায়।সারারুম অন্ধকার।ধ্রুব লাইট জ্বালিয়ে দেখে মিতু কম্বল গায়ে শুয়ে আছে।ধ্রুব ডেকে বললো,
“সামির নাকি তোকে নোটস দিয়েছিলো।ফেরত দিতে বলেছে।যা দিয়ে আয়।”
মিতু কিছুক্ষণ চুপ থেকে কথাটা বুঝার চেষ্টা করলো।তারপর শান্ত গলায় বললো,
“ভাইয়া নোটস’টা তো আমি আমার এক ফেন্ডকে দিয়েছি।সে কালকে সকালে ফেরত দেবে তারপর আমি সামির ভাইকে দিয়ে দেবো।”

ধ্রুব বললো,
“যা বলে আয়।”
মিতু ভালো করে কম্বলে নিজেকে পেঁচিয়ে বললো,
“ভালো লাগছেনা ভাইয়া।তুমিই বলে দাও।প্লিজ।”
ধ্রুব ফিরে এসে সামিরকে এ কথা জানালে সামির মুচকি হাসে।মিতু দেখা করবেনা?এই নোটস ফোটস সব তো মিথ্যা কেউ না বুঝুক মিতুর তো বোঝা দরকার ছিলো সে নোটসের বাহানায় কেনো এসেছে।সামির লক্ষ করে তার জ্বর তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে।বুকে অসহ্য য/ন্ত্রণা হচ্ছে।মনোয়ারা তখন নাস্তা নিয়ে আসে।সামির নাস্তা না করেই বেরিয়ে আসে।এই বাসায় দমবন্ধ লাগছে,চেনা শহর অচেনা লাগছে।সন্ধ্যার অন্ধকার কাধে নিয়ে সে কোনোরকম হেলেদুলে নিজের বাসায় ফিরে আসে।

রাতে খেতে বসে মনোয়ারা আফসোস করে বললো,
“ধ্রুব সামিরকে খেয়ে যেতে বলতি।এতো জ্বর নিয়ে কি খাচ্ছে কে জানে।”
ধ্রুব খেতে খেতে বললো,
“একশো চার জ্বর।আজকে তিনদিন ধরে জ্বর;প্রচন্ড পরিমান অসুস্থ ও কিন্তু দেখে মনেই হয় না অসুস্থ।ভিষণ শক্ত মনের একটা ছেলে।”
মনোয়ারা বললো,
“এতিম মানুষ এই অবস্থায় কে খেয়াল রাখছে কে জানে?”
ধ্রুব বললো,
“কে আবার খেয়াল রাখবে দেখো গিয়ে ওষুধও খায়নি।”
মনোয়ারা ফের বললো,

“এই শরীর নিয়ে এখানে আসার কি দরকার ছিলো?”
“মিতুর থেকে নোটস নিতে এসেছিলো।ভিষণ দরকার নাকি।”
সবাই খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেলেও একজন খেতে পারলো না।কেউ লক্ষ করলো না মিতুর মুখের পরিবর্তন।দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা।সবার সামনে কান্না করে ফেললে ব্যাপারটা ভিষণ খারাপ হয়ে যাবে।প্লেটের বাকি ভাতটুকু না চিবিয়ে পানি দিয়ে গিলে ফেলে।

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১৭

কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে দ্রুত রুমে এসে দরজা আটকে ফ্লোরে বসে পড়ে।হাত দিয়ে মুখ চেপে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।এসব নোটস তো কিছুই না সামির তার সাথে দেখা করতে এসেছে আর সে একটুও দেখা করেনি।মিতুর নিজেকে খুব নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে।ছেলেটা এতো জ্বর নিয়ে এসেছে শুধুমাত্র তার সাথে দেখা করতে!মিতু কান্নাচোখে ঝাপসা দেখে।ঝাপসা দৃষ্টিতেই সামিরের নাম্বার ডায়াল করে কিন্তু ভাগ্যক্রমে বন্ধ।মিতুর ইচ্ছে করছে এখনি সামিরের কাছে যেতে কিন্তু সেটা সম্ভব না বিধায় মিতুর নিজেকে পা/গল পা/গল লাগে।কান্নার কারণে লাল ফুলে উঠা দুই চোখ নিয়ে সকাল হওয়ার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।

কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব ১৯